(শায়খ হাসান জামিল দা,বা.এর নির্দেশে লেখাটির বিরাট একটা অংশ একসাথে দেয়া হলো তবে গতকালও বলেছি ইতিহাস সংক্ষেপে বলা গেলেও গেলেও সংক্ষেপে লেখা যায় না। তাহলে অনেক প্রশ্নই রয়ে যায়। এজন্য বিষয়টা সংক্ষেপে লেখা সম্ভব হল না। দুঃখিত। ধারাবাহিক কয়েকটি পর্বে লেখাটা পোস্ট করা হবে ইনশাল্লাহ। আর বিষয়টা যেহেতু ঐতিহাসিক। এজন্য তথ্যগত ভুল ধরা পড়লে ইনবক্সে জানাবেন। কৃতজ্ঞ চিত্তে গ্রহণ করবো)
ইসলামের ইতিহাস শুরুলগ্ন থেকেই মানবতার ইতিহাস। মনুষত্ববোধ ও ভ্রাতৃত্ববোধের ইতিহাস। অন্যের জন্য নিজের স্বার্থ জলাঞ্জলি দেবার ইতিহাস।
একমাত্র ইসলামেই আমরা দেখতে পাই এর প্রথম অনুসারীগণ তথা সাহাবা (রা) ভ্রাতৃত্বেবোধের অতুলনীয় উপাখ্যান রচনা করেছেন।
মদীনার আনসার সাহাবা (রা) দূরদেশ থেকে আগত অপরিচিত মুহাজিরদেরকে কত উদার মনে গ্রহণ করে নিয়েছিলেন। তাদের সাথে আচরণ করেছিলেন আপন ভ্রাতার ন্যায়। আনসারগণ নিজেদের ঘর-বাড়িতে মুহাজির সাহাবা (রা)কে নিঃসঙ্কোচে থাকতে দিয়েছিলেন। নিজেদের জায়গা জমি ও বাগানও দান করেছিলেন চাষাবাদ করার জন্য। সাহাবা (রা)এর এই জামাত পরম ভ্রাতৃত্ববোধ ও নিজ স্বার্থ বিসর্জন দেয়ার এমন ইতিহাস রচনা করেছিলেন যার তুলনা অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। যুদ্ধের ময়দানে আহত হয়ে মৃত পথযাত্রী পীপাসার্ত সাহাবী নিজে পানি পান করেন নি। অপর ভাইকে পান করতে দিয়েছেন। আর নিজে অপরকে ইকরাম ও উপকার করার মহাতৃপ্তি বুকে নিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন।
বকরির একটি মাথা সাতঘর ঘুরে পুনরায় প্রথম হাদিয়াদাতার ঘরে ফেরার ঘটনা একমাত্র ইসলামী ইতিহাসেই পাওয়া যায়।
এজন্যই আল্লাহ তাআলা সুরা আনফালের একশত নয় নং আয়াতে এরশাদ করেন, তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর নেয়ামত স্মরণ কর। যখন তোমরা পরস্পরে ছিলে শত্রুভাবাপন্ন। তখন তিনি তোমাদের মাঝে হৃদ্যতা পয়দা করেছেন। ফলে তোমরা তার দয়ায় পরস্পরে ভাইয়ে পরিণত হয়ে গিয়েছ।
কিন্তু এক জায়গায় এসে ইতিহাসের এই পারস্পারিক সম্প্রীতি ও সৌহার্দের ধারা থমকে দাঁড়ায়। পাঠক মন দ্বিধায় পড়ে যায়। ইতিহাসের নিমগ্ন শিক্ষার্থীর মনে সন্দেহ জন্ম নেয়- কেন এমন হলো? যে মহান ব্যক্তিরা আল্লাহর নবীর সোহবতে আপন ভাই থেকেও আপন হয়ে গিয়েছিলেন তারা কেন এমনটা করলেন?
