মাসুদ মজুমদার :
গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত না করেই দেশের রাজনীতিকে নির্বাচনমুখী করার সরকারদলীয় একটি উদ্যোগ লক্ষণীয় হয়ে উঠেছে। রাজনৈতিক বাস্তবতার কারণে এখন সরকারি ও বিরোধী দল দেশকে নির্বাচনমুখী করার মধ্যেই যার যার সাফল্যের সূচক বৃদ্ধির লক্ষণ দেখতে পাচ্ছে। সরকারি দল মনে করে, নির্বাচনমুখী রাজনীতি যে দায়বদ্ধতা সৃষ্টি করে, সেখানে বিরোধী দলের পক্ষ থেকে ধ্বংসাত্মক কিছু করার প্রবণতা কমে যায়। বিরোধী দল চাপে থেকে সংযত হয়ে নির্বাচনমুখী রাজনীতি করুক- এটা সরকারও চায়। তবে হাত-পা ছড়িয়ে দিয়ে বসে রাজনীতির নিয়ন্ত্রক এককভাবে বিরোধী দল হয়ে উঠুক, এটা এখনো সরকার মানতে নারাজ। মামলার পাহাড় ডিঙিয়ে, পুলিশি বাধা ও গোয়েন্দাজাল ভেদ করে বিরোধী দল সীমিত পরিসরে সরব রাজনীতি করুক- এটা সরকারি দলের নীতিনির্ধারকেরাও চান। তাই নির্বাচন এক বছর এগোবে না যথাসময়ে হবে সেটা দ্বিতীয় প্রশ্ন।
এখন নির্বাচনমুখী রাজনীতির কৌশল নির্ধারণ এবং প্রায়োগিক রাজনীতির মাধ্যমে প্রাধান্য বিস্তারের নকশা তৈরিতে ব্যস্ত রয়েছেন উভয় দলের নীতিনির্ধারকেরা। সরকারি দল রাজনীতিকে নির্বাচনকেন্দ্রিক মহাসড়কে তুলে দিয়ে নিজেদের পরিকল্পনামতো উন্নয়ন কর্মকাণ্ডগুলো নির্বিঘ্নে শেষ করতে চায়। আওয়ামী লীগ এখনো বিশ্বাস করে, তারা ক্ষমতায় থেকেই নির্বাচন করবেন এবং নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে সক্ষম সব প্রভাবক শক্তির সমর্থনও তারা পাবেন। আরো মনে করে, বিগত দিনের সুবিধাভোগীরা দলকে সমর্থন দিয়ে জিতিয়ে নিতে মরিয়া হয়ে উঠবে। এর বাইরে উন্নয়নের ফিরিস্তি নিয়ে জনগণের সামনে দাঁড়ালে জনগণ প্রশ্ন তুলবে, কিন্তু নাক সিঁটকে মুখ ফিরিয়ে নেবে না। পদ্মা সেতুর মতো দৃশ্যমান সাফল্য এবং কানাডার আদালতে দুর্নীতির অভিযোগ খারিজ হওয়ার বিষয়টি ভোটারদের মনে দাগ না কেটে পারে না। সরকারি দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ পৃষ্ঠপোষক মন্তব্য করেছেন, মানুষ হত্যা এবং প্রতিপক্ষ নিয়ন্ত্রণের নানামুখী নিষ্ঠুরতা প্রদর্শিত না হলে মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে আবারো আওয়ামী লীগকেই ভোট দিত। এতে সরকার গঠনের জন্য যথেষ্ট না হলেও সম্মানজনক অবস্থান নিশ্চিত হতো। কিন্তু একক আধিপত্যের রাজনীতি করে ক্ষমতাসীন দল অসংখ্য মানুষকে ‘ভুল’ রাজনীতির মাধ্যমে প্রতিপক্ষে ঠেলে দিয়েছে। তা ছাড়া সব গণতান্ত্রিক শক্তির কাছে দলটি অবিশ্বস্ত হয়ে গেছে। অনেক বন্ধুকেও ভুল বার্তা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে বিএনপি সমর্থকের বাইরেও অনেক লোক রয়েছেন যারা ‘সময়’ বুঝে ভোট দেন; প্রার্থী দেখে সিল মারেন। এরাই নেগেটিভ ভোট দিয়ে থাকেন। বিএনপি সব সময় নেগেটিভ ভোট বেশি পায়। কারণ যারা আওয়ামী লীগকে পছন্দ করেন না তারা মন্দের ভালো বাছাই করতে নেগেটিভ ভোট দিয়ে মনের ক্ষোভ প্রশমিত করেন। এবারো সহমর্মিতা ও নেগেটিভ ভোট বিএনপির বাক্সেই পড়বে, যদি ভোটাররা ভোট দেয়ার সুযোগ পান।
