জিয়ার মাজার শুধু কবর নয়, জাতীয়তাবাদী চেতনায় শপথ গ্রহণের স্থান। বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাজার যেমন চেতনার উৎসভূমি, তেমনি জিয়ার মাজারও একই। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, ততদিন জিয়ার চেতনা অম্লান রবে। জিয়ার মাজার থেকে প্রতিনিয়ত বের হচ্ছে আন্দোলনের বারুদ। শত গুম, খুন আর নির্যাতনেও এ আন্দোলনকে রোধ করা যাচ্ছে না। আন্দোলনকারীদের শক্তি দমন করা যাচ্ছে না। তাদের মাঝে ভাঙ্গন সৃষ্টি করা যাচ্ছে না। তাই, একেবারে জিয়ার মাজারটাই তুলে ফেলা হচ্ছে। এজন্য স্থপতি লুই আই ক্যানের ম্যাপ আনা হয়েছে। ম্যাপ অনুযায়ী সংসদ ভবন এলাকায় মাজারের অস্তিত্ব নেই। নিরাপত্তার স্বার্থে তা রাখাও সমীচীন নয়। প্রয়োজনে বিশাল স্থাপনা ধ্বংস করে হলেও জিয়ার মাজার তোলা প্রয়োজন।
শহীদ জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর অতিস্নেহভাজন ছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর সেকেন্ড-ইন-কমান্ড সেনা ছিলেন। ১৯৭১ সালে চট্রগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে তিনিই সর্বপ্রথম বঙ্গবন্ধুর অনূকুলে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার অবদান অসামান্য। তিনি ‘জেড ফোর্সের’ প্রধান ছিলেন। বঙ্গবন্ধু তাকে ‘বীর উত্তম’ খেতাব দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে তিনি খন্দকার মোশতাক থেকে ক্ষমতা নেন। তিনি খন্দকার মোশতাককে হত্যা করেননি। খন্দকার মোশতাক ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত জীবিত ছিলেন। সেনাপ্রধান কে. এম. শফিউল্লাহকে ডিঙিয়ে জিয়ার ক্ষমতা লাভের কোনো সম্ভাবনা ছিলনা। জনাব কে এম শফিউল্লাহ আজও জীবিত আছেন। মূলত সেনাবাহিনীর সদস্যরাই জিয়াকে ক্ষমতায় বসিয়েছিল।
এভাবে বঙ্গবন্ধু সরকারের পর জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে অসামান্য ভূমিকা রাখেন। তিনি দেশের মানুষকে গণতন্ত্র শিখান। দেশে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বৈষম্যমূলক মুক্তিযোদ্ধা কোটার ঘোর বিরোধী ছিলেন। তার দৃষ্টিতে, বঙ্গবন্ধুর বক্তব্য অনুসারে ‘৭১ এর সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালী সবাই এক একজন মুক্তিযোদ্ধা বিশেষ। ত্রিশ লাখ শহীদ ও দুই লাখ সম্ভ্রমহারা নারী সবাই মুক্তিযোদ্ধা। এদের কেউ রাজাকার, যুদ্ধাপরাধী বা মানবতা বিরোধী অপরাধী নয়। শুধুমাত্র পাকি সেনারাই অপরাধী। এ মহান চেতনার আলোকে জিয়াউর রহমান তথাকথিত দালাল আইনে প্রচলিত বিচার সম্পুর্ণ বাতিল করেন। জনগণ তার এ চেতনাকে স্বতঃষ্ফুর্তভাবে গ্রহণ করেছিল। শুধু মুক্তিযোদ্ধা কোটা বা স্বার্থভোগী ষঢ়যন্ত্রকারীরাই তার বিরূদ্ধে চক্রান্তে লিপ্ত ছিল। ফলে কিছু উচ্ছৃঙ্খল সেনার হাতে তিনি শহীদ হন। জিয়াউর রহমানকে হারিয়ে জনগণ চরম আঘাত পেয়েছিল। তাকে বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ স্থান তথা সংসদ ভবনের পাদদেশে সমাধিস্থ করেছিল। এ কবর কখনো তুলে ফেলার নয়।
সরকার চাচ্ছে জিয়ার আদর্শ ও চেতনা মুছে তার কবরটাই তুলে ফেলতে। এতে রয়েছে অতি সুক্ষè উদ্দেশ্য। তা হলো, রাজনীতিতে বেগম খালেদা জিয়ার অতি গুরুত্বপুর্ণ জোট সংগঠন ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’কে জোট থেকে বিচ্ছিন্ন করা। এ দলে মাজার পুঁজার কোনো স্থান নেই। দলটি মাজার সংরক্ষণেও বিশ্বাসী নয়। জিয়ার মাজার রক্ষার আন্দোলনে এ দলের সাড়া পাবার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। এভাবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’কে বেগম জিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন করার হীন উদ্দেশ্যেই জিয়ার মাজার তোলার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মাজার বিরোধী রাজনৈতিক দল হলেও জিয়ার মাজার নিয়ে তাতে কোনো বিরোধীতা নেই। কারণ, এটি শুধু মাজার নয়। এখান থেকে দেশপ্রেমের শপথ নেয়া হয়। এখান থেকে দেশপ্রেমের চেতনা বিচ্ছুরিত হয়। মহান সৃষ্টিকর্তা পবিত্র কোরানে বহু স্থানের নাম উল্লেখ করেছেন। তেমনি দেশাত্মবোধ চেতনার উৎসস্থান হিসেবে জিয়ার মাজারকে বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপুর্ণ স্মৃতিরূপে সংরক্ষণ করা মানে মাজার পুঁজা নয়। এটি একটি ঐতিহাসিক স্মৃতিচিহ্ন। একে রক্ষার জন্য আন্দোলন করাও দেশপ্রেমের অংশ বিশেষ। প্রতিটি দেশপ্রেমিক নাগরিকের উচিত, জিয়ার মাজার নিয়ে যেকোন ষঢ়যন্ত্র রুখতে এগিয়ে আসা।
mrmostak786@gmail.com.