অনলাইন ডেস্ক :: ফেসবুক, ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপসহ সামাজিক যোগাযোগের সব মাধ্যমই অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। গতকাল বুধবার দুপুর ১২টায় সরকারের নির্দেশে এসব মাধ্যম বন্ধ করে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। আর এটি করতে গিয়ে পুরো দেশে কিছু সময়ের জন্য ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ ছিল।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, ‘জনগণের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই ফেসবুক, ভাইবারের মতো সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছে। একটি জীবনের মূল্যের চেয়ে বড় কিছু হতে পারে না। তাই এসব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করতে না পারার সাময়িক কষ্টটুকু জনগণকে মেনে নেওয়ার অনুরোধ করছি।’
প্রথমে মৌখিক ও পরে লিখিত নির্দেশনার মাধ্যমে দেশের সব মোবাইল অপারেটর ও আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) অপারেটরকে সামাজিক মাধ্যমগুলো বন্ধ করতে বলে বিটিআরসি। সংস্থাটির সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের সহাকারী পরিচালক তৌসিফ শাহরিয়ার স্বাক্ষরিত নির্দেশনায় বলা হয়, ‘ফেসবুক, ভাইবার ও হোয়াটসঅ্যাপ তাৎক্ষণিকভাবে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করার জন্য আপনাদেরকে নির্দেশ দেওয়া হলো।’ পরে একই রকম আরেকটি নির্দেশনায় স্কাইপ, লাইন, ট্যাংগো, হ্যাংআউটসহ অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমের ওয়েবসাইটও বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
চলতি বছরে এর আগেও একবার জানুয়ারিতে বিএনপির অবরোধ কর্মসূচি চলার সময় ‘নিরাপত্তার’ কারণ দেখিয়ে ভাইবার, ট্যাংগো, হোয়াটসঅ্যাপ, মাইপিপল ও লাইন নামের পাঁচটি অ্যাপসের সেবা বন্ধ করে দেয় সরকার। তখন বলা হয়েছিল, বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের জন্য এসব অ্যাপস ব্যবহার করতেন।
একটি আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) অপারেটরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আজ (বুধবার) বেলা ১টা থেকে ২টা ২০ মিনিট পর্যন্ত সরকারের নির্দেশে বাংলাদেশে ইন্টারনেট গেটওয়ে বন্ধ ছিল। তবে অনেক ইন্টারনেট ব্যবহারকারীই এর চেয়ে বেশি সময় নেটের সংযোগ পাননি।
ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর (আইএসপি) সংগঠন আইএসপিএবির সভাপতি এম এ হাকিম বলেন, সরকার আইআইজির মাধ্যমে ইন্টারনেট বন্ধ করতে বলেছিল।
জানা গেছে, এর আগে বাংলাদেশে ইন্টারনেট সংযোগ কখনো বন্ধ রাখা হয়নি। বিগত সেনা-নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৮ সালে কারফিউয়ের মধ্যে মোবাইল ফোন সেবা সাময়িক বন্ধ থাকলেও ইন্টারনেট চালু ছিল। এরপর একবার বিটিআরসি ইন্টারনেটের আপলোড গতি কমানোর নির্দেশনা দিলেও ইন্টারনেট সেবা পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। অবশ্য ছয়টি আন্তর্জাতিক টেরিস্টেরিয়াল কেব্ল সংযোগের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আগে একমাত্র সাবমেরিন কেব্লে সমস্যা হলে বাংলাদেশের ব্যবহারকারীরা ইন্টারনেটে যুক্ত হতে পারতেন না।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যবহার সীমিত বা বন্ধ করার বিষয়ে চলতি মাসের শুরুর দিকে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নেদারল্যান্ডস থেকে ফিরে ৮ নভেম্বর সংবাদ সম্মেলনে জঙ্গি অর্থায়নে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ধরতে জটিলতার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ ডিজিটাল করেছি। এর শুভ ফলও যেমন আছে, খারাপ ফলও আছে। আমরা থ্রিজি ও ফোরজিতে চলে গেছি। এ কারণে জঙ্গিরা ইন্টারনেট, ভাইবার থেকে শুরু করে নানা ধরনের অ্যাপস ব্যবহার করে জঙ্গি কার্যক্রম চালাচ্ছে। সে জন্য আমাদের চিন্তাভাবনা আছে, যদি খুব বেশি ব্যবহার করে, হয়তো একটা সময়ের জন্য বা কিছুদিনের জন্য বন্ধ করে দেব। এই লিংকগুলো (জঙ্গি অর্থায়নের সূত্র) যাতে ধরা যায়।’
১১ নভেম্বর জাতীয় সংসদেও একই ধরনের বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের কোনোভাবে সহ্য করা হবে না। কিছুদিনের জন্য হলেও এটা বন্ধ করে সন্ত্রাসীদের যাতে ধরা যায়, সে পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। অনির্দিষ্টকালের জন্য এটা বন্ধ করে সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে ধরা হবে।’
তথ্যসূত্র: প্রআ