মুফতী মাসুম বিন্নুরী::
(দ্বিতীয় পর্ব)
খলীফায়ে রাশেদ আমীরুল মুমিনীন হযরত উমার রা. কর্তৃক কায়েমকৃত সাহাবা (রা.) যুগের তারাবীহ
حَدَّثَنَا عَلِيٌّ أنَا ابْنُ أَبِي ذِئْبٍ عَنْ يَزِيدَ بْنِ خُصَيْفَةَ عَنِ السَّائِبِ بْنِ يَزِيدَ قَالَ:كَانُوا يَقُومُونَ عَلَى عَهْدِ عُمَرَ فِي شَهْرِ رَمَضَانَ بِعِشْرِينَ رَكْعَةً، وَإِنْ كَانُوا لَيَقْرَءُونَ بِالْمِئِينَ مِنَ الْقُرْآنِ.
হাদীস নং- : হযরত সায়েব বিন ইয়াযীদ রা. বলেন, তাঁরাহযরত উমার রা.-এর যামানায় রমযান মাসে ২০ রাকাততারাবীহ’র নামায আদায় করতেন। আর তাঁরা কুরআন থেকেদুইশত আয়াতবিশিষ্ট সূরা তিলাওয়াত করতেন। (মুসনাদেআলী ইবনুল জাআদ-২৮২৫)
হাদীসটির স্তর : সহীহ, মাউকূফ। এ কিতাবের লেখক আল্লামাআলী বিন জাআদ রহ. ইমাম বুখারীর উস্তাদ। আর তাঁরউপরের রাবীগণ সকলেই বুখারী-মুসলিমের রাবী।
عَبْدُ الرَّزَّاقِ، عَنْ دَاوُدَ بْنِ قَيْسٍ، وَغَيْرِهِ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ يُوسُفَ، عَنِ السَّائِبِ بْنِ يَزِيدَ، أَنَّ عُمَرَ: جَمَعَ النَّاسَ فِي رَمَضَانَ عَلَى أُبَيِّ بْنِ كَعْبٍ، وَعَلَى تَمِيمٍ الدَّارِيِّ عَلَى إِحْدَى وَعِشْرِينَ رَكْعَة يَقْرَءُونَ بِالْمِئِينَ وَيَنْصَرِفُونَ عِنْدَ فُرُوعِ الْفَجْرِ
হাদীস নম্বর-৩০২ : হযরত সায়েব বিন ইয়াযীদ থেকে বর্ণিত, হযরত উমার রা. উবাই ইবনে কা’ব ও তামীম আদ্দারী রা.-এর মাধ্যমে একুশ রাকাত পড়তে মানুষকে একত্রিতকরেছেন। যাতে তাঁরা দুইশত আয়াত বিশিষ্ট সূরাগুলো পাঠকরতেন এবং ফজরের অল্প আগে নামায থেকে ফিরেযেতেন। (আব্দুর রযযাক: ৭৭৩০ পৃষ্ঠা: ৪/২৬০)
হাদীসটির স্তর: সহীহ, মাউকুফ। এ হাদীসের রাবীগণ সবাই-ই বুখারী/মুসলিমের ثقة “নির্ভরযোগ্য” রাবী যাদেরগ্রহণযোগ্যতা উম্মাতের নিকটে স্বীকৃত। সুতরাং সনদেরবিবেচনায় এ হাদীসটি অত্যন্ত উঁচু মানের সহীহ। শায়খ বিনবায রহ.-এর সমর্থনপ্রাপ্ত আরবের বিশিষ্ট শায়খ আব্দুল্লাহ বিনমুহাম্মাদ বিন আহমাদ আদদুআইশ রহ. বলেন: وهذا الإسناد رجاله ثقات رجال الصحيح. “এ হাদীসের রাবীগণ সবাই-ইনির্ভরযোগ্য, সহীহ হাদীসের রাবী”। (তাম্বীহুল কারীলিতাকবিয়াতি মা জ’আফাহুল আলবানী: ৩২ নম্বর হাদীসেরআলোচনায়)
وَقَدْ أَخْبَرَنَا أَبُو عَبْدِ اللَّهِ : الْحُسَيْنُ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ الْحُسَيْنِ بْنِ فَنْجُوَيْهِ الدِّينَوَرِىُّ بِالدَّامِغَانِ حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ إِسْحَاقَ السُّنِّىُّ أَخْبَرَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ عَبْدِ الْعَزِيزِ الْبَغَوِىُّ حَدَّثَنَا عَلِىُّ بْنُ الْجَعْدِ أَخْبَرَنَا ابْنُ أَبِى ذِئْبٍ عَنْ يَزِيدَ بْنِ خُصَيْفَةَ عَنِ السَّائِبِ بْنِ يَزِيدَ قَالَ : كَانُوا يَقُومُونَ عَلَى عَهْدِ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رَضِىَ اللَّهُ عَنْهُ فِى شَهْرِ رَمَضَانَ بِعِشْرِينَ رَكْعَةً قَالَ وَكَانُوا يَقْرَءُونَ بِالْمِئِين وَكَانُوا يَتَوَكَّئُونَ عَلَى عُصِيِّهِمْ فِى عَهْدِ عُثْمَانَ بْنِ عَفَّانَ رَضِىَ اللَّهُ عَنْهُ مِنْ شِدَّةِ الْقِيَامِ.
