মঙ্গলবার, ৩০শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ সকাল ১১:৪০
Home / প্রতিদিন / রক্তের গ্রুপ ”কিউ” পজিটিভ

রক্তের গ্রুপ ”কিউ” পজিটিভ

Rashid Jamil_Komashishaরশীদ জামীল ::

মান আনতা?
আনা মুহতামিম।
উদখুলো ফিন-নার………
……… অনেক্ষণ পর ‘ইল্লা’ বলে কাউকে কাউকে ইসতেসনা করা হবে। কিয়ামতের দিন এমনটি হবে বলেই আমার ধারণা। আজ ছোটভাই Ishak Alomgir ছোট্ট একটি ঘটনা রেওয়াওত করেছে যার মূল প্রতিপাদ্য হল ”বাংলাদেশের প্রতিটি মাদরাসায় একজন করে প্রধানমন্ত্রী থাকেন”। ইসহাকের বয়স এখনো কম। আরো বড়ো হবে যখন, তখন বুঝবে প্রধানমন্ত্রী বলা ঠিক হয়নি। প্রধানমন্ত্রীকেও সংসদের সামনে জবাবদিহি করতেব হয়। বাংলাদেশের মুহতামিমগণকে আল্লাহর যমীনে কারো কাছেই জবাবদিহি করতে লাগে না। তাদের উপরে আল্লাহ ছাড়া আর কেউ নাই। (ইল্লা মা-শা আল্লাহ।)
একটি ছেলে ছুটি কাটিয়ে দেরিতে ফেরায় তাকে মেরে রক্তাক্ত হয়েছে। শুনে অবাক হইনি আমি। এই চিত্র আনকমন নয়। এক উস্তাদ ছাত্রের পীঠে কবরের আযাব নাযিল করার পর অন্য উস্তাদ কর্তৃক আহত ছাত্রকে সান্ত্বনা দিয়ে আমি আমার নিজ কানে বলতে শুনেছি, ‘যারা উস্তাদের মার খেয়েছে, তারাই কামিয়াব হয়েছে’। কামিয়াবির এই সূত্র শুনে আতকে উঠেছি আমি। হিসাব মেলাতে পারিনি তখন। এখনো পারি না এটা কামিয়াবির কোন স্থরের শর্ত? আমি ভেবে পাইনি সর্বকালের শ্রেষ্ট উস্তাদ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার ছাত্রদের পিঠয়ে কামিয়াব করার এই মহান রাস্তাটি এখতিয়ার করলেন না কেনো? না পিঠিয়েও কীভাবে তিনি শতভাগ ছাত্রকে কামিয়াব করতে পারলেন?

– ‘উস্তাদের মাইর শরীরের যে স্থানে লাগে, সেই স্থান জান্নাতে যায়’- এমন মনোমুগ্ধকর বাণীও মার্কেটে পাওয়া যায়। আমি জানি না জান্নাত হাসিলের এই সর্টকাটটির উৎস কী? কে তৈরি করে এমন আজগুবি কথাবার্তা?
-উস্তাদের খেদমত করলে জান্নাত মিলে।
খেদমত মানে কি?
এই যেমন, কাপড় ধুয়ে দেয়া, পায়ে তৈল মর্দন ইদ্যাদি ইত্যাদি।
Tajul ভাই মাঝেমধ্যে মজা করে বলেন, ”আল্লাহর তৈরি জান্নাত দিয়ে কেউ কেউ পার্সোনাল বাণিজ্য করেন। নিজের কাজ করিয়ে বিনিময়ে হাতে তুলে দিচ্ছেন জান্নাত”!

উস্তাদ যদি বৃদ্ধ হন, উনার খেদমত করা যেতেই পারে। প্রয়োজনে উনার যাবতীয় কাজ যদি ছাত্ররা করে দেয়, স্বেচ্ছায়-ই করে দেবে। সমস্যা নেই। কিন্তু যাদের বয়স এখনো চল্লিশের ঘরেও যায়নি, তাদের আবার খেদমত লাগবে কেনো? য়ামার তো ইচ্ছে করছে, এমনটি করাকে মাকরূহে তাহরিমি ঘোষণা করে ফেলতে। আফসোস! আমি মুফতি নই!

