সৌজন্যে: সময়বার্তা২৪.নেট
হবিগন্জের জামেয়া উমেদনগরের দাওরায়ে হাদীস পরিক্ষা বঞ্চিত ১৬ ছাত্র থেকে তিনজনের একটি সাক্ষাৎকার নিজের উপস্থাপনায় প্রকাশ করেন রাইয়ান খাদেম। বিডিওতে দেখা যায় মাদারাসা ভেতরে আরো কয়েকজন ছাত্রের সাথে পরিক্ষা বঞ্চিত তিন ছাত্র। যাদেরকে দেখা যাচ্ছিল ভীত এবং সংকোচিত। সাক্ষাৎকারের ভিতর দিয়ে উপস্থাপক ও এই তিন ছাত্র নানা ভেতরের খবর প্রকাশ করেন। উপস্থাপক মাদারাসার নায়বে মুহতামিমের পায়ে ধরা, প্রবেশ পত্র দিতে আরো ৫হাজার টাকা দাবী করা সহ নানা প্রশ্ন উপস্থাপন করে যুক্তি টানার চেষ্টা করেছেন। ছাত্রদেরকে কথা বলার সময় কেম্যারার পেছন থেকে বার বার কথা শিখিয়ে দেয়া, কথা বলতে বারণ করার দৃশ্য চোখে পড়ে।
সামজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিবে এই ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়লে গতকাল থেকে নানাজন নানা মন্তব্য করতে থাকেন। নিম্নে স্রোতাদের কিছু মন্তব্য তুলে ধরা হল।
- মাওলানা গোলাম রব্বানী তার মন্তব্যে বলেছেন, ছাত্ররা সারা বছর মাদরাসার খেয়ে পড়ে শেষ সময়ে মাদরাসা কতৃপক্ষের নির্দেশ অমান্য করে, মাদরাসা ও মাদরাসা কতৃপক্ষকে চরম বিব্রতর পরিস্থিতির মুখোমুখি করল, এটা খুবই দুঃখজনক।এটা আমাদের কওমি শিক্ষার পরিপন্থী। আমাদের শিক্ষা হলো উস্তাদদের কথা মানার মধ্যেই কামায়াবি। যাক যা ঘটার ঘাটে গেল, আগামীতে যেন এমন কোন পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়, সে ব্যাপারে সতর্কতা প্রয়োজন।
- আওর ইসলামের সাংবাদিক রোকন রাইয়ান মন্তব্য করেছেন, এতকিছু হতো না যদি প্রথমেই সত্য জিনিসটা তারা বলে দিতেন এবং এই পরিস্থিতির কারণে এ অবস্থার সম্মুখিন হয়েছেন। কিন্তু তারা সেটা না করে অন্য উপায় নিয়েছেন। যা আমাদের সবার জন্যই ক্ষতিকর। আবার দেখলাম ভিডিও করেছেন যা দেখেই বোঝা যাচ্ছে শেখানো বুলি। আসলে সত্যকে চাপা রাখতে চাইলে সেটা বড় ঝামেলা করে, এদিক সেদিক দিয়ে বেড়িয়েই আসতে চায়।
- কামরুল ইসলাম মন্তব্য করেছেন, জীবনের চুড়ান্ত জামাত দাওরায়ে হাদীসে এসে কেউ কেন্দ্র না হওয়া নিয়ে ফাইনাল প্রত্যাখ্যান করে ১টা বছর নষ্ট করবে এরকম গাধামি কোন ছাত্র কিংবা তাদের পরিবার করতে পারে বলে আমার মনে হয় না। ঘটনায় বড় ধরণের ঘাপলা আছে। যেটা আমাদের সামনে আসছে না। অন্য জামাত হলেও বিনাবক্যে মেনে নিতাম। কারণ সেখানে বছর নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। অন্য মাদ্রাসায় গিয়ে ঠিকই পরের জামাতে ইন্টার্ভিউ দিয়ে দাখেলা নিতে পারে।পরীক্ষার সাথে কেন্দ্রের কি সম্পর্ক। নিজের মাদরাসায় কেন্দ্র হলে কি সুবিধা বেশি পেতেন? পরীক্ষা না দিতে দেওয়া মানে বোর্ডকে অপমান করার শামিল। যেখানে সমস্ত আলেম ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে সেখানে আপনারা কি বুঝে এমন করলেন। সব ইরান তুরান। ভিডিও দেখেন, অন্যান্য পোস্ট দেখেন ব্লা ব্লা।
