বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ৯:১৫
Home / প্রতিদিন / কমাশিসার ২১দফা (১ম দফা)
কমাশিসা ২য় সিরিজ

কমাশিসার ২১দফা (১ম দফা)

একক কওমি শিক্ষাবোর্ড বাস্তবায়ন করুন।

dewbondখতিব তাজুল ইসলাম :: 

ঐক্যের বিকল্প নেই। যে কোনো ঐক্য মহত ও  সৃজনশীল। ঐক্যতেই শক্তি সামর্থ ও সৌন্দর্য।

পুরো বাংলাদেশে স্কুলের জন্য আছে একক শিক্ষাবোর্ড। আলিয়া মাদরাসার জন্য একক মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড। কেবল ব্যত্যয় ঘটে কওমি মাদরাসা শিক্ষার বেলায়। পাঁচ গণ্ডার কাছাকাছি বোর্ড। কেন? এই প্রশ্নটা স্বাভাবিকভাবেই আসে। প্রথম হয়তো কওমি মাদরাসা সৃষ্টির শুরুতে কোনো বোর্ড ছিল না। না হওয়াটাই স্বাভাবিক। জামাত তো তখন হয় যখন একাধিক কায়ার সমন্বয় ঘটে। ধীরে ধীরে বীজ থেকে চারা, চারা থেকে গাছ। গাছ থেকে ফুল, ফল। তারপর আবার বীজ ও চারার বিস্তৃতি। এভাবেই তো ফুল-ফল ও বৃক্ষের বিস্তার।

দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে কওমি মাদরাসাগুলো বিস্তার লাভ করেছে। আজ শত শত ছাড়িয়ে হাজারে হাজার। লাখের হিসাব কষলেও অত্যুক্তি হবে না। ইলমে ওহীর সুঘ্রাণ বিলাতে ইসলামের সোনালি যুগের সফলতা আবার ফিরিয়ে আনতে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর বিধান কায়েমের বারতা নিয়ে কওমি মাদরাসাগুলো নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

শুরু হয়েছিলো ডালিম গাছের ছায়ায়। ডালিম গাছের আশপাশ আজ পাকা দালানের ঘেরাও এর ভিতর। নয়নাভিরাম তোরণ আর তাজমহলের আদলে মসজিদে রশিদের শুভ্রতা আধুনিকতার জানান দেয়। যাকে বলে তরক্কি, উন্নতি পরিবর্তন। সময়ই আমাদের বলে দেয় এখন আমাদের কর্তব্য কি? আসরে হাজির বা বর্তমান সময়ের জরুরত সম্পর্কে যার ধারণ নেই, ফিকির নেই, চিন্তা নেই, বিচক্ষণতা নেই, তিনি একজন গাফিল মুর্দা ক্বলবের ইনসান বলে আমরা বিশ্বাস করি।

মানুষের জীবনে প্রথম আসে ব্যক্তি, তারপর পরিবার, তারপর সমাজ, তারপর রাষ্ট্র। বড় রাষ্ট্র ভেঙ্গে যখন ছোট রাষ্ট্র হয় বা নতুন রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটে তখন রাষ্ট্রনায়করা তার সাংসদদের নিয়ে দেশের চিন্তাশীল জ্ঞানীদের সমন্বয়ে শিক্ষার অবকাঠামো প্রথমেই স্থাপন করেন। কারণ শিক্ষামাধ্যমই হলো ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনার নিয়ামক শক্তির যোগানদাতা। শিক্ষার ঐক্যই মানুষকে চিন্তার ঐক্যে সহায়তা করে। ইসলামের সর্বপ্রথম বাণীই হলো পড়ো। পড়া ছাড়া উপায় নেই, মানুষত্বের পরিচয় নাই। তাই সমগ্র বিশ্বব্যাপী প্রতিটি দেশে আছে শিক্ষার বিন্যাস।

মাদারিসে কওমিয়াও আজ এর বােইরে নয়। এশিয়া থেকে ইউরোপ, আফ্রিকা, আমেরিকা সবখানে সরব পদচারণা। কারণ মুসলমানরা যেখানে, ওহীর শিক্ষা সেখানে।

এই উপমহাদেশের গুরুত্বপূর্ণ দেশ পাকিস্তান। অনেক চড়াই-উতরাইর পর আজ তারা শিক্ষার ক্ষেত্রে ঐক্যবদ্ধ। স্কুলের যেমন বোর্ড আছে তেমনি আছে মাদরাসার জন্য আলাদা বোর্ড । কওমি মাদরাসার জন্য যেমন আছে আলাদা বোর্ড তেমনি শিয়াদেরও আছে আলাদা বোর্ড। ব্রেলভীদেরও আছে আলাদা বোর্ড। থাক না, তাতে তো কোনো অসুবিধা নেই। সকল গোষ্ঠীই চায় তাদের চিন্তার ঐক্য শিক্ষার ঐক্য।

ভারতে তো খোদ মুসলমানরা অস্তিত্বের লড়াইয়ে লিপ্ত। সাম্প্রদায়িক হিন্দুরা বাংলাদেশ-পাকিস্তানে রাজার হালতে থাকলেও ভারতে মুসলমানদের জিন্দেগিকে বিষিয়ে তুলেছে। যেন তারা আর সহ্য করতে পারছে না। এই বিভীষিকাময় পরিস্থিতিতে তাদের ব্যাপারে বলার কিছু নেই। অবশ্য বলার মতো কিছু আছে যা অন্য কলামে।  বাংলাদেশের কওমি শিক্ষার্থীদের মতো তাদের মাঝেও আছে সেকেলে মনোভাব, একগুয়েমি।

যাক বাংলাদেশ স্বাধীন হলো আজ ৪৪ বছর। অখণ্ড পাকিস্তানে আমরা নিষ্পেষিত ছিলাম, কারও বা গোলাম ছিলাম, অধীন ছিলাম। কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশে আমরা এখন কার গোলাম? কার অধীনে? কে আমাদের হাত-পা বেঁধে রেখেছে? কে আমাদের উন্নতির অন্তরায় হয়ে দাঁড়ালো? তাহলে? স্কুলগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে এক বোর্ডের আওতায় আসতে পারলো, আলিয়া মাদরাসা আসলো; কওমি মাদরাসাগুলো কেনো আসতে পারে না? কোন সে অপারগতায় এখনো বিচ্ছিন্ন? কেনো বত্রিশ ভাগে ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে আছে?

