বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ সন্ধ্যা ৬:২৩
Home / খোলা জানালা / জমিয়তের কাউন্সিল ও আমার কিছু দুঃখবোধ

জমিয়তের কাউন্সিল ও আমার কিছু দুঃখবোধ

অধ্যাপক শাইখ মুহাম্মাদ মামুনুল হক্ব::

mamunul haqueজমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ও প্রাচীনতম ইসলামী সংগঠন ৷ বৃটিশ-ভারতের স্বাধীকার আন্দোলন থেকে শুরু করে বিভক্ত-অবিভক্ত ভারতের ইস্যুতে মতপার্থক্য এবং পাকিস্তান আমলের অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশেও চলছে জমিয়তের কার্যক্রম ৷ জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ থেকে উলামায়ে ইসলামে রূপান্তরসহ স্পর্শকাতর অনেক পর্ব পেরিয়ে ঐতিহ্যবাহী সংগঠনটি আজ ইতিহাসের স্বাক্ষী ৷ ইসলামী রাজনীতির ক্রান্তিকালে ওলামায়ে কেরাম স্বাধীন বাংলাদেশে সর্বপ্রথম জমিয়তের ব্যানারেই রাজনৈতিক তৎপরতা শুরু করেছিল ৷ আশির দশকের গোড়ার দিকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে হাফেজ্জী হুজুরের আবির্ভাবকালে জমিয়ত কিছুটা নিস্প্রভ হয়ে পড়ে ৷ প্রথমে হাফেজ্জীর খেলাফতে অংশগ্রহণ করলেও কিছু মতপার্থক্যের প্রেক্ষিতে একপর্যায়ে দূরত্ব সৃষ্টি হয় ৷ হাফেজ্জী হুজুরের সূত্র ধরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে পরবর্তীতে খেলাফত আন্দোলন, খেলাফত মজলিস ও খেলাফতে ইসলামীর মতো সংগঠনগুলো জন্ম নিলেও কোনো একটি সংগঠনও স্বকীয়তা ও স্থায়িত্বের প্রশ্নে মানোত্তীর্ণ হতে পারে নি ৷ বিপুল সম্ভাবনা তৈরি করেও ধুমকেতুর মতো হারিয়ে যাওয়ার নিয়তিই মেনে নিতে হয়েছে বা হচ্ছে ৷ জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কিছু উথ্বান-পতন থাকলেও একটা ধারাবাহিকতা ও স্থিতিশীলতার নজীর রয়েছে ৷ সাম্প্রতিক সময়ে হযরত শায়খুল হাদীস রহঃ ও মুফতী আমিনী রহঃএর ইন্তেকালে সৃষ্ট শূণ্যতা ও জমিয়ত নেতৃবৃন্দের বিশেষ তৎপরতায় সারা দেশে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সাংগঠনিক তৎপরতা বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং রাজনৈতিক ইসলামী নেতৃবৃন্দের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ জমিয়তের পতাকাতলে সমবেত ৷ এ কারণে দেশের ইসলামী আন্দোলনের ময়দানে তাদের নেতৃত্ব সবচেয়ে সংহত ৷ চরমোনাইর রাজনৈতিক দল ইসলামী আন্দোলন সাধারণ মহলে সম্প্রসারিত হলেও তাদের নেতৃত্ব ততটা পরিপক্ক নয় ৷

এত দীর্ঘ সময়ের পথচলা গৌরবময় ঐতিহ্যের ধারক এমন একটি সংগঠনের নেতৃত্ব পুনর্গঠন নিয়ে যা দেখলাম ও শুনলাম তাতে ইসলামী আন্দোলন ও দেওবন্দী চেতনার একজন কর্মী হিসেবে আমি বেদনাহত ও মর্মাহত ৷ আমার দুঃখ এটা নিয়ে নয় যে, সংগঠনের কাউন্সিলরদের মধ্যে নেতৃত্ব নির্বাচন নিয়ে দ্বিধাবিভক্তি হয়েছে ৷ এটা নিয়েও নয় যে, নেতৃত্বের প্যানেল তৈরির সময় সিনিয়র নেতৃবৃন্দের মধ্যে মতবিরোধ হয়েছে কিংবা কেউ কেউ সংক্ষুব্ধ হয়েছেন ৷ বরং আমার দুঃখ ও বেদনার কারণ হলো, শুধু নেতৃত্ব নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এমন একটি পরিস্থিতির উপক্রম হয়ে গেল যে, সংগঠনটি দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যেতে পারে ৷ শেষ পর্যন্ত মূল নেতৃত্ব আপোষ-রফা করে এযাত্রা সংগঠনটিকে রক্ষা করলেন ৷ jomiot potaka
আমার কষ্ট হলো, এখনো আমরা আমাদের পরিসরে এমন আস্থা সৃষ্টি করতে পারলাম না যে, নেতৃত্ব নিয়ে যত মতপার্থক্যই হোক না কেন সাংগঠনিক ও সাংবিধানিকভাবেই তার সমাধান হবে ৷ বিভাজনের কোনো উত্তাপ ছড়াবে না ৷ অন্দরমহলের খবরগুলো ভেতরেই হজম হবে ৷ এমন সংগঠন কি হতে পারে না যার কর্মীরা শতভাগ আস্থাশীল থাকবে যে, যত বিরোধই হোক বিভক্তি হবে না? সংগঠনে সকল সিদ্ধান্ত শতভাগ শূরায়ী নেযামের আলোকে গৃহীত হবে ৷

কঠোর উসূলের পাবন্দী আর মানোত্তীর্ণ আহলেশূরা দিয়ে পর্যায়ক্রমে সংগঠনকে গোছাতে পারলে হয়ত সে আশা করা যায় ৷ কিন্তু সেরকম কোনো পরিকল্পনা কি আমরা নিব?

লেখক: মুহাদ্দিস,অধ্যাপক, গবেষক।

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...