- মাওলানা সাইফ রহমান এনিয়ে তার ফেসবুকে লিখেন, আমার বাসায় পরীক্ষার সেন্টার নেই, বোর্ড কেন সেন্টার দিলো না! তাই আমি এবার পরীক্ষা দিচ্ছিনা। আমার মন খারাপ। আমি মর্মাহত। যেদিন আমার ঘরে সেন্টার আসবে, সেদিনই আমি পরীক্ষা দেবো। আমি অন্যের ঘরে পরীক্ষা দিতে যাবো না। ব্যস… হ্যাঁ, আমি থ্রেড দিলাম। একেবারে প্রকাশ্যে। ভিডিও করে।
- আমিনুল ইসলাম ভিডিওটির কমেন্টে বলেন,ওরা যা বলছে তা যদি বাস্তবিকই হয়ে থাকে, তাহলে তারা তাদের সিদ্ধান্তেই পরিক্ষায় যায়নি। এটা তারা ঠিক করেনি, এখানে ওরা চরম অন্যায় করেছে। তাদের কাজের জন্য একটি ঐতিহ্যবাহী মাদরাসা ও মাদরাসা কতৃপক্ষ এবং মাদরাসার মুহতামীম সর্বজনশ্রদ্ধেয় আলেমেদ্বীন আল্লামা তাফাজ্জুল হক (দাঃবাঃ) বিতর্কের মুখোমুখি হলেন।এটার জন্য ঐ কতিপয় ছাত্র দায়ী। সব ছাত্র হয়ত দায়ী নয়, কারণ এখানে লিডার পর্যায়ের কয়েকজন নেতৃত্ব দিয়েছে, বাকিরা অসহায়।কতৃপক্ষের উচিৎ হবে এদের ব্যাপারে ব্যাবস্থা নেওয়া।কারণ এটা তাদের অন্যায় আবদার। পরীক্ষার কেন্দ্র কোথায় হবে না হবে এটা কতৃপক্ষের বিষয়, ছাত্রদের বিষয় নয়।কওমী মাদরাসার শিক্ষা হলো উস্তাদদের কথা মান্য করে চলা। বেশী বুঝদারী করে লিডারি না করা। এদেরকে প্রশ্রয় দিলে ভবিষ্যতে আরও বাজে অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে। আর যদি এমনটা না করা হয় তাহলে লোকজন ধরে নিবে এতে হয়ত কতৃপক্ষের সমর্থন আছে।তাহলে আগামীতে উমেদনগর জামেয়ায় ছাত্র ভর্তি হতে হলে হয়ত অনেক কিছু চিন্তা করেই সিদ্ধান্ত নিবে। এটা একটি প্রতিষ্টানের জন্য কাম্য হতে পারেনা।
- নোমান বিন আরমান লিখেছেন, সেন্টার কোথায় হবে না হবে এনিয়ে ছাত্রদের এতো অধিকার কে দিলো? নাজিম সাহেব সনদ নিয়ে দাওরার ক্লাশে আসার পরেও তারা গ্রহণ করেনি কোন সাহসে? হবিগঞ্জি হুজুরের সব নির্দেশ যদি তারা মেনেই থাকেন তবে পরীক্ষার নির্দেশ মানলেন না কেন? ছাত্রের অভিভাবক বলতে পত্রিকায় এসেছে ভাইয়ের কথা। যে স্মারক দেখানো হলো তাতে কি সব ভাইয়ের নাম আছে? তিনজন ছাত্র চুনারুঘাটে গেলো কেন? আমি এসব জানতে চাইবো না। আমার কাছে ছাত্রদের এমন কথা যে, এখানে সেন্টার হলে পরীক্ষা দেব নতুবা না! এটা খুবই বাজে একটা জিদ। এ থেকে বের হওয়া চাই। বাকি কেউ যদি আল্লামা হবিগঞ্জির সাথে শত্রুতা করে তবে সে তো চামচিকা মাত্র।”
- ইকবাল হাসান তার কমেন্টে বলেন, তোমরা যতোদিন উমেদনগর জামেয়াতে কেন্দ্র না আসবে ততোদিন পরিক্ষা দিবেনা বলেছ। আমি জানতে চাই আর কতদিন এই মাদরাসায় বসে বসে আধুভাই সেজে ফিতরা জাকাত, চামরা ও কাফ্ফারার লিল্লাহ বডিংএর খাবার সাবাড় করবে? আর পাঠার মতো তাজা হবে।
- মাওলানা ইমরান আহমদ লিখেছেন,একটা মানুষও কী নেই যে, ছাত্রদেরকে পরীক্ষায় যাওয়ার কথা বলবে? ছাত্ররা যদি কথা শুনেনা তাহলে বলতে হবে সেখানকার ছাত্ররা এতই বেয়াদব! আর প্রতিষ্টানিক কোন অনিয়মের বিরোদ্ধে কোন কথা বললেই সেটাকে টেনে বড় হুজুরের উপর পালানো এটা অনেকের নষ্ট রাজনৈতিক খেলা যা ভিডিওতে করা হয়েছে। চুনারুঘাটে পরিক্ষা দিলে রেজাল্ট খারাপ হত তোমরা বলেছ। তাহলে উমেদনগরে দিলে কী রেজাল্ট ভাল হত। আসল রহস্য কী? ভিডিও দেখে মনে হল, কী বলতে হপে ভিডিওতে, আগে বইলেন। হোমওয়ার্ক করুম।হ্যাঁ, সব শিখিয়ে দেয়া হবে। রিহার্সেল ও করানো হবে। আগে কেন্দ্র ছেয়েছিল, ভিডিওটিতে দেখলাম বোর্ডও চায়।
- জুনাইদ আল হাবিব মন্তব্য করেন,সবার অবগতির জন্য বলছি, চৌধুরীপাড়া মাদ্রাসা সুপ্রষ্ঠিত এবং ঐতিহ্যবাহি মাদ্রাসা। আজীবন দেখে এসেছি, ঐ মাদ্রাসা বেফাকের কেন্দ্র ছিলো। এবছর দাওরা ছাড়া অন্য জামাতগুলোর কেন্দ্র ছিলো। কিন্তু কোনো কিছুর অভাব ছাড়াই তারা সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান রেখে দাওরার পরীক্ষা মালিবাগ মাদ্রাসায় দিচ্ছে। সে তুলনায় উমেদনগর মাদ্রাসা কি চৌধুরীপাড়া মাদ্রাসা থেকেও বিশেষ বৈশিষ্টের দাবি রাখে? এমন অযৌক্তিক অযুহাত দাঁড় করাতে পারে? বাচ্চা মানুসী দূর হওয়া দরকার!
- মাওলানা নাসির উদ্দীন লিখেছেন,পরীক্ষার সাথে কেন্দ্রের কি সম্পর্ক। নিজের মাদরাসায় কেন্দ্র হলে কি সুবিধা বেশি পেতেন? পরীক্ষা না দিতে দেওয়া মানে বোর্ডকে অপমান করার শামিল। যেখানে সমস্ত আলেম ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে সেখানে আপনারা কি বুঝে এমন করলেন।
- ইলিয়াস কামাল লিখেছেন, ভিডিওতে ছাত্রদের রাজনীতি,ষড়যন্ত্র ও কুটচাল স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। এরা সারা বছর পগা লেখা না করে খালি রাজনীতি করেছে। সবাই ছাত্র জমিয়তের নেতা। এখন ছাত্রদের দোষ এবং মাদরাসার কোন, কোন কতৃপক্ষের বাড়াবড়ির খবর যখন মিডিয়াতে আসছে তখন দুষ্ট চক্র নিজেদের দোষ ডাকতে হবিগঞ্জি হুজুরকে টেনে আনছে। হুজুরের ইজ্জতের দোহাই তুলে হযরতকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে বিষয়টিকে ভিন্নখাতে নেবার চেষ্টা করছে। এটা নিন্দনীয়। সারা দেশে ছাত্ররা যখন পরিক্ষা নিয়ে ব্যাস্থ আপনারা সেই মুর্হুতে নিন্দনীয় কাজ করে আবার ফেসবুকে অমুক তমুককে ধোলাই করা আর লাইভ, সাক্ষাৎকার আর টকশোতে ব্যাস্ত। ছাত্রনেতা বলে কথা। আপনারা আগামির ইতিহাসে কুখ্যাত ছাত্র হিসাবে অমর হয়ে থাকবেন।