আমাদের দৈন্যতা, অক্ষমতা, অদুরদর্শিতা, অপরিপক্ষতা, নির্বুদ্ধিতা, বিচক্ষণহীনতা অলসতা, হিংসা-বিদ্বেষ আর বোকামির বহিঃপ্রকাশই হলো বোর্ড নিয়ে শতধাবিভক্ত থাকা। শিক্ষার ঐক্য না থাকার কারণেই ডজনে ডজন রাজনৈতিক দল আর বিভাজন।

অতএব, আমাদের প্রস্তাব হলো সম্মিলিত কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড অথবা বেফাক কিংবা ভিন্ন ভিন্ন ছোট-বড় সকল বোর্ড মিলে ঐক্যমত হওয়া একান্ত জরুরী। আমরা বলছি না যে, সকল বোর্ডকে বিলুপ্ত করে এখনই এক বোর্ডে রূপান্তরিত করতে হবে; বরং ভাবতে হবে যে, সমগ্র বাংলাদেশে ৭টি বিভাগ আছে। প্রাথমিকভাবে বিভাগীয় পর্যায়ে ৭টি বোর্ডের অনুমোদন দেয়া যেতে পারে। যে সমস্ত বোর্ডের সদস্য অনুপাতিক হারে বেশি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তাদের সামনে নিয়ে আসা। যাদের বোর্ড ছোট বা একই বিভাগে একাধিক বোর্ড, তারা যেন মেহেরবাণী করে অনুমোদনপ্রাপ্ত বিভাগীয় বোর্ডে চলে আসেন।

আবার সবার সম্মতিক্রমে কেন্দ্রীয়ভাবে একটি বোর্ড থাকা উচিত। বিভাগীয় বোর্ডগুলো প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ করবে। কেন্দ্রীয় বোর্ড করবে উচ্চমাধ্যমিক ও উচ্চতর ক্লাসের পরীক্ষার নিয়ন্ত্রণ। সকল বিভাগীয় পরিচালক ও সদস্যগণ পদাধিকার বলে কেন্দ্রীয় বোর্ডের নির্বাহী সদস্য হবেন। এভাবে যদি আমরা একটা ঐক্যের কাঠামো তৈরী করতে সক্ষম হই; তখন আমাদের স্বপ্ন সফল হবে। ইখতেলাফাত কমে আসবে। বাতিলের দাঁতভাংগা জবাব দিতে সক্ষম হবো। সালাফী আর স্যেকুলারি যাই বলুন তাসের ঘরের মতো সব উড়ে যাবে।

ঐক্য সম্পর্কীয় কুরআনের আয়াত আর হাদিসের ঢের আপনারা লাগিয়ে দিতে পারবেন। কিন্তু বাস্তবে আমলে নিয়ে আসতে যদি পারি তখনই তা স্বার্থক হবে।

কমাশিসা ২য় সিরিজ
কমাশিসা ২য় সিরিজ

একক বোর্ড হলে যে ফায়দা বয়ে নিয়ে আসবে উম্মাহর জন্য:

  • ক) চিন্তার ঐক্য হবে।
  • খ) কুরআন-সুন্নাহর নির্দেশ পালন হবে।
  • গ) শিক্ষাব্যবস্থায় প্রাণচাঞ্চল্য আসবে।
  • ঘ) অবারিত শক্তি আসবে, বাতিলের মরণঘণ্টা বাজবে।
  • ঙ) ইখতেলাফাত কমে আসবে, পরস্পর ভালোবাসা-শ্রদ্ধা বাড়বে।
  • চ) বিশাল কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে, বেকারত্ব কমে আসবে।
  • ছ) ইক্বতেসাদিয়াতের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী উদ্যোগ নেয়া সম্ভব হবে।
  • জ) ধাপে ধাপে পুরো দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ইসলামিকরণ সম্ভব হবে।
  • ঝ) বাংলাভাষা ইসলামি জ্ঞানসম্ভারে সমৃদ্ধ হতে সহায়ক হবে।
  • ঞ) বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নিরাপদ খাকবে।

লেখক : খতিব ও গবেষক

আরও পড়ুন

কমাশিসার ১ম দফা : একক কওমি মাদরাসা বোর্ড প্রতিষ্ঠা করুন।

 কমাশিসার ২য় দফা : আধুনিক শিক্ষার সমন্বয় সাধিত সিলেবাস প্রণয়ন করুন।

কমাশিসার ৩য় দফা : ইসলামি শিক্ষা (মাদরাসা শিক্ষা) ও জাগতিক শিক্ষা (স্কুল শিক্ষা)কে দশম শ্রেণির পর আলাদা করুন। ইবতেদাইয়্যাহ ও মুতাওয়াসসিতাহ তথা প্রাইমারি ও নিম্নমাধ্যমিক বিভাগকে অধিক গুরুত্ব দিন।

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...