সাহাবি কাকে বলে?
মুআবিয়া রা, কি সাহাবি নন? (নাউযুবিল্লাহ)৷
তিনি সাহাবি না হলে সাহাবি আর কাকে বলে?
সাহাবি বলা হয়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে যার ঈমানের অবস্থায় স্বাক্ষাত হয়েছে এবং ঈমানের অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণও করেছেন৷ এতে সামান্য সময়ের জন্যে স্বাক্ষাতই হোক না কেনো৷ তিনিই সাহাবি৷ (তাদরীবুর রাবী: ২/৬৭২, আল-ইসাবাহ: ১/১৫৮,)
এই সংজ্ঞার উপর সমস্ত উলামায়ে উম্মত একমত৷ তাহলে মুআবিয়া রা,কে সাহাবি হওয়ার মর্যাদা থেকে জোর করে বের করে দেয়ার সাধ্য কার আছে? অথচ একদল হতভাগা সেই ব্যর্থ চেষ্টাই করে যাচ্ছে৷ আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের মতে রাসূল সা, এর সমস্ত সাহাবি আদিল বা ন্যায়-পরায়ণ। তাদের কেউই ফাসিক বা অগ্রহণযোগ্য নন। শরীয়তে ফাসিকের কোনো বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। অথচ হাদীস শাস্ত্রে প্রত্যেক সাহাবির হাদীসই গ্রহণযোগ্য। কারণ আমাদের নিকট-
الصحابة كلهم عدول
সমস্ত সাহাবি ন্যায়-পরায়ণ ও সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত।
সাহাবির মর্যাদা কী?
সাহাবায়ে কেরাম হলেন ঈমানের মাপকাঠি, হকের মানদণ্ড, ওহীর আমানতদার, শরীয়তের আলম-বরদার (পতাকাবাহী)৷ পবিত্র কুরআনে আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন সাহাবায়ে কেরামকে ঈমানের মাপকাঠি হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন৷ পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
فإن امنوا بمثل ما امنتم به فقد اهتدوا و إن تولوا فإنما هم في شقاق
“যদি তারা ঈমান আনে, যেরূপ তোমরা ঈমান এনেছ, তবে তারা হেদায়াতপ্রাপ্ত হবে। আর যদি তারা (এথেকে) মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে তারা হঠকারিতায় রয়েছে।” (সূরা বাক্বারা: ১৩৭)
এ তো গেলো ঈমানের মাপকাঠির প্রশ্ন৷ পাশাপাশি আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন সাহাবায়ে কেরামের মর্যাদার উপর পবিত্র কুরআনে অসংখ্য আয়াত নাযিল করেছেন৷ সময়, প্রেক্ষাপট, ঈমান আনয়ন প্রভৃতি প্রশ্নে তাঁদের স্তর বিন্যাসে কিছু তারতম্য এলেও সাহাবিত্ব এবং আল্লাহ তাআলার ক্ষমাপ্রাপ্তির আলোকে সবাই সমান৷
আল্লাহ তায়ালা বলেন-
أولئك هم المؤمنون حقا لهم درجت عند ربهم و مغفرة و رزق كريم.
