বাবরি মসজিদ ধ্বংসে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ
অনলাইন ডেস্ক : ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) শীর্ষ নেতা লালকৃষ্ণ আদভানি, মুরলি মনোহর যোশি, উমা ভারতীসহ ২১ জনের বিরুদ্ধে বাবরি মসজিদ ধ্বংসে ষড়যন্ত্রের মামলা চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। সর্বোচ্চ আদালত কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থাকে (সিবিআই) এ বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন। এ ছাড়া ২৫ বছর ধরে চলা আলোচিত এ মামলা দুই বছরের মধ্যে শেষ করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি পিনাকী চন্দ্র ঘোষ ও রোহিন্তন ফলি নরিম্যানের বেঞ্চ গতকাল বুধবার এ নির্দেশ দেন।
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারে ক্ষমতাসীন বিজেপির শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের তদন্ত করার জন্য সিবিআই শীর্ষ আদালতের অনুমতি চেয়েছিল। দুই বিচারপতি সেই আবেদন মঞ্জুর করলেন। ক্ষমতাসীন বিজেপির জন্য নিঃসন্দেহে এটা একটা বড় ধাক্কা। তবে বিজেপির নেতা কল্যাণ সিংকে আদালতের নির্দেশের বাইরে রাখা হয়েছে। তিনি বর্তমানে রাজস্থানের রাজ্যপাল। এটা তাঁর রক্ষাকবচ। যত দিন এ পদে বহাল থাকবেন, তত দিন পর্যন্ত তিনি তদন্তের আওতার বাইরে থাকবেন।
১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা বাবরি মসজিদ ধ্বংস করার পর লখনৌয়ের নিম্ন আদালতে কর সেবকদের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়। শীর্ষ বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অন্য মামলাটি রুজু হয় রায়বেরিলি আদালতে। ৬ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতি উভয় মামলাই একসঙ্গে চালানোর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। গতকালের নির্দেশে তাঁরা রায়বেরিলি এবং লখনৌয়ের আদালতকে দুই বছরের মধ্যে এই মামলার নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দিয়ে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন। পাশাপাশি এই দুই মামলার সঙ্গে যে বিচারপতিরা যুক্ত রয়েছেন, মামলার নিষ্পত্তি হওয়া পর্যন্ত তাঁদের বদলি করা যাবে না বলেও নির্দেশ দেন।
আদভানি ও যোশি এই মুহূর্তে সরকারের কোনো পদে নেই। তবে উমা ভারতী কেন্দ্রীয় পানিসম্পদমন্ত্রী। তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের মামলা চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পর প্রশ্ন উঠছে, মন্ত্রীর পদ থেকে তিনি ইস্তফা দেবেন কি না। উমা ভারতী গতকাল বলেন, ‘গোটা বিষয়ই স্বতঃস্ফূর্ত ছিল। ষড়যন্ত্রের কোনো প্রশ্নই ওঠে না। সব কিছু মানুষের চোখের সামনে ঘটেছে। আমার বিবেক স্পষ্ট। আমার কথা ও কাজে বিভেদ ছিল না। আমার মনে একটাই বিষয় ছিল এবং আছে, রামমন্দির নির্মাণ। জেলে যেতে হলে যাব। ফাঁসিতে ঝোলানো হলে, তাও হবে। সমস্যা নেই। আমি শুধু অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণ দেখতে চাই।’
তদন্তের আওতায় উমা ভারতীকে রাখার ব্যাপারে সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে বিরোধী দল কংগ্রেস মন্ত্রীর পদ থেকে তাঁর ইস্তফার দাবি জানিয়েছে। জবাবে উমা বলেন, ‘দিল্লির দাঙ্গায় যখন শিখ নিধন হচ্ছিল, রাজীব গান্ধীর বাড়িতে তখন সোনিয়া ছিলেন। তার মানে কি সোনিয়াও শিখ নিধনযজ্ঞের ষড়যন্ত্রী ছিলেন?’
আর বিজেপির কট্টরপন্থী নেতা বিনয় কাটিয়ার গতকাল বলেন, উমা ভারতীর পদত্যাগের প্রশ্নই ওঠে না। কেননা, ষড়যন্ত্রের অভিযোগটাই ভিত্তিহীন।
লালকৃষ্ণ আদভানিকে পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হিসেবে পেতে বিজেপির একটা মহল আগ্রহী ছিল। এমনকি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তৃণমূল নেতা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বিজেপির এই ‘লৌহ পুরুষকে’ রাষ্ট্রপতির পদে দেখার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে এবার দৃশ্যত সে সম্ভাবনার মৃত্যু ঘটল।