খতিব তাজুল ইসলাম:
অনেকে হয়তো বলবেন যে খতিব আবার শুরু করে দিয়েছেন। অনাহুত দাস্তানের কাহিনী এখন আবার নেটের পাতায় চাউর হবে। একটা জিনিস মনে রাখা ভালো যে কোনো জিনিস কেন মানুষের শরিরটাও খারাপের দিকে ধাবিত হতে থাকে যদি সে তার হজম শক্তিকে আবার চাংগা করে না তুলে। স্বাস্থ্যবিজ্ঞানীরা বলেন, মানুষ যখন ক্রমাগত একই নিয়মে খেতে থাকে তখন শরিরের কোণায় কোণায় মেঁদগুলো বাসা বাঁধতে থাকে। ফলে শরির মোটা হয়। রুগ শোক দেখা দেয়। তাই ব্যায়াম ও উপবাস তথা খাদ্য সীমিত করণের মাধ্যমে বডিকে আবার তার মূল জাগায় ফিরে নিয়ে আসতে হয়।
মাদারিসে কওমিয়ার দৃষ্টিনন্দন ক্যাম্পাস গুলো আমাদের চোখ জোড়ায় প্রাণে স্পন্ধন জাগায়। কিন্তু এই নান্দনিকতার ফাঁকে জ্ঞান বিজ্ঞানে যে ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে তার খবর কি আমরা রাখি? জ্ঞানের গভীরতা বলতে কিছু নেই। সিহাহ সিত্তা ঠিকই পড়ানো হয় অথচ শতকরা ১০% ছাত্র আরবিতে এবারত পড়তে পারেনা। আরবির মহামারি এখন প্রকাশ্য রূপ লাভ করেছে। বড় বড় শাইখদের তত্ত্ববধানে গড়ে উঠা বিশাল বিশাল ইমারতের কার্ণিসগুলো এখন মার্বেল পাথর দিয়ে সাজানো। সেখানে নেই ইলমে ওহীর ডীপ গবেষণা। উপরি উপরি দার্স আর তাদরিসের মাঝে নামের কেবল দানাই ফানাই ইলমের বিশালতার কোনো খবর নাই। আশ্চর্য্য লাগে মিডিয়ায় যখন ছাত্ররা প্রকাশ্যে বলে বেড়ায় যে আমাদের প্রস্তুতি ছিলোনা বিধায় পরিক্ষায় অংশগ্রহন করিনি। প্রশ্ন হলো এজন্য দায়ী কে বা কারা? ৫জন ৭জন ১০জন ১২জন ১৬জন দিয়ে জগতবাসিকে বাংলার দেওবন্দ জানান দেওয়ার হাস্যকর কসরত কত বড় বোকামি।
স্কুল কলেজ থেকে জ্ঞান উধাও হয়ে যাওয়ার জারিজুরি এখন কওমি অংগনকেও পেয়ে বসেছে। লোক দেখানো আয়োজন ছাড়া বিশেষ কিছু আর থাকছে না। দীনের এই মহত ঘাটিগুলো এভাবে নষ্ট হয়ে যাক তা সচেতন মহল নিশ্চয়ই মেনে নিবেন না। তাই নিম্নে কিছু প্রস্তাবনা পেশ করা হলো।
(ক) ‘আল হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামেয়াতিল কাওমিয়া’ এই পরিষদকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করে দাওরায়ে হাদীসকে দুই বৎসরের কোর্সে রুপান্তরীত করতে হবে।
(খ) একক বোর্ড এবং একক সিলেবাস প্রণয়নে কার্যকর কর্মসুচি হাতে নিয়ে তা বাস্তবায়নের দিকে ধাপে ধাপে অগ্রসর হতে হবে।
(গ) দাওরায়ে হাদীসের ক্লাসের মান যাতে রক্ষা হয়। এবং এই ক্লাস পরিচালনার জন্য বোর্ড কর্তৃক কিছু নীতিমালা প্রণয়ন করে তা সংশ্লিষ্ট মাদ্রাসায় প্রেরণ করে দিতে হবে। যাতে তারা সেই মানের পাঠদানে সক্ষম হন। যদি কারো এই সামর্থ না থাকে তাহলে তাদের টাইটেল ক্লাস খোলার কোন অধিকার নেই।
(ঘ) গোটা দেশের সকল কওমি মাদরাসাকে একটা বোর্ডের অধীনে নিয়ে আসার পরিকল্পনা থাকা চাই। সেজন্য প্রথমে বিভাগ ভিত্তিক জোন তৈরি করে যে বোর্ডের সদস্য সংখ্যা সেখানে বেশি তাদেরকে সে বিভাগের দায়িত্ব দেয়া হউক।
(ঙ) বড় বোর্ড হিসাবে কেন্দ্রীয় ভাবে বেফাক সমন্বয় এর ভুমিকা পালন করতে পারে। বোর্ড গুলো প্রাইমারি বিভাগে ৫ম, মাধ্যমিক বিভাগে অষ্টম ও দশম এবং উচ্যমাধ্যমিক বিভাগে ১১তম ও ১২তম বর্ষের পরীক্ষা নিবে। আর সর্বশেষ বর্ষের পরীক্ষা তো বর্তমান নতুন বোর্ড নিবে।
আমরা যদি জাতীয় ভাবে নিয়মতান্ত্রিকতার ভিতর না আসি তাহলে কোন প্রকার উন্নতি অগ্রগতি অর্জন সম্ভব নয়। মনোপলিজম খুব খারাপ জিনিস। যতবড় শাইখ বুজুর্গ কিংবা ওলি হোন তাতে অটোমেটিক শিক্ষাব্যস্থা ভাল হয়ে যায়না। প্রতিযোগিতার দৌড় দেশব্যাপী হলে উৎসাহ উদ্দীপনা বাড়বে দ্বিগুন। অনেক অনিচ্ছাকৃত অলসতা খামখেয়ালিপনা থেকে প্রতিষ্ঠানগুলো রক্ষা পাবে।
স্বীকৃতির সামান্য ঘোষণায় বাম রাম বেদাতীদের অন্তরজ্বালার কারণ বুঝতে যদি আমরা দেরী করি তাহলে নসীব খারাপই বলতে হবে। গতকাল স্বীকৃতির বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট পর্যন্ত তারা দাখিল করেছে। আমি স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই যে এই রিট খারিজ করাতে হবে কিংবা জয় ছিনিয়ে আনতে হবে। হাত পা গুটে বসে থাকলে চলবে না। মনে রাখবেন আমাদের ঐক্য আমাদেরই জয়। আমরা যত ঐক্যবদ্ধ হবো তত শক্তি বাড়বে। ইসলামের দুশমনদের কলিজায় কাঁপন ধরবে।
কোথায় সেন্টার হলো কি হলো না কিংবা কাকে কোনো পদ দেয়া হলো কি হলো না এসবে কান দিতে নেই। বিনীত ভাবে বলবো যারা রাজনীতিতে আছেন বোর্ডে আপনাদের জন্য চেয়ার খুঁজবেন না। আর যারা বোর্ডে আছেন আপনারা রাজনীতির লেজুড় বৃত্তি পরিহার করুন। বিশ্বাস করুন বাংলাদেশের ভবিষ্যত কওমি উলামাদের হাতে। আর তা কেবল সম্ভব বিচক্ষণতা ও হুসমন্দির সাথে কাজ করে গেলে। এবারের দাওরায়ে হাদীসের মাস্টার্স পরীক্ষার্থীদের জন্য থাকলো আন্তরিক ভালবাসা ও শুভ কামনা। আল্লাহ হাফিজ।