শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ বিকাল ৩:১১
Home / সাহাবা / প্রখ্যাত সাহাবি হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.)

প্রখ্যাত সাহাবি হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.)

Ehsan Bin _Komashisha

এহসান বিন মুজাহির ::
নাম মুয়াজ। ডাকনাম আবু আবদির রহমান। উপাধি কানজুল ওলামা, রাবক্ষানিজুল কুলুব ইমামুল ফুকাহা। ৬০৩ খ্রিস্টাব্দে হিজরতের ২০ বছর আগে পবিত্র মক্কা নগরীতে (ইয়াসরিব) জন্মগ্রহণ করেন। হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) অত্যন্ত বুদ্ধিমান ও অসাধারণ সাহসী ছিলেন। মেধা, প্রতিভা ও জ্ঞানের দিক থেকেও ছিলেন অসাধারণ। মন-মেজাজ, চলন-বলনেও ছিলেন অত্যন্ত বিনয়ী ও উদারমনা। ভোগ-বিলাসিতাকে মনপ্রাণে অপছন্দ করতেন। অতি সাদাসিধেভাবে জীবন অতিবাহিত করেছেন। জীবন চলায় জাঁকজমক ও চাকচিক্য থেকে ইচ্ছে করেই দূরে থাকতেন। প্রিয় নবী (সা.) পবিত্র মদিনায় আসার পর থেকে তাঁর সঙ্গেই দিন-কাল অতিবাহিত করেছেন। অল্প কয়দিনের মধ্যেই নবীজির সোহবত পেয়ে বর্ণাঢ্য সাহাবিদের মধ্যে অন্যতম হিসেবে পরিগণিত হলেন।
দুরন্ত সাহসী মুয়াজ ছিলেন একজন অন্যতম ফেকাহ বিশেষজ্ঞ, হাফেজে কোরআন, আদর্শ শিক্ষক, আপসহীন সেনাপতি, আদর্শ দূত, বিজয়ী সিপাহসালার ইত্যাদি গুণাবলিতে তিনি ছিলেন বৈশিষ্ট্যমন্ডিত। বিশিষ্ট সাহাবি হজরত মুয়াজ (রা.) নবুয়তের দ্বাদশ বর্ষে, তরুণ অবস্থায় ১৮ বছর বয়সে হজরত ইবনে উমায়ের (রা.) হাতে একত্ববাদের কালেমা পড়ে ইসলাম কবুল করেন। হজরত মুসআব ইবনে উমায়ের (রা.) ছিলেন মদিনায় প্রেরিত রাসূল (সা.) এর বিশ্বস্ত অন্যতম দূত।

