গতকাল সকালে ফ্রান্সে কারা যেন আক্রমণ করে শতাধিক মানুষের জীবননাশ করেছে। টিভি ডিসপ্লেতে খবরটা বারবার প্রদর্শিত হচ্ছে। মৌলবাদীর সাম্প্রদায়িক মন কেনো যেন একবারের জন্যও গরজবোধ করলো না খবরটা একটু নেড়েচেড়ে পড়তে। নিউজফিডে দেখছি বড় বড় রাষ্ট্রের অণ্ডকোষহীন সামন্তবাদীরা ভীষণ কান্না জুড়ে দিয়েছে। স্বজাতির এ নিধনযজ্ঞে তারা যারপরনাই মর্মাহত। শত আফসোস আর মানবতার যুগপৎ মায়াবিষের মহড়া চলছে। আদরকান্নার মহাবাণী ছাড়ছে। লক্ষ্য করছি সমকামীর ডিজিটাল মাতাল মার্ক জুকার বার্গও ফেসবুক প্রোফাইলে ফ্রান্সের পতাকা সমেত ছবি জুড়ে দিয়ে কান্নার শরীরে ওম দিচ্ছে। মানবতাকে খামছে ধরছে, মনে হয় বহুদিন পর স্বামী-স্ত্রীর দীর্ঘ প্রতীক্ষার কাঙ্ক্ষিত মিলন। পুরো ওয়ালজুড়ে স্বজাতি বন্দনার মহা আয়োজন।
গোড়া সাম্প্রদায়িক মৌলবাদীর কোনো আগ্রহ দেখা গেল না এতে। দেখা যায় এ সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী কখনো কখনো সময় থাকলে কোন্ নায়িকার কী পছন্দ- এ জাতীয় খবর পড়ার সুযোগটা হাতছাড়া করে না, কিন্তু কী হলো! এতোগুলো মানুষ মারা যাওয়ার পর সারা বিশ্ব যেখানে কেঁপে ওঠলো, হোয়াইটহাউস থেক রাণী এলিজাবেথের রাজপ্রাসাদ শোকবাণীর মিছিলে দাঁড়িয়ে মুহ্যমান; সেখানে এ মৌলবাদী এরকম দুঃসাহস কোথায় পেলো?
মৌলবাদী জানে এ দুঃসাহসের উৎস আর দর্শন কী ?
মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক মোল্লার আবেগ আছে মানবতার প্রতি । মায়া-প্রেম, টানটুন সব আছে। অকারণে একটা জীবনও যেন প্রাণহানীর শিকার না হয়, কারো রক্তের ফোটা যেন কোনো জুলুমে না ঝরে- এটাই কামনা করে। এরচেয়ে আরো বেশি কামনা করে বিশ্বজুড়ে নিপীড়িত উম্মতে মুহম্মদিয়ার মুক্তির। জালিমের খড়ঙগপুরের নাগপাশ থেকে রেহাই পাক সারা দুনিয়ার মুসলিমেরা, এটাই রাতদিনে নীরব আরাধনা।
মৌলবাদীর মন চায় আজ নিহতদের প্রতি একটু মর্মহীন শোকবাণী ঢালতে! কিন্তু পরক্ষণে একটা দীর্ঘশ্বাসের গরম হাওয়া উদাস করে তুলে। নানান ফাঁকফোকর গলে বেরিয়ে আসা খবরে জানা, সময়ে সময়ে পথিবীজুড়ে মুসলিম নরনারীর জীবনদানের মর্মান্তিক কাহিনী। কাগজের সে খবরগুলো বেচাইন করে দেয়। মুহূর্তে ঝাপ্সা হয়ে যায় আলোভরা দু’টো চোখ। সূর্যালোকে ঠায় নেয়া দিগন্ত বিস্তৃত আকাশে মাথা তুলে তাকালে কোথাও একটু শান্তির পরশ অনুভব করতে পারে না। একে একে ভেসে আসে শতকালযাবত নানান দেশে নানানভাবে নিষ্পেষিত নিপীড়িত বড়-ছোট, যুব-বুড়ো বিভিন্ন বয়সী মুসলিমদের প্রতি নির্দয় নিগ্রহের অমানবিক চিত্র। করুণ ছবি।
কাশ্মীর, আরাকান, ফিলিস্তিন, ইরাক, আফগান ও জন্মভূমি বঙ্গদেশে বহুকাল থেকে চলমান শাসককুলের অমানবিক শাসনের করুণদশা। মৌলবাদীর রক্তমাংসের শরীরেও ভালোমন্দ যাচাই বাছাইয়ের বোধ আছে। কিন্তু বেঁচে থাকার জন্য ‘অতি উদার’ মানবিকতার পাঠ শূন্যের কোঠায়। এরকম হঠকারী শিক্ষাটা রপ্ত করতে পারে নি মৌলবাদগোষ্ঠী। যার কারণে অনেকের সাথে আওয়াজ মিলিয়ে সুর ধরে বলতে পারছে না। লিখতেও পারছে না। শ্রেণিকেন্দ্রিক নিষ্পেষিত মাত্র শতাধিক প্রাণের জন্য মানবতার দরদী হয়ে হৃদয় উগলে বেশ কিছু বলতে পারছে না। যেখনে ফ্রান্সের এক ঘটনায় শতাধিক প্রাণ গেল, সেখানে প্রতিদিন মুসলিম বিশ্বের নানা প্রান্তে কতশত দেহ বুলেটের আঘাতে ছিন্ন হচ্ছে; জুকার বার্গ থেকে থেকে নিয়ে মানবতাবাদী গোষ্টিগুলোকে যেখানে চোখ ফিরিয়ে তাকাতে দেকা যায় নি, প্যারিসের সামান্য এই ঘটনায় এই মৌলবাদী কেন অযথা চোখের জল বিনাশ করবে? তবুও বলি-
“সন্ত্রাসবাদ নিন্দাবাদ”
সাম্প্রদায়িক প্রতিক্রিয়াশীল মৌলবাদী এতো দ্রুত কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে নির্যাতিত নাম জানা-অজানা লাখো মুসলিম মা-বোনের আকাশছোঁয়া কান্না এখনো বুলতে পারে না। এইতো কিছুদিন আগে আফিয়া চলে গেলো মৌলবাদীদেরকে বিবেকের কাঠগড়ায় রেখে। প্রতিদিন মরছে কতো ভাইবোন। কত বাপ চাচা। দাদা নানা। সে সবের হিসাব কে রাখে? সে ভুলতে পারে না পশুদের হিংস্রতা। উগ্রতা। মৌলবাদীর স্মৃতিশক্তি এতো দুর্বলও না। চাইলেও কোনো কিছু আড়াল করে রাখতে পারে না। মৌলবাদী পারছে না তাদের বেদনার সমভাগ নিতে। যদি কোনোদিন প্রতিশ্রুতি ও সম্ভাবনা দেখে মুসলিমরা নিরাপদ -কথিত সন্ত্রাসবাদের যুদ্ধ থেকে,। সেদিন চিন্তা করবে তাদের জন্য একটা গোলাপের মালা পাঠানো যায় কিনা ।
লেখক : অনলাইন এ্যক্টিভিস্ট