ইতিহাসের যেই বাঁকে এসে পাঠক স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে যায় তা হল উষ্ট্রীর যুদ্ধ ও সিফফীনের যুদ্ধ। যে যুদ্ধদ্বয় সংগঠিত হয়েছিল সাহাবা (রা)এর মাঝে। উভয় পক্ষেই ছিল অনেক সাহাবায়ে কেরাম (রা) এবং তাঁরা প্রত্যেকেই ছিলেন প্রথম সাঁড়ির।
ইসলামী ইতিহাসের নিমগ্ন পাঠক নিশ্চয় এ ব্যাপারে আমার সাথে একমত হবেন যে, সাহাবা (রা)এর মতো সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্বদের দ্বারা এমন ভ্রাতৃঘাতি যুদ্ধ হতে পারে না। যারা একজন অপরজনের জন্য ছিলেন জানকোরবান তারা নিজেরা নিজেদেরকে আঘাত করবেন এমনটা বিশ্বাস হয় না।
তাহলে নিশ্চয় এই দ্বন্দ সংঘাতের পেছনে একটি কুচক্রী মহলের গভীর চক্রান্ত ছিল। এর নেপথ্যে ছিল কোন অপশক্তির ইসলাম ধ্বংসের কূটকৌশল।
উষ্ট্রীর যুদ্ধ ও সিফফীনের যুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে হলে এবং এর নেপথ্যে কারা ছিল তাদেরকে চিনতে হলে আমাদেরকে ফিরে তাকাতে হবে আরো পিছনে। প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা)এর জীবনীতে।
রাসূলের জীবনীতে আমরা দেখতে পাই চরম দুষ্ট ও ইসলাম বিদ্বেষী ইহুদী জাতি বারবার আল্লাহর রাসূলকে হত্যা করার অপচেষ্টা করে। এ জন্য তারা বিভিন্ন কূটকৌশলের আশ্রয় নেয়। কখনো মুসলমান হয়ে মুনাফিক সেজে একই সফরে আল্লাহর রাসূলকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে। কখনো বা অতি আপন সেজে দাওয়াত দিয়ে বিষ খাওয়ায়। ইহুদীকর্তৃক রাসূলকে হত্যাচেষ্টার এমন অনেক ঘটনা আমরা নবীজীবনীতে দেখতে পাই। অথচ আল্লাহর মেহেরবানিতে এসবের একটিতেও তারা সফল হতে পারে নি। প্রতিবার মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় নবীকে বাঁচিয়েছেন। আর ধরা পড়ার পর আল্লাহর রাসূল ইহদীদেরকে কঠিন শাস্তি দিয়েছেন যাতে তারা সংশোধন হয়।
কিন্তু যে জাতির রক্তে মাংসে, অস্থি-মজ্জায় ইসলাম-বিদ্বেষ তারা কি কখনো নিবৃত হয়? এজন্য নবীদের হত্যাকারী অভিশপ্ত ইহুদী জাতি ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত ও অপতৎপরতা থেকে নিবৃত হল না।
রাসূলুল্লাহ (সা)এর ওফাতের পর প্রথম দুই খলীফা অর্থাৎ হযরত আবু বকর (রা) ও ওমর (রা)এর খেলাফত কালে তাদের বিচক্ষণতা ও কাফেরদের ব্যাপারে সদা সতর্কতা ও শরীয়ত নির্ধারিত কঠোরতার কারণে ইহুদী জাতি ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করতে পারেনি।
ওমর ফারুক (রা) এর ইন্তিকালের পর রাসূলের জামাতা যিননূরাইন হযরত উসমান বিন আফফান (রা) সর্বসম্মতিক্রমে খলীফাতুল মুসলিমিন হন। সাইয়িদুনা ওসমান (রা) ছিলেন প্রথম দুই খলীফা থেকে স্বভাব চরিত্রে অনেক দয়ালু ও কোমল। খলীফার এই স্বভাবজাত সরলতা ও কোমলতার সুযোগকে কাজে লাগাতে ভুল করল না ইহুদী জাতি। তারা ভেবে দেখল, পূর্ববর্তী দুই খলীফার সময় তাদের কঠোরতা ও দৃঢ় অবস্থানের কারণে কোন ফেতনা ফাসাদ করা সম্ভব হয়নি। ইসলামের কোন ক্ষতি করার সুযোগ হয়নি। উসমানের (রা) স্বভাব চরিত্র ন¤্র ও কোমল। তাকে সহজেই পরাস্ত করা যাবে। কারণ সহজেই তিনি কারো বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন না। এই সুযোগকে হাতছাড়া করা যাবে না। অভিশপ্ত ইহুদী গোষ্ঠী চিন্তা গবেষণা করে এও বের করে ফেলল যে, মুসলিম উম্মাহর শক্তিকে নিঃশেষ ও খর্ব করতে হলে প্রথমে তাদের নিজেদের মাঝে দ্বন্দ বিদ্বেষের বিষ ছড়াতে হবে। কারণ মুসলিম উম্মাহ যতক্ষণ পর্যন্ত এক ও নেক হয়ে থাকবে ততদিন তাদেরকে পরাজিত করা যাবে না।
কিন্তু অন্য ধর্মের রূপ ধরে এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করা যাবে না যে, এটাও তারা বিলক্ষণ বুঝতে সক্ষম হয়েছিল। তাই তাদের ইসলাম বিধ্বংসের কূটকৌশল বাস্তবায়ন করার জন্য এক দুরাচারী ইহুদীর বাচ্চা দাঁড়িয়ে গেল। নাম আব্দুল্লাহ বিন সাবা।
সাইয়িদুনা হযরত ওসমান (রা)কে হত্যার আসল হোতা এই আব্দুল্লাহ বিন সাবা। উষ্ট্রীর যুদ্ধ ও সিফফীনের যুদ্ধের খলনায়ক এই অভিশপ্ত ইহুদী। হযরত আলী (রা) ও মুআবিয়া (রা)এর মাঝে বিরোধ, অপরাপর বড় বড় কতিপয় সাহাবা (রা)এর মাঝে দ্বন্দ ও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের মূল চাবিকাঠি ছিল এই শয়তানটার হাতে। আজকের সুন্নী নিধনকারী শীয়াদের মহাগুরু ও মর্যাদাবান নেতাও এই কালপীট ইহুদী।
উষ্ট্রীর যুদ্ধকে বলা হয় জংগে জামাল। আর সিফফীনের যুদ্ধকে বলা হয় জংগে সিফফীন। পাঠকদের বোঝার সুবিধার্থে বলে নিচ্ছি যে, পুরা লেখাটার মাঝে আমি এই শব্দদ্বয় ব্যবহার করবো। কারণ কিতাব পত্রে এই শব্দদ্বয়ই বেশি ব্যবহৃত ও অতি পরিচিত।
সাহাবায়ে কেরাম (রা)এর মাঝে সংঘটিত জংগে জামাল ও জংগে সিফফীনের প্রকৃত ইতিহাস জানতে হলে আমাদের সর্বপ্রথম আব্দুল্লাহ বিন সাবার ষরযন্ত্র সম্পর্কে সম্যক অবগতি লাভ করতে হবে। তা না হলে সত্য ও হাকীকত অজানা রয়ে যাবে সবার। ফলে মনের মাঝে সৃষ্টি হবে আত্মসংহারী সাহাবা বিদ্বেষ।
কে এই আব্দুল্লাহ ইবনে সাবা?
