ইনাম বিন সিদ্দিক ::
বৃহত্তর সিলেটের বর্তমান মৌলভীবাজারের ঐতিহ্যবাহী দ্বীনী একটি পরিবারের নাম হলো হামিদী ফ্যামিলী। এই পরিবারের আসল পরিচয় বিকশিত হয়েছে হযরত লুৎফুর রাহমান বর্ণভী হামিদী রাহ’র সময়কাল থেকে। হযরত লুৎফুর রাহমান বর্ণনভী বা বরুনী বা হামিদী ছিলেন যামানার ওলি বা কামিল পীর। তিনি হচ্ছেন সেই হামীদী পরিবারের উজ্জল নক্ষত্র। আধ্যাত্মিক জগতে আল্লাহপাক তাকে দিয়েছিলেন এক ঈর্ষনীয় জনপ্রিয়তা। তারই খান্দানের অপর এক অংশের নাম হলো হযরত মাওলানা মরহুম তাজুল ইসলাম হামিদী রাহ’র পরিবার।
হযরত মাওলানা তাজুল ইসলাম হামিদী রাহ. বিবাহ করেন মৌলভীবাজারের বিখ্যাত দেওয়ান পরিবারে। তাদেরই কুলজুড়ে ফুটে উঠে একশিশু। যাকে পরবর্তীতে আমরা শাইখ সালেহ হামিদী হিসেবে জানি। ছয় বোনে আর পাঁচ ভাইয়ের মাঝে শাইখ সালেহ হামিদী হলেন দুই ভাইর ছোট। বড় ভা্ই মরহুম মজলুম শহীদ মাওলানা জুবাইর হামিদীর তত্ত্ববধানে শাইখ সালেহ হামিদীর পথচলা। ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জামেয়া মাদানিয়া ইসলামিয়া কাজির বাজার সিলেট থেকে কৃতিত্বের সাথে টাইটেল পাশ করেন ১৯৯৪ ঈসায়িতে। শিক্ষকতাও করেন কিছুদিন সেখানে। পাশাপাশি দাখিল আলিম ফাজিল কামিল সম্পন্ন করেন সিলেট সরকারি আলিয়া মাদরাসায়। বিএ ডিগ্রি করেন সিলেট মদন মোহন কলেজ থেকে। ১৯৯৮ শালে সিলেট ল’কলেজ থেকে এলএলবি পরীক্ষা দিয়ে চলে আসেন লন্ডনে।
সালেহ হামিদী অদম্য সাহসী এবং পরিশ্রমী। লন্ডন কর্মের সাথে চালাতে থাকেন পরবর্তী শিক্ষা। লন্ডন মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি থেকে এল এল বি অনার্স পাশ করেন। শুরু করেন আইনি ব্যবসা। তিনি এখন ইমিগ্রেশন লয়ার। কায়েম করেছেন হামিদী ইমিগ্রেশন। এখন চলছে ফার্দার এডুকেশন। ইউনিভার্সিটি অফ ওয়েস্টমিনিস্টার’এ বার কম্প্লিট করলে হবেন ব্যারিস্টার। বন্ধু মহল আগবাড়িয়ে তাকে সবাই ডাকেন বারিস্টার সালেহ হামিদী। ইমিগ্রেশন লয়ার, ইমাম, খতিব, জনপ্রিয় টিভি প্রেজেন্টার লেকচারার সালেহ হামিদী বসে নেই। প্রতিষ্ঠা করেছেন গরীব এন্ড এতীম ট্রাস্ট ফান্ড। আর্তমানবতার সেবায় অনন্য এক দৃষ্টান্ত রেখে চলেছেন। কেউ যখন জিজ্ঞেস করে, আপনি এই প্রেরণা পেলেন কোথায়? শাইখ সালেহ হামিদী অকপটে বলেন, আমার প্রাণপ্রিয় উস্তাযুনাল মুকাররাম সিলেট তথা সারা বাংলার গৌরব, জামেয়া মাদানিয়ার প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপ্যাল হযরত মাওলানা হাবিবুর রাহমান সাহেব হলেন আমার আদর্শপুরুষ। যাঁর প্রেরণা, ভালোবাসা, দিকনির্দেশনাই আমাকে আজ এখানে, এত দূর নিয়ে এসেছে।
শাইখ সালেহ হামিদী আমাদের কওমির গৌরব। কওমি মাদরাসায় পড়ে সাধারণ জ্ঞানের ডিগ্রি নিয়ে কী রকম অবদান রাখা যায়, তার বাস্তব প্রমাণ হলেন তিনি। যদিও প্রত্যক্ষ জীবনে দাখিল আলিম ফাজিল কামিল বা বিএ পরীক্ষা দিতে অনেক কাঠখড় পোহাতে হয়েছে তাকে। আলেম-উলামা, বন্ধু-বান্ধব, ঘনিষ্ঠজনদের সমালোচনা, তিরস্কারকে উপেক্ষা করে তিনি সাহসের সাথে সামনের দিকে এগিয়েছেন।
গরীব এবং এতীম ট্রাস্ট ফান্ড বৃটেনের মাটিতে একটি একক বৃহ্ত্তর সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরীত হয়েছে। হাজার হাজার অসহায় মানুষ আজ এই ট্রাস্টের মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছে। হুইল চেয়ার, সেলাই মেশিন, রিকশা, শিতবস্ত্র বিতরণ, ঘরহীনদের ঘর বানানোসহ বিভিন্ন কর্মসুচি চালিয়ে যাচ্ছেন। গঠন করেছেন নাজাত ইসলামী মারকাজ। তিনি এই প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপ্যাল। ভবিষ্যতে সেখানে ইসলামিক শিক্ষার সাথে আধুনিক শিক্ষার সমন্বয়ে পুর্ণাঙ্গ হাইস্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখছেন তিনি। বয়স্কদের জন্য প্রতিষ্ঠা করেছেন সেবা ও সাপোর্ট সেন্টার। প্রতিষ্ঠা করেছেন হিফজখানা ও মসজিদ। আধুনিক একটি হাসাপাতালের পরিকল্পনা নিয়েও এগিয়ে যাচ্ছেন। রয়েছে এম্বুলেন্স সার্ভিসও। তার ভবিষ্যত পরিকল্পনা হলো গরীব এন্ড এতীম ট্রাস্টকে আন্তর্জাতিকমানের একটি সেবামুলক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরীত করা। পুরো বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের কাছে আর্তমানবতার সেবা পৌঁছিযে দেয়াই হলো মূল লক্ষ্য উদ্দেশ্য।
অদম্য প্রেরণার উৎস, অসীম সাহসী, পরিশ্রমী, ইসলাম ও মানবতার কল্যাণে নিবেদিত এই তারুণ্যের জন্য আমরা সকলে দোয়া করি- মহান রাব্বুল আলামীন যেন তার সকল কাজ-কর্মে আরো রহমত ও বরকত দান করেন। আমীন।