বুধবার, ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ৮:০৬
Home / অনুসন্ধান / বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় আইন যেখানে পরিবেশ দূষণের জন্য দায়ী!

বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় আইন যেখানে পরিবেশ দূষণের জন্য দায়ী!

খতিব তাজুল ইসলাম::

লক্কড় ঝক্কড়

শিরোণাম দেখে হয়তো আঁতকে উঠবেন যে এ কেমন কথা! রাষ্ট্রীয় আইন আবার রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কেমনে যাবে? কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখবেন আমলাতান্ত্রিক রাষ্ট্রীয় অব্যবস্থাপনাই দায়ী এসব বিপর্য়য়ের জন্য। বাংলাদেশে বিদেশি গাড়ি আমদানি খুব ব্যয়বহুল ব্যাপার। কেন এতো ব্যায় বহুল আর কেনই বা তা এতো কঠিন করে রাখা হয়েছে? বিষয়টি জানার জন্য সংশ্লিষ্ট কিছু লোকদের সাথে কথা বলে যা জানলাম তা হলো যে, বাংলাদেশের অপ্রস্থ রাস্তার জন্য বেশি গাড়ি অযৌক্তিক। কারণ অতিরিক্ত গাড়ি আমদানি করা হলে রাস্তায় চলাচলে সমস্যা দেখা দিবে। ট্রাফিক জ্যাম লেগেই থাকবে। তাহলে গাড়িকে সীমিত করণের জন্য বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে ট্যাক্স। কত পার্সেন্ট ট্যাক্স? একশত থেকে দুইশত পার্সেন্ট। অর্থাৎ গাড়ির মুল্য যদি হয় দশলাখ এখানে এসে ট্যাক্স পরিশোধ করতে হবে আরো বিশলাখ। আর ভাল গাড়িতো বিশলাখের নীচে পাওয়া যাবেনা। তাহলে তাকে রিশোধ করতে হবে আরা চল্লিশ লাখ। মানে গজবি কান্ড কারখানা। ঠিকাছে বুঝলাম। তারপর বড় ইঞ্জিনের গাড়ি আনা যাবেনা। আনতে হলে আরো মোটা অংকের ট্যাক্স। মানে তখন তা বেড়ে তিনশো থেকে আরো উপরে যায় মিটার। বড় ইঞ্জিনের ধোয়া বা কার্বনডাই অক্সাইড বেশি ছাড়ে। অর্থাৎ গাড়ি কম রাখার বড় আরো একটি কারণ হলো কার্বণডাইঅক্সাইড কমানোর জন্য।
এখন আমরা আসি দুটি পয়েন্টে যে পরিবেশ দূষণ থেকে দেশকে বাঁচাতে গাড়ি আমদানিতে কর বা ট্যাক্স বেশি রাখা হয়েছে। দুভাবে পরিবেশ দূষণ হয়। প্রথম রাস্তায় জ্যাম সৃষ্টি করে আর দ্বিতীয়তঃ কার্বনডাইঅক্সাইড বেশি ছড়ানোর মাধ্যমে।
আসুন আমরা দেখি বাংলাদেশের রাস্তা ঘাটের অবস্থা কেমন? রাজধানী থেকে শুরু করে পাড়া মহল্লার শহরে আজকাল পা রাখার জায়গা নাই। রিকশা বেবিটেক্সি আর কালো ধোয়ার বাসগুলোর কারণে। রাস্তাতো টইটম্বুর। তাহলে কন্ট্রোল হলো কোথায়? উপরস্তু লক্কড় যক্কড় গাড়ির কারণে ক্ষতি দুটোই হচ্ছে। এসব গাড়ির ফিটনেস বলতে কিছু নেই। রাস্তায় চলার সময় এসবের কালো ধোয়ায় দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম। ঘরে ঘরে কেন্সারের কারণ হলো এইসমস্ত গাড়ির কালো ধোয়া। তাহলে মুক্তি তো হলোনা। বরঞ্চ পুরাতন গাড়ির কারণে বাতাস ও পরিবেশ এখন বিষিয়ে উঠেছে। মানুষের জীবন ওষ্টাগত। ষোল কোটি মানুষের দেশে এখনো গাড়ির সুব্যবস্থপনা নাই।