আব্দুল্লাহ ইবনে সাবার জন্ম হয় ইয়েমেনে। এক কট্টর ইহুদী পরিবারে। সেখানেই তার কৈশোর ও যৌবন অতিবাহিত হয়। ইসলামের আগমনের পূর্বে ইয়েমেন ছিল পারস্য সা¤্রাজ্যের অধিনে। এজন্য সেখানে মূর্তী ও অগ্নিপূজকদেরও বসবাস ছিল ব্যাপক হারে। শুরুতে ইবনে সাবা এসব মুশরিকদের থেকে বিভিন্ন কুফুরি মতবাদ ও শাস্ত্র অধ্যয়ন করে।
শৈশব থেকেই ইবনে সাবার হৃদয়ে লালিত স্বপ্ন একটিইÑ আল্লাহর মনোনীত দ্বীন ইসলামকে ধ্বংস করা। এজন্য শিক্ষা-দীক্ষা শেষে সে তার উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করার জন্য বের হলো নিজ দেশ থেকে। এ উদ্দেশ্যে সে ভ্রমণ করতে লাগলো একের পর এক মুসলিম দেশ। এবং চূড়ান্ত সাফল্য অর্জন করার জন্য একসময় সে নিজেও উপরে উপরে মুসলমান হয়ে গেল। এসব হযরত উসমান (রা)এর খেলাফতকালের শুরুলগ্নের কথা। হিজরী তখন ত্রিশ সন।
ফিতনার সূচনা
ইবনে সাবা প্রথমে গেল হেজাজে। সেখানে সুবিধা করতে না পেরে পারি জমাল ইরাকে। সে সময় ইরাক ছিল বিভিন্ন ফিতনা ও ঝগড়া-ফাসাদের সূতীকাগার। বসরাতে হাকিম বিন জাবালা নামে এক নেহাত দুষ্ট প্রকৃতির লোক ছিল। সে ছিল নামে মুসলমান, কিন্তু পাক্কা মুনাফিক। হাকিম বিন জাবালা ছিল চোর ও ছিনতাইকারী। সে মুসলমানদের ধন-সম্পদ চুরি করতো আর যিম্মিদের ধনসম্পদ ছিনতাই করত। এজন্য আমীরূল মুমিনিন তাকে নিজ শহর ছেড়ে অন্য কোথাও যেতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন।
বসরায় এসে ইবনে সাবা যোগ্য অনুসারী পেয়ে গেল। সে হাকিম বিন জাবালার মস্তিষ্কে অতি সহজেই ইসলাম ও খেলাফাহ বিদ্বেষের বিষ ঢালতে সক্ষম হল। তৎকালীন খলীফা হযরত উসমান (রা)এর বিরুদ্ধে বিদ্বেষে হাকিব বিন জাবালার তনুমন পরিপূর্ণ হয়ে গেল। তার মস্তিষ্কে ইহুদী ও পৌত্তলিক মতবাদের মিশেলে এক নব্য ভ্রষ্ট চিন্তাধারার জন্ম হল।
হাকিম বিন জাবালা ও তার সম্প্রদায়ের দুষ্ট স্বভাবের কিছু লোক সাবায়ী চক্রান্তের দীক্ষা গ্রহণ করে গোপনে কাজ করতে লাগল বসরায়। এদিকে বসরাতে কাজ শেষ করে ইবনে সাবা চলে গেল কূফায়। কূফাও ছিল বসরার ন্যায় ফিতনা ফাসাদপূর্ণ একটি নগরি। এজন্য কূফাতেও খুব সহজে বেশ কিছু লোক ইবনে সাবার ভ্রান্ত চিন্তাধারায় প্রভাবিত হয়ে তার দলে যোগ দিল। এদের মাঝে অন্যতম হল আশতার নাখয়ী। সে ইয়ারমুকের জিহাদে অংশগ্রহণকারী একজন হওয়া সত্ত্বেও ইবনে সাবার চক্রান্ত জালে ফেঁসে গেল। ঐতিহাসিকদের মতে এর কারণ হতে পারে, হয়তো তার অজ্ঞতা নয়তো নেতৃত্বের লোভ। আশতার ছিল সমাজের নেতৃস্থানীয়। এজন্য তার অনেক অনুসারীও সাবায়ী চক্রাৗেল্প জাড়িত হল।
এসব চক্রান্ত ও কূটকৌশল বাস্তবায়নের কর্মতৎপরতা চলছিল অতি সংগোপনে। প্রথমটায় ধুরন্দর ইবনে সাবা প্রকাশ্যে কাউকে এসব ভ্রান্ত চিন্তাধারা বলার সাহস পায়নি। পাছে শুরুতেই সব ভেস্তে যায় কি না।