সাহাবাইসলাম গ্রহণের পরবর্তী সময়ে হজ মৌসুমে হজরত মুসআব ইবনে উমায়ের (রা.) মক্কায় গমন করলেন। মদিনার নওমুসলিম ও মুশরিকদের একটি দলও তার সঙ্গ নিল। হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) ছিলেন এ কাফেলার একজন সদস্য। মক্কায় পৌঁছার পর পরই তারা হজরত রাসূলে আকরাম (সা.) এর পবিত্র সাক্ষাৎ লাভ করেন এবং সে সময়ই রাসূলের হাতে বায়াত গ্রহণ করেন। এ দলটি মক্কা থেকে ফিরে এসে পবিত্র মদিনার আনাচে-কানাচে শান্তির ধর্মের দাওয়াত সবার কাছে ছড়িয়ে দেন। বিচক্ষণ মুয়াজ মক্কা থেকে ঈমানি তেজ নিয়ে মদিনায় এলেন। তার দিল ঈমানের দরদে ভরপুর। ঈমান আনার পর থেকে মুয়াজের কাছে মূর্তিপূজা ও গায়রুল্লাহর ইবাদত আর প্রতিমা পূজা অসহ্য মনে হয়। মদিনা থেকে ফিরে এসে তিনি এলাকার তরুণ যুবকদের একত্রিত করে প্রতিজ্ঞা নিলেন প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে যেভাবেই হোক মূর্তিপূজা বন্ধ করে পবিত্র মদিনার ইজ্জত রক্ষা করবেন। এবার তাদের প্রতিশ্রুতি পালনের আন্দোলন শুরু। তারা ধীরে ধীরে মানুষকে প্রতিমা পূজার বিরুদ্ধে বোঝাতে শুরু করলেন এবং ইসলাম কবুলের দাওয়াত অব্যাহত রাখলেন। সময়ের ব্যবধানে তাদের আন্দোলনের ফলে হজরত আমর ইবনে জামুহসহ অসংখ্য গায়রুল্লাহ উপাসনাকারী প্রতিমা পূজা পরিহার করে ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় নেন। সফল হলেন তরুণ মুয়াজ ও তার সঙ্গীসাথীরা। আমর ইবনে জামুহ ছিলেন মদিনার বনু সালামা গোত্রের এক বড় সরদার। অন্য নেতাদের মতো তিনিও গাছের পূজা করতেন। তার একটি প্রতিমা ছিল। নাম ছিল ‘মানাত’। এ প্রতিমাটির প্রতি ছিল তার অগাধ ভক্তি ও অসীম ভালোবাসা। তিনি অতি যতœসহকারে সুগন্ধি মাখিয়ে দামি কাপড় (রেশমি) দিয়ে আবদ্ধ করে রাখতেন। হজরত মুয়াজের তরুণ বাহিনী একদিন রাতের আঁধারে চুপি চুপি মানাত নামক প্রতিমাটি উঠিয়ে নিয়ে বনু সালামা গোত্রের ময়লার ডাস্টবিনে ফেলে দেয়। সকালে ময়লা-আবর্জনার স্তূপে প্রতিমাটি মুখ থুবড়ে পড়ে থাকতে দেখে আমর ইবনে জামুহ ক্রন্দনস্বরে ব্যথিত গলায় বললেন, তোমাদের ধক্ষংস হোক, গত রাতে আমার আল্লাহর (প্রতিমা-মানাত) সঙ্গে যারা এমন বেয়াদবি আচরণ করেছে। তিনি প্রতিমাটিকে সে গর্ত থেকে তুলে নিয়ে ধুয়ে-মুছে আবার সে স্থানে রেখে দিলেন। মূর্তিকে ইশারা করে বললেন, ‘হে আমার ইলাহ, যদি আমি জানতাম কারা তোমার সঙ্গে এ আচরণ করেছে আমি তাদের প্রতি কঠোর হতাম, শাস্তি দিতাম। পরের দিন আবারও একই ঘটনা। সকালে তিনি আবারও গর্তে প্রতিমা পেয়ে তুলে ধুয়ে আগের স্থানে রেখে এলেন। আর ওইদিন তিনি প্রতিমাটির কাঁধে একটি তরবারি ঝুলিয়ে দিয়ে বললেন, আল্লাহর শপথ তুমি যদি সত্যিই ইলাহ হতে তাহলে এমনভাবে কুকুর ও তুমি একসঙ্গে ডাস্টবিনে পড়ে থাকতে না। ঠিক ওইদিন মুয়াজ (রা.) আমর ইবনে জামুহর কাছে গিয়ে তাওহিদের দাওয়াত দিলেন এবং ইল্লাল্লাহ সম্পর্কে ভালোভাবে বোঝালেন। আমর ইবনে জামুহ চিরজীবনের জন্য গায়রুল্লাহ ও প্রতিমা পূজা পরিহার করে হজরত মুয়াজের দাওয়াত কবুল করে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হলেন। বিভিন্ন যুদ্ধের সেনাপতি ও একজন আদর্শ শিক্ষকও ছিলেন তিনি। হজরত মুয়াজ (রা.) বেশিরভাগ সময়ই হজরত রাসূল (সা.) এর খেদমতে উপস্থিত থাকতেন। রাসূল (সা.) এর প্রতিটি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ মজলিসে তিনি সর্বদাই সরব হাজির থাকতেন। সময়-সুযোগে তিনি জানার জন্য রাসূল (সা.) এর কাছে বিভিন্ন সওয়াল করতেন। রাসূল (সা.) ও মুয়াজ (রা.) কে অত্যন্ত মহবক্ষত করতেন। তিনিও তাকে বিভিন্ন সময়ে সুযোগ করে তালিম-তারবিয়ত প্রদান করতেন।
হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) হিজরি ১৮ থেকে ১৯ সালে ৩৮ বছর বয়সে বায়তুল মুকাদ্দাস ও দামেস্কের মধ্যবর্তী এবং জর্দান তীরবর্তী ‘বিজান’ নামক স্থানে প্লেগ মহামারিতে আক্রান্ত হয়ে শাহাদাতবরণ করেন।

লেখক: যুগ্ন আহব্বায়ক, মৌলভীবাজার অনলাইন প্রেসক্লাব

https://www.facebook.com/ahsan.mujahir

About Abul Kalam Azad

এটাও পড়তে পারেন

সকল স্থাপনা থেকে স্বাধীনতাবিরোধীদের নাম মুছে ফেলার নির্দেশ

কমাশিসা : শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ দেশের সকল স্থাপনা থেকে স্বাধীনতাবিরোধীদের নাম মুছে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। ...