- মাওলানা মনসুর শামিম লিখেছেন, ভিডিওতে দেখলাম বেয়াদব ছাত্র হেলাল বারবার বলছে, আহমদ শফি, আহমদ শফি। যেন তার ছোট ভাই। যেখানে দেশের সকল মানুষ খোদ দেশের প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত বলেন আল্লামা আহমদ শফি দামাত বারাকাতুহুম বা মাদ্দাজিল্লুহু। পুরো ভিডিওটি কেবল তাদের দুষ্ট চিরত্রের চিত্র প্রকাশিত হয়েছে। যাদের কারনে আজ কলঙ্কিত একটি প্রতিষ্টান। প্রশ্নবিদ্ধ দেশখ্যাত এক বরেণ্য বুর্জুগ আলেমেদ্বীন। ধিক তোমাদের শত ধিক।
- শিব্বির আহমদ মন্তব্য করেন, যদি কখনই সেখানে সেন্টার না হয়,তাহলে এই ঠুনকো হাস্যকর অযুহাতে তারা পরীক্ষা দিবেনা আজীবন…?!!!হ্যা খুব ভালো সুযোগ নিয়েছো। কিন্তু তোমার পরিবারের সদস্য সংখ্যা নিদিষ্ট হারে না হওয়ায় বোর্ড থেকে তোমাকে কেন্দ্র দেয়া হল না। আর তোমরা শিক্ষকদের অনুরোধ অমান্য করে পরিক্ষা দিলে না, আবার তিন জন পবেশপত্র ছাড়া পরিক্ষা দিতে গেল সব একটি গভীর নাটকে রূপ নিয়েছে। নানা সন্দেহের সৃষ্টি করেছে। বাকি ছাত্ররা কই? পরিক্ষা দেয়ার প্রস্তুতি না থাকলেও রিজনীতি আর ভিডিও করার প্রস্তুতি তোমাদের ঠিকই আছে।
- মাওলানা আজিজুর রহমান মানিক মন্তব্য করেছেন, বেফাক সটিক ভাবেই কাজ করে যাচ্ছে, কারন ৫ম শ্রেনী থেকে মিশকাত পর্যন্ত এই বছর ও বফাকের সেন্টার উমেদনগর মাদরাসায় ছিল। বেফাক কে দুষ দিয়ে লাভ নাই,যারা পরীক্ষা দেয় নাই তাদের কপাল খারাপ, আর যারা পরীক্ষা দেওয়ায় নাই তাদের ও কপাল খারাপ, আমাদের কিছুই করার নাই, শুদু দোয়া, আল্লাহ সকলকে সঠিক বুঝ দান করুন।
- মুফতি উসমান গনি লিখেছেন, ছাত্রদের ভিডিও দেখেই বুঝা গেছে এসব শেখানো ভূলি। তারা নানাভাবে দোষারোপ করে মিডিয়াকে তলোধুনা করা হযেছে। নিজেদের অপকর্ম ও দোষ আড়াল করতে অযাচিত একজন সম্মানিত জনপ্রিয় লেখকে আক্রমন করার চেষ্টা করা হয়েছে। সাংবাদিকরা নাকী মিডিয়া এক অভিবাকের কথা লিখেছে। তারা মাদরাসার স্বারক ছাত্রদের পিতার নাম দেখিয়ে বলেছেন এনামে কোন অভিবাক নেই। অভিবাক অর্থ কী কেবল পিতাই জানতে বড় ইচ্ছে করে? হায় পাগলামি? একটা সীমা থাকা দরকার। যা হয়েছিল একটি সীমা ছিল, ভিডিওটি সেটাও অতিক্রম করল। রশিদ জামিলের ভাষায় বলব, পাগলের মাথা খারাপ।
See more at: http://www.shomoybarta24.net