কূফায় অনুসারী তৈরী করে ইবনে সাবা নতুন অনুসারীর খোঁজে সফর করল মিশরে। মিশরে এসে দেখল এখানে নিজের ভ্রষ্টতা ও ফিতনা ছড়ানোর সুযোগ অবিরত। কারণ সে সময় মিশরের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ও মুজাহিদরা সবাই জিহাদে বের হয়ে গিয়েছিলেন। রয়ে গিলেছিল শুধু দুর্বল ঈমানের কিছু মুসলমান। ফলে সহজেই এখানকার দুর্বল মুসলমানদের একত্রিত করে ইবনে সাবা তার চিন্তার বিষ ঢেলে দিল। ফিতনাপূর্ণ এসব নতুন নতুন চিন্তা ও দর্শনে মিশরের দুর্বল মুসলমানরা সহজেই প্রভাবিত হল।
মিশরের যমিন ছিল ইবনে সাবার জন্য তুলনামূলক বেশি উর্বর। এজন্য সে মিশরে অবস্থান করতে শুরু করল। সেখানেই ঘরবাড়ি বানাল।
এভাবে ইবনে সাবা একের পর এক দেশ পরিভ্রমণ করে সঙ্গোপনে নিজের অনুসারী তৈরী করত। এক জায়গায় অনেক দিন অবস্থান করত না সে। ফিতনার বিষাক্ত বাতাস ছড়িয়ে দিয়েই সে অন্য এলাকায় চলে যেত।
কী ছিল দুরাচারী ইবনে সাবার চিন্তা-দর্শন
ইবনে সাবার মূল চিন্তাই ছিল মুসলিম উম্মাহর মাঝে সন্দেহের জাল বিস্তার করে ইসলামকে সমূলে ধ্বংস করা। এই টার্গেট বাস্তবায়নের জন্য সে তার অনুসারীদের মাঝে কিছু ভ্রষ্টতাপূর্ণ ধ্বংসাত্মক চিন্তা-চেতনা ছড়িয়ে দেয়। তার উদ্ভাভিত কিছু ভ্রান্ত চিন্তা-দর্শন।
১/ রাজআদের আকীদা।
শীয়াদের মৌলিক আকীদাগুলোর মাঝে অন্যতত একটি আকীদা হলো রাজআতের আকীদা। তারা ইবনে সাবার অনুসারী হওয়ার কারণে তাদের মাঝে এই আকীদা বিস্তার লাভ করেছে। রাজআতের আকীদার উৎপত্তি মজুসি ধর্ম তথা পৌত্তলিকতা থেকে। ইহুদীরা এই আকীদা পোষণ করে আল্লাহর ব্যাপারে মিথ্যারোপ করে।
শীয়াদের মাঝে এই আকীদার বিস্তার ঘটিয়েছে ইবনে সাবা। সে তার অনুসারীদেরকে বলল, যদি ঈসা (আ) পুনরায় দুনিয়াতে ফিরে আসতে পারেন তাহলে মুহাম্মদ (সা) কেন ফিরে আসবেন না। অথচ তিনি নবীদের সর্দার। অবশ্যই নবী মুহাম্মদ পুনরায় এ পৃথিবীতে আসবেন।
এক্ষেত্রে শীয়ারা আরো এক ধাপ এগিয়ে একথাও বলে যে, শুধু মুহাম্মদ (সা) নয়, তাদের বারো ইমামের পয়লা ইমাম হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু-ও দুনিয়াতে পুনরায় আগমন করবেন।
ইবনে সাবাকে যখন এই দাবীর পক্ষে দলীল দিতে বলা হল তখন সে বলল, আল্লাহ বলেছেন, ‘অবশ্যই যিনি আপনার উপর কোরআন নাযিল করেছেন তিনি আপনাকে মাআদে ফিরিয়ে দিবেন’ (সুরা কাছাছ: ৮৫)
তার মতে উপরোক্ত আয়াতে মাআদ উদ্দেশ্য হল দুনিয়া। সুতরাং রাসূল (সা) পুনরায় দুনিয়াতে আগমন করবেন।
২/ ওছীর আকীদা।
ইবনে সাবার দ্বিতীয় ভ্রষ্ট দর্শন হল ওছীর দর্শন। ইবনে সাবা তার অনুসারীদের বোঝাল, সমস্ত নবীর একজন ওছী ছিল। অর্থাৎ প্রত্যেক নবীই পরবর্তী কোন নবীকে ওছীয়ত করে ইন্তিকাল করতেন। প্রায় এক হাজার নবী পূর্বে গত হয়েছেন তাদের প্রত্যেকেরই ওছী ছিল। আর আমাদের নবী শেষ নবী। সকল নবীর যদি ওছী থাকে তাহলে আমাদের নবীর ওছী থাকবে না এটা অসম্ভব।
