আবুল কালাম আজাদ
কওমি মাদরাসার সংস্কার আর স্বীকৃতি নিয়ে পানি কম ঘোলা হয়নি। নতুন করে পানি ঘোলা হোক, সেটাও চাই না। তাই যারা সংস্কার আর স্বীকৃতির পক্ষে, তারা এখন অনেকটা বুদ্ধিমানের পরিচয় দিচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে। অনেকটা নীরবতা পালন করছেন। আর নীরবতাটা কলম আর মুখ। তবে তারা যে বসে নেই; সেটা অনেকেই অনুমান করতে পারছেন। আর বুদ্ধিমান লোকেরা কথার চে’ কাজকে যে প্রাধান্য দেন সেটা চিরন্তন সত্য।
এখন কথা হচ্ছে, যেভাবেই হোক, স্বীকৃতি তো হয়ে যাচ্ছে। আর এই স্বীকৃতিটাকে কীভাবে আমাদের কওম ও কওমির উপকারে আসে, সেদিকে আমাদের মনোযোগ দেয়া উচিৎ।
নিজেদের সমস্যা নিজেরা সমাধান করা এটাও নিশ্চয়ই বুদ্ধিমানরা বোঝেন। তাই প্রয়োজনীয় সংস্কারে এখনই হাত দেয়া দরকার। সিলেবাস বিন্যাস, প্রয়োজনীয় সংযোজন-বিয়োজন, শিক্ষক প্রশিক্ষণ, আরবিকে অধিক গুরুত্ব দেয়া- এগুলো নিজেরা করলে স্বীকৃতি বাস্তবেই উপকারে আসবে। অন্যথায় স্বীকৃতি শুধু নামেমাত্রই থাকবে। মূল উদ্দেশ্য হাসিল হবে না।
স্বীকৃতি ব্যাপারে আমাদের কওমি অঙ্গনে যে বিরোধিতা আছে, সেটাকে আমরা আদতে বিরোধিতা বলি না। এই বিরোধিতাকে আমরা পজেটিভ দৃষ্টিতে দেখি। কারণ, যারা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা পেশ করেছেন, মূলত সেটা কওমির দরদ থেকেই। তাই স্বীকৃতির পক্ষের যারা আছেন, তারা বিপক্ষের ভাইদের হিংসা বা শত্রু মনে করবেন- এমনটা আমরা মনে করি না; আশাও করি না।
আরও কিছু লোক আছে, যারা সূক্ষ্মভাবে কওমি স্বীকৃতির বিরোধিতা করেছে। তারা রাষ্ট্রের ধর্মীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট দখল করে ভ্রান্ত মতবাদ প্রচার করেছে-করছে। এদের অধিকাংশের যোগ্যতা বলতে আসলে কিছুই নেই। এরা একলাইন আরবির ঠিকমত বাংলা অনুবাদ করতেও জানে না; আসলে পারেও না। দেশবাসী তাদের সেসব হাস্যকর চিত্রও দেখেছে। তারা ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ফাউন্ডেশনের অধীনে বিভিন্ন ধর্মীয় প্রজেক্টে কাজ করছে, বিভিন্ন মসজিদের ইমাম-খতিবের দায়িত্ব পালন করেছে-করছে। স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্মীয় পোস্ট দখল করে বসে আছে। (আলিয়া মাদরাসার অবস্থাও প্রায় একই রকম)। তাদের মধ্যে না ইলম আছে আর না আমল আছে। নকল করে পরীক্ষা দিয়ে কোনোরকমে একটা সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে ঘুষ দিয়ে চাকরিটি বাগিয়ে নিয়েছে। যেখানে নকল আর ঘুষের ছড়াছড়ি, সেখানে যোগ্যতারও প্রয়োজন হয় না।
এদের সাথে আমাদের কোনো আপোষ নেই। তারা তাদের রুটি রুজির জায়গায় আঘাত আসবে মনে করেই স্বীকৃতির বিরুদ্ধে বছরকে বছর কৌশলে বিরোধিতা করেছে। আমাদেরকে বিভক্ত করে রাখার চেষ্টা করেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা সফল হতে পারেনি আলহামদুলিল্লাহ। আগামীতেও তারা সফল হবে না ইনশাআল্লাহ।