খতিব তাজুল ইসলাম
লন্ডন থেকে
অনেকদিন যাবত ভাবছি ডাক্তারদের নিয়ে কিছু লিখবো। আজকাল করে এভাবে সময় অনেক পার হতে চলেছে। যাক আজ লিখবোই একটা সিদ্ধান্ত করে ফেলেছি।
ডাক্তার মানে চিকিৎসক। চিকিৎসা বিজ্ঞান এখন বিরাট একটি জগত। বিশ্বে অস্ত্রের পর ওষুধ বা মেডিসিন ফেক্টরির গুরুত্ব আছে একথা স্বীকার করতেই হয়। চিকিৎসক বনা বড় একটি কথা। যারা মেধাবী তারাই সে পথে যেতে পারে। প্রতিটি দেশে সরকারি মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় আছে তেমনি বেসরকারিও আছে। প্রতিটি দেশ কারিগরি বিজ্ঞানের পাশাপাশি চিকিৎসা বিদ্যায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিরাট বাজেট ভর্তুকি দেয়।
মেধার ভিত্তিতে বৃত্তি প্রদানসহ এভাবে বিভিন্ন অজুহাতে ছাত্র ও প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ফান্ড জারি থাকে। ডাক্তারি বিদ্যা যেমন ব্যয়বহুল তেমনি কষ্টসাধ্য। পরিশ্রম অধ্যাবসায়ের মাধ্যমে তারা এই পর্যায়ে উন্নিত হতে সক্ষম হন।
খাদ্য যেমন মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে তেমনি চিকিতসকের পরামর্শে ঔষধ সেবনের মাধ্যমে মানুষের রোগ নিরাময় হয়। তারা সুস্থ হয়ে উঠে ও বাঁচে। চিকিৎসা হলো জীবন মরণের খেলা। ভুল চিকিৎসা হলে রুগী মারা যেতে পারে। আবার কঠিন রোগ থেকে মরার ঘাট থেকে মানুষ চিকিৎসার বদৌলতে সেরে উঠে।
আগে আমরা বলতাম পানির অপর নাম জীবন। এখন হয়তো বলা লাগবে, ওষুধের অপর নাম জীবন। বিশ্বের বুকে মেডিসিন ইন্ড্রাস্ট্রির খুব গুরুত্ব আছে। বাংলাদেশে রাস্তার গলিতে মুদির দোকান থাক বা নাই থাক একটা ফার্মেসি থাকবেই। মেডিকেল কলেজ মেডিসিন ডাক্তার আর রোগীদের নিয়েই চিকিৎসা জগত।
উন্নত বিশ্বে হেল্থ এন্ড সেফটির ক্ষেত্রে চিকিৎসা বিভাগকে খুব গুরুত্ব দেয়া হয়। বিশেষ করে ভেজালমুক্ত ওষুধের প্রতি সীমাহীন নিরাপত্তা। আবার চিকিৎসকের প্রতিও আছে নিয়ম আইন বিধিমালা। কারণ চিকিৎসকের হাতে একপ্রকার মানুষের জীবন। তারা ইচ্ছে করলে কাউকে ভুল প্রেসক্রিপশন দিয়ে জানে মেরে ফেলতে পারে। অতএব এটা বিশ্বাসের এক গুরুত্বপূর্ণ জায়গা।
সাধারণ পাবলিক চিকিৎসকের হাতে জিম্মি। চিকিৎসককে যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে হবে। মেডিসিন সাপ্লাইয়ারগণ সঠিক এবং নির্ভেজাল ওষুধ সরবরাহ করবে। এজন্য সবখানে গুরুত্বপূর্ণ সিকিউরিটি রাখা থাকে। চিকিৎসা ও মেডিসিনে জাতীয় নিরাপত্তা বিভাগের খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে। তাতে অবহেলা করার সামান্যতম অবকাশ নেই।
বৃটেনে এখন পেরাসিটামল পর্যন্ত ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কেউ বিক্রি করতে পারবে না। শিশু কিশোরসহ বিভিন্ন বয়সের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা আছে। এখানে মেডিসিন অথরিটির কঠিন পরীক্ষা নীরিক্ষার পর মার্কেটে ছাড়া হবে। তাও কে কোনটি কিভাবে বিক্রি করবেন তারও ব্যাখ্যা আছে।
প্রথমে মেডিসিন নিরাপত্তার কথায় আসি। আমাদের দেশে যে মেডিসিনগুলো বাজারজাত হচ্ছে তার যাচাই বাছাই এবং সরজমিনে মার্কেটিং কি ঠিকমত চলছে, সেখানে ভেজাল ঢুকেনি তার কি গ্যারান্টি আছে? দেখা যায় ভেজাল ওষুধ খেয়ে রোগী ভাল হচ্ছে না। তখন সে নিজে উদ্যোগী হয়ে তদন্ত করে বিষয়টি বের করে আনে।
অথচ প্রতিটি ফার্মেসিতে কি কি বিক্রি হবে কিভাবে হবে তার একটা নিয়ম থাকা জরুরি। ভেজাল বিক্রিতে ধরা খেলে তাদের শক্ত বিচার করা দরকার। যারা মানুষের জীবন নিয়ে খেলে তাদের এটেম টু মার্ডারের মামলায় ফাসানো উচিত ছিলো। কিন্তু কিছু হয়?
