মুহাম্মদ মাহবুবুল হক::
একবিংশ শতাব্দীর এ সময়ে পৃথিবীর নানা দেশে জন্ম নিয়ন্ত্রণ প্রথা চালু আছে।বাংলাদেশে ও জন্ম নিয়ন্ত্রণের প্রতি দেশের জনগণকে উৎসাহিত করা হয়। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর থেকে ব্যাপক প্রচার-প্রসারের মাধ্যমে মানুষকে জন্ম নিয়ন্ত্রণ মুখী করতে বিভিন্ন কর্মসূচীর উদ্যোগ নেয়া হয়।”দুটি সন্তানের বেশি নয়,একটি হলে ভালো হয়” ও “ছেলে হোক,মেয়ে হোক,দুটি সন্তানই যথেষ্ট “ইত্যাদি মুখরোচক প্রতিপাদ্য গণমাধ্যমে বেশ জোরেশোরেই প্রচারিত হয়। পরিবার পরিকল্পনার প্রধান অনুষঙ্গ জন্ম নিয়ন্ত্রণের প্রচারের ক্ষেত্রে মিডিয়া শক্তি নিয়ামক ভূমিকা রাখছে।জনসংখ্যার বৃদ্ধি রোধ করা,অর্থনৈতিক প্রবিদ্ধি অর্জন,দারিদ্র বিমোচনও লাগামহীন জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে পৃথিবী বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাবে -এসব যুক্তির অবতারণা করে বিজ্ঞানীরা জন্ম নিয়ন্ত্রণের সুফল প্রমাণের চেষ্টা করেন।
দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এনজিও সংস্থার মাঠ কর্মীরা বিভিন্ন ফন্দি ও কৌশলে সুখি পরিবার গঠনের পিরিস্তি আওড়িয়ে গ্রামের সহজ-সরল মানুষকে জন্ম নিয়ন্ত্রনের পথ দেখাচ্ছে। আর্থিক প্রলোভন ও ধোঁকার আশ্রয়ে এক রকম বাধ্য করে জন্ম নিয়ন্ত্রণ করানো হচ্ছে সংক্রান্ত দৈনিক মানবজমিনের একটি প্রতিবেদন আমার চোখে পড়ে। একটি ভিটামিন ইন্জেকশন দেয়া হবে ও হাজার খানেক টাকা দেয়া হবে বলে দালাল চক্রের এক সদস্য একজন রিকশা চালককে জন্ম নিয়ন্ত্রনের পুশ করায়। বিস্ময়ের ব্যাপার হলো,দালালরা কারো জন্ম নিয়ন্ত্রণ করাতে পারলে কর্তৃপক্ষ থেকে বোনাস পায়। এ হলো বাংলাদেশের জন্ম নিয়ন্ত্রন পরিস্হিতি। ইসলামে জন্ম নিয়ন্ত্রনকে নিরুৎসাহিত করে। জন্ম নিয়ন্ত্রণের প্রাধানত দুটি পদ্ধতি রয়েছে। এক.দীর্ঘমেয়াদী স্তায়ী জন্ম নিয়ন্ত্রন। নারী -পুরুষের অস্রোপচার বা ইন্জেকশনের মাধ্যমে সন্তান উৎপাদন ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়া হয় দীর্ঘমেয়াদী পদ্ধতিতে। অভাব-অনটনের ভয়ে বা জনসংখ্যা রোধে যে কোন কারণে যে উপায়েই স্থায়ী জন্ম নিয়ন্ত্রন করা হোক, শরীয়তের দৃষ্টিতে তা হারাম ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। স্থায়ী জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহন করলে আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামতের অবজ্ঞা ও অকৃতজ্ঞতা হয় এবং স্রষ্টার সৃষ্টির পরিবর্তন ও বিকৃতি সাধন হয়।
হাদীস শরীফে অধিক সন্তান জন্মদানের জন্য উৎসাহ দেয়া হয়েছে। রাসূল স. বলেছেন,”তোমরা প্রচন্ড মায়াবতী ও অধিক সন্তান প্রসবিনী মহিলার সাথে পরিণয় করো, কেননা কিয়ামত দিবসে তোমাদের সংখ্যাধিক্যের কারণে অন্যান্য উম্মতের উপর আমি গর্ব করবো”(মিশকাত)। দরিদ্রতার আশংকা ও পারিবারিক ঝামেলা এড়াতে সন্তান জন্মদান থেকে সংযত থাকা নিরেট বোকামি। পৃথিবীর সমস্ত সৃষ্টিজীবের অন্ন বস্ত্র বাসস্থান সহ সবকিছুর ব্যবস্থাপক আল্লহ তাআলা। কুরআনুল কারীমে আল্লাহ বলেছেন,”তোমরা দরিদ্রতার ভয়ে স্বীয় সন্তানদের কে হত্যা করো না, আমিই তোমাদের ও তোমাদের সন্তানদের রিজিক প্রদান করি”(সূরা আনআম)। হাদীস থেকে জানা যায়, কিছু সংখ্যক সাহাবায়ে কেরাম পার্থিব ঝামেলা থেকে মুক্ত হয়ে, একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদতে ডুবে থাকতে রাসূলের স.কাছে যৌন ক্ষমতা বিলুপ্তির অনুমতি চাইলে তিনি তাদের মনের বাসনাকে কঠোরভাবে নিষেধ করেন। স্থায়ী জন্ম নিয়ন্ত্রন করে বংশ পরম্পরার পথ রুদ্ধ করা হারাম। দুই. স্বল্পমেয়াদি সাময়িক জন্ম নিয়ন্ত্রণ:ইসলামের প্রাথমিক যুগে আযলের সাথে সামঞ্জস্যশীল পদ্ধতি। স্বামীর বীর্য শুক্র স্ত্রীর জরায়ূর ডীম্বাশয়ে পৌঁছতে প্রতিবন্ধক যে কোন পদ্ধতি গ্রহন করাই আযল বা সাময়িক জন্ম রোধ। সাম্প্রতিক সময়ে কনডম ইত্যাদির দ্বারা এ পদ্ধতি কার্যকর হয়ে থাকে। গ্রহনযোগ্য শরীয়ত সম্মত অপারগতা ও সমস্যা ব্যাতিত সাময়িক জন্মরোধ ও মাকরূহ থেকে মুক্ত নয়। নারীর জরায়ূতে বীর্য পৌঁছার পর গর্ভনিরোধক বিভিন্ন ঔষধের দ্বারা শুক্রকীট ধ্বংস করা জায়েজ নয় এবং গর্ভপাত ঘটানো ও বৈধ নয়।
লেখক:আলেম,প্রাবন্ধিক।