অবশ্যই মুহাম্মদ (সা) একজন ওছী রেখে গিয়েছেন। আর তিনি হলেন, হযরত আলী (রা)। একথা শুনে শ্রোতারা যখন তার নিন্দা করতে লাগল এবং বলল, এ একটা মিথ্যুক। যা আল্লাহর নবী করেননি ও বলেননি সে সেসব বানিয়ে বানিয়ে বলে বেড়াচ্ছে। তখন সে আলী (রা)কে জড়িয়ে মিথ্যা বানোয়াট কথা বলল। সে বলল, হযরত আলী স্বয়ং আমাকে বলেছেন তিনি নবী মুহাম্মদ (সা)এর ওছী। এ বলে ইবনে সাবা একটি জাল হাদীসও বানিয়ে ফেলল।
হাদীসটি হল, ‘রাসূল (সা) বলেছেন, আমি শেষ নবী এবং আলী শেষ ওছী বা ওলী’।
এসব ভ্রান্ত আকীদা ছড়িয়ে সে এতদিনে অনেক অনুসারী বানিয়ে ফেলল। এরা ছিল তিন শ্রেণীর লোক। একদল মুনাফিক মুসলমান, আরেকদল শাসনক্ষমতা ও নেতৃত্বলোভী, যারা অনেক আগে থেকেই বিভিন্ন এলাকার গভর্নর হতে চেয়েছিল। কিন্তু বিচক্ষণ খলীফা তাদের অসতোদ্দেশ্য বুঝতে পেরে কোন দায়িত্বই তাদের উপর অর্পণ করেননি। আর আরেকদল ছিল দুষ্ট প্রকৃতির বিশৃঙ্খলাসৃষ্টিকারী, যাদেরকে বিভিন্ন অপকর্মের কারণে ইতিপূর্বে আমীরুল মুমিনীন শাস্তি দিয়েছিলেন।
ইবনে সাবা এদের মনে খুব ভালো করে উসমান (রা) প্রতি বিদ্বেষ ও শত্রুতা প্রোথিত করতে সক্ষম হল। ইবনে সাবা তাদেরকে এই কুমন্ত্রণা দিল যে, যে ব্যক্তি রাসূলের ওছীকে মানে না, এবং তাকে দূরে সরিয়ে নিজেই খেলাফত ছিনিয়ে নিয়েছে তার চেয়ে জালেম ও অসৎ লোক আর কে আছে আর দুনিয়াতে? উসমান অন্যায়ভাবে আলী (রা)এর শাসনক্ষমতা ছিনতাই করেছে। খেলাফতের প্রকৃত হকদার হযরত আলী। সুতরাং যেভাবেই হোক উসমান কে বরখাস্ত করতেই হবে।
এসব কূটকৌশলের পাশাপাশি সে তা অনুসারীদেরকে বলল, আমরা আমাদের উদ্দেশ্যে সফল হতে হলে সরাসরি খলীফার বিরুদ্ধে কোন কিছু করা যাবে না। উত্তম পথ ও পদ্ধতিতে কাজ করতে হবে। এজন্য লোকজন জিজ্ঞেস করলে আমরা বলব, আমরা আমর বিল মারুফ এবং নাহি আনিল মুনকার করছি।
আব্দুল্লাহ ইবনে সাবার অন্তরে ছিল একদিকে ইসলামের প্রতি বিদ্বেষ এবং অন্যদিকে খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত ওসমান গনী (রা)এর প্রতি ব্যক্তিগত শত্রুতা। কারণ খলীফা হওয়া মানেই ইসলামের খেলাফত ব্যবস্থা অক্ষুণœ থাকা। আর খেলাফত ব্যবস্থা যতদিন টিকে থাকবে ততদিন ইসলামের কোন ক্ষতিসাধন করা যাবে না।
কিন্তু নিজেকে সে এতটা মুত্তাকী ও ধর্মভিরু রূপে প্রকাশ করত যে, ঘুণাক্ষরেও কোন সাধারণ মানুষ বুঝতে পারত না যে, তার মাঝে এত ষড়যন্ত্র ও ফিতনা লুকিয়ে আছে। সবাই তাকে অনেক বড় আবেদ ও আলেম ভাবত।
আব্দুল্লাহ ইবনে সাবা চিন্তা করে দেখল, ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের চক্রান্ত বাস্তবায়ন করতে হলে সর্বপ্রথম হযরত উসমান (রা)কে দুনিয়া থেকে বিদায় করতে হবে। ফলে সে হযরত উসমান (রা)কে খেলাফতের দায়িত্ব থেকে অপসারণ করতে তাঁর বিরদ্ধে প্রোপাগান্ডা শুরু করে দিল। ইবনে সাবা মিসর থেকে কূফা ও বসরার সাঙ্গ পাঙ্গদের সাথে পত্রালাপ শুরু করে দিল। পূর্ব পরিকল্পনামাফিক তারা মিথ্যা ও বানোয়াট চিঠির আদান প্রদান শুরু করল।
