ধর্মের অপর নাম বিশ্বাস। যুক্তি তর্কের আলোকে দৃষ্টি/শ্রবণ শক্তির সহায়তায় বিশ্বাস স্থাপনের নাম ধর্ম নয়। বরং ধর্ম হচ্ছে লিপিবদ্ধ শৃঙ্খলিত প্রত্যাদেশকে আন্তরিক হৃদয়ে বিশ্বাস। অন্যভাবে বলা যায় ধর্ম হচ্ছে স্রষ্টাকে না দেখে স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাস।
পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ ধর্মে বিশ্বাসী অথবা এভাবে বলা উচিৎ যে, গুটিকয়েক ছাড়া পৃথিবীর সব মানুষ ধার্মিক। ফিতরাত বলে একটি আরবী শব্দ আছে, যার বাংলা অর্থ হতে পারে ‘সৃষ্টিগতভাবে পাওয়া স্বাভাবিক প্রবৃত্তি’। পবিত্র কুরআন ও আল্লাহ’র রাসূলের হাদীসে শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, পথ চলার সময় ডান পা বাড়াবার পর স্বাভাবিক নিয়মে বাম পা দিতে হবে। ডান পা এগিয়ে দিয়ে থেমে গিয়ে আবার ডান পা বাড়ানো যাবে না। এটি ‘ফিতরাত’ বা সৃষ্টিগতভাবে পাওয়া স্বাভাবিক প্রবৃত্তি’র কারণে হয়ে থাকে। একইভাবে ধর্মীয় বিধি-বিধান মানুক বা না মানুক, পৃথিবীর প্রায় সকল মানুষ সৃষ্টিগতভাবে ফিতরাতের কারণে স্রষ্টার অস্তিত্বকে অস্বীকার করতে পারে না। অতএব বলা যায় যে, ধর্মীয় বিশ্বাস মানুষের জন্মগত বৈশিষ্ট্য। কারণ একমাত্র ধর্মই মানুষকে অন্তহীন এক জীবনের জন্য প্রস্তুত হতে সহায়তা করে। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সরল-পথ প্রদর্শন করে।
ধর্মীয় বিশ্বাস মানুষের জন্মগত বৈশিষ্ট্য হবার অন্যতম কারণ হচ্ছে, মানুষ বেঁচে থাকে আশায়। আর কাঙ্ক্ষিত বস্তু অর্জনের সম্ভাবনায় বিশ্বাস করাকে আশা বলা হয়। সুতরাং বলা যায়, বিশ্বাসকে কেন্দ্র করেই বেঁচে থাকে মানুষ। আরও সহজভাবে বললে মানুষের বেঁচে থাকার উৎস হচ্ছে বিশ্বাস।
পৃথিবীতে কেবল দু’টি শ্রেণী স্রষ্টার অস্তিত্বকে অস্বীকার করে। ১) নাস্তিক। ২) অজ্ঞেয়বাদী। উইকিপিডিয়ার বর্ণনা অনুযায়ী “নাস্তিক্যবাদ (ইংরেজি ভাষায় যাকে Atheism বলা হয়) একটি দর্শনের নাম, যাতে ঈশ্বর বা স্রষ্টার অস্তিত্বকে স্বীকার করা হয়না। আস্তিক্যবাদ -এর বর্জনকেই নাস্তিক্যবাদ বলা যায়। নাস্তিক্যবাদকে ভিন্ন শব্দে নিরীশ্বরবাদ বা নাস্তিকতাবাদও বলা হয়। নাস্তিক্যবাদ বিশ্বাস নয় বরং অবিশ্বাস এবং যুক্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। বিশ্বাসকে খণ্ডন নয় বরং বিশ্বাসের অনুপস্থিতিই এখানে মুখ্য।”