আমরা বার বার মিডিয়ায় দেখেছি ভেজাল মেডিসিনে মার্কেট সয়লাব হয়েগেছে। প্রসাধনীর নামে বিষাক্ত রঙ ও রাসায়নিক পদার্থ মিশ্রণ করে ক্রিম স্নো পাউডার ক্রিম বানিয়ে বাজারে ছাড়া হচ্ছে। মানুষ এসব কিনে যেমন প্রতারিত হচ্ছে তেমনি সংক্রমণ হচ্ছে মারাত্মক চর্মরোগে। সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য প্রসাধনী কিনে উল্টো সৌন্দর্যহানী ঘটানো হচ্ছে। এই সমস্ত প্রতারকদের সামান্য জরিমানা কি যথেষ্ট? তাদের হাত কেটে দেয়া উচিত বলে মনে করি।
শারিরিকভাবে তাদের পঙ্গু করে দেয়াও জরুরি ছিলো। সে একবার ধরা খেলে স্থান বদল করে অন্য জায়গায় গিয়ে আবার শুরু করে। এমনকি এসব খারাপ কাজের সাথে বিভিন্ন পুলিশ অফিসার জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। এখানে আইনের কঠোর প্রয়োগ প্রয়োজন আছে বলে মনে করি।
দ্বিতীয় যে কাজ খুব জরুরি ভিত্তিতে করা আবশ্যক বলে মনে করি তাহলো রোগ বালাই না হওয়ার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ। যাকে আমরা পরিবেশ দূষণ বলি। পরিবেশ দূষণকে যদি বাংলাদেশে কন্ট্রোল না করা হয় তাহলে এসব ভাল ভাল চিকিৎসা আর মেডিসিন দিয়ে কোনো কাজ হবে না। গলিতে গলিতে হাসপাতাল বানিয়ে গোটা জাতিকে ভাতের মতো মেডিসিন খাওয়ানোর মতো বিধ্বংসী কাজ যা বর্তমানে বাংলাদেশে চলছে তা বন্ধ করতে হবে আগে। গাড়ি ও কল কারখানার কালো ধোয়া থেকে ক্যান্সারের জীবাণূ ছড়িয়ে পড়ছে বাতাসে। যা নিঃশ্বাসে চলে আসছে মানুষের ফুসফুসে।
চিকিৎসা ব্যবসা এখন বিশ্বে খুব রমরমা। রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার জন্য চিকিৎসার বিকল্প নেই। অর্থের লোভে পড়ে কিছু কিছু চিকিৎসক মানবতা মানবিকতা হারিয়ে অমানবিক পাশবিকতায় অবতীর্ণ হয়েছেন। টাকা থাকলে বাঁচো নাইলে মরো। এই ধরনের মনোভাব অন্ধকার যুগকেও হার মানায়।
নালা নর্দমায় বিষাক্ত বজ্র ফেলে দিয়ে খাল নদী ও বিলের পানিকে করা হচ্ছে বিষাক্ত। শহর কেন্দ্রিক প্রতিটি নদী এখন মরণ ফাঁদ। তাতে যেমন মাটি বিষাক্ত হচ্ছে সাথে পানিও বিষাক্ত। পানিতে মাছও বিষাক্ত। এসব মাছ খেয়ে মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত।
যত্রতত্র মলমূত্র নালা নর্দমা ফেলে দুর্গন্ধময় পরিবেশও স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরূপ। তাই সুস্বাস্থ্যের জন্য সুস্থ পরিবেশ বজায় রাখা ফরজের সমতুল্য। একটা নেশনকে ধংস করতে হলে তার আশপাশের পরিবেশকে ধংস করলেই কাজ হয়ে যাবে। আমাদের যারা পরিবেশকে কেয়ার করে না তারা আসলে দেশদ্রোহী জাতির দুশমন বলে মনে করি। পরিবেশ রক্ষার জন্য সামাজিক আন্দোলন রাষ্ট্রীয় আইন ও তৃণমূল সচেতনতা চাই।