তারা সেসব এলাকার সাধারণ জনগনের মাঝে খলীফার বিষোদ্গার সম্বলিত পত্র প্রেরণ করতো। বসরাবাসীদের নিকট কূফা ও মিশর থেকে, মিশরবাসীদের কাছে বসরা ও কূফা থেকে এবং কূফাবাসীদের নিকট বসরা মিশর ও দামিশক থেকে এ মর্মে অনবরত পত্র আসতে থাকে যে, ঐ সকল এলাকার গভর্নররা জনগনের উপর এত জুলুম নির্যাতন করছে যে, তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এবং পত্রগুলোতে একথাও লেখা থাকতো যে, এদের জুলুম অন্যায় সত্ত্বেও খলীফা উসমান এদেরকে বরখাস্ত করছেন না।
যেহেতু কোন এলাকার গভর্নরই জুলুম অত্যাচার করছিলেন না তাই যাদের কাছে পত্র পৌঁছত তারা ধারনা করতো, শুধু আমাদের এলাকা ছাড়া অন্যসব এলাকাতেই সেখানকার গভর্নর জনগণের উপর নির্যাতনের স্টীমরোলার চালাচ্ছে। অথচ এসব জেনেও খলীফা তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না। খলীফা অন্যায়ভাবে তাদেরসে গভর্নরের পদে বহাল রাখছেন।
প্রত্যেক প্রদেশ ও প্রত্যেক এলাকা থেকে অনবরত রাজধানী মদীনাতেও পত্র আসছিল।
ইবনে সাবা ইসলামের শক্তি ও খেলাফতের সমুজ্জ্বল প্রভাব বিনষ্ট করার জন্য চক্রান্তের যে ফাঁদ পেতেছিল তা ছিল অত্যন্ত সূক্ষ্ম ও গভীর। সাধারণ কেউ এই চক্রান্তের পরিণতি ফলাফল কিছুই বুঝতে পারল না।
ইবনে সাবা প্রথমত দুজন সাহাবীর মাঝে ফারাক সৃষ্টি করে সাধারণ জনগণকে বোঝালো এদুজনের মাঝে হযরত আলী (রা) হকের উপর আছেন। আর উসমান (রা) আলী (রা)এর হক ছিনিয়ে নিয়েছেন।
তার চিন্তা-দর্শনের ভ্রান্তি ও গোমরাহি সাধারণ মুসলমান সামান্যও ঠাহর করতে পারল না।
এসব ফিতনার খবর খলীফার কানে পৌঁছতে দেরি হল না। খবর শোনার অব্যবহিত পরেই হযরত উসমান (রা) একদল সাহাবা (রা)কে জনগণের খোঁজখবর নিতে ও তাদেরকে বোঝাতে বিভিন্ন প্রদেশে প্রেরণ করলেন। মুহাম্মদ বিন মাসলামা (রা)কে পাঠালেন কূফায়। উসামা বিন যায়েদ (রা)কে বসরায়। আম্মার বিন ইয়াসির (রা)কে মিশরে এবং আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা)কে শামে। এসব এলাকার মাঝে শাম আগে থেকেই ফেতনা ফাসাদ থেকে মুক্ত ছিল। শামের গভর্নর ছিলেন হযরত আমীরে মুয়াবিয়া (রা)। রাজনীতি ও শাসনক্ষমতা পরিচালনায় হযরত মুয়াবিয়া ছিলেন অত্যন্ত কুশলী ও দক্ষতার অধিকারী। এজন্য শামের জনগণ তাকে খুউব মুহাব্বত ও শ্রদ্ধা করত। সেখানে তিনি যা বলতেন সবাই বিনাবাক্যে তা মেনে নিত। অন্য কারো কিছু বলার সুযোগ ছিল না।
এদিকে যাদেরকে হযরত উসমান (রা) বিভিন্ন এলাকায় জনগণের খবর নিতে ও তাদের বিভিন্ন অভিযোগ-সন্দেহের উত্তর দিতে পাঠিয়েছিলেন তারা সবাই ফিরে এলেন। শুধু আম্মার বিন ইয়াসির (রা) ফিরলেন না। তাকে পাঠানো হয়েছিল মিশরে। সেসময় সেখানে ইবনে সাবার ফিতনার রাজত্ব। আবার সেখানকার বড় ফিতনাবাজ সাওদান ও কিনানাও ছিল। এরা সবাই মিলে আম্মার বিন ইয়াসির (রা)এর মাথায় কিছুটা ফিতনার বীজ রোপন করতে পারল। সত্যাসত্য যাচাই না করে সহজেই আম্মার (রা) গভর্নরদের বিরুদ্ধে এই দুরাচারী চক্রান্তকারীদের কথা বিশ্বাস করে বসলেন। এদিকে আম্মার (রা) ফিরে না আসার কারণে দারুল খিলাফায় সবাই মনে করতে লাগল, হয়তো তিনি নিহত হয়েছেন। এসময় হযরত ওসমান (রা)এর নিকট খবর এলো হযরত আম্মার (রা) ইবনে সাবার সাথে যোগ দিয়েছেন।