আওয়ামী লীগ নির্বাচনমুখী দল, এটা প্রশ্নাতীতভাবে সত্য। কিন্তু আওয়ামী লীগ জিতে সুখ পায়, হেরে গ্লানি বহন করতে নারাজ। তা ছাড়া, তারা গণতন্ত্র চর্চা করে ক্ষমতায় যান কিন্তু ক্ষমতায় গিয়ে গণতন্ত্রচর্চার বিষয়টি চরমভাবে উপেক্ষা করেন। একাধিকবার তারা ক্ষমতার মগডালে উঠে মই সরিয়েছেন। এর অভিজ্ঞতা সুখকর হয়নি। নির্বাচন কমিশন নিয়ে আওয়ামী লীগ ঠাণ্ডামাথায় ক্ষমতা চর্চা করেছে। এ কারণেই প্রেসিডেন্ট আশাবাদ সৃষ্টি করেও ধরে রাখতে পারেননি। কারণ, এর বাইরে তিনি আর কিছু করার জন্য নিজেও প্রস্তুত ছিলেন না। নির্বাহী বিভাগের প্রত্যাশাও এর বেশি ছিল না। এর পরও প্রেসিডেন্ট একটা কথা বাড়তি বলেছেন। সেই বক্তব্যের মধ্যে রাজনৈতিক বোদ্ধাদের জন্য একটা বার্তাও ছিল। তিনি বলেছিলেন- সংলাপ হওয়া উচিত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে। তার এই বার্তাটি আওয়ামী লীগ নিজেদের রাজনৈতিক বোঝাপড়ার স্বার্থে ফেরি করেনি। বিএনপি ও অন্যান্য দল কেন বার্তাটি মগজে নিলো না সেটা আমাদের কাছে বোধগম্য নয়।
ঠেকে হোক দেখে হোক, বিএনপিও নির্বাচনের মহাসড়কে উঠেই রাজনীতির জায়গা প্রশস্ত করতে চায়। বিএনপি সিইসির বিষয়ে সরব থেকে ‘নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার’ নিয়ে সোচ্চার হওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে বিএনপির পর্যবেক্ষণ কেউ বেঠিক বলেনি। তবে অনেকেই চান সময়মতো নির্বাচন কমিশন ও সিইসির যোগ্যতা, সক্ষমতা ও নিরপেক্ষতা যাচাই করে দেখতে। এই কমিশনের মেরুদণ্ড কতটা ভঙ্গুর বা শক্ত, সেটা যাচাই হওয়ার জন্য জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা না করে কোনো উপায় নেই। এ কারণেই বিএনপি তার রিজার্ভেশনের রাজনীতিটা এগিয়ে রাখার পক্ষে। এত দিনে বিএনপি বুঝতে সক্ষম হয়েছে, জনপ্রিয় হলেও ভোট আহরণের রাজনীতি একেবারে আলাদা। অনেকের মতে, এ ব্যাপারে বিএনপি আওয়ামী লীগের তুলনায় ‘দুগ্ধপোষ্য শিশু’।
বিএনপি মাঠের বিরোধীদলীয় রাজনীতিতে একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার আগেই রাজনীতিতে একটি তৃতীয় জোট কিংবা স্রোত সৃষ্টির জন্য অনেকেই কাজ করছেন। অনেক খেলোয়াড়কেই নামানো হবে- যারা বিরোধীদলীয় রাজনীতির বাড়া ভাতে ছাই ছিটাতে তৎপর হয়ে উঠবেন। বিএনপির নামে ধানের শীষসহ নির্বাচন করে একটি অনুগত বিরোধী দলে বসার মতো লোক যেমন আছে, তেমনি তাদের দিয়ে একটা নয়া পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ছকও সরকারের থাকা সম্ভব। এ কাজে ক্ষমতাসীনেরা সহযোগিতা নেবেন সব প্রভাবক সংস্থার। সেটা নিয়ন্ত্রিত সাংবিধানিক সংস্থা হোক আর প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিচালিত প্রতিষ্ঠান হোক।
