মুহাম্মদ নাজমুল ইসলাম
একদম ছোটকালের কথা। সবে মকতবে পড়ি মাত্র। তখন থেকেই স্বপ্ন দেখতাম একদিন আমাদের আকাবিরের চরণভুমিতে যাবো৷ সেখানে পড়বো৷ তাদের হাঁটা রাস্তায় হাঁটবো ৷ ছুঁয়ে দেখবো তাদের সব কারনামা৷ উপলব্ধি করবো সেই সোনালি দিন। আসলাম। এখন নিয়মিয়তই দারুল উলুম দেওবন্দের পথে পথে হাঁটি৷ মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে বিমুগ্ধ হয়ে একের পর এক দেখতে থাকি স্বপ্নপুরির মানাজিরগুলো৷ এক ইমারত থেকে আরেক ইমারতে অবাক চাহনিতে থাকিয়ে থাকি৷ একা একা নওদারায় হাটাহাটি করি৷ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পান করানো জলকূপ থেকে আগ্রহভরে জল পান করি৷ তাঁর আঁকা নির্মাণ রেখার ‘এহাতায়ে মুলসুরি’তে সুরা ইয়াসিন পাঠ করি৷ সব আত্মিয়স্বজন,বন্ধুবান্ধব, মু্হসিনদের জন্য দোয়া করি। এক দেয়াল থেকে অন্য দেয়ালের বাহারি বিভিন্ন ভাষার দেয়ালিকায় চোখ ভুলিয়ে পড়তে থাকি। ভাবতে থাকি সে বিদ্যান ব্যক্তিদের কথা, যারা কি না এরকম ছুটো কাগুজে পাতায়ই প্র্যক্টিস করে হয়েছেন যুগসেরা কলমবাজ। যাদের কলমের ডগায় বাতিল হয়েছে চুর্ণবিচুর্ণ। লিখছেন বুক ফুলিয়ে। যা সত্য তা লিখতে কোনো দ্বিধাই করেন নি। আহা! দেওবন্দের এরকম সাহিত্য চর্চা দেখে বলতে মন চায়। দেওবন্দ তো দেওবন্দই। এরকমই তো হবার কথা। এবার সারি সারি দেয়ালিকাগুলো হাতের আঙুলের টাবে গুনতে থাকি অবিরাম।
শুরু করি আরবি দেয়ালিকা দিয়ে গুনে যা পাই; আন নাদিল আদাবি, আর রাশাদ, আল বালাগ, আল ফজিলাহ, আল হেলাল, আল হাক্কুল মুবিন, আল কাসিম, আস সিরাজ, আন নুকজাহ, আস সবুর, আল ইমদাদ, আল খাইর, আল মুরতাজা, আল ওয়াইল ইসলামি, আল কাজি, আদ দাওয়াহ, আত তিবয়ান৷
এবার শুরু করি উর্দূগুলো। উর্দুতে প্রকাশিত দেয়ালপত্রে যেনো ছেয়ে আছে পুরো এহাতায়ে মুলসুরি৷ একের পর এক ডিজাইনের দেয়ালিকাগুলো প্রাণ কেড়ে নেয়৷ নানান রকমের দীর্ঘ নাম-ফিরিস্তি এই—
আল ইহতিশাম, ইনকিলাব, আল মুনাজারা, আল মাহশার, আয়নায়ে আইয়্যাম, আন নিজাম, আল বালাগ, আল বয়ান, আল ফজিলত, ইত্তিহাদ, আল হেলাল, কারওয়াঁ, শাময়ে হেদায়াত, ইকাব, আল ইহরার, হায়াতে নও, শেরাজে হিন্দ, আন নোমান, আল বদর, আন নুর, আদ দাওয়াত, আল ফখর, মেহতাব, নকশে দাওয়াম, শানে মুনাজ্জাল, আতহার, আর রিয়াজ, আফতাব, ইহতিসাব, আল মুজাহিদ, পয়গাম, শাময়ে নও, আন নাসির, সুবহে নও, আল আহাদ, আল ওয়াজদি, আল কাসিম, আল মাহমুদ, আল হেরেম, তেহজিবুল আখলাক, আল হক, আস সুলতান, আল জাওহার, আল ফয়েজ, আল ইসলাহ, বাহরে নও, আর রমাদান, আল হুসাইন, আত তাবলিগ, আস সাবির, আল হাফিজ, আল জাওহার, আল মাহফুজ, আল ওয়াহহাব, শাবাব, আল ফজল, আল মানহাল, আল ফালাহ, আফকার, আদ দিয়া, আবশার, আত তানজিম, আল কায়েদ।
এবার শুরু করি বাংলাগুলো:
ইনকিলাব, নেদায়ে হেমায়েত, আল বালাগ, চেতনার উৎস, নবচেতনা৷
আর ইংরেজিতে আল হায়াত, ফার্সিতে পারওয়াজ, অসামীয় ভাষায় ইছলাম, নেপালিয়ানে পয়ামে নেপাল, তামিলে আর রশিদ, কেরালা ভাষায় জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম দেওবন্দ৷
এছাড়াও প্রতিটা দিবসে উর্দু, হিন্দি, আরবি, ইংরেজি ভাষায় বেরোয় বিশেষ সংখ্যা৷ উর্দু, হিন্দি, আরবি ক্যালিওগ্রাফিতে সাজে অপরূপ দেয়ালপত্র৷
এসব দেয়ালপত্র কিংবা বিশেষ সাময়িকী শিক্ষার্থীদের মেহনতের ফসল৷ দারুল উলুম দেওবন্দের একাডেমিক নিজস্ব তিরিশ দিনের দৈনিক রয়েছে দুটি৷ একটি আরবি, অপরটি উর্দু ভাষায়৷ বিশেষ দিন কিংবা বিশেষ কোনো উপলক্ষে উর্দুটির আবার হিন্দি ভার্সনও প্রকাশিত হয়৷ আরবি ভাষার ম্যাগাজিনটির নাম ‘আদ দায়ি’; আর উর্দু-হিন্দি ভাষায় প্রকাশনাটির নাম ‘দারুল উলুম’৷ তথ্যসমৃদ্ধ আধুনিক আরবি, উর্দু, হিন্দি সাহিত্যের রচনাসমৃদ্ধ ম্যাগাজিনগুলি আন্তর্জাতিক মানের৷
লেখক : শিক্ষার্থী, দারুল উলুম দেওবন্দ।
আরও পড়ুন : অজানা দেওবন্দ ১৮ : বিভিন্ন ভাষার সাহিত্য চর্চায় দেওবন্দ