হাদীস নম্বর-৩০৩ : হযরত ইয়াযীদ বিন খুছইফা রহ. হযরতসায়েব বিন ইয়াযীদ রা. থেকে বর্ণনা করেন: তাঁরা হযরতউমার রা.-এর যামানায় রমাযান মাসে ২০ রাকাত তারাবীহ’রনামায আদায় করতেন। রাবী বলেন: তাঁরা দুইশত আয়াততিলাওয়াত করতেন। (সুনানুল কুবরা লিলবাইহাকী: ৪২৮৮)
হাদীসটির স্তর: সহীহ, মাউকুফ। হুসাইন বিন মুহাম্মাদ, আহমাদ বিন মুহাম্মাদ ও আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ ব্যতীত এহাদীসের রাবীগণ সবাই-ই বুখারী-মুসলিমের রাবী। আর উক্ততিনজন রাবীই উঁচু মাপের মুহাদ্দিস এবং বিশিষ্ট ইমাম।
ইবনে শিরওয়াইহ রহ.-এর বরাত দিয়ে ইমাম জাহাবী রহ. হুসাইন বিন মুহাম্মাদকে ثقة “নির্ভরযোগ্য” বলেছেন। (সিয়ারু আলামিন নুবালা: তবকা- ২২, রাবী নম্বর- ২২৪) আহমাদ বিন মুহাম্মাদ বিন ইসহাক রহ. হাফেজে হাদীস। তাঁরপরিচয় দিতে গিয়ে ইমাম জাহাবী রহ. বলেন: الإِمَامُ الحَافِظُ الثِّقَةُ الرحَّال “তিনি ইমাম, হাফেজ, নির্ভরযোগ্য”। (সিয়ারুআলামিন নুবালা: তবকা- ২০, রাবী নম্বর- ১৭৮) আল্লামাখলীলী বলেন: حافظ عارف ثقة “তিনি হাফেজ, দক্ষ এবংনির্ভরযোগ্য”। (ছিকাতু মিম্মাল লাম ইয়াকা’ ফিল কুতুবিসসিত্তাহ: ১৮৭) আর আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ বিন আব্দুল আযীযআল বাগাবী রহ. হলেন প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস, ফকীহ ও মুফাসসিরইমাম বাগাবী রহ.। তাঁর পরিচয় দিতে গিয়ে ইমাম জাহাবীরহ. বলেন: الحَافِظُ، الإِمَامُ، الحُجَّةُ، “হাফেজ, ইমাম, হুজ্জাত”। (সিয়ারু আলামিন নুবালা: তবকা- ১৭, রাবী নম্বর- ২৪৭) আর ইমাম বাগাবীর ওপরের রাবীগণ সবাই-ই বুখারী-মুসলিমের প্রসিদ্ধ ثقةٌ “নির্ভরযোগ্য” রাবী। সুতরাংহাদীসটির সনদ অত্যন্ত উঁচু মানের সহীহ। এ কারণে متقدمينতথা পূর্ববর্তী মুহাদ্দিসগণের মধ্যে কেউই এহাদীসের সনদের ওপর কোন আপত্তি তোলেননি। আরপরবর্তীদের মধ্যে বহু সংখ্যাক মুহাদ্দিস হযরত সায়েব বিনইয়াযীদ রা. থেকে বর্ণিত ২০ রাকাত তারাবীহ’র এহাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। যেমন-
এক. ইমাম নববী রহ.। তিনি বলেন: وَاحْتَجَّ أَصْحَابُنَا بِمَا رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ وَغَيْرُهُ بِالْإِسْنَادِ الصَّحِيحِ عَنْ السَّائِبِ بْنِ يَزِيدَ الصَّحَابِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ “আমাদের সাথীগণ (২০ রাকাত তারাবীহ’রপক্ষে) সেসব হাদীস দ্বারা দলীল প্রদান করেন যা ইমামবাইহাকী এবং অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ সায়েব বিন ইয়াযীদ রা. থেকে সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন”। (শরহুল মুহাজ্জাব: ৩/৫২৭, খুলাছাতুল আহকাম: হাদীস নম্বর- ১৯৬১)
দুই. আল্লামা ওয়ালিউদ্দীন ইরাকী রহ.। তিনি বলেন: وَفِي سُنَنِ الْبَيْهَقِيّ بِإِسْنَادٍ صَحِيحٍ عَنْ السَّائِبِ بْنِ يَزِيدَ “সুনানুল কুবরালিলবাইহাকীতে হযরত সায়েব বিন ইয়াযীদ থেকে সহীহসনদে (২০ রাকাত তারাবীহ’র কথা) বর্ণিত আছে”। (শরহুততাকরীব: তারাবীহ’র রাকাত শিরোনামে)
