শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ সকাল ৬:৫৩
Home / অনুসন্ধান / ফাতওয়ার পূর্বে সাবধান! ফ্রান্সে হামলায় কিন্তু অনেক মুসলিমও নিহত হয়েছে!

ফাতওয়ার পূর্বে সাবধান! ফ্রান্সে হামলায় কিন্তু অনেক মুসলিমও নিহত হয়েছে!

Paris attacফাহিম বদরুল হাসান, প্যারিস থেকে :: গত ৩১ নভেম্বর শুক্রবার রাতে ফ্রান্সে স্টেডিয়াম, রেস্টুরেন্ট, বার, ক্লাবসহ প্রায় ছয়টি স্থানে মর্মান্তিক হামলার খবর পুরোনো হয়ে গেছে। পুরো দুনিয়া হেলে দিয়েছে। তাই এ বিষয়ে নীতিদীর্ঘ আলোচনা একেবারে অর্থহীন। তবে এই হামলার রেশ কাটেনি এখনো। এদিকে আজ গতকাল ১৮ নভেম্বর ভোরে প্যারিসের পার্শ্ববর্তী শহর Saint Denis এর একটি এপার্টমেন্টে হামলার মূল পরিকল্পনাকারী Abdel Hamid Abaaoud আছে, এই তথ্যের ভিত্তিতে ফ্রান্সের নিরাপত্তা বাহিনী এক সফল অপারেশন চালায়। কয়েক ঘণ্টার এই অপারেশনে সন্দেহভাজন দু’জন সহ প্রতিরক্ষা বাহিনীর একটি কুকুর মারা যায় এবং পাঁচ জন পুলিশও আহত হয়।

এসব খবরে যখন গোলার্ধের ভীত নাড়াচ্ছে। যখন হামলাকারীর কারো “শীশা’ আসক্তির কারণে, কারো মদ-আসক্তির কারণে মুসলিম কী না সন্দেহ করা হচ্ছে, ঠিক তখনই আমাদের মধ্য থেকে কিছু বেরাদরানে ইসলাম অনলাইনে-অফলাইনে ফাতওয়ায়ে আলমগীরি খুলে বসেছেন!!

হামলার নিন্দা এবং নিহতদের জন্য শোক প্রকাশ যারা করেছেন, তাদেরকে কুরআন-হাদিসের বিভিন্ন রেফারেন্স দিয়ে “অমুসলিমদের জন্য মায়াকান্না করা”র কারণে অমুসলিমদের দোসর, মোনাফেক সাব্যস্ত করেই ফেলেছেন!

যদিও নিহত মানুষের শ্রেণিবিন্যাস মানবতার ঊর্ধ্বে। তারপরও যদি আপনি “মুসলিম-অমুসলিম’’ ইস্যু নিয়ে আসেন, তাহলে অবশ্যই আপনাকে কিছু প্রশ্নবোধক চিহ্ন ক্রস করতে হবে।

আপনি কি নিশ্চিত যে, সে রাতে (১৪ নভেম্বর) যারা নিহত হয়েছেন, তারা সবাই অমুসলিম? অবশ্যই আপনি নিশ্চিত নন। আর যদি নিশ্চিত হন, তাহলে একজন মুসলিমকে অমুসলিম বলার ভয়াবহতার হাদিস তো মনে আছে?

আপনি কি জানেন, সেই নিহত ১২৯ জনের নাম এবং পরিচয়? আপনাকে কয়েকজনের নাম শুনাচ্ছি। তন্মধ্যে ছিল মিশরের সালাহ ইমাদ আল জিবালী [Salah Emad El-Gebaly] ইয়েমেন বংশোদ্ভূত থমাস আয়াদ [Thomas Ayad-32], মরোক্কিয়ান বংশোদ্ভূত মোহাম্মদ আমিন ইবনুল মুবারক [Mohamed Amine Ibnul Mobarak-35], আজেরিয়ান বংশোদ্ভূত খাইরুদ্দীন শাফী [kheiruddine Shafi-29]!

এবার আপনি কি প্রশ্ন করবেন- “এরা আবার কীসের মুসলিম, যারা ক্লাবে যায়, খেলা দেখতে যায়”? যদি ক্লাবে যাওয়ার কারণে এদেরকে ইয়াহুদী-খৃস্টানদের সাব্যস্ত করে তাদের নিহতের ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ না-জায়েয বলে ফাতওয়া দেন, তাহলে আরেকটু ধৈর্য ধরে শুনতে হবে। এই হামলায় আরো নিহত হয়েছিল তিউনিসিয়ান দুইবোন হালিমা বিনত খালিফা সা’দী [Halima ben Khalifa Saadi-37] এবং হোদা বিনত খালিফা [Hodda Ben Khalifa-35]! না না, এরা কোনো ক্লাবে নৃত্য করতে যায় নি, স্টেডিয়ামে খেলা দেখতেও যায় নি। তারা “La Belle Équipe” রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়েছিল।

এবার যদি আপনি ফাতওয়া দেন, “মুসলিম নারীরা আবার রেস্টুরেন্ট খেতে যাবে কেন!? এরাও কাফির মুশরিক। এদের জন্য দুঃখপ্রকাশ নাজায়েয এবং মোনাফিকী।” বলার কিছুই থাকবে না। শুধু এটুকু বলতে পারি, আপনি ফাতওয়া দিয়ে মুসলিমকে অমুসলিম করতে পারবেন; কিন্তু না পারবেন কাউকে মুসলিম বানাতে আর না পারবেন ইসলামের প্রসার করতে।

লেখক : অনলাইন এক্টিভিস্ট, ফ্রান্স প্রবাসী

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...