মাহমুদুর রহমান মান্নার উদ্যোগটি গতি পাবে কি না সেটা বুঝবার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। ডক্টর কামালরা কী করবেন তাও অনিশ্চিত। বাংলাদেশের নাগরিক সমাজ বিভক্ত। ডান-বাম বলয় নিয়ে ভাবনাটা ক্ষমতাসীনেরা তাদের গরজেই টিকিয়ে রাখতে চাইবেন। ধর্মভিত্তিক দলগুলো ক্ষমতার রাজনীতিতে ব্যবহৃত হবে। কিংবা তাদেরকে ব্যবহার করা হবে। বিএনপিকে কৃশকায় দলে রূপান্তরের জন্য নানামুখী খেলা ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে।
সমস্ত বিরোধী দল ও ভিন্ন মতের মানুষ বার্তা পেয়ে গেছে- নির্বাচন কমিশন নিয়ে সংলাপ, আলোচনা ও সার্চ কমিটি নেহাত সরকারের পরিকল্পনামতো একটি সান্ত্বনা পুরস্কার। যা হওয়ার ছিল তা-ই হয়েছে। বিএনপি জানে এ অবস্থায় নির্বাচনে যাওয়ার পরিকল্পনা নিলে কৌশলগত অবস্থান পাল্টাতেই হবে। এই সত্যটি আওয়ামী লীগেরও অজানা নয়। বিরোধী দলকে নির্বাচনপ্রক্রিয়ার বাইরে রেখে ৫ জানুয়ারির মতো আরেকটি নির্বাচন জাতিকে গেলানো যাবে না। তাই সম্ভাব্য ছাড় দিয়েই নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। এ জন্য কিছু ছাড় দেয়ার জন্য সরকারও অপ্রস্তুত নয়। শেষ পর্যন্ত বার্গেনিং প্রক্রিয়া প্রাধান্য পাবে। আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতা যেভাবে উসকানি কিংবা রাজনৈতিক কাতুকুতু দিয়ে বিরোধী দলকে নির্বাচনমুখী করার চেষ্টা করছেন- সেটা বেসুরো মনে হয়। সরকারি দল যখন বিরোধী দলকে পরামর্শ দিয়ে শুভার্থীর ভান করে কিংবা বিরোধী দল যখন সরকারি দলকে জনমতের দোহাই দিয়ে সতর্ক না করে, কল্যাণ অকল্যাণ শেখায় তখনো বড্ড বেমানান লাগে। ক্ষমতার রাজনীতিতে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীরা কেউ কাউকে জায়গা ছাড়তে রাজি হয় না। তাই হেরে যাওয়ার নিয়তে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী দল নির্বাচনে অংশ নেয় না। আওয়ামী লীগ-বিএনপি এর ব্যতিক্রম নয়।
