প্রথমবারের মতো ঢাকায় আসছেন পবিত্র মক্কা ও মদিনার প্রধান দুই ইমাম। পবিত্র মক্কার মসজিদুল হারামের ইমাম ড. শায়খ আবদুর রহমান আস সুদাইসি ও মদিনা শরীফের মসজিদে নববীর সিনিয়র ইমাম শায়খ ড. আলী বিন আবদুর রহমান আল হুযাইফি ঢাকায় আসার বিষয়ে প্রাথমিক সম্মতি জানিয়েছেন।
সৌদি বাদশাহর অনুমোদনের পর চূড়ান্ত তারিখ ঘোষণা করা হবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের (ইফাবা) প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানের বিশেষ মেহমান হিসেবেই ঢাকা আসবেন মুসলিম উম্মাহর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুই ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব।
দায়িত্বশীল পর্যায়ের একাধিক জন বিষয়টি বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছেন।
তারা জানান গত ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে একটি বৈঠকে মক্কা ও মদিনার দুই ইমামের ঢাকায় আনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়।
ওই বৈঠকে আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক শেখ মো. আবদুল্লাহকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করে দেন প্রধানমন্ত্রী। কমিটিতে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজালসহ ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গভর্নরস-এর কয়েকজন সদস্য রয়েছেন।
বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঢাকাস্থ সৌদি দূতাবাসের সঙ্গে কথা বলে দুই ইমামকে ঢাকায় আনার প্রক্রিয়া ও প্রয়োজনীয় আলোচনা শেষে চার সদস্যের প্রতিনিধি দল ৭ মার্চ আমন্ত্রণপত্র নিয়ে সৌদি আরব যান।
ওই প্রতিনিধি দলে ছিলেন- আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক শেখ মো. আবদুল্লাহ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজাল, সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দীন নদভি ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন বোর্ড অব গভর্নরস-এর সদস্য আলহাজ মিছবাহুর রহমান চৌধুরী।
মক্কা-মদিনার ইমামকে ঢাকায় অানা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইফাবা মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজাল বাংলানিউজকে বলেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ইসলামের প্রচার-প্রসারে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছেন। অন্যদিকে মক্কা-মদিনার ইমাম সাহেবরাও ইসলামের প্রচার ও প্রসারের কাজে নিবেদিত। তাদের মুখে ইসলামের কথা শুনতেই মক্কা-মদিনার ইমামকে দাওয়াত দেওয়া হচ্ছে।’
ফাউন্ডেশন প্রধান আরও বলেন, ‘অামরা এরই মধ্যে সৌদি আরব গিয়ে কথা বলে এসেছি, তারা দাওয়াত কবুল করেছেন, এখন তারিখ চূড়ান্ত করার অপেক্ষা।’
সামীম মোহাম্মদ আফজাল বলেন, ‘যেহেতু মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববী সৌদি আরব সরকারের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত। সে কারণে তাদেরকে ঢাকায় আনতে হলে সৌদি সরকারের অনুমোদন প্রয়োজন। বর্তমানে সৌদি বাদশাহ বিদেশ সফরে রয়েছেন। তিনি দেশে ফিরলে দ্রুত সিদ্ধান্ত আসবে।’
‘দুই ইমামই বাংলাদেশের দাওয়াত কবুল করেছেন। এখন শুধু তারিখ চূড়ান্ত বাকী। আশা করছি, দ্রুতই সব সম্পন্ন হবে,’ বলেন ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রধান।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ প্রতিবছর জাঁকজমকের সঙ্গে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করে আসছে। ২২ মার্চ প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী হলেও এবার একটু পিছিয়ে তা এপ্রিলে উদযাপন করা হতে পারে। সেক্ষেত্রে এবার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কিংবা অন্য কোনো স্থানে হতে পারে বলেও জানিয়েছেন তারা।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজাল এ বিষয়ে বলেন, আমরা চাইছি সরকারি কোনো ছুটির দিন অনুষ্ঠানটি করতে। যেন মানুষের দুর্ভোগ না হয়।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন বোর্ড অব গভর্নরস-এর সদস্য আলহাজ মিছবাহুর রহমান চৌধুরী বাংলানিউজকে জানান, ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ঢাকায় কয়েক লাখ আলেম-উলামার সমাবেশ করতে চায়। মক্কা-মদিনার প্রধান দুই ইমামকে সেই সমাবেশেই অংশ নেওয়ার জন্য দাওয়াত দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক শেখ মো. আবদুল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, ‘মক্কা-মদিনার ইমামদের বাংলাদেশে আনার প্রস্তাবটি প্রধানমন্ত্রী খুব গুরুত্ব দিয়ে গ্রহণ করে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে একটি কমিটি করে দিয়েছেন। আমরা ঢাকাস্থ সৌদি দূতাবাসের সঙ্গে কথা বলে তাদের পরামর্শক্রমে সরাসরি সৌদি আরব যেয়ে ইমাম সাহেবদের দাওয়াত দিয়েছি। তারা অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে দাওয়াত গ্রহণ করেছেন। কিন্তু তারিখ চূড়ান্ত হয়নি। আমরা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিয়ে এসেছি, আশা করি দ্রুত তারিখ পেয়ে যাবো।’
জঙ্গি তৎপরতা ও বিভ্রান্ত মতাদর্শ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করার লক্ষে ইতোপূর্বে মক্কা-মদিনার ইমামদের ঢাকায় আনার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু ওই চেষ্টা সফলতার মুখ দেখেনি। এমতাবস্থায় মসজিদুল হারামের ইমাম ড. সুদাইসি ও মসজিদে নববীর ইমাম ড. আবদুর রহমান আল হুযাইফিকে বাংলাদেশে আনার উদ্যোগকে দলমত নির্বিশেষে আলেমরা বেশ ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন।
উল্লেখ্য, মসজিদুল হারামের ইমাম ড. সুদাইসি সুমধুর কোরআন তেলাওয়াতের জন্য মুসলিম বিশ্বে সুপরিচিত। ড. সুদাইসি এবার আরাফার ময়দানে প্রথমবারের মতো হজের খুতবা দিয়েছেন। সেই সঙ্গে গ্র্যান্ড মসজিদের ইমাম হিসেবে তিনি ইসলামের সন্ত্রাসবিরোধী অবস্থান নিয়ে সারাবিশ্বেই উচ্চকিত কণ্ঠ।
আর মসজিদে নববীর সিনিয়র ইমাম ড. আলী বিন আবদুর রহমান আল হুযাইফি আরব বিশ্বের একজন খ্যাতনামা কারি। শিক্ষাবিদ হিসেবে আরব বিশ্বে তার বেশ সুনাম রয়েছে।
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম-এর সৌজন্যে