সহীহ হাদীসের নামে মুজাফফার বিন মুহসিনের দাগাবাজি (২)
ফাঁদ পেতেছেন হানাফীদের নামাজ জাল হাদীসে পরিপূর্ণ, একথা প্রমাণের জন্য! অথচ তিনি নিজে জায়গায় জায়গায় জাল হাদীস দ্বারা দলীল দিয়েছেন। কখনো নিজের কথাকে হাদীসের মধ্যে যোগ করে সবগুলোকে রাসূলের হাদীস নামে চালিয়ে দিয়েছেন! কি পরিমাণ ধূর্ত এবং নিকৃষ্ট প্রকৃতির প্রাণি হলে এ ধরণের ঘৃণিত কাজ সম্ভব!
সবচেয়ে হাস্যকর এবং মজার কথা হল: বেচারা আরবী ভাষাও ভালো করে জানেন না। এজন্য জায়গায় জায়গায় তিনি হাদীসের অনুবাদ করতে হাস্যকর ভুল করেছেন। যদি তিনি মানুষদের ধোকা দেওয়ার নিয়তে এগুলো করেন, তাহলে তিনিতো নিকৃষ্ট কীট। আর যদি না জেনে করেন, তাহলে গণ্ডমূর্খ। আর এ কথা স্বীকৃত যে, গণ্ডমূর্খরা একটু বেশি লাফালাফি করে।
দেখুন, আমাদের ইমাম আবু হানিফা রাহ. বলেন, কোন বস্তুর মূল ছায়া বাদ বাদ দিয়ে আরো দ্বিগুন হওয়া পর্যন্ত জোহরের ওয়াক্ত বাকী থাকে। এর পক্ষে বুখারীতে হযরত আবু যার গিফারী থেকে হাদীস বর্ণিত হয়েছে, প্রথমে হাদীসটি দেখুন-
عَنْ أَبِي ذَرٍّ الْغِفَارِيِّ قَالَ كُنَّا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي سَفَرٍ فَأَرَادَ الْمُؤَذِّنُ أَنْ يُؤَذِّنَ لِلظُّهْرِ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَبْرِدْ ثُمَّ أَرَادَ أَنْ يُؤَذِّنَ فَقَالَ لَهُ أَبْرِدْ حَتَّى رَأَيْنَا فَيْءَ التُّلُولِ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ شِدَّةَ الْحَرِّ مِنْ فَيْحِ جَهَنَّمَ فَإِذَا اشْتَدَّ الْحَرُّ فَأَبْرِدُوا بِالصَّلَاةِ
প্রথমে মুজাফফার সাহেবের অনুবাদ দেখুন, আমরা এক সফরে রাসূল সা.’র সাথে ছিলাম। মুওয়াজ্জিন যোহরের আযান দেওয়ার ইচ্ছা করেন। তখন রাসূল সা. বললেন, তুমি ঠাণ্ডা কর। অতঃপর যখন আযান দেওয়ার ইচ্ছা করেন, তখন আবার বললেন, তালুল দেখা পর্যন্ত দেরী কর। অতঃপর তিনি বললেন, গরমের প্রকোপ জাহা্ন্নামের তাপ। সুতরাং যখন গরম বেশি হবে তখন তোমরা সালাত দেরী করে পড়। (জাল হাদীসের কবলে রাসূলুল্লার নামায- ১৩৭, আছ ছিরাত প্রকাশনি)
حَتَّى رَأَيْنَا فَيْءَ التُّلُولِ এ বাক্যের তিনি অনুবাদ করেছেন, তালুল দেখা পর্যন্ত দেরী কর। অথচ رَأَيْنَا হল জমা’ মুতাকাল্লীমের সীগা। আর্থ হল, আমরা দেখলাম। তালুল অর্থ-টিলা। ফাইউন অর্থ-ছায়া। পুরো বাক্যের সঠিক অনুবাদ হবে। অবশেষে আমরা টিলার ছায়া দেখতে পেলাম। এবার তার অনুবাদ এবং সঠিক অনুবাদের মধ্যে দেখুন কত পার্থক্য।
আমার কাছে আশ্চর্য লেগেছে যে উনি টিলার আরবী জানেন না! আসলে জানেন! কিন্তু উদ্দেশ্যমূলকভাবে এখানে অর্থ বিকৃত করেছেন। যাতে তার মূর্খ পাঠকরা বুঝতে না পারে। কারণ ঠিলা সাধারণত বিস্তৃত হয়ে থাকে। আর এমন বস্তুর ছায়া হয়ে থাকে সূর্য ঢলার অনেক পরে। তখন সোজা কোন বস্তুর ছায়া দ্বিগুন হয়ে যায়। যে কথা ইমাম নববী পরিস্কার ভাষঅয় লিখেছেন। দেখুন, শরহে নববী, (৫/১১৯)।
এ হাদীস দ্বারা তো প্রমাণিত হয়ে যায় যে ,রাসূল সা. ব্স্তুর ছায়া একগুণ থেকে বেশি হওয়ার পরও যোহরের নামাজ আদায় করেছেন। যেটা বলেছেন ইমাম আবু হানিফা। তিনিতো এ হাদীসের কোন সঠিক জবাব দিতে পারবেন না!তাই অনুবাদে জালিয়াতি করেছেন। যাতে তার বক্ত অনুসারীরা তার কূমতলব বুঝতে না পারে।
ধিক্কার মুযাফফার! এত নিচু হতে পার আপনারা! সঠিক করে আরবীর অনুবাদ করতে পারেন না; অথচ হাদীস নিয়ে লাফালাফি করেন। আগে কোন মাদরাসা প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়ে আরবীটা শিখে নাও। তারপর লাফালাফি করবা।(চলবে)
লেখক : মুফতি ও মুহাদ্দিস, আবু বকর সিদ্দক রা., ঢাকা।
আরও পড়ুন :
৪র্থ পর্ব- এ কেমন অসত্য প্রচার?