“এমন সব লোকই (সাহাবিরা) সত্যিকারের মুমিন (যাদের ভেতর ও বাহির এক রকম এবং মুখ ও অন্তর ঐক্যবদ্ধ)। তাদের জন্য রয়েছে স্বীয় পরওয়ারদিগারের নিকট সুউচ্চ মর্যাদা ও মাগফিরাত এবং সম্মানজনক রিয্ক।” (সূরা আনফাল: ৪)
সূরা নিসার ৯৫ নং ও সূরা হাদীদের ১০নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন-
وكلا وعد الله الحسنى
“তাদের (মধ্যে পারস্পরিক তারতম্য থাকা সত্ত্বেও) সবাইকে আল্লাহ তা‘আলা হুসনা তথা উত্তম পরিণতির (জান্নাত ও মাগফিরাতের) ওয়াদা দিয়েছেন।”
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামদের ব্যাপারে উম্মতদের সতর্ক করে দিয়ে বলেন-
الله الله فى أصحابى لا تتخذوهم غرضا من بعدى فمن أحبهم فبحبى أحبهم ومن أبغضهم فببغضى أبغضهم
“সাবধান! তোমরা আমার সাহাবিগণের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর। আমার পরে তোমরা তাঁদেরকে (তিরস্কারের) লক্ষ্যবস্তু বানাইও না। যে ব্যক্তি তাঁদের প্রতি ভালোবাসা পোষণ করে সে আমার প্রতি ভালোবাসা বশেই তাঁদেরকে ভালোবাসে। আর যে ব্যক্তি তাঁদের প্রতি শত্রুতা ও বিদ্বেষ পোষণ করে সে আমার প্রতি বিদ্বেষবশত তাঁদের প্রতি শত্রুতা ও বিদ্বেষ পোষণ করে থাকে।” (তিরমিযী: ৩৮৬১, ইবনে হিব্বান: ২২৮৪, মুসনাদে আহমদ, খ.৪, পৃ.৮৭)
তিনি আরো ইরশাদ করেন-
لاَ تَسُبُّوا أَصْحَابِى فَلَوْ أَنَّ أَحَدَكُمْ أَنْفَقَ مِثْلَ أُحُدٍ ذَهَبًا مَا بَلَغَ مُدَّ أَحَدِهِمْ وَلاَ نَصِيفَهُ
“তোমরা আমার সাহাবিদেরকে গালি দিও না। তোমাদের মধ্যে যদি কেউ উহুদ সমপরিমাণ স্বর্ণও আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে, তবুও তাঁদের এক মুদ্দ বা তার অর্ধেক পরিমাণ (এক মুদ=১ রতল। আল্লামা শামী রাহ, বয়ান করেছেন যে, এক মুদ্দ ২৬০ দিরহামের সমপরিমাণ। দ্রষ্টব্য: আওযানে শরিয়্যাহ) আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করার সমতূল্য হবে না।” (সহীহ বুখারী: ৩৭১৭)
ইবনে আব্বাস রা, হতে বর্ণিত রাসূলুুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
من سب اصحابي فعليه لعنة الله والملائكة والناس اجمعين ”
“যারা আমার সাহাবিদেরকে গালি দেয়, তাদের প্রতি আল্লাহর, ফেরেস্তাদের, এবং জগতবাসীর অভিশাপ বর্ষিত হোক।” (তাবারানী: ১২৭০৯)
শিয়া সম্প্রদায়ের মতো সুন্নি নামধারী অনেকেও ইয়াযীদের সঙ্গে মুআবিয়া রা,কে দোষারোপ করে৷ উভয়কে এক পাল্লায় মাপে৷ এটি একটি মারাত্মক ভ্রান্তি, চরম পর্যায়ের অন্যায়৷ কেননা মুআবিয়া রা, হচ্ছেন একজন সম্মানিত ও গুরুত্বপূর্ণ সাহাবি৷ উপরে সাহাবির সংজ্ঞা ও ওহী লেখার বিবরণ থেকেও সুস্পষ্টভাবে প্রতিয়মান হয় যে, তিনি সাধারণ পর্যায়েরও কোনো সাহাবি নন, বরং গুরুত্বপূর্ণ, নির্বাচিত, ওহী লেখক ও একজন প্রাজ্ঞ ফকীহ সাহাবি৷
তাই আসুন, কতেক অপরিণামদর্শী, অভিশপ্ত সাহাবা বিদ্বেষির অপপ্রচার ও ইনসাফবিহীন, একপেশে ইতিহাস চর্চায় প্রভাবিত হয়ে একজন মুখলিস ও বুযুর্গ সাহাবীর প্রতি জুলুম না করি৷ তাঁর ব্যাপারে নিজের জবানকে হেফাজত করি৷ নতুবা দুনিয়া-আখেরাতে নিশ্চিত ক্ষতির মুখোমুখি হতে হবে নিঃসন্দেহে৷ আল্লাহ সবাইকে হেফাজত করুন৷