বাংলাদেশের বিচার ব্যাবস্থা নিয়ে নানা সমালোচনা থাকলেও নির্যাতিত মানুষের শেষ ভরসা বংলাদেশ বিচার বিভাগ। নাগরিক হিসেবে লজ্জা লাগে যখন সমাজের প্রথম শ্রেনীর একজন নাগরিক তার পুত্র হত্যার বিচার চাওয়ার মত বিশ্বস্থ যায়গা না পেয়ে বলতে বাধ্য হয় যে আমি আমার পুত্র হত্যার বিচার চাইনা। হ্যাঁ জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সাল আরেফীন দীপনের বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জনাব আবুল কাশেম ফজলুল হক স্যারের কথাই বলছি। তিনি যখন বলেছিলেন “এদেশের কোর্ট কাচারীতে বিচার হয় না। আমি ছেলে হত্যার বিচার চাইনা। বিচার চেয়ে কোন লাভ নেই।
বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থাহীনতা কী চরমে তা এখান থেকে কিছুটা অনুমান করা যায়। এই আস্থাহীনতার মধ্যে আমাদেরকে জোর করে আস্থা তৈরি করতে হয়। কারন বিকল্প যে নাই। বিচার বিভাগের প্রতি সকলের সর্বদা শ্রদ্ধাশীল থাকা উচিত। একটি উন্নত বা উন্নয়নশীল দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী বিভাগের নাম হচ্ছে বিচার বিভাগ। সুবিচার ছাড়া কোন জাতি উন্নত জাতিতে পরিনত হতে পারেনা। জাতিগত উন্নয়নের পূর্ব শর্ত আইন ও বিচার বিভাগের উন্নয়ন।
আমাদের সম্মানিত দায়িত্বশীলেরা উন্নয়নের বর্ণনা দিতে গিয়ে মুখে ফেনা তোলেন। তাদের চোখে শুধু উন্নয়নের জোয়ার। দেশ যেন উন্নয়নের সাগরে ডুবে যাচ্ছে। কিন্তু জনগনের চোখও কি সত্যি সত্যি উন্নয়নের জোয়ার দেখছে নাকি দীপনের বাবার মত হতাশা দেখছে? সব দেশেই কম-বেশি ক্ষমতার রাজনীতি হয়। কিন্তু বাংলাদেশের মত অন্ধ ক্ষমতার দ্বন্দ্ব আর কোথাও আছে বলে আমার জানা নেই।
গণতান্ত্রিক অন্যান্য দেশে ক্ষমতার লড়াই থাকলেও জবাবদেহীতার ভয়ও আছে। তাই তারা ক্ষমতায় থাকলেও গনতান্ত্রিক থাকে। কিন্তু আমাদের নেতা/নেত্রীরা ক্ষমতার বাইরে থাকলেই গনতন্ত্রের বয়ান করেন আর কোন ভাবে ক্ষমতায় যেতে পারলেই চোখ বন্ধ করে ক্ষমতা স্থায়ী করনের লক্ষে স্বৈরাচারী হয়ে উঠেন। অবশ্য এক্ষেত্রে আমাদের সাধারণ নাগরিকদের অসচেতনতাও কম দায়ী নয়। চোখের সামনে ঘঠে যাওয়া দুর্নীতিতে প্রতিবাদ বা প্রতিহত না করে না দেখার ভান করে চলে যাওয়া আমাদের নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার ।এ সুযোগে ক্রমে ক্রমে দুর্নীতিবাজরা ক্ষমতাধর হয়ে ওঠে। এবং এক সময় ক্ষমতা চলে যায় তাদের হাতে তখন দীপনের বাবার মত আফসোস করা ছাড়া আমাদের আর কিছুই করার থাকে না। কিন্তু এই আফসোস ই কি শেষ সমাধান? হামলা, মামলা, গ্রেফতার-গুম, খুন, ক্রস ফায়ার এ সব আমাদের দেশের স্বাভাবিক ব্যাপার। পুলিশ প্রশাসন সহ আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহীনি সবাই যেন একটি অদৃশ্য শক্তির নির্দেশে দায়িত্ব পালন করে। আইনের চোখে সবাই সমান হলেও আইন শৃংখলা রক্ষাওকারী বাহীনির চোখে সবাই সমান নয়। আইনানুগ গ্রেপ্তারের চেয়ে বেআইনি গ্রেপ্তারে যেন তাদের কৃতিত্ব বেশী। প্রকৃত অপরাধীরা স্বাধীনভাবে চলা ফেরা করে আর নির্দোষ মানুষেরা ভিন্ন মতের কারনে নিরপরাধ হয়েও জেলের ভিতর বন্দি জীবন কাটায়। আবার সাত খুনের আসামী জামাই আদরে থাকে আর মিথ্যা মামলার সন্দেহভাজন আসামীকে দিনের পর দিন রিমান্ডে নিয়ে পঙ্গু করে দেয়া হয়। কোন সেই অশুভ শক্তির নির্দেশে এমনটা হচ্ছে ? জানি না নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলার আসামী নুর হোসেনের প্রতি সেই অশুভ শক্তির সু-দৃষ্টি পড়েছে কি না। না হলে সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টিকারী লোমহর্ষক ঘটনার প্রধান আসামীকে কেন রিমান্ডে নেয়া হচ্ছে না? নিশ্চয় গডফাদারদের শুভ দৃষ্টি আছে ।
এই ভয়ংকর হত্যা মামলার তদন্ত সংস্থা ডিবি পুলিশ ৩৫ জনকে আসামী করে তদন্ত রিপোর্ট পাটিয়েছে গত আট এপ্রিল এবং নূর হোসেনকে গ্রেফতার দেখানো হল গত শুক্রবার। জানিনা তদন্তের স্বার্থে নাকি অশুভ শক্তির নির্দেশে নূর হোসেনের রিমান্ড আবেদন না করে কারাগারে পাটানো হল। অবশ্য কিছু দিন অপেক্ষা করলেই বুঝা যাবে। ধামাচাপা দিয়ে সত্যকে সাময়িক আড়াল করা গেলেও স্থায়ীভাবে মিঠিয়ে দেয়া যায় না। বাংলাদেশের প্রত্যেকটি জেলার প্রতিটি অঞ্চলে রয়েছে এরকম ছোট-বড় অসংখ্য নূর হোসেন। যারা সবসময় আইনের চোখ ফাঁকি দিয়ে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহীনির কাঁদে কাঁদ মিলিয়ে সমাজে বুক উচু করে চলাফেরা করে । গণদাবির প্রেক্ষিতে র্যাব-পুলিশের হাতে মাঝে মধ্যে দু’একজন ধরা খেলেও বাকীরা বহাল তবিয়তে আছে নিজ নিজ রাজত্বে। এরা সবসময়ই আইনের উর্ধ্বে। কারন এদের উপরে বটবৃক্ষের মত ছায়া দিয়ে আছেন গডফাদাররা। যাদের হাতে থাকে আইনের কল-কব্জা। তারা এতই ক্ষমতাবান যে চাইলে আইন দিয়ে আল্লার নাম পর্যন্ত মুছে দিতে পারে। এদেরই ছায়াতলে বেচে আছে, ভালো আছে নূর হসেনেরা। গ্রেফতার হলেও ভয় নেই কারন গ্রেফতারের পর যেখানে নেয়া হবে সেখানকার নিয়ন্ত্রণও গডফাদারদের হাতে। তাইত নারায়ণগঞ্জের নূর হোসেন গ্রেফতার হলেও রিমান্ড ছাড়া হাসি-খুশি মন নিয়ে ভালই আছে, নির্ভয়ে আছে।
ভাল থাকুক নূর হোসেনেরা। রিমান্ডে যাক সাধারন মানুষ। জেল খাটুক নির্দোষ মানুষ। নীরবে খেলা দেখুক সুশীল সমাজ। আক্ষেপ করতে থাকুক দীপনের বাবারা ।