এএফফি : মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরের বিমানবন্দরে গত সোমবার খুন হন উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতা কিম জং-উনের সৎভাই কিম জং নাম (৪৫)। এ হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই শুরু হয়েছে ইতিহাসের পৃষ্ঠা ওলটানো। কবে কাকে কোন বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয়েছে, তা নিয়ে চলছে আলোচনা।
কিম জং-নামের ময়নাতদন্ত গতকাল বুধবার সম্পন্ন হয়েছে। তবে তার আগেই বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, রাসায়নিক বিষ প্রয়োগেই তাঁকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারও একই ধারণা করছে।
ইতিহাসবিদেরা বলছেন, প্রাচীন গ্রিস থেকে শুরু করে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন, এমনকি হাল আমলের উত্তর কোরিয়ার গুপ্তচরেরাও বিষ প্রয়োগে হত্যার পথ বেছে নিয়েছে এবং নিচ্ছে। আর এ ক্ষেত্রে গুপ্তচরদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে আছে রাইসিন। বুলগেরিয়ার ভিন্নমতাবলম্বী লেখক জর্জি মার্কভকে ১৯৭৮ সালে এই বিষ প্রয়োগেই হত্যা করা হয়। আজ পর্যন্ত তাঁর হত্যাকারীর পরিচয় জানা যায়নি।
গুপ্তহত্যায় আরেকটি মোক্ষম বিষ হলো থ্যালিয়াম, যা ইঁদুর মারার কাজে ব্যবহৃত হয়। আর্সেনিকও গুপ্তহত্যায় ব্যবহৃত হয়েছে। এ বিষে ধীরে ধীরে যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যু হয়।
থাইল্যান্ডের বিচারবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ পর্নতিপ রোজানাসানান বলেন, দ্রুত মৃত্যু নিশ্চিত করতে গুপ্তহত্যায় সায়ানাইড ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তবে ময়নাতদন্তে এ বিষ খুব সহজেই ধরা পড়ে। নিহত ব্যক্তির পুরো শরীরে বিষের লক্ষণ স্পষ্ট থাকে। তিনি বলেন, গুপ্তচরেরা পটাশিয়ামও গুপ্তহত্যায় ব্যবহার করেছে। এ রাসায়নিকের প্রভাবে হৃৎস্পন্দন মারাত্মকভাবে অনিয়মিত হয়ে পড়ে এবং খুব দ্