হানজালা মাহমুদ: তুরস্কের ইস্তম্বুল শহরের কাছে কুনিয়ায় অবস্থিত মাওলানা রুমীর কবর। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কয়েকজন দার্শনিকের একজন এই মাওলানা জালালুদ্দীন রুমী রহ.। প্রভুর প্রেমদর্শন ও সত্য তালাশে যিনি অতুলনীয় ইতিহাস তৈরি করে গেছেন পৃথিবীতে। তিনি আধ্যাত্মিক সুফি, কবি ও সাধক হিসেবে সারা বিশ্বে খ্যাত। তার সাহিত্য সমাদৃত হয়েছে পৃথিবীর সব শ্রেণি মানুষের কাছে।
তুরস্ক ছিল ইসলামী সাম্রাজ্যের স্বর্গদেশ। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত একজন সেনাপতির মাধ্যমে বিজাতি চক্র ১৯১০ খৃস্টাব্দের পর থেকে ৫০ বছরের মধ্যে একে ধর্মহীনতা ও অশ্লীলতার নরক রাজ্য বানিয়েছিল স্বাধীনতার নামে। যেখানে তারা কুরআন চর্চা ও দাড়ি রাখা এবং সব ধরনের ইসলামী কাজ ছিল দণ্ডণীয় অপরাধ। তারা আরবিতে আজান দেয়া এবং মুসলিমদের আরবি নাম রাখাও নিষিদ্ধ করেছিল। তবে বর্তমানে তুরস্কের জনগণ তাদের প্রাচীন ঐতিহ্যকে বুঝতে পারছেন। নিজের সংস্কৃতিকে রক্ষার তাগিদ অনুভব করছেন। তাই তুরস্ককে এখন পুনরায় ফিরে আসতে দেখা যাচ্ছে ইসলামী ঐতিহ্যে। নিষেধাজ্ঞার অনেক কিছুই এখান থেকে উঠে গেছে।
মাওলানা রুমীর স্মরণে সুলতান আলাউদ্দীন কায়কোবাদ তার কবরের পাশে একটি বিশাল মসজিদ নির্মাণ করেছেন। পরবর্তিতে এই মসজিদ মুরাদ সানী পুননির্মাণ ও কলেবর বৃদ্ধি করেন।
প্রায় শ বিঘা জমি নিয়ে নির্মিত পুরো মসজিদ কমপ্লেক্স। চারপাশে সুন্দর সজ্জিত বাগান। তুরস্কের স্থাপত্যের দলিল এগুলো। প্রায় প্রতিদিন বিশেষ করে শুক্রবার বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এখানে নানা ধারনের মানুষ আসেন দেখতে। মাওলানা রুমীর কবর জিয়ারত করতে। কবিদেরও সমাবেশ ঘটে এখানে।
১২০৭ খৃস্টাব্দের ৩০ সেপ্টেম্বর পলখ নগরী বা বর্তমানের আফগানিস্তানে জন্মেছিলেন মাওলানা রুমী রহ. বাবা মাওলানা বাহাউদ্দীন অলীদ রহ.। তিনি জ্ঞান গরিমায় সমবয়সীদের মধ্যে এতটাই উচ্চাঙ্গের ছিলেন যে সবাই তাকে জ্ঞানের বাদশা হিসেবে অভিহিত করেছিল। এই মাওলানা বাহাউদ্দীন অলীদ রহ. এর ছেলেই মাওলানা জালালুদ্দীন রুমী রহ.। পলখ নগরী অমুসলিম কর্তৃক দখল হলে তিনি সপরিবারে দামেস্ক চলে আসেন। সেখানে আরেক প্রখ্যাত সুফি আল্লামা ফরিদ উদ্দীন আত্তার রহ. এর সঙ্গে দেখা হলে তিনি মাওলানা রুমী সম্পর্কে বলেন, ভবিষ্যতে এই ছেলে জগত আলোকিত করবে। সে হবে জ্ঞানের দিশারী। বাবা অলীদ এই ভবিষ্যৎবাণীর মতোই তার ছেলেকে গড়ে তুলেন। পরবর্তীতে অলীদ রহ. এই কুনিয়ায় চলে আসেন এবং মৃত্যু পর্যন্ত এখানেই বসবাস করেন।
১২৩১ খৃস্টাব্দে আল্লামা বাহাউদ্দীন অলীদ রহ. ইন্তেকাল করলে তার শোকে শোকাভিভ‚ত হয়ে মাওলানা রুমী তার বিখ্যাত কিতাব মসনবী শরীফের লেখা শুরু করেন। দুই শাগরিদকে নিয়ে দীর্ঘ ১৫ বছরে মসনবী শেষ করে তার পীর শামসুত তাবরেজী রহ. এর খিদমতে হাজির হন।
বর্তমানে বিখ্যাত সুফি শামসুত তাবরিজ রহ. এর কবর মাওলানা রুমীর কবরের দুই কিলোমিটার দূরেই অবস্থিত। এখানেও তার নামে কয়েকশ একর ভ‚মি ওয়াকফ করা আছে। বিশাল এড়িয়া জুড়ে মনোরম পরিবেশ সাজানো রয়েছে কমপ্লেক্স। মাওলানা রুমী রহ. এর কবর দর্শনে এলে প্রায় সবাই ইমাম শামসুত তাবরেজী রহ. এর কবরও জিয়ারত করে যান।