এসআইপিআরআইর প্রতিবেদন
স্নায়ুযুদ্ধ-পরবর্তী বিশ্বে অস্ত্রের ব্যবসা সবচেয়ে চাঙা অবস্থায় রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ায় অস্ত্রের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় গত পাঁচ বছরে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এই পাঁচ বছরে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র কিনেছে ভারত। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে সৌদি আরব।
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এসআইপিআরআই) গতকাল সোমবার এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য দিয়েছে।
প্রতিবেদনটি বলছে, ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত এশিয়া ও ওশেনিয়া অঞ্চলের দেশগুলোতে অস্ত্র আমদানির পরিমাণ ছিল বিশ্বের মোট আমদানির ৪৩ শতাংশ। আগের পর্যায়ের (২০০৭ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত) তুলনায় এই আমদানি বৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ৭।
স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত এসআইপিআরআই এক বিবৃতিতে বলেছে, ২০১২-২০১৬ পর্যায়ে বড় ধরনের অস্ত্র কেনাবেচা ছিল স্নায়ুযুদ্ধ-পরবর্তী যেকোনো পঞ্চবার্ষিক পর্যায়ের মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০০৭-২০১১ পর্যায়ে এশিয়া ও ওশেনিয়ার অস্ত্র আমদানি ছিল আন্তর্জাতিক বাজারের ৪৪ শতাংশ।
মধ্যপ্রাচ্য ও আরব উপসাগরীয় দেশগুলোর অস্ত্র আমদানি ১৭ শতাংশ থেকে বেড়ে গত ৫ বছরে ২৯ শতাংশে পৌঁছায়। সে তুলনায় ইউরোপ, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা এবং আফ্রিকার অস্ত্র আমদানির পরিমাণ অনেক কমেছে। এ সময়ের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যে অস্ত্র আমদানি বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। আর বৈশ্বিক অস্ত্র আমদানিতে ভারতের অংশীদারি ১৩ শতাংশে পৌঁছেছে।
এসআইপিআরআইয়ের জ্যেষ্ঠ গবেষক পিটার ওইজম্যান বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের বেশির ভাগ দেশ গত পাঁচ বছরে নিজেদের সামরিক সামর্থ্য বৃদ্ধির চেষ্টা হিসেবে মূলত যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কাছ থেকে অস্ত্র কিনেছে। তেলের দাম কমে যাওয়া সত্ত্বেও মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের দেশগুলো বেশি বেশি অস্ত্রের ফরমায়েশ করা গত বছর চালু রাখে। আঞ্চলিক বিরোধ ও উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে তারা অস্ত্র কেনাটাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছে।
সুইডেনভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি আরও জানায়, ১৯৫০ সালের পর বিশ্বজুড়ে অস্ত্র আমদানি-রপ্তানির পরিমাণ গত পাঁচ বছরে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এ সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র কিনেছে ভারত। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে সৌদি আরব। প্রতিবেশী চীনের মতো ভারত এখনো জাতীয় পর্যায়ে অস্ত্র উৎপাদন শুরু করেনি।
অস্ত্র রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তারা বিশ্বের অস্ত্র বাজারের ৩৩ শতাংশ রপ্তানি করে। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে রাশিয়া। পরের অবস্থান যথাক্রমে চীন, ফ্রান্স ও জার্মানির। এই পাঁচটি দেশ বৈশ্বিক ভারী অস্ত্রশস্ত্র রপ্তানির প্রায় ৭৫ শতাংশ দখলে রেখেছে। ফ্রান্সের অস্ত্র রপ্তানি আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। তারা মিসরের সঙ্গে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্রচুক্তি করেছে। এসআইপিআরআইয়ের যুদ্ধোপকরণ বিভাগের প্রধান অদ ফ্লুরো বলেন, ইউরোপীয় অস্ত্র রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। এতে ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাজ্য এগিয়ে রয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যে অস্ত্র রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স শীর্ষে রয়েছে। আর এশিয়ার প্রধান আমদানিকারক দেশগুলো মূলত রাশিয়া ও চীনের কাছ থেকে অস্ত্র কিনে থাকে।