এ খবর শুনে তাকে তিরস্কার করে হযরত উসমান (রা) একটি চিঠি লিখলেন। যার ফলে হযরত আম্মার (রা)এর নিকট সত্য প্রকাশ হয়ে গেলো এবং নিজের ভুল তিনি বুঝতে পারলেন। এজন্য আমীরুল মুমিনিনের নিকট ফিরে এসে ক্ষমা চাইলেন।
এ সময় ইবনে সাবা কয়েকজন সাহাবা (রা)কেও বিভ্রান্ত করার অপতৎপরতা চালাল। এজন্য উবাদা বিন সামেতের নিকট এসে তাকে বিভিন্ন উল্টাপাল্টা কথা বোঝাতে চেষ্টা করল। কিন্তু বিচক্ষণ সাহাবী হযরত উবাদা (রা) তার কূটকৌশল বুঝতে পেরে তাকে আটক করে ফেললেন এবং মুয়াবিয়া (রা) এর নিকট ধরে আনলেন।
হযরত মুআবিয়া ইবনে সাবাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেন। ইবনে সাবা সরাসরি সব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে সাধু সেজে বসল। মুআবিয়া (রা) ছিলেন যারপরনাই উদার ও মহৎপ্রাণ মানুষ। এজন্য ইবনে সাবাকে শাস্তি না দিয়ে তাকে সিরিয়া থেকে বের করে দিলেন। এরপর সে আবার মিশরে এসে আশ্রয় নিল। এবং ফেতনা ছড়ানো ও অনুসারী তৈরীর ঘৃণ্য তৎপরতা আরো জোড়েশোরে শুরু করে দিল।
এদিকে কূফার গভর্নর ওলীদ ইবনে আছ (রা) আশতার নখয়ীর অপতৎপরতা সম্পর্কে জেনে ফেললেন। কারণ সে সেখানে খলীফার বিরুদ্ধে বিষোদ্গারে লিপ্ত ছিল এবং জনগণের মাঝে ফিতনা সৃষ্টি করছিল। এজন্য ওলীদ বিন আছ (রা) আশতার নাখয়ী ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের অপতৎপরতা সম্পর্কে জানিয়ে খলীফার নিকট পত্র প্রেরণ করলেন। পত্র মারফত সবকিছু জেনে খলীফা ওলীদ (রা)কে নির্দেশ দিলেন, আশতার নাখয়ীকে তার অনুসারী সহ যেন মুআবিয়া (রা)এর নিকট প্রেরণ করা হয়।
কিন্তু মুআবিয়া (রা) ছিলেন, অত্যন্ত দয়ালু মানুষ। তিনি সহসাই কাউকে শাস্তি দিতেন না। এদের ব্যাপারেও তিনি কোন কঠোর সীদ্ধান্ত নিতে পারলেন না। তাই এই ফিতনাকারীদেরকে হযরত মুআবিয়া (রা) হিমসের গভর্নর আব্দুর রহমান ইবনে খালিদ ইবনে ওয়ালীদের নিকট পাঠিয়ে দিলেন। আব্দুর রহমান ইবনে খালীদ ছিলেন পিতার মতোই কঠোর স্বভাবের মানুষ। বাঘের হিং¯্রতা ও ক্ষিপ্রতা ছিল তার প্রকৃতিতে। এজন্য ফিতনাকারীদের কথা শোনামত্রই তিনি অগ্নিশর্মা হয়ে গেলেন। তাদেরকে খুউব শাসালেন, এরপর সবার সামনে অপমান অপদস্ত করে তাদেরকে কারাগারে বন্দী করলেন।
কারাগারে বন্দী হয়ে আশতার নাখয়ীরা সদলবলে তওবা করল। হাতজোড় করে আব্দুর রহমান ইবনে খালীদের নিকট মাফ চাইল। তাদের তওবার সংবাদ দিয়ে আব্দুর রহমান (রা) খলীফা হযরত উসমান (রা)এর নিকট পরামর্শ চেয়ে পত্র লিখলেন। খলীফা আশতারকে মদীনাতে পাঠিয়ে দিতে বললেন। আশতার মদীনাতে এসে আমীরুল মুমিনিনের নিকট সদলবলে জনসম্মুখে ক্ষমা চাইল ও তওবা করল। অতপর তাকে শামে পাঠিয়ে দেয়া হল। শামে পৌছার কিছুদিন পর বসরার ফিতনাবাজ ইয়াযিদ বিন কায়েসের পত্র এলো আশতারের কাছে যে, সে এখন প্রকাশ্যে বিদ্রোহ ও বিশৃংখলা শুরু করবে। তার সাহায্য চাই।
