আব্দুস সালাম আজাদি:
দেওবন্দ, সাহরানপুর, ও নাদওয়াতুল উলামা কিংবা বেনারসের আসসালাফিয়্যাহ ইত্যাদি ক্বাওমী সিলেবাস থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রী নিয়ে পাস করলে ইসলামী স্টাডীজে এম এ মান দেয়া যায়, এ নিয়ে যারা দ্বিমত করেন তারা হয় বোকা, না হয় এঁদের সিলেবাস সম্পর্কে অজ্ঞ, কিংবা এঁদের সাথে হিংসা তাদের দিলকে কালো করে দিয়েছে। আমি ছোট বেলা থেকে যেসব উস্তাযগণের কাছে ইসলামি বিষয়ে সবচেয়ে সুন্দর পড়েছি তারা হয় দেওবন্দ সিলেবাসের সরাসরি ছাত্র, নতুবা দেওবন্দ সিলেবাসের পাস করা ছাত্রদের ছাত্র।
বাংলাদেশে যে সব আলিয়া মাদ্রাসাতে দেওবন্দ পাস করা শিক্ষক পড়ায়েছেন এখনো তাদের শুন্য পদ পূরণ করতে পারেনি কেও। মুফতি আমীমুল ইহসান, শায়খ যাফর আহমাদ উসমানি, নিয়ায মাখদুম খুর্তানী হুজুর, শায়খ উবাইদুল হক জালালাবাদী, মিঞা মুহাম্মাদ কাসেমী……… কতজনের নাম বলবো, এঁরা সবাই ছিলেন দেওবন্দের ফারিগ অথবা দেওবন্দের সিলেবাস ফলো করা মাদ্রাসা থেকে পাস করা।
এই সব ক্বাওমী মাদ্রাসা থেকে দাওরা পাস করা আলিমগণের যে সব বৈশিষ্ট্য আমি পেয়েছি তাহলোঃ
১- এরা দ্বীনি শিক্ষার জন্য আত্মোৎসর্গকারী, কাজেই দুনিয়ার টাকা পয়সা ধন দৌলাতের চেয়ে পড়াশুনা নিয়ে এরা ব্যস্ত থেকেছে বেশি।
২- আলিমে দ্বীন হিসেবে এরা নিজদেরকে তুলে ধরেছেন। না ঘরকা না ঘটকা হয়ে তারা থাকতে চাননি, ফলে পাক-ভারত-বাংলাদেশের সমস্ত মাসজিদ, ইলমি মাদ্রাসা এদেরি হাতে।
৩- এখনো ভারতীয় ঊপমহাদেশে ইসলামের ব্যাপারে এদেরকেই মানুষ বেশি সমর্থন যোগ্য মনে করে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ডক্টর হলেও একজন সাধারণ দাওরাহ পাস আলিমদের কথা মানুষ বেশি শোনে।
৪- এদের কে ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষেরা বুকে টেনে নেয়ায় সারা পৃথিবী জুড়ে এদের অবস্থান খুব শক্ত। দক্ষিণ আফিরকার মুসলিম কম্যুনিটী, ইউরোপের মুসলিম কম্যুনিটি তথা সারা বিশ্বের ভারতীয় ঊপমহাদেশের মুসলিম কম্যুনিটি এঁদেরকেই আপন করে নিয়েছেন।
দেওবন্দ বা অন্যান্য ক্বাওমী মাদ্রাসা থেকে দাওরা পাস করা সর্টিফিকেট ভারতে বিএ এর মান পায়, পাকিস্থানে এম এ র মান পায়। আমাদের সরকার এম এর মান দিয়ে ভালো করেছে, তাতে পাকিস্থানের সাথে আমাদের মিলটাকে ভালো ভাবে তুলে ধরা গেছে। আলিয়া মাদ্রাসায় কামিল সার্টিফিকেটকে এম এ র মর্যাদা দেয়া হলে, দাওরার সার্টিফিকেটকে এম এ দিলে কোন সমস্যা হবার কথা নেই। শুধু কামিল পাসের যে সব শর্ত করা হয়ে থাকে, তা দাওরাহতে করলে একদম বিশ্বমানের ই হবে বলে আমার বিশ্বাস।
লক্ষ লক্ষ আলিম উলামাগণের পাস করা সনদের এই সুন্দর স্বীকৃতি দেয়ায় সরকার ভালো কাজ করেছে। আগের ৪ দলীয় সরকার এইটা করলে তাদের ইসলাম প্রেমের নমূনায় আরেকটা দলীল যোগ হত। আওয়ামীলীগ সেটা কারতে পারায় কোন মতলববাজীর প্রশ্ন উঠানো ঠিক নয়। আমার মনে আছে ৪ দলীয় জোটের সময়ে আলিয়া মাদ্রাসাকে এই মান দেয়ার বিলটা কয়েকবছর আব্দুল মান্নান ভুঁইয়ার টেবিলে আটকা ছিলো।, জোট সরকারের একদম শেষের কয়েক মাসে কোন ভাবে যেন তেন অবস্থায় এই মান দিয়ে যায় তখনকার সরকার। আমাদের সরকার গুলো এইভাবেই ভোটের রাজনীতিতে হুজুরদের হাত করেছে। বিশাল আলিয়া আলিম সমাজ ও জামাআতের উলামাগণকে হাতে রাখতে ৪ দল কিছু করলে সে সময়ের আলিমদের গালাগালি না করে থাকলে, এখন যে সব উলামা এই সম্মাননা পেলেন তাদের নিয়ে এত হাসাহাসি ও ব্যংগোক্তির হেতু কি বুঝে আসে না।
বাংলাদেশে ইসলাম বাঁচাতে কোন দলের একক চেষ্টায় হয়নি। শাহাবাগী শ্রী চৈতন্যের ঠেলায় এই সব আলিম সমাজ কেমন আলমগীরীয় ভুমিকা রেখেছিলেন- তা সারা বাংলাদেশ দেখেছে। এদেরকে যেভাবে হেয় করা হচ্ছে তা দেখে কষ্ট পাচ্ছি। মনে রাখবেন আলিম সমাজকে এই ভাবে হেয় করার পেছনে আপনার ঈমানের খুব দূর্বলতার পরিচয় দেয়।
প্রধান মন্ত্রীর সাথে মুফতী হুজুরের ছবি দিয়ে ফতোয়া জিজ্ঞেস করেছেন অনেকে, আমি বলি মহিলা প্রধান মন্ত্রী ও বিরোধিদলের নেত্রীর সাথে বসে ফটো দেয়া জায়েয হওয়ার ব্যাপারে আমাদের দেশের সকল আলিম সমাজ ঐকমত্য দেখিয়েছেন, যদিও আমি একমত নই।