সরকারকে পরিবেশ সুরক্ষার জন্য ধাপে ধাপে পরিকল্পনা পেশ করতে হবে। তাতে যেমন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে বেকারত্ব কমে আসবে।
সর্বশেষ কথা বলবো চিকিৎসকদের নিয়ে। আপনাদের নামের সাথে কসাই বিশেষণটা এতই পরিচিতি লাভ করেছে তাতে মানুষ দুই কসাই-ই জানে। একজন গরু কাটার কসাই আরেকজন ডাক্তার নামক কসাই।
চিকিৎসা ব্যবসা এখন বিশ্বে খুব রমরমা। রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার জন্য চিকিৎসার বিকল্প নেই। অর্থের লোভে পড়ে কিছু কিছু চিকিৎসক মানবতা মানবিকতা হারিয়ে অমানবিক পাশবিকতায় অবতীর্ণ হয়েছেন। টাকা থাকলে বাঁচো নাইলে মরো। এই ধরনের মনোভাব অন্ধকার যুগকেও হার মানায়।
একটি দেশের কাছে গরিব অসহায়দের কোন পাওয়না নেই? অসুস্থতায় বাঁচার অধিকার নেই? বাংলাদেশের জনগণ সরকারের কাছে ঘর বাড়ি বেতন ভাতা কিছুই চায় না। কিন্তু তারা অসুখে বিসুখে ভাল চিকিৎসা চায়। কিন্তু গরিবের জন্য চিকিৎসা কোথায়? অধিকাংশ যারা ডাক্তার হয়েছেন আপনারা জনগণের টেক্সের টাকায় পড়ালেখা করেছেন। সরকারি যে অনুদান পেয়েছেন তাতো আপনার বাবার পকেটের টাকা না।
সরকার আপনাকে সরকারি হাসপাতালে চাকরি দিয়েছে। সেখানে আপনি গ্রাম্য হাতুড়ে চিকিৎসকের মতো মান্ধাত্বা আমলের চিকিৎসা দিবেন। আর কানে কানে বলে দিবেন আমার চেম্বারে দেখা করো। কেন আপনি সরকারি বেতন নিয়ে এভাবে প্রতারণার আশ্রয় নিবেন? কেন আপনি সরকারি হাসপাতালে সঠিক ডিউটি আদায় করেন না।
ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠা প্রাইভেট ক্লিনিকের রমরমা ব্যবসাগুলো কারা চেতিয়ে রাখছেন? আপনার আর কত টাকার প্রয়োজন? প্রতিদিন একশোজন রোগীর কাছ থেকে ৫০০ টাকা করে ভিজিট গুনেন। ডেইলি ৫০০০০ হাজার টাকা ইনকাম শুধু প্রেসক্রিপশস থেকে। প্রাইভেট ক্লিনিকে পান আরো ৫০০০০ টাকা বিভিন্ন রোগী দেখা ও অপারেশন করে।
নারী পেটে বাচ্চা হলে পেট কাটাতেই হবে। কারণ আপনাদের খাতায় সিজার ছাড়া বাচ্চা প্রসবের অন্য পথ খোলা নেই। মিথ্যা টেস্টের মাধ্যমে ডায়াগনস্টিক থেকে পান ডেইলি আরো ১০০০০ টাকা। আপনার বলা কওয়া ফার্মেসি থেকে পান প্রেসক্রিপশন কমিশন ডেইলি আরো ১০০০০ টাকা। মেডিসিন কোম্পানি থেকে সেই কোম্পানির মেডিসিন প্রেসক্রিপশনে লিখে দেয়ার জন্য পান আরো ডেইলি ৫০০০ টাকা। সরকারি বেতন পান ডেইলি ৫০০০ টাকা।
রোগীর সাথে ব্যবহার শুনলে শরিরের লোমকূপ দাঁড়িয়ে যায়। কেন আপনি একজন আগন্তুকের সাথে রুঢ় ব্যবহার করবেন? সে আপনাকে পরিশোধ করে আসে নাই? একজন রোগীকে যতটুকু সময় দিবেন এটা তার ক্রয়কৃত সময়। আপনি সেবা প্রদান করবেন। সে সেবা গ্রহনকারী। টাকার বিনিময়ে সেবা প্রদান করছেন।