“অজ্ঞেয়বাদ (ইংরেজি ভাষায় যাকে Agnosticism বলা হয়) একটি দর্শন, যা বিভিন্ন মৌলিক প্রশ্ন বা ধর্মীয় দাবি যেমন – ঈশ্বর-এর অস্তিত্ব ইত্যাদির সত্যতাকে মনে করে অজ্ঞাত ও অজ্ঞেয়, তথাপি জীবনযাপনের জন্য অগুরুত্বপূর্ণ। অজ্ঞেয়বাদ নাস্তিকতাবাদ হতে ভিন্ন। কেননা নাস্তিকতাবাদ ঈশ্বরের অস্তিত্বহীনতা দাবী করে, যেখানে অজ্ঞেয়বাদ এই দাবীর প্রশ্নেও সমান সন্দিহান। অজ্ঞেয়বাদকে ভিন্ন শব্দে সংশয়বাদও বলা যেতে পারে।”
নাস্তিকতা একপ্রকার মানসিক ব্যাধি। হাজার হাজার বছরের পৃথিবীর ইতিহাসে অল্প কিছু মানুষই এই ব্যাধিতে আক্রান্ত। যারা নাস্তিক্যবাদী ভাবধারায় বিশ্বাসী, তারা স্রষ্টার অস্তিত্বকে অস্বীকার করে। অথচ স্রষ্টা-বিহীন সৃষ্টি ধারণাতীত। তারা বলে প্রকৃতিগত ভাবে সবকিছু সৃষ্ট। কিন্তু তাদের দাবীতে তারাই সন্দিহান। স্রষ্টাকে দেখে না বলে স্রষ্টার অস্তিত্বকে অস্বীকার করলেও প্রকৃতির উপর তারা অন্ধবিশ্বাসী। এই দ্বিমুখী নীতি যাদের, তাদের মানসিকতা যে অসুস্থ এতে সন্দেহের অবকাশ নেই।
নাস্তিক্যবাদীরা সবসময় এক ধরণের আতংকে ভোগে এই ভেবে যে, মৃত্যুর পরের জগত সম্পর্কে তো কিছুই জানি না। যদি ধর্মের কথা সত্য হয়ে যায় তবে আমার কি হবে! এই কারণে অনেক অবিশ্বাসী জীবনের শেষ বেলায় স্রষ্টায় বিশ্বাসী হয়ে ওঠে।
পৃথিবীতে অনেকগুলো ধর্মের অস্তিত্ব থাকলেও ইসলামই কেবল সত্য ধর্ম। কেননা মহান স্রষ্টার নিকট ইসলাম ব্যতীত অন্য ধর্মের গ্রহণযোগ্যতা নেই। পবিত্র কুরআনে সূরা আল ইমরানের এক আয়াতে আল্লাহ্ তায়ালা বলেন “নিশ্চয়ই ইসলামই আল্লাহ’র একমাত্র মনোনীত ধর্ম।”
নাস্তিকতার মূল ভিত্তি স্রষ্টার অস্তিত্বকে অস্বীকার তথা ধর্মের বিরোধিতা হলেও তাদের কার্যক্রম কেবল ইসলাম ও মুসলমানদের বিরোধিতায় সীমাবদ্ধ। নাস্তিকতার বাহ্যিক পোশাক পরলেও আচার আচরণ, মন মানসিকতায় ইসলাম-বিদ্বেষী পরিচয়ই তাদের জন্য অধিক মানানসই। শুধুমাত্র ইসলাম বিদ্বেষের পিছনে যৌক্তিক কারণও রয়েছে। অন্য ধর্মাবলম্বীরা স্রষ্টার নির্দেশিত নীতিমালা অস্বীকার করে এমনিতেই ভ্রান্ত দলে পরিণত হয়েছে। আর পথহারা পথিককে নতুন করে ভ্রান্ত পথের সন্ধান দেয়ার প্রয়োজন নেই। এছাড়া ধর্মের প্রকৃত সৌন্দর্য বিকশিত হয়েছে একমাত্র ইসলামের মাধ্যমে। তাওহীদ, রিসালাত ও আখিরাতকে একত্রে ধারণ করেছে কেবল ইসলাম…….
লেখক : কলামিস্ট, অনলাইন এক্টিভিস্ট