তিন. আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী রহ.। তিনি বলেন: رَوَاهُ الْبَيْهَقِيّ بِإِسْنَاد صَحِيح عَن السَّائِب بن يزِيد الصَّحَابِيّ، “ইমামবাইহাকী রহ. হযরত সায়েব বিন ইয়াযীদ রা. থেকে সহীহসনদে (২০ রাকাত তারাবীহ’র কথা) বর্ণনা করেছেন”। (উমদাতুল কারী: রাতের নামায অধ্যায়)
চার. আল্লামা শিহাবুদ্দীন কসতলানী রহ.। তিনি বলেন: وفي سنن البيهقي بإسناد صحيح كما قال ابن العراقي في شرح التقريب عن السائب بن يزيد رضي الله عنه قال: كانوا يقومون على عهد عمر بن الخطاب في شهر رمضان بعشرين ركعة. “সুনানুল কুবরালিলবাইহাকীতে হযরত সায়েব বিন ইয়াযীদ থেকে সহীহসনদে বর্ণিত রয়েছে যে, হযরত উমার রা.-এর যুগে রমাযানমাসে তাঁরা ২০ রাকাত (তারাবীহ) পড়তেন। অনুরূপ বর্ণনাকরেছেন আল্লামা ইরাকীও তাঁর শরহুত তাকরীব নামককিতাবে। (ইরশাদুস সারী: তারাবীহ অধ্যায়)
পাঁচ. আরবের বিশিষ্ট শায়খ আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ বিনআহমাদ আদ দুআইশ রহ.। তিনি বলেন: وهذا إسناد رجاله ثقات “এ হাদীসের রাবীগণ সবাই-ই নির্ভরযোগ্য। (তাম্বীহুলকারী লি তাকবিয়াতি মা জ’আফাহুল আলবানী: ৩২ নম্বরহাদীসের আলোচনায়)
সায়েব বিন ইয়াযীদ থেকে বর্ণিত এ হাদীসটি ইমাম বাইহাকীরহ. আরও একটি সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন যা নিম্নে পেশকরা হলো।
أَخْبَرَنَا أَبُو طَاهِرٍ الْفَقِيهُ قَالَ: أَخْبَرَنَا أَبُو عُثْمَانَ الْبَصْرِيُّ قَالَ: حَدَّثَنَا أَبُو أَحْمَدَ مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ الْوَهَّابِ قَالَ: أَخْبَرَنَا خَالِدُ بْنُ مَخْلَدٍ قَالَ: حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ جَعْفَرٍ قَالَ: حَدَّثَنِي يَزِيدُ بْنُ خُصَيْفَةَ، عَنِ السَّائِبِ بْنِ يَزِيدَ قَالَ: كُنَّا نَقُومُ فِي زَمَانِ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ بِعِشْرِينَ رَكْعَةً وَالْوِتْرِ
হাদীস নম্বর-৩০৪ : হযরত সায়েব বিন ইয়াযীদ রা. বর্ণনাকরেন: আমরা হযরত উমার রা.-এর যামানায় রমাযান মাসে২০ রাকাত তারাবীহ’র নামায এবং বিতির আদায় করতাম। (মা’রিফাতুস সুনান ওয়াল আসার লিলবাইহাকী: ৫৪০৯)
হাদীসটির স্তর : সহীহ, মাউকুফ। আবু তাহির, আবু উসমানও আবু আহমাদ ব্যতীত এ হাদীসের রাবীগণ সবাই-ই বুখারী-মুসলিমের রাবী। আর উক্ত তিনজন রাবীই উঁচু মানেরমুহাদ্দিস এবং বিশিষ্ট ইমাম। সুতরাং হাদীসটি সহীহ।
আবু তাহির বিন মাহমাশ উচ্চ পর্যায়ের মুহাদ্দিস, ইমাম ওফকীহ। ইমাম জাহাবী তাঁর পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন: وَكَانَإِمَامَ أَصْحَابِ الحَدِيْثِ وَمُسْنِدَهُم وَمُفْتِيَهُم. “তিনি ছিলেন হাদীসবিশারদদের ইমাম, সনদ বর্ণনাকারী এবং মুফতী। (সিয়ারুআলামিন নুবালা: তবকা- ২২, রাবী নম্বর- ১৬৮) আর আবুউসমান আল বাসারী রহ.-এর পরিচয় দিতে গিয়ে ইমামজাহাবী রহ. বলেন: الإِمَامُ القُدْوَةُ الزَّاهِد الصَّالِح، “তিনি ইমাম, অনুসরণীয়, দুনিয়াত্যাগী ও নেককার”। হাকেম আবু আব্দুল্লাহবলেন: قَالَ الحَاكِمُ: لَمْ أُرزقِ السَّمَاع مِنْهُ عَلَى أَنَّهُ كَانَ يحضُر منزلنَا، وَأَنبسط إِلَيْهِ. “তিনি আমাদের ঘরে আসতেন এবং আমি তাঁরসাথে খোলা-মেলা কথা বলতাম; কিন্তু তাঁর থেকে হাদীসশোনা আমার ভাগ্যে হয়নি”। আর হাকেম রহ.