সরকারি দল বিরোধী দলের রাজনৈতিক উন্নতি ও কল্যাণ চায়- এটা হাস্যকর। ক্ষমতার রাজনীতিতে ক্ষমতাসীন দল কতটা নিষ্ঠুর ও স্বেচ্ছাচারী হয় এর প্রমাণ খাড়া করা কিংবা এটা বুঝবার জন্য সোমালিয়া কিংবা উগান্ডা যাওয়ার প্রয়োজন নেই। বাংলাদেশের রাজনীতির বিগত কয়েক বছরের চিত্রটা স্মরণে আনাই যথেষ্ট। বিরোধী দল এবার যে অনাকাক্সিক্ষত অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছে, সেটা সহজে মন ও স্মৃতি থেকে মুছে যাবে না। বিরোধী দল রাষ্ট্রশক্তির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যে চ্যালেঞ্জের রাজনীতি করেছে, সেটাও ইতিহাস থেকে আড়াল হয়ে যাবে না। কোনো গুমের ইতিহাস যেমন চাপা পড়ে যাওয়ার নয়, তেমনি বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার লাশের ভেতরে থাকা হাড়-গোড়গুলোও একসময় কথা বলা শুরু করাটা একেবারে অবাস্তব নয়। এ দেশেই প্রমাণ রয়েছে, চল্লিশ বছর পরও রাষ্ট্রশক্তি ইচ্ছে করলে যেকোনো নাগরিককে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করাতে পারে। এ ব্যাপারে আইনের সায়ও রয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন, আওয়ামী লীগ তার মিত্রদের নিয়ে আরেকটা মেয়াদ ক্ষমতায় থাকার সব চেষ্টাই করবে। এই ক্ষমতার মেয়াদে তারা কম আসনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে বিএনপিকেই বিরোধী দলে বসাতে চাইবে। এর কারণ বিরোধী দলকে বাইরে রেখে পরিস্থিতি, জনমত ও বিশ্বসম্প্রদায়কে পোষ মানানো যাবে না। আবার বিরোধী দলকে অত্যাচার-নির্যাতন-নিপীড়নের তোড়ে খড়কুটোর মতো ভাসিয়েও দেয়া যাবে না। অনেকের ভাবনা- আওয়ামী লীগ এবার বিদেশী লবিকে বিগড়ে যেতে দিতে চাইবে না। ৫ জানুয়ারির অস্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্যতার মানদণ্ডে বিতর্কিত নির্বাচনের ফলাফলের ভিত্তিতে সরকার গঠনের চেষ্টা করলে ভারতকেও নড়েচড়ে বসতে হবে। অন্যান্য আন্তর্জাতিক শক্তি ভারতের মতো গণতন্ত্রের নতুন সংজ্ঞাও দেবে না, আগের মতো নির্লজ্জের মতো প্রকাশ্যে পাশে এসে দাঁড়াবে না। ইমেজ সঙ্কট হয় এমন কিছু এবারও হোক, তা হতে দিতে চাইবে না। কারণ আঞ্চলিক ও বিশ্বরাজনীতির ধারণায় অনেক কিছু যোগ-বিয়োগ হয়েছে। এবার নির্বাচনপ্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব যেন বিদেশীরা স্বতঃপ্রণোদিত হয়েই নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। নতুন সিইসি ও নির্বাচন কমিশন নিয়ে তাদের নিবিড় পর্যবেক্ষণের বিষয়টি গোপন নেই। নতুন নির্বাচন কমিশনকে সরকারি জোট ছাড়া আর কেউ স্বতঃস্ফূর্তভাবে গ্রহণ করেনি। আস্থার সঙ্কট ও সন্দেহ নিয়েই এই নুরুল হুদা কমিশনকে পথ চলতে হবে। এটা আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর র্যাডার ও অ্যান্টেনায়ও ধরা পড়েছে। বিশিষ্ট নাগরিক এবং সুশীলসমাজের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক সদস্য কমিশনকে সতর্ক করে দিয়েছেন- নিরপেক্ষতা প্রমাণ তাদেরকেই করতে হবে; সক্ষমতার স্বাক্ষর তাদেরকেই রাখতে হবে। নুরুল হুদা তোফায়েল ক্যাডার না অন্য কিছু তাতে কারো