-মাদরাসা দ্বীনি প্রতিষ্ঠান। ফরজ-ওয়াজিব-সুন্নাত নিয়ে কড়াকড়ি হতেই পারে কিন্তু আল্লাহ-রাসূল কর্তৃক যা বাধ্যতামূলক করা হয়নি,- তেমন কিছু চাপিয়ে দিয়ে ছাত্রদের উপর জবরদস্তি করা, এটা আরেক বড় বেমার। আমি আমার জীবনে অনেক ছাত্রকে মাদরাসায় পড়ালেখাই ছেড়ে দিতে দেখেছি শুধু মাথা মুণ্ডানোর ফরমান জারি করার কারণে?
কেনো? এটা কি ফরজ? ওয়াজিব? রাসুলের সুন্নত?
তাহলে কেনো এ নিয়ে এতো চাপাচাপি?
আবার কায়দা ফিট করে কাউকে কাউকে দেখা যায় এটাকে ওয়াজিব বানিয়ে ছাড়েন। ঘটনাটি তারা ঘটান এভাবে-
‘মাথা কামাও’।
এটা তো সুন্নত নয়। কামাতেই হবে?
অবশ্যই , এখন ওয়াজিব হয়ে গেছে!
কেমনে হলো?
ওস্তাদের নির্দেশ। উলুল আমরদের নির্দেশ পালন করা ওয়াজিব। এছাড়া; আল আমরু ফাওকাল আদব তাহতাল আরশ আরো কত্ত কি!

হতে পারে। মাথা মুন্ডানোর মধ্যে শারীরিক/মানসিক অনেক ফায়দা থাকতে পারে। অস্বীকার করে লাভ নেই। কিন্তু এটা কোনো অবস্থাতেই একজন ছাত্রকে দ্বীনি ইলিম হাসিল করা থেকে বঞ্চিত করার উপলক্ষ হতে পারে না, হওয়া উচিত না। কে কাকে বুঝাবে?

পূণশ্চঃ১
অনেক মুহতামিম ছিলেন, আছেন যারা রাতকে দিন করেন মাদরাসা, ছাত্র আর শিক্ষকদের চিন্তায়। যাদের মধ্যে এখলাসের অভাব নাই। তারা আমার আলোচনার বাইরে। তাদের জন্য শ্রদ্ধা। তাদের প্রতি কওমি সিস্টেমকে কৃতজ্ঞ থাকা দরকার এ জন্য যে, তারা আছেন বলেই কাঠামোটা এখনো ভেঙে পড়েনি।

পূণশ্চঃ২
অনেকে বলেন, ”ঘরের কথা পরের সামনে কেনো? নিজের ঘরের দোষ-ত্রুটি বাইরে বের করা ঠিক না”। আফসোস! যারা এমন সেনসেটিভ চামড়ার অধিকারী, তাদের বলতে শোনা যায় না, চলুন ঘরের ভেতরের ত্রুটি-বিচ্ছুতি বা কমতিগুলো ঘরের ভেতরে বসেই শেষ করে ফেলি!
যারা বলেন, ”যথাস্থানে যথাযত মুরব্বীদের সামনে বলা দরকার বা তাদের নজরে আনা উচিত, বাইরে না”। উনাদের সদয় অবগতির জন্য জানানো যায়, গুণে গুণে দশ বছর আমরা ঘরের ভেতরেই বলেছি। কাজ হয়নি! তারপরের দশ বছর বাড়ির উঠোনে চিল্লাফাল্লা করেছি। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এখন বাইরে না বলে উপায় কি!!

পূণশ্চঃ৩
কওমী মাদরাসা নিয়ে আমরা কথা বলি। কথা আমরা বলবোই। এ জন্য কারো রেজামন্দি বা ইযাযতের অপেক্ষায় থাকার কোনোই কারণ নাই। কওমী-ভালোবাসা আমাদের রক্তের কণিকায় মিশে আছে। আমাদের রক্তের গ্রুপ ”Q” পজিটিভ। আমরা আমাদের রক্তকে দুষিত হয়ে যেতে দিতে পারি না, অবশ্যই না।

About Abul Kalam Azad

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...