হাওলাদার জহিরুল ইসলাম, দেওবন্দ, ভারত : বিশ্বখ্যাত ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দে গত সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হলো বাঙালি ছাত্রদের সাহিত্য মজলিসের সমাপনী সভা৷ বাঙালি তরুণদের উদ্যোগে আয়োজিত আড্ডায় বরাবরের মতো গতকালও আসরের প্রধান আলোচক ছিলেন পরিচালক তরুণ সব্যসাচী লেখক ও কবি মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ৷ সাপ্তাহিক আলোচ্য বিষয় ‘ছড়া-কবিতা কী, লিখতে হয় কীভাবে?’র ওপর গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেন তিনি৷ ছড়া-কবিতার ছন্দ, পার্থক্য, সাহিত্যে তার অবস্থানসহ নানাদিক তুলে ধরেন আলাপে আলাপে৷ মজলিসের সমাপনী আসর হওয়ায় গতকাল সাহিত্যের সমকালীন অন্যান্য প্রসঙ্গও উঠে আসে তার কথায় কথায়৷
এরপর উপস্থিত সাহিত্য-সারথিদের মাঝে লেখালেখির উদ্দীপনা বাড়াতে তিনি মধ্যযুগীয় ও আধুনিক কবি, লেখকদের লেখকজীবনের কাহিনি তুলে ধরেন সংক্ষেপে৷ আলোচিত হয় শরৎ, নিমাই, নজরুল, হুমায়ুন, রাহাত খানের জীবনালেখ্যও৷ সঙ্গে নিজের লেখকজীবনের শুরুটাও তুলে ধরেন পরিচালক বাংলা, উর্দু ও হিন্দিভাষার গদ্যশিল্পী ও কবি মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ৷ বলেন, ‘লেখালেখি এক চরম সাধনার বিষয়৷ নিয়মিত হওয়া ছাড়া এ জগতে ভালো স্থান অর্জন করা সম্ভব নয় ৷ একজন সফল লেখক হতে হলে লেখার থেকে পড়তে হবে কয়েকগুণ বেশি৷ রোজ দু’বেলা লেখার টেবিলে বসা চাই৷ এর আগে তিনটে শর্ত৷ পড়া, পড়া এবং পড়া৷ এর অনুষঙ্গ হিসেবে রয়েছে জীবনবোধ, পৃথিবী দেখা৷ ভালো লেখক হতে হলে ভালো পাঠক হবার পাশাপাশি ভালো দেখকও হতে হয়৷ রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, বিভূতি, শরৎ, জহির রায়হান, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, সুনীল, আহমদ ছফা, রাহাত খান, হেমন্ত, শমরেশ, হুমায়ূনসহ সমকালীন শেষ্ঠ কবি-সাহিত্যিকদের লেখাও যেনো নিয়মিত পড়ার তালিকা থেকে বাদ না যায়৷’
উপস্থিতিদের লক্ষ্য করে লেখালেখি বিষয়ে দেন আরও নানা পরামর্শ৷ বলেন, ‘একজন সফল লেখক তার নিজের লেখার প্রথম ও প্রধান সম্পাদক হয়ে থাকেন৷ একটি লেখা কমপক্ষে ১০/১৫ বার সম্পাদনা করা চাই৷ বিখ্যাত লেখকদের সবাই এই কাজটি করেছেন বড় যত্নের সঙ্গে৷ আমাদের চোখের সামনেই আছেন আদিব সাহেব (হজরত মাওলানা আবু তাহের মেসবাহ)৷ তিনি লেখালেখির দীর্ঘ পথ পাড়ি দেবার পরও নিজের একটি লেখা বারবার সম্পাদনা করে থাকেন এখনও৷ এমনকি কোনো বইয়ের দ্বিতীয় এডিশন বাজারে ছাড়ার আগে কয়েকবার সম্পাদনা করে নেন৷ মার্জিনে মন্তব্য, এসো কলম মেরামত করি, বাংলা লেখার নিয়মকানুন, শুদ্ধিকরণ বইগুলি উল্টে দেখা চাই মাঝেমধ্যে৷ তাহলে লেখা কাটাছেঁড়ার নানাদিক বুঝে আসবে আপনাতেই৷’
এরপর আড্ডার অন্যান্যদের লেখাপাঠ ও বিখ্যাত ছড়াকার সুকুমার রায়ের ‘আবোল তাবোল’-এর ওপর খানিকটা আলোচনা হয়৷ তরুণ লেখক আহমদ আবদুল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আড্ডায় সারথীদের মাঝে ছড়াকবিতার ওপর আরও কথা বলেন তারুণ্যদীপ্ত লেখক হাওলাদার জহিরুল ইসলাম, আবু দাউদ তাওহিদ ও আহমদ আবদুল্লাহ৷
সবশেষে লেখালেখিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পেশা হিসেবে গ্রহণের পরামর্শ দিয়ে মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ বলেন, ‘বর্তমান সময়ে মিডিয়ার চরম উৎকর্ষের যুগ চলছে৷ আর মিডিয়ার উল্লেখযোগ্য একটি প্লাটফর্ম হলো এই লেখালেখি৷ এর মাধ্যমে বিশ্বের সর্বত্র ধর্ম-মানবতার চির শান্তির বাণী খুব সহজেই পৌঁছে দেয়া যায়৷ তাই দেশ ও দশের মাঝে বহুমুখী খেদমত আঞ্জাম দিতে লেখালেখির কোনো জুড়ি নেই৷’
উল্লেখ্য, দেওবন্দের তৈয়্যব হাসপাতাল সংলগ্ন বেরুণ কোটলা মসজিদপ্রাঙ্গনে আলোচিত সভাটি আরম্ভ হয় গত মার্চে৷ প্রতি মজলিস অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিলো সপ্তাহের বৃহষ্পতিবার বাদ মাগরিব থেকে ভারতীয় সময় রাত দশটা অবধি৷ রোজনামচা, গল্প, প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য-ফিচার, ছড়াকবিতাসহ সাহিত্য-সাংবাদিকতার প্রায় সব বিভাগ নিয়েই হয় বিস্তর আলোচনা৷ সঙ্গে সারথীদের লেখা দেখা, প্রয়োজনীয় কাটাছেঁড়া করা, কোনো একটি লেখার ওপর পর্যালোচনা করা, শব্দখেলা, সুন্দর সুন্দর বাক্য নির্মাণের কৌশল শেখানো, ইত্যাদি তো ছিলো নিয়মিতই৷