যায়-আসে না। এবার নির্বাচনের ব্যাপারে জনপ্রত্যাশা ও বিশ্বসম্প্রদায়ের পর্যবেক্ষণ যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি প্রধান বিরোধী দলসহ সরকারের মুঠোর বাইরের দলগুলোর আস্থা-অনাস্থার বিষয়টিও বিশেষ বিবেচনায় নিতে হবে। বাস্তবেই দেশের মানুষের আস্থা অর্জন করাই ইসির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। টিকে থাকতে হলে বিএনপিকে আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে হবে- ওবায়দুল কাদেরের এই বক্তব্য মিথ্যা নয়। আবার আওয়ামী লীগকেও নিজেদের অস্তিত্বের স্বার্থেই নির্বাচনপ্রক্রিয়া শুরু করতে হবে এবং বিরোধী দলকে আস্থায় নিয়েই নির্বাচন করতে হবে- এটাও সত্য।
সেই প্রক্রিয়ায় কাউকে মাইনাস করে গৃহপালিত বিরোধী দল বসিয়ে সংসদ চালানোর চিন্তা মাথা থেকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করতে হবে। এরশাদ-রওশন মার্কা ভাড়াটে রাজনীতিবিদ দিয়েও এবার পার পাওয়া যাবে না। তাই বিরোধী দল হিসেবে বিএনপিকে নির্বাচনে আনার দায়ও সরকারের। যতই মাঠ সাজানোর চেষ্টা করা হোক, সংখ্যাতত্ত্বের ভাগ বিভাজন চলুক, জনগণ যদি মনে করে ‘মাঠ সমতল নয়’, তাহলে ঘুঘু বারবার উড়ে যাবে না। জাতীয় নির্বাচনে ভোটের অধিকারবঞ্চিত মানুষ ভোট থেকেই মুখ ফিরিয়ে নেবে- যে দায় এড়ানো কঠিন হবে। এবার নির্বাচন হতে হলে সমঝোতা এবং ন্যূনতম বোঝাপড়ার ভিত্তিতেই নির্বাচনের প্রেক্ষাপট সৃষ্টি করতে হবে। বিরোধী দল যেমন নানা কৌশলে ইসি, প্রশাসন ও সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখবে, তেমনি সরকারি দলও ক্ষমতার ছত্রছায়ায় থেকেও যদ্দূর সম্ভব বিরোধী দলকে জায়গা ছাড়তে বাধ্য হবে।
এই বাধ্যবাধকতাই গণতান্ত্রিক চিন্তার সৌন্দর্য। এবার এই বিষয়টি উপেক্ষার সুযোগ থাকবে কম। হ্যাঁ, মামলা নিয়ে বাড়াবাড়ি হবে। বেগম খালেদা জিয়াসহ বিএনপির কিছু নেতাকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণার মতো একটা ‘চাতুর্য’ দেখানোর চেষ্টাও চলবে। এটা হলে নির্বাচন শুধু প্রশ্নবিদ্ধই হবে না, সরকারের যোগ-বিয়োগ সব পাল্টে যেতে পারে। তাই ইসির মতো সরকারের জন্যও জাতীয় নির্বাচন হবে এসিড টেস্ট। রাজনৈতিক নির্লজ্জতা পেয়ে বসলে ভুলের মাশুল পিছু ছাড়বে না। তখন বিএনপির নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার ধারণাকেই জনগণ লুফে নেবে। তাই গরজটা শুধু বিএনপির নয়, আওয়ামী লীগেরও। ওবায়দুল কাদের একেবারে ভুল বলেননি, হতাশা মানুষকে বেপরোয়া করে তোলে। বেপরোয়া রাজনৈতিক দলের রাজনীতি সব সময় ব্যাকরণ মেনে চলে না। যেমন, ক্ষোভের ভাষা কখনো সংযত হয় না। তাই ন্যূনতম সমঝোতা ছাড়া জাতীয় নির্বাচন হবে না।
masud2151@gmail.com