মিনা ট্রাজেডির যে ছবিকে ঘিরে বিতর্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: সৌদি আরবে হজ পালনের নিয়ম অনুযায়ী মিনায় শয়তানের উদ্দেশে পাথর নিক্ষেপের সময় পদদলিত হয়ে নিহত হাজিদের ছবি সম্বলিত ফটোশপে কোলাজ করা একটি ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে তা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। চার ঘণ্টা আগে ঐ ছবিটি ফেসবুকে আপলোড করে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার লিখেছেন, ‘আমি বাকরুদ্ধ! ক্রেইন দিয়ে পবিত্র হজ্ব করতে যাওয়া হাজীদের লাশের এভাবে অপমান? সৌদিরা কি আবারও সেই বর্বর যুগে ফিরে গেল নাকি?’ 0একই ছবি আপলোড করে শাকিল নামের একজন লিখেছেন, ‘সৌদি’র হজ ব্যবসা নিয়ে অনেক দালাল নানাভাবে হাজিদের হত্যার পক্ষে জাস্টিফাই করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। অনেকেই স্টাটাস দিয়ে বুঝাতে চেষ্টা করছেন যে, সৌদিরা হাজিদের নিজের জীবনের চাইতেও বেশী ভালোবাসে, সম্মান করে। আবার কেউ লিখেছেন তাদের ম্যানেজমেন্ট এতটাই ভালো যে, এই ম্যানেজমেন্ট একই সাথে ৫০টা ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজন করতে পারে। সৌদি তাবেদার দালালদের জন্য জন্য স্রেফ করুণা হয়। আমার ইনবক্সে যারা সৌদি ও হজ নিয়ে লেখার জন্য গালগালির বন্যা বইয়ে দিয়েছেন তাদের জন্য হাজিদের প্রতি সৌদিয়ানদের সম্মানের নমুনা স্বরুপ কিছু ছবি দিলাম!!’ কামাল পাশা নামের একজন লিখেছেন, ‘হজ্ব যাত্রীরা কি সৌদিদের কাছে শুধু মাত্র তাদের ব্যবসার কাস্টমার? তা না হলে নিহত হাজীদের মরদেহকে এভাবে অপমানের অর্থ কি?’ বিনয় নামের একজন লিখেছেন, ‘মুসলমানদের মতে নিশ্চিত বেহেশতে গমনকারীদের লাশের অবস্থা দেখুন। আমাদের শহরে যেভাবে ময়লা পরিস্কার করে সিটি কর্পুরেশন সেভাবে লাশ পরিস্কার করছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। কোন লাশের প্রতি এমন ব্যবহার টুটালি মানবতাবিরুধী বর্বর কাজ।’ তবে দেখা মেলে ভিন্নমতেরও। তারেকুল আলম নামের একজন লিখেছেন, ‘ক্রেইন দিয়ে যা পরিষ্কার করতেছে তা হল হাজীদের কাপড়,খাদ্য এবং অন্যান্য জিনিস পত্র, একটি লাশ ও ক্রেইন দিয়ে সরানো হয় নাই।’ তালহা খালেদ নামের একজন লিখেছেন, ‘যেই ছবিতে বুল্ডেজার মেশিনের ছবি দেওয়া হয়েছে সেটা ১৫/২০ বছর আগের ছবি, যেই মিনার টি দেখা যাচ্ছে এটা কে জামরাহ বলে মানে লোকে যাকে শায়তান নামে চেনে! এটা বর্তমানে ২০/২৫ তালা উচ্চতা সম্পন্ন বিল্ডিংয়ের মত করা হয়েছে!’ হাছান শাহরিয়ার নামে একজন লিখেছেন, ‘উপরের ছবিটা ১৯৯৪ সালের, কিন্তু হজেরই ছবি। সেসময় যেমন বর্বরতার পরিচয় দিয়েছে সৌদি আরব, এবারও তার ব্যতিক্রম না। নিচের ছবিটা দেখলেই বোঝা যায়।’ লিটন নামের একজন লিখেছেন, ‘এসব ফেক ছবি দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবেন না, যে সকল মুসলমানগন পবিত্র হজ্জ ব্রত পালন করতে গেছেন ওনাদের মুখথেকে শুনে নিয়েন কিভাবে লাশ সরানো হয়েছে, এবং কিভাবে মর্যাদার সহিত শহীদের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।পবিত্র হজ্জ নিয়ে এমন তামাশা মোটেই ঠিক হয়নি। আশাকরি সবাই বুঝতে পেরেছেন।’ তবে এরপর ইমরান এইচ সরকার আরেকটি ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেন, ‘ছবিটি পোষ্ট করার পর অনেকে বিরুপ মন্তব্য করেছেন। ভেবেছিলাম আমি হয়তো ওহাবীবিরোধী ইরানি অপপ্রচারের ফাঁদে পড়লাম। কিন্তু খোঁজ নিয়ে দেখলাম, না দুটি ছবিই সঠিক তবে উপরের ছবিটি আগের আর ২য়টি এই বছরের। আমার খুব অবাক লাগছে কিছু অন্ধ মানুষ সৌদি যুবরাজদের অব্যবস্থাপনায় এতোগুলো হাজীর মৃত্যুর পরও কি নগ্নভাবে তাদের ওকালতি করে যাচ্ছে! না বুঝে ভয়ানক দানব ওহাবিদের পক্ষাবলম্বন নয়, বরং ওহাবি ইসলামের হাত থেকে মুহম্মদী ইসলামকে মুক্ত করুন, দেখবেন বিশ্বব্যাপী সৌদি-আমেরিকা মদদে ধর্মের নামে সন্ত্রাস বন্ধ হয়ে যাবে। ধন্যবাদ।’ সুমন নামের একজন লিখেছেন, ‘সৌদি আরব বলেই তোমাদের মুরোদ হয় না প্রতিবাদ করার। সৌদি আরব আমাদের মানবাধিকার নিয়ে কথা বলে। মানুষের লাশকে ময়লা আবর্জনা তোলার মতো করে তুলছে তাতে সৌদি রাজতন্ত্রের বর্বর পরিবারের বিরুদ্ধে সবার মুখে কুলুপ কেন? জানা নেই আজকের এই গণমৃত্যু ওই রাজপরিবারের যানবাহনটি যাওয়ার কারণেই ঘটেছে। একবার ভাবুন তো ঘটনাটি কত বড় মর্মান্তিক!’ কামরুল হাসান নামের একজন লিখেছেন, ‘মিনায় সহস্রাধিক হাজির মৃত্যুর জন্য দায়ী সৌদি সরকার। বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে সৌদি যুবরাজের সৌজন্য সাক্ষাৎ করার জন্য দুটি প্রধান সড়ক বন্ধ করে রাখার কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার বিচার হওয়া প্রয়োজন। সবচেয়ে উচিৎ শিক্ষা হবে যদি সারা বিশ্বের মুসলমানরা একটি বছর হজ্ব বয়কট করে। তাদের জীবনের কোনো নিরাপত্তা সৌদি সরকার দিতে পারছে না। এখন সমস্ত জাগতিক অব্যবস্থাপনা ও অপদার্থতার দায়ভার চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে আল্লার কাঁধে। হায়, আল্লাহ!’ প্রদীপ মাহবুব নামের একজন লিখেছেন, ‘সৌদিতে মারা যাওয়া যদি আল্লাহ’র ইচ্ছা হয় তাহলে সারা পৃথিবীতে যা ঘটছে তা আল্লাহ্’র ইচ্ছা ব্যতিত অন্য কিছু নয়। তাহলে কেন একে অপরকে দ্বোষারোপ!!!!’ মিজানুর রহমান নামের একজন লিখেছেন, ‘প্রিয় নবীজির জন্ম স্থান বলে, পবিত্র কাবা মক্কায় অবস্থিত বলে, প্রিয় রাসুল (স:) সোনার মদিনায় শুয়ে আছেন বলে সউদি আরবের প্রতি বিশ্বের সকল মুসলমানের বিশেষ দুর্বলতা আছে। এটাই স্বাভাবিক। তাই বলে সউদি আরবের বাদশাহদের কোন অন্যায়ের বা ভুলের বিরুদ্ধে কথা বলা যাবেনা! তাদেরকে তোয়াজ করে চলতে হবে কেন? এমনিতে রাজতন্ত্রের কোন অনুমোদন ইসলামে নেই। ওটা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে না হয় কিছু বলা হ’লনা। কিন্তু হজ্ব ব্যবস্থাপনায় তাদের যে গাফেলতি ও উন্নাসিকতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে তার কি প্রতিবাদ করা যাবেনা? ওদের ভুলের কারণে শত শত হাজী বেঘোরে মারা যাবেন আর এটাকে আল্লাহ্র ইচ্ছা বলে চালিয়ে দেয়া হবে তা কি মানা যায়? বোধকরি সময় এসেছে এসবের প্রতিবাদ করার এবং প্রতিকার চাওয়ার। প্রয়োজনে হজ্ব ব্যবস্থাপনার কাজটি ও আই সি’ র ব্যবস্থাপনায় নিয়ে আসার কথা ভাবতে হবে। হজ্ব হ’ল বিশ্ব মুসলিমের একটি ওয়াজিব ইবাদত। এটা কোন একক রাষ্ট্র এর কোন বিষয় নয়- এটা সকলের মনে রাখা উচিত।’ সূত্র: প্রিয়