আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মার্কিন সাময়িকী ফোর্বস-এর সবচেয়ে ক্ষমতাবান ব্যক্তিদের তালিকায় পরপর চার বছর ধরে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। পুতিন কেন বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি—এই প্রশ্নের উত্তর মেলানোর চেষ্টা করেছেন মার্কিন সাংবাদিক ও লেখক ফরিদ জাকারিয়া।
সিএনএনের একটি অনুষ্ঠানের উপস্থাপক ফরিদ জাকারিয়ার ‘দ্য মোস্ট পাওয়ারফুল ম্যান ইন দ্য ওয়ার্ল্ড’ শিরোনামের তথ্যচিত্রে পুতিনের সবচেয়ে ক্ষমতাবান ব্যক্তি হওয়ার কারণ অনুসন্ধান করা হয়েছে।
এক ঘণ্টার তথ্যচিত্রটি সম্প্রতি সিএনএনে প্রচারিত হয়েছে। তথ্যচিত্রটি সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়েছে। ক্রেমলিন পর্যন্ত প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে।
রাশিয়ার চেয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন অনেক শক্তিশালী দেশ। তারপরও রুশ প্রেসিডেন্ট সবচেয়ে ক্ষমতাবান ব্যক্তি। কিন্তু কেন?
কোনো রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধানের ক্ষমতা নির্ধারিত হয় তাঁর দেশের শক্তিমত্তা এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সেই ক্ষমতা চর্চার সক্ষমতার ওপর। এ দুটি বিষয়ের সমন্বয় করলে পুতিনের ক্ষমতাবান ব্যক্তিদের তালিকায় সবার ওপরে থাকার কারণ সহজেই স্পষ্ট হয়।
পুতিন রাশিয়ায় ক্ষমতার এমন এক কাঠামো গড়ে তুলেছেন, যেখানে তিনিই সর্বেসর্বা।
রুশ প্রেসিডেন্টের ঘোর সমালোচক দেশটির দাবার গ্র্যান্ডমাস্টার গ্যারি ক্যাসপারভের ভাষ্য, রাশিয়ার রাজনৈতিক ক্ষমতার পুরো কাঠামোটি এক ব্যক্তির ওপর নির্ভরশীল। আর তিনি পুতিন। পরিস্থিতি এমন যে পুতিনের মৃত্যুর পর কী হবে, কে ক্ষমতায় আসবেন, তা কেউ জানেন না।
ফরিদ জাকারিয়ার মতে, পুতিনকে বোঝার জন্য রাশিয়াকে বুঝতে হবে।
পুতিন-যুগের আগে রাশিয়া অনেক চড়াই-উতরাই দেখেছে। দেশটির জনগণ অনেক তিক্ত অভিজ্ঞতার সাক্ষী। রাশিয়াকে স্থিতিশীলতার ধারায় নিয়ে আসার দৃঢ়প্রত্যয়ে ক্ষমতায় আসেন পুতিন।
পুতিন নিজ দেশের ওপর তাঁর কঠোর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছেন। রাশিয়া পুনর্গঠন করছেন। তাঁর আমলে রাশিয়ায় স্থিতিশীলতা এসেছে। জনগণের জীবনযাত্রার মান বাড়ছে। বিশ্বমঞ্চে রাশিয়া নামডাক ও সম্মান বেড়ে চলছে। রাশিয়ায় পুতিনের পক্ষে ব্যাপক জনসমর্থন রয়েছে।
এক রুশ সাংবাদিক ফরিদ জাকারিয়াকে বলেছেন, রাশিয়ার জনগণ পুতিনকে শুধু নিজেদের প্রেসিডেন্টই ভাবে না, তারা তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রেরও প্রেসিডেন্ট মনে করে।
নির্বাচনী প্রচারের সময় যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প অকপটে বলেছিলেন, বারাক ওবামার চেয়ে পুতিন অনেক বড় ও শক্তিমান নেতা। তিনি দারুণ করছেন। পুতিনের মতো শক্তিশালী নেতা হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পরও ট্রাম্পকে পুতিনের নেতৃত্বের প্রশংসা করতে দেখা যায়।
রাশিয়ানদের গর্ব করার মতো অনেক কিছুই আছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় দেশ রাশিয়া। রাশিয়া ধনী দেশও বটে। তাদের তেল, গ্যাসসহ বেশ কিছু প্রাকৃতিক সম্পদের বড় ধরনের মজুত আছে। সাংস্কৃতিকভাবেও দেশটি সমৃদ্ধ।
ফরিদ জাকারিয়ার মতে, পুতিন তাঁর দেশ রাশিয়াকে বোঝেন। তিনি এই বিশ্বব্যবস্থাকেও বোঝেন। কীভাবে ক্ষমতা ব্যবহার করতে হয়, তা জানেন পুতিন।
ফরিদ জাকারিয়ার ভাষ্য, মুক্ত সমাজের দুর্বলতা জানেন পুতিন। তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো প্রতিষ্ঠানের ভঙ্গুরতা সম্পর্কেও জানেন।
সামগ্রিক দিক বিবেচনায় নিয়ে ফরিদ জাকারিয়া বলছেন, পুতিন তাদের (মার্কিনি) খুব ভালো করেই বোঝেন। কিন্তু তারা ও ট্রাম্প কি সত্যিই তাঁকে (পুতিন) বোঝেন?
ভাষান্তর: সাইফুল সামিন