এই পত্র পড়ে আশতারের অনুচররা দ্বিধায় পড়ে গেল। কারণ তারা ইতিপূর্বে খলীফার দরবারে তওবা করে এসেছে। কিন্তু আশতার নাখয়ী তার পূর্ববর্তী কর্মকান্ডের উপর অটল রইল। পুনরায় ফিতনা ছড়ানোর দুরভিসন্ধীতে আবার সে কুফায় ফিরে এলো।
প্রকাশ্যে ফিতনা
এতদিন পর্যন্ত সাবায়ী ফিতনা গোপনীয়তার সাথে ছড়াচ্ছিল। শুধু আশতার নাখয়ী তার কিছু অনুচর সহ কুফাতে ও ইয়াযিদ বিন কায়েস বসরাতে সামান্য বিশৃংখলা সৃষ্টি করার সুযোগ পেয়েছিল।
হযরত সাঈদ ইবনে আছ (রা) খলীফার দরবার থেকে কুফায় ফিরে এসে দেখেন আশতার আগেই সেখানে এসেছে। এবং সে লোকজন জমায়েত করে সাঈদ বিন আছের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করে দিয়েছে। গভর্নর সাঈদ (রা)কে সে কুফায় প্রবেশ করতে দিবে না-এই অন্যায় দাবী নিয়ে সে ও তার সহচররা কুফায় বিশৃংখলা সৃষ্টি করে রেখেছিল।
কুফায় পৌছে এ দৃশ্য দেখে হযরত সাঈদ বিন আছ (রা) তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার অনুমতি নেয়ার জন্য খলীফার দরবারে ফিরে আসলেন। কিন্তু মুসলমানদের আপোসে ফেতনা-ফাসাদ ও লড়াই-ঝগড়া বিরোধী খলীফা হযরত উসমান (রা) সাঈদ ইবনে আছকে বরখাস্ত করে আবু মুসা আশআরী (রা)কে কুফার নতুন গভর্নর নিযুক্ত করলেন। এভাবে সেখানের ফিতনাকারীদের থামানো হল।
এসব ছিল চৌত্রিশ হিজরীর ঘটনা। এ সময়ের মাঝে ইবনে সাবা তার ভয়াবহ ধ্বংসাত্মক চিন্তাধারা অনেক মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হল। সবদেশেই ফিতনার মজবুত শিকড় বিস্তৃত হল। এর নেতৃত্বে যে কয়েকজন মানুষরূপী শয়তান ছিল তারা হল বসরায় ইয়াযিদ বিন কায়েস, কুফায় আশতার নাখয়ী আর হাকিম বিন জাবালা ও নাটের গুরু ইবনে সাবা মিশরে। দিনকে দিন ফিতনার বিস্তার ভয়াবহ রূপ ধারণ করছিল। খলীফাতুল মুসলিমিন হযরত উসমান ইবনে আফফান (রা)এর নামে বিষোদ্গার করে চিঠি প্রেরণ করা হচ্ছিল। মিথ্যা বানোয়াট সব অভিযোগ উত্থাপন করে খলীফাকে বরখাস্ত করার চক্রান্ত চলছিল।
এমনকি দুরাচারী খবিশ ফিতনাবাজরা মহান সাহাবায়ে কেরামের নাম দিয়ে পত্র প্রেরণের মতো ঘৃণ্য কাজ করতেও দ্বিধা করল না। বড় বড় সাহাবা (রা)এর নাম দিয়ে সাধারণ জনগণের প্রতি চিঠি প্রেরণ করা হচ্ছিল।
যেমন, তলহা ইবনে আব্দুল্লাহ, যুবাইর ইবনুল আওয়াম ও উম্মুল মুমিনিন হযরত আয়েশা (রা)।
কিন্তু প্রদেশ সমূহের মাঝে দূরত্ব থাকার কারণে যোগাযোগের ক্ষেত্রে অসুবিধে হচ্ছিল। সবজায়গায় বারবার প্রতিনিধি প্রেরণ করে জনগণকে সতর্ক করা সম্ভবপর ছিল না। এজন্য সাহাবা (রা)এর নামে এসব পত্র যে মিথ্যা ও বানোয়াট তা জনগণকে বোঝানো সম্ভব হলো না। ফলে কিছু সাধারণ মুসলমান ফিতনায় জড়িয়ে গেল আর কিছু লোক অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য দূরে থাকল।
( চলবে ইনশাল্লাহ )
লেখক: নাম: আব্দুল্লাহ তালহা, ইফতা: মা’হাদুল ইকতিসাদ ওয়াল ফিকহিল ইসলামী, রাজশাহী । কর্মস্থল: জামেয়া উসমানিয়া কাটাখালী, রাজশাহী