আমি মনে করি সড়ক জনপথের বিধিমালায় মারাত্মক ঘাপলা আছে। দেশের চলমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষীতে ব্যবস্থা গ্রহনের মতো কোন নিয়ম আমাদের চোখে পড়ছেনা। অতিদ্রুত যদি এসবের সুরাহা না হয় তাহলে মানবিক বিপর্যয় আর টেকানো যাবেনা। গাড়িকে ভুল পথে কন্ট্রোলের মাধ্যমে দেশকে বিপদের দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে বলে মনে করি। এহেন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের উপায় হলোঃ
(ক) অতিদ্রুত বিভিন্ন শহরে আধুনিক ফিটনেস গ্যারেজ তৈরি করা। যেখানে একজন ইঞ্জিনিয়ারের অধিনে গাড়ির টেস্ট হবে। ফিটনেস তারা দেখবে। কালো ধোয়া ও রাস্তায় চলাচলের অনুপোযুক্ত গাড়ি বাতিল করে দেয়া। এখানে যাতে দুনম্বরি না হয় সে জন্য সরকারি মুবাইল ফিটনেস টিম তল্লাসি করবে। কড়া নোটিশ নিবে যদি কোন ঘাপলা ধরা পড়ে। এভাবে দ্রুত রাস্তা থেকে ধংসাত্মক গাড়িগুলো নামিয়ে ফেলা। একটি গাড়ি কতক্ষণ কোন হালতে রাস্তায় চলতে পারবে তার নিয়ম কানুন আন্তর্জাতিক আইনের সাথে মিলরেখে প্রণয়ন। যাতে আমদানি গাড়ি সেই নিয়মের ভিতর আসে।
(খ) গাড়ি যখন দ্রুত কমিয়ে আসবে তখন যাতে যানবাহনের সংকট দেখা না দেয় সেমতে গাড়ির কর বা শুল্ক কমিয়ে দিয়ে আমদানিকে সহজ করে দেয়া। বৃটেনে মাত্র বিশ পার্সেন্ট শুল্ক চার্য্য করা হয়। বাংলাদেশ বিশপার্সেন্ট শুল্ক চার্য্য করুক। কোন কেটাগরির গাড়ি আসা শুদ্ধ তা আগে ঠিক করে দিতে হবে। বর্তমানে হাইব্রিডের প্রচলন শুরু হয়েছে। তাই পেট্রল ও ডিজেল গাড়ি আস্তে আস্তে কমিয়ে ফেলতে হবে। ইমিশন কত হবে তার একটা মান নির্ণয় করে দিলে আমদানিতে ঝামেলা থাকবেনা।
(গ) এভাবে নতুন বা সামান্য ব্যবহৃত গড়ি আনা শুরু হলে পুরাতন গাড়ি রাস্তায় আর থাকবেনা। যারা আইন অমান্য করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। শহরে শহরে যখন ফিটনেস গ্যারেজ হবে তখন লক্ষ লক্ষ যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। সরকারও এই খাত থেকে ভাল শুল্ক পাবে।
তাই অযৌক্তিক ভাবে গাড়ির শুল্ক বাড়িয়ে নতুন গাড়ি আমদানির পথ রুদ্ধ করে দেশকে আর বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিবেন না। নতুন গাড়ি হতে স্বাভাবিক কারণইে কলো ধোয়া বেরুবেনা। বাংলাদেশ সরকারের উচ্চ মহলের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আপনারা নাকে তৈল দিয়ে না ঘুমিয়ে একটু সজাগ হোন। জনগণের সুখ দুখের কথা শুনুন। তাদের কল্যাণের কথা ভাবুন। লক্কড় ঝক্কর গাড়ি থেকে জাতিকে মুক্তিদিন।
(ঘ) আর যারা দুশ্চিন্তায় আছে যে, তার লক্কড় ঝক্কড় গড়িটি বাতিল হলে খাবে কিভাবে? অনেক যুবক বেকার হয়ে পড়বে। সহজ সমাধান হলো বড় বড় শোরুম থেকে সহজ কিস্তিতে ভাল ভাল গাড়ি তাদের দেয়া হোক। রুজি করে করে ফ্যামিলি চালাবে কিস্তিও পরিশোধ করবে। আর শুল্ক কমেগেলে সে সমস্যা অর্ধেকের নীচে নেমে আসবে বলে আমার বিশ্বাস। কারণ মারাত্ম শুল্ক সমস্যায় ধনীরাও গাড়ি আনতে অপারগ। তখন একটির জাগায় যখন পাঁচটি আনবে সমস্যা দ্রুত কভার হয়ে আসবে।
অতএব সচেতন মহলের কাছে বিনীত অনুরোধ বিষয়টি নিয়ে জরুরী ভিত্তিতে ভাবুন।

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...