-এর পিতাবলেন: وَمَا رَأَيْتُ مِثْل اجْتهَادِه حَضَراً وَسَفَراً. “সফর ও মুকীমউভয় অবস্থায় তাঁর ইজতিহাদের মতো আমি আর কারওদেখিনি”। (সিয়ারু আলামিন নুবালা: তবকা- ১৯, রাবী নম্বর- ১৮৮) তাঁর থেকে হাদীস শোনা ভাগ্যে হয়নি বলে হাকেম রহ. যে মন্তব্য করেছেন সে মন্তব্যের ভাষাই সাক্ষ্য দেয় যে, তিনিহাকেমের দৃষ্টিতে একজন বড় ব্যক্তিত্ব ছিলেন। আর আবুআহমাদ মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব ثقة عارف“নির্ভরযোগ্য, হাদীস শাস্ত্রে অভিজ্ঞ”। (তাকরীব: ৬৮৭২) সুতরাং সনদের বিবেচনায় হাদীসটি উঁচু মানের সহীহ।
ইমাম যাইলাঈ রহ. ইমাম নববীর খুলাছাতুল আহকামেরবরাত দিয়ে বলেন: إسْنَادُهُ صَحِيحٌ، “হাদীসটির সনদ সহীহ”।এ মন্তব্যের ওপর ইমাম যাইলাঈর ভিন্ন কোন মন্তব্য নাথাকায় বুঝে আসে যে, তিনিও হাদীসটির সনদ সহীহ হওয়ারব্যাপারে ইমাম নববীর মন্তব্যের সাথে একমত। (নাসবুররায়াহ: তারাবীহ অধ্যায়)
মুল্লা আলী কারী রহ. বলেন: وَرَوَى الْبَيْهَقِيُّ فِي الْمَعْرِفَةِ عَنِ السَّائِبِ بْنِ يَزِيدَ قَالَ: كُنَّا نَقُومُ فِي زَمَنِ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ بِعِشْرِينَ رَكْعَةً وَالْوِتْرِ، قَالَ النَّوَوِيُّ فِي الْخُلَاصَةِ: إِسْنَادُهُ صَحِيحٌ. “ইমামবাইহাকী রহ. মা’রিফাতুস সুনান কিতাবে হযরত সায়েব বিনইয়াযীদ রা. থেকে বর্ণনা করেন যে, আমরা হযরত উমার রা.-এর যুগে ২০ রাকাত (তারাবীহ) এবং বিতির নামায পড়তাম।ইমাম নববী খুলাছাতুল আহকাম কিতাবে বলেন: এর সনদসহীহ। (মিরকাত: কিয়ামু শাহরি রমাযান অধ্যায়, হাদীসনম্বর- ১৩০৩ এর অধীনে)
হযরত উমর রা.-এর কায়েমকৃত তারাবীহ’র নামাযের রাকাতসংখ্যা কত ছিলো সে বিষয়ে হাদীস বর্ণনা করেছেন হযরতসায়েব বিন ইয়াজীদ রা.। তাঁর থেকে এ হাদীসটি বর্ণনাকরেছেনন তাঁর দুইজন ছাত্র। মুহাম্মাদ বিন ইউসুফ এবংইয়াজিদ বিন খুছায়ফা। তম্মধ্যে মুহাম্মাদ বিন ইউসুফেরছাত্রগণ রাকাত সংখ্যা বিভিন্ন বর্ণনা করেছেন। মুহাম্মাদ বিনইউসুফ থেকে ইয়াহইয়া বিন সাঈদ আল কত্তান বর্ণনা করেন১১ রাকাত। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা-৭৭৫৩) ইমামমালেক বর্ণনা করেন ১১ রাকাত। (মুয়াত্তা মালেক-৩৭৯) আব্দুল আজীজ বিন মুহাম্মাদ বর্ণনা করেন ১১ রাকাত। (সুনানে সাঈদ বিন মানছূর) মুহাম্মাদ বিন ইসহাক বর্ণনাকরেন ১৩ রাকাত। (কিয়ামুল লাইল লিলমারওয়াঝী) দাউদবিন কয়েস এবং অন্যান্যরা বর্ণনা করেন ২১ রাকাত। (আব্দুররযযাক: ৭৭৩০)
এর বিপরীতে হযরত ইয়াজীদ বিন খুছায়ফার ছাত্রগণ তাঁরথেকে সর্বসম্মতভাবে ২০ রাকাতই বর্ণনা করেছেন। ইয়াজীদবিন খুছায়ফা থেকে ইবনু আবি জিব বর্ণনা করেন ২০ রাকাত। (মুসনাদের ইবনুল জাআদ-২৮২৫, সুনানুল কুবরালিলবায়হাকী-৪২৮৮, ফজায়েলুল আওকাতলিলবায়হাকী-১২৭) মুহাম্মাদ বিন জাফর বর্ণনা করেন ২০রাকাত। (সুনানে ছুগরা লিলবায়হাকী-৮২১, মারেফাতুসসুনানি ওয়াল আছার লিলবায়হাকী-৫৪০৯)
