রবিবার, ৩রা নভেম্বর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ১২:২৮
Home / আমল / জনৈক ধোপা (লন্ড্রি ওয়ালার) না দেখা মুহাব্বাত !

জনৈক ধোপা (লন্ড্রি ওয়ালার) না দেখা মুহাব্বাত !

সংকলনে : ফাহমিদা বেগম ::

ধোপাহযরত নেজামুদ্দিন আউলিয়া রাহঃ প্রায়ই একটি কথা বলতেন-আমার থেকে তো ধোপার ছেলেটি ভাগ্যবান ! আমা থেকে তো এতো টুকুও হয়নি ! এবং বেহুশ হয়ে যেতেন !
মুরিদানরা একদিন জিজ্ঞেস করলেন হযরত বিষয় কি ? আপনি দেখি অচেনা অজানা এক ধুপার আলোচনা করেই বেহুশ হয়ে যান !
হযরত বললেন-এক ধোপার নিকট পাশের এক শাহী মহল থেকে প্রায়ই কাপড় ধৌত করার জন্য আসতো । ধুপা ও তার স্ত্রী সযত্নে তা ধৌত করে ইস্ত্রি করে মহলে পৌঁছে দিতো । তাদের এক ছেলে ছিলো । বড় হয়ে মা-বাপের কাজে সহায়তা করতে লাগে । শাহী মহল থেকে শাহজাদীর কাপড়ও ধৌত করার জন্য আসতো । ছেলে শাহজাদীর কাপড় ধৌত করতে করতে শাহজাদীর প্রেমে আসক্ত হয়ে পড়ে !
ছেলে প্রতিদিন শাহজাদীর কাপড় পৃথক করে খুব ভালো করে ধৌত করে পরিপাটি করে ভিন্ন ভাবে ইস্ত্রি করে দিতো ! এই ধারাবাহিকতা চলতে থাকে তার ! এদিকে মা-বাপ ছেলের মধ্যে পরিবর্তন দেখতে পান ! প্রতি মুহূর্ত কেমন যেন বদলে যাচ্ছে তাদের একমাত্র ছেলেটি ! মা জিজ্ঞেস করেন কি ব্যাপার কি হয়েছে তোর ? মা পর্যবেক্ষণ শুরু করেন ছেলের । অবশেষে মায়ের নিকট ধরা পড়ে ছেলে শাহজাদীর মুহাব্বাতে দেওয়ানা ! স্বামীকে ঘটনা বললেন বিস্তারিত । পিতা ছেলেকে কাপড় ধৌত করার কাজ থেকে নিষেধ করে দেন ! এদিকে ছেলে তার মাহবুবার কোন কাজ না পেয়ে দিন দিন অসুস্ত হয়ে পড়ে ! বাড়তে থাকে তার অসুস্ততা ! অবশেষে একদিন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে ছেলে !
ছেলের মৃত্যুর পর মা শাহজাদীর কাপড় ধৌত করে মহলে পাটাতেন । শাহজাদী কাপড় ধৌত ও পরিপাটিতে পরিবর্তন লক্ষন করতে পেয়ে ধুপার স্ত্রীকে মহলে ডেকে আনলেন ! জিজ্ঞেস করলেন আমার কাপড় কে ধৌত করে ? মা বললেন আমি নিজেই করি । শাহজাদী বলল এর আগে কে করতো ? মা বললেন আমি ই ! এবার শাহজাদী ধমকের শুরে বললেন আসল ঘটনা না বললে বিচারের মুখামুখি হতে হবে ! মা বিচারী ভয়ে আসল ঘটনা খুলে বললেন । কাপড় প্রথমে আমার ছেলে ধৌত করে ইস্ত্রি করে দিতো। তার পরিবর্তন দেখে তাকে বারন করি অবশেষে সে অসুস্ত হয়ে মারা যায় ! ঘটনা শুনে শাহজাদী সোয়ারি ডেকে এনে কিছু ফুল নিয়ে সেই ছেলের কবরে দিয়ে আসলেন ! শাহজাদীর অন্তরেও ছেলের প্রতি দুর্বলতা পরিলক্ষিত হয় ! প্রায়ই ছেলেটির কবরে গিয়ে ফুল দিতে দেখা যায় !

শাহজাদীহযরত নেজামুদ্দিন আউলিয়া রাহঃ এই ঘটনা বর্ণনা করে বলেন-এক মানুষ যদি না দেখে আরেক মানুষের প্রতি এতো মুহাব্বাত দেখাতে পারে তবে কেন আল্লাহর মুহাব্বাতে মানুষ বেক্বারার হতে পারেনা ? এক নাদেখা মানুষের মুহাব্বাতে আসক্ত হয়ে যদি মানুষের মিজাজের পরিবর্তন হতে পারে ! কেউ তার সমস্ত মেধা খরচ করে কাপড় ধৌত করে পরিপাটি করে দিয়ে আরেক মানুষকে আসক্ত করতে পারে ! তবে কেন আমরা আমাদের প্রতিপালকের প্রেমে আসক্ত হয়ে নামাজে একাগ্রচিত্তে আমাদের মিজাজ মেধাকে এক করতে পারিনা ? কিন্তু আমরা আল্লাহর ইবাদতকে এক বুঝা মনে করে আদায় করি ! যদি এক মানুষী শাহজাদী এক ধুপার কাজের প্রতি আসক্ত হয়ে তার মুহাব্বাতে প্রতিদিন তার কবরে ফুল দিতে যায় ! এক ধুপার কাজ যদি শাহজাদীর পসন্দ হয় ! তবে আমরা যদি আল্লাহর ইবাদতকে এরকম মুহাব্বাতে করি আল্লাহ তায়ালা কি আমাদের নামাজ রোজা ইবাদতকে সাদরে মুহাব্বাতের সাথে গ্রহন করবেননা ?
হযরত নেজামুদ্দিন আউলিয়া রাহঃ বলেন-ধুপার ছেলে এজন্য সফল যে,তার মুহাব্বাতকে শাহজাদী গ্রহন করে নিয়েছেন ! কিন্তু আমাদের শেষ পরিনতির কোন খবর নেই । আমাদের আমল ক্ববুল হবে ? না কি আমাদের আমাল আমাদের মুখের উপর ছুড়ে মারা হবে ? আল্লাহ যেভাবে নামাজ রোজা চান সেভাবে মুহব্বাতের সাথেও চান । নামাজ রোজা ইত্যাদি কোন মুস্তাহাব আমল নয়,বরং ফরজ আমল ।
আল্লাহ আমাদের তার মুহাব্বাতে আসক্ত হয়ে তার ইবাদত বন্দেগি করার তাউফিক্ব দিক । আমীন ।

(জুলফিক্বার নাক্বশবন্দির বয়ান থেকে )

About Abul Kalam Azad

এটাও পড়তে পারেন

সাহাবা রা.দের যুগে ২০ রাকাত তারাবীহ’র নামায (২য় পর্ব)

মুফতী মাসুম বিন্নুরী:: (দ্বিতীয় পর্ব) খলীফায়ে রাশেদ আমীরুল মুমিনীন হযরত উমার রা. কর্তৃক কায়েমকৃত সাহাবা ...