বাসা ভাড়া ফ্রি। কারণ থাকেন সরকারি এপার্টমেন্টে। আরো আছে ঈদ বোনাস চিকিৎসা বোনাসসহ অন্যান্য রেশন। তাহলে ডেইলি আপনার ইনকাম কতো? একলক্ষ ত্রিশহাজার টাকা। বোনাস ইত্যাদি শামিল হলে নুন্যতম ডেইলি ইনকাম দেড়লক্ষ টাকা। মাসে কত পান? পয়তাল্লিশ লক্ষ বাষট্টি হাজার পাঁচশত টাকা। কমবেশ মাসে অর্ধকোটি টাকা। বছরে ছয়কোটি টাকা। সরকারকে আপনারা টেক্স কত দেখান? একমাসের ইনকামও দেখান না।
এতো সম্পদের পাহাড় দিয়ে কী করেন? পুরো চৌদ্ধগোষ্ঠীকে আমেরিকা বিলেতে বাসাবাড়ি করে সেখানে জান্নাতি সুখে থাকার ব্যবস্থা করে দেন। আর কী করেন? তলে তলে প্রাইভেট ক্লিনিক আর ক্লিনিক। যাকে আমি জবাইখানা বলি।
রোগীর সাথে ব্যবহার শুনলে শরিরের লোমকূপ দাঁড়িয়ে যায়। কেন আপনি একজন আগন্তুকের সাথে রুঢ় ব্যবহার করবেন? সে আপনাকে পরিশোধ করে আসে নাই? একজন রোগীকে যতটুকু সময় দিবেন এটা তার ক্রয়কৃত সময়। আপনি সেবা প্রদান করবেন। সে সেবা গ্রহনকারী। টাকার বিনিময়ে সেবা প্রদান করছেন। আপনাকে সেবাপ্রদানের জন্য এই সময়টুকু সে কিনে নিয়েছে। তাহলে খারাপ ব্যবহার করার প্রশ্নই আসে না।
আপনার মার্কেট কোথায়? টাকার খনি কোথায় পেয়েছেন? গরিবদের পকেট। তাহলে তাদের সম্মান কেন দিবেন না? শোনা যায় অধিকাংশ ডাক্তার সাধারণ মানুষের সাথে দাসের মত ব্যবহার করে। অথচ দাস হলে তো আপনি হবেন। আপনাকে সে ক্রয় করে নিলো সেবা প্রদানের জন্য আর আপনি তাকে কষ্ট দিবেন? সে টাকাও দিবে লাথিও খাবে? ভাল চিকিৎসাও পাবে না? আবার সপ্তায় সপ্তায় এসে ধর্ণা দিয়ে পকেট খালি করবে! এসব মানবতা? আপনাদের ডাক্তারি লেখাপড়ায় কি অসৎ উপায়ে অর্থকামাইয়ের কোন নীতি আছে?
সত্যিকথা বলতে কি- সে যদি মুনিব হয় আপনি তার চাকর হবেন। চিকিৎসা জগতে কসাইপনার জন্য কারা দায়ী? আপনারা যদি সাধারণ মানুষকে পরিবেশ রক্ষার কথা বলতেন তাহলে মেডিসিনের মতো কাজ হতো। আপনাদের ডবল স্ট্যান্ডার্ড মানুষের কষ্ট আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।
চিকিৎসা জগতে এখন বাংলাদেশে দেউলিয়াপনা চলছে বলে কম হবে। আপনারাই মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন। জানি আল্লাহর ডর ভয় তো নেই-ই দেশের আইন কানুনও আপনারা থোড়াই কেয়ার করেন।
সমাজ এখন অনেক সচেতন হচ্ছে। ছাই চাপা দিয়ে চিকিৎসা জগতের কুকর্ম আর জুলুমগুলো বেশিদিন জিইয়ে রাখতে পারবেন না। আপনাদের প্রতি অনুরোধ করবো মানুষের সাথে মানবিক ব্যবহার করুন। টাকার জন্য জীবন না বানিয়ে প্রয়োজনের তাগিদে টাকা কামাই করুন। আপনাকে যে কবরে রাখা হবে তার পাশেই হয়তো তাকেই রাখা হবে যাকে আপনি ভুল চিকিৎসার মাধ্যমে কিংবা অসৎ উপায়ে তার কাছ থেকে কাড়ি কাড়ি টাকা হাতিয়ে নিয়ে ছিলেন। সময় হয়তো আগপিছ হতে পারে তবে আল্লাহর পাকড়াও থেকে রেহাই পাবেন না।
লন্ডন ২৩ মে ২০১৭
সৌজন্যে: আওয়ার ইসলাম।