উপরোক্ত বর্ণনা থেকে প্রমাণিত হয় যে, হযরত ইয়াজীদ বিনখুছায়ফা এ হাদীসটিকে যথাযথভাবে স্মরণে রাখতেপেরেছেন। এ কারণে তাঁর থেকে যে সকল ছাত্ররা বর্ণনাকরেছেন তাঁদের বর্ণনার মধ্যে কোন পার্থক্য ঘটেনি। সাথেসাথে হযরত উমর রা. ছাড়াও অন্যান্য সাহাবায়ে কিরাম, তাবেঈন, তাবে তাবেঈন এবং উম্মতের ব্যাপক আমলেরসাথে এ বর্ণনার হুবহু মিল রয়েছে। কিন্তু হযরত মুহাম্মাদ বিনইউসুফ নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী হওয়া সত্ত্বেও তিনি এহাদীসটিকে যথাযথভাবে স্মরণে রাখতে পারেননি। এ কারণেতাঁর থেকে যে সকল ছাত্ররা বর্ণনা করেছেন তাঁদের বর্ণনারমধ্যে রাকাত সংখ্যার পার্থক্য ঘটেছে। আবার হযরত উমর রা. ছাড়াও অন্যান্য সাহাবায়ে কিরাম, তাবেঈন, তাবে তাবেঈনএবং উম্মতের ব্যাপক আমলের সাথে সাংঘর্ষিক হয়েছে। এবিষয়গুলো সামনে রেখে হযরত মুহাম্মাদ বিন ইউসুফেরবর্ণনাসমূহের মধ্যে বিতির ব্যতীত ২০ রাকাতের বর্ণনাটাইকেবল গ্রহণ করা যেতে পারে যা মুসান্নাফে আব্দুর রয্যাকইতিপূর্বে বর্ণনা করা হয়েছে। আর ১১ এবং ১৩ রাকাতেরযেসকল বর্ণনা তাঁর থেকে মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, মুয়াত্তা মালেক, সুনানে সাঈদ বিন মানছূর এবং কিয়ামুললাইল কিতাবসমূহে বর্ণিত হয়েছে সেগুলো পরস্পর বিরোধী, ইয়াজীদ বিন খুছায়ফার বর্ননা এবং উম্মতের ব্যাপক আমলেরসাথে সাংঘর্ষিক হওয়ায় সেটাকে শায বা অপ্রবল বলা যেতেপারে। এ কারণে আল্লামা ইবনু আব্দিল বার রহ. ১১ রাকাতেরবর্ণনার পেশ করে তা ব্যাখ্যায় বলেন, الْأَغْلَبَ عِنْدِي فِي إِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً الْوَهْمُ وَاللَّهُ أَعْلَمُ আল্লাহ ভালো জানেন; তবে আমারনিকট এটাই প্রবল যে, ১১ রাকাতের বর্ণনাটি ভুল। (আলইস্তিযকার)
হযরত মুহাম্মাদ বিন ইউসুফ সূত্রে বর্ণিত ১১ রাকাতেরহাদীসের ব্যাপারে متقدمين তথা পূর্ববর্তী মুহাদ্দিসগণেরমধ্যে মিশ্র মন্তব্য থাকলেও ইয়াজীদ বিন খুছায়ফা সূত্রে বর্ণিত২০ রাকাতের হাদীসের সনদের ওপর পূর্ববর্তী কোন মুহাদ্দিসআপত্তি তোলেননি । আর পরবর্তী মুহাদ্দিসগণের অনেকেরথেকে হাদীসটি সহীহ হওয়ার ব্যাপারে জোরালো সমর্থনরয়েছে। সদ্য কয়েক দশক থেকে শায়খ নাসীব রেফাঈ, শায়খআলবানী এবং তাদের কতিপয় অনুসারী উম্মতের বৃহত্তরজনগোষ্ঠির আমল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ২০ রাকাত তারাবীহ’রসহীহ হাদীসের উপর আপত্তি তুলতে শুরু করেছে। এমনকিঅত্যন্ত নির্লজ্জভাবে ২০ রাকাত তারাবীহ’র আমল থেকেনিজেদেরকে সরিায়ে নিয়ে সরলমনা মানুষদেরকে সহীহহাদীসের প্রতি আহবানের নামে সে দিকে ডাকতে শুরুকরেছে। ইসলামের প্রকৃত রূপ সংরক্ষণ এবং উম্মতের ঐক্যঅটুট রাখতে এহেন কর্মকান্ড থেকে ফিরে আসা একান্তজরুরী।
أخبرنَا أَبُو عبد الله مَحْمُود بن أَحْمد بن عبد الرَّحْمَن الثَّقَفِيُّ بِأَصْبَهَانَ أَنَّ سَعِيدَ بْنَ أَبِي الرَّجَاءِ الصَّيْرَفِي أخْبرهُم قِرَاءَة عَلَيْهِ أَنا عبد الْوَاحِد بن أَحْمد الْبَقَّال أَنا عبيد الله بْنُ يَعْقُوبَ بْنِ إِسْحَاقَ أَنا جَدِّي إِسْحَاقُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ بْنِ مُحَمَّدِ بْنِ جَمِيلٍ أَنا أَحْمَدُ بْنُ مَنِيعٍ أَنا الْحَسَنُ بْنُ مُوسَى نَا أَبُو جَعْفَر الرَّازِيُّ عَنِ الرَّبِيعِ بْنِ أَنَسٍ عَنْ أَبِي الْعَالِيَةِ عَنْ أُبَيِّ بْنِ كَعْبٍ أَنَّ عُمَرَ أَمَرَ أُبَيًّا أَنْ يُصَلِّيَ بِالنَّاسِ فِي رَمَضَانَ فَقَالَ إِنَّ النَّاسَ يَصُومُونَ النَّهَار وَلَا يحسنون أَن (يقرؤا) فَلَوْ قَرَأْتَ الْقُرْآنَ عَلَيْهِمْ بِاللَّيْلِ فَقَالَ يَا أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ هَذَا (شَيْءٌ) لَمْ يَكُنْ فَقَالَ قَدْ عَلِمْتُ وَلَكِنَّهُ أَحْسَنُ فَصَلَّى بِهِمْ عِشْرِينَ رَكْعَة (رَوَاه ضِيَاءُ الدِّيْنِ الْمَقْدِسِي المتوفى: ٦٤۳هـ فِى كتابه: الأحاديث المختارة أو المستخرج من الأحاديث المختارة مما لم يخرجه البخاري ومسلم في صحيحيهما‘ رقم الحديث-۱۱۱٦)
হাদীস নম্বর-৩০৫: হযরত আবুল আলিয়া হযরত উবাই বিনকা’ব রা. থেকে বর্ণনা করেন যে, হযরত উমার রা. তাঁকেরমাযান মাসে মানুষদেরকে নামায পড়ানোর নির্দেশ দিয়েবললেন: মানুষ দিনের বেলায় রোজা রাখে। আর কুরআনভালোভাবে পড়তে পারে না। তুমি যদি রাতে তাদেরকেকুরআন শুনাতে! হযরত উবাই বললেন: হে আমীরুলমুমিনীন! এ নিয়ম তো অতীতে ছিলো না। হযরত উমার রা. বললেন: আমি তা জানি; তবে এ নিয়ম ভালো। হযরত উবাইবিন কা’ব রা. মানুষদেরকে নিয়ে বিশ রাকাত নামাযপড়ালেন। (ইমাম জিয়াউদ্দীন মাকদিসীর লিখিত আলআহাদীসুল মুখতারাহ: হাদীস নম্বর- ১১৬১, মুসনাদে আহমাদবিন মানী’র বরাতে কানযুল উম্মাল: হাদীস নম্বর- ২৩৪৭১)
হাদীসটির স্তর : হাসান, মাউকুফ। আহমাদ বিন মানী’রউসতাদ হাসান বিন মুসা বুখারী-মুসলিমের রাবী। আবুজা’ফর রাযী সত্যনিষ্ঠ, স্মৃতিশক্তি ভালো নয়। (তাকরীব: ৯১৬০) রবী’ বিন আনাস সত্যনিষ্ঠ। (আল কাশেফ: ১৫২৪) আর আবুল আলিয়া বুখারী-মুসলিমের রাবী। সুতরাংহাদীসটির সনদ হাসান। আহমাদ বিন মানী’ রহ. থেকে নিচেরদিকের রাবীগণ সবাই-ই মুসনাদে আহমাদ বিন মানী’ কিতাবটির বর্ণনাকারী মুহাদ্দিস। রিজাল শাস্ত্রের কেউতাদেরকে জঈফ বলে মন্তব্য করেননি। বরং সুনান ও মুসনাদকিতাবসমূহের বর্ণনাকারীদের সম্মৃদ্ধ তালিকায় তাঁদের নামঅন্তর্ভুক্ত করেছেন। এ সব রাবীদের জীবনী দেখুন ইবনেনুকতার লিখিত ‘আততাকঈদ লি-মা’রিফাতি রুয়াতিস সুনানওয়াল মাসানীদ’ কিতাবে এবং ইমাম জাহাবীর লিখিততারীখুল ইসলামে।
সারসংক্ষেপ : এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, হযরত উমাররা. হযরত উবাই ইবনে কাআব রা.কে ২০ রাকাত তারাবীহ’রনামায পড়াতে নির্দেশ দিয়েছেন। আর এটাই তারাবীহ’রসুন্নাত।
مَالِكٌ، عَنْ يَزِيدَ بْنِ رُومَانَ؛ أَنَّهُ قَالَ: كَانَ النَّاسُ يَقُومُونَ فِي زَمَانِ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ، فِي رَمَضَانَ، بِثَلاَثٍ وَعِشْرِينَ رَكْعَةً
হাদীস নম্বর-৩০৬ : হযরত ইয়াযীদ বিন রুমান রহ. বলেন: হযরত উমার ইবনুল খাত্তাব রা.-এর যুগে মানুষ বিশ রাকাতনামায আদায় করতেন। (মুওয়াত্তা মালেক: কিয়ামে রমাযানঅধ্যায়, হাদীস নম্বর-২৫১)
হাদীসটির স্তর : সহীহ, মুরসাল। ইয়াযীদ বিন রুমান যদিওউমার রা.-এর যুগ পাননি; তবুও হযরত উমার রা.-এর যুগে২০ রাকাত তারাবীহ’র বিষয়টি বহুল প্রচলিত। সাথে সাথেপূর্ববর্ণিত বহু সহীহ হাদীস দ্বারা এ বিষয়টি সমর্থিত। আরবহুল প্রচলিত কোন বিষয় বর্ণনা করতে নির্দিষ্ট সনদ বাসাক্ষীর প্রয়োজন হয় না। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারেযে, হযরত ইবনে আব্বাস রা. বলেন: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ يَوْمَ بَدْرٍ: «هَذَا جِبْرِيلُ، آخِذٌ بِرَأْسِ فَرَسِهِ، “বদরযুদ্ধের দিন নবী কারীম স. বললেন: এই তো জিবরাঈল, তাঁরঘোড়ার লাগাম ধরে আছেন”। (বুখারী: ৩৭০৫) বদর যুদ্ধেরময়দানের সংবাদ হযরত ইবনে আব্বাস রা. বর্ণনা করলেন।অথচ ইবনে আব্বাস রা.-এর নিজের ভাষ্য হলো: তখন তিনিঅতি অল্প বয়স্ক ছিলেন এবং মায়ের সাথে মক্কায় অবস্থানকরছিলেন। (বুখারী: ৪২৩৩) তাহলে হযরত ইবনে আব্বাসরা. অবশ্যই এ ঘটনাটি কারও মাধ্যমে শুনেছেন; কিন্তু তারনাম উল্লেখ না করে সরাসরি রসূলুল্লাহ স.-এর বাণী হিসেবেবর্ণনা করেছেন। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, বর্ণনাকারীনির্ভরযোগ্য হলে বা ঘটনা প্রসিদ্ধ হলে তখন নির্দিষ্ট কোনমাধ্যম উল্লেখ করা আবশ্যক নয় যার প্রচলন সাহাবায়েকিরামের মধ্যেও বিদ্যমান ছিলো।
২০ রাকাত তারাবীহ’র আমল বর্ণনাকারী ইয়াযীদ বিন রুমানরহ. কোন জঈফ বা মিথ্যাবাদী রাবী নন। এমনকি তিনিমুদাল্লিসও নন। তাঁর দ্বীনদারী এবং স্মৃতিশক্তির ওপর নির্ভরকরেছেন ইমাম বুখারী-মুসলিমসহ সব মুহাদ্দিসগণ। সাথেসাথে হযরত উমার রা.-এর যুগে ২০ রাকাত তারাবীহ’র কথাএকাধিক সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যা একটু আগেইআলোচনা করা হয়েছে। তাহলে ইয়াযীদ বিন রুমানের মতোনির্ভরযোগ্য রাবীর বর্ণনা কেন গ্রহণ করা হবে না? সনদবিচ্ছিন্নতার দোহাই দিয়ে এ হাদীসকে অস্বীকার করা হচ্ছে, অথচ নির্ভরযোগ্য রাবীর মুরসাল বর্ণনার সমার্থক হাদীসপাওয়া গেলে উক্ত মুরসাল হাদীসকে চার ইমামসহ বহু ইমামসহীহ বলে মন্তব্য করেছেন। সনদ বিচ্ছিন্নতার অজুহাতে শায়খআলবানী তাঁর সলাতুত তারাবীহ নামক গ্রন্থে হাদীসটিকেজঈফ বলেছেন। আর পূর্বোক্ত নীতিমালার আলোকে শায়খআলবানীর মন্তব্যকে খন্ডন করে আরবের বিশিষ্ট শায়খআব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ বিন আহমাদ আদ দুআইশ রহ. বলেন:أقول: في تضعيفه القيام بعشرين ركعة نظر فإنه ورد من روايات يقوي بعضها بعضًا ويدل على أن له أصلاً. “আলবানী কর্তৃক এহাদীসকে জঈফ বলে মন্তব্য করার ব্যাপারে আমার আপত্তিআছে। কারণ, ২০ রাকাত তারাবীহ’র বিষয়টি বিভিন্ন হাদীসেবর্ণিত হয়েছে; যা পরস্পর একটি অপরটিকে শক্তিশালী করে।আর এ কথার প্রমাণ বহন করে যে, আমলটির ভিত্তি রয়েছে”। (তাম্বীহুল কারী লিতাকবিয়াতি মা জ’আফাহুল আলবানী: ৩২ নম্বর হাদীসের আলোচনায়)
এ নীতির আলোকেই আমরা হযরত সুলাইমান আ’মাশ এবংআব্দুল আযীয বিন রুফাই’ এবং ইয়াহইয়া বিন সাঈদ আলআনসারীর হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করে থাকি। অথচ শায়খআলবানী ও তার অনুসারীগণ সেটাকে সনদ বিচ্ছন্নতারঅজুহাতে প্রত্যাখ্যান করে থাকেন। হাদীস দু’টি নিম্নে পেশকরছি।
حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، عَنْ مَالِك بْنِ أَنَسٍ، عَنْ يَحْيَى بْنِ سَعِيدٍ، أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ أَمَرَ رَجُلًا يُصَلِّي بِهِمْ عِشْرِينَ رَكْعَةً
হাদীস নম্বর-৩০৭ : হযরত ইয়াহইয়া বিন সাঈদ আলআনসারী বলেন: হযরত উমার ইবনুল খাত্তাব রা. একব্যক্তিকে নির্দেশ দিয়েছেন, তাদেরকে ২০ রাকাত নামাযপড়াতে। (ইবনে আবী শাইবা: ৭৭৬৪)
হাদীসটির স্তর : সহীহ-মুরসাল, মাউকুফ’। এ হাদীসেররাবীগণ সবাই-ই বুখারী-মুসলিমের রাবী।
حَدَّثَنَا حُمَيْدُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ حَسَنٍ، عَنْ عَبْدِ الْعَزِيزِ بْنِ رُفَيْعٍ قَالَ: كَانَ أُبَيُّ بْنُ كَعْبٍ يُصَلِّي بِالنَّاسِ فِي رَمَضَانَ بِالْمَدِينَةِ عِشْرِينَ رَكْعَةً، وَيُوتِرُ بِثَلَاثٍ
হাদীস নম্বর-৩০৮ : হযরত আব্দুল আযীয বিন রুফাই’ রহ. বলেন: হযরত উবাই বিন কা’ব রা. মদীনায় রমাযান মাসেমানুষদেরকে ২০ রাকাত নামায পড়াতেন। আর তিন রাকাতবিতির পড়াতেন । (ইবনে আবী শাইবা: ৭৭৬৬)
হাদীসটির স্তর : সহীহ-মুরসাল, মাউকুফ। এ হাদীসেররাবীগণ সবাই-ই বুখারী-মুসলিমের রাবী।
أخبرنَا يحيى بن يحيى أخبرنَا حَفْص بن غياث عَن الْأَعْمَش عَن زيد بن وهب، قَالَ: (كَانَ عبد الله بن مَسْعُود يُصَلِّي لنا فِي شهر رَمَضَان) فَيَنْصَرِف وَعَلِيهِ ليل، قَالَ الْأَعْمَش: كَانَ يُصَلِّي عشْرين رَكْعَة ويوتر بِثَلَاث) .
হাদীস নম্বর-৩০৯ : হযরত সুলাইমান আ’মাশ যায়েদ বিনওয়াহাব রহ. থেকে বর্ণনা করেন যে, হযরত আব্দুল্লাহ বিনমাসউদ রা. আমাদেরকে রমাযান মাসে নামায পড়াতেন এবংকিছুটা রাত থাকতে ফিরতেন। হযরত আ’মাশ বলেন: হযরতআব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা. ২০ রাকাত তারাবীহ এবং তিনরাকাত বিতির পড়াতেন। (কিয়ামুল লাইল লিলমারওয়াযী)
হাদীসটির স্তর : সহীহ-মুরসাল, মাউকুফ’। এ হাদীসেররাবীগণ সবাই-ই বুখারী-মুসলিমের রাবী। হযরত ইবনেমাসউদ রা.-এর সাথে হযরত আ’মাশের সাক্ষাৎ হয়নি; কিন্তুপূর্ণ হাদীসটি যখন তিনি হযরত যায়েদ বিন ওয়াহাবেরমাধ্যমে বর্ণনা করেছেন তখন রাকাত সংখ্যার বিষয়টিওহয়তো তাঁর মাধ্যমে বর্ণনা করেছেন।
حَدَّثَنَا ابْنُ نُمَيْرٍ ، عَنْ عَبْدِ الْمَلِكِ ، عَنْ عَطَاءٍ ، قَالَ : أَدْرَكْت النَّاسَ وَهُمْ يُصَلُّونَ ثَلاَثًا وَعِشْرِينَ رَكْعَةً بِالْوِتْرِ
হাদীস নম্বর-৩১০ : হযরত আতা রহ. বলেন: আমিলোকদেরকে বিতিরসহ ২৩ রাকাত নামায আদায় করতেদেখেছি। (ইবনে আবী শাইবা: ৭৭৭০)
হাদীসটির স্তর : এ হাদীসটির রাবীগণ সবাই-ই বুখারী-মুসলিমের রাবী এবং হাদীসটির সনদ সহীহ। শায়খ আব্দুল্লাহবিন মুহাম্মাদ বিন আহমাদ আদ দুআইশ রহ. বলেন: وهذا إسناد صحيح على شرط مسلم “এ হাদীসটি মুসলিমের শর্তেসহীহ”। (তাম্বীহুল কারী লিতাকবিয়াতি মা জ’আফাহুলআলবানী: ৩২ নম্বর হাদীসের আলোচনায়)
সারসংক্ষেপ : হযরত আতা বিন আবী রবাহ রহ. শতাধিকসাহাবায়ে কিরামের সাহচর্য লাভ করেছেন এবং তাঁদের থেকেদ্বীন শিখেছেন। সুতরাং হযরত আতা রহ. যে সব মানুষদেরকে২০ রাকাত তারাবীহ পড়তে দেখেছেন তাঁরা হলেন সাহাবায়েকিরাম এবং প্রবীণ তাবিঈগণ। তাদের আমল ২০ রাকাততারাবীহ মানেই সাহাবায়ে কিরামের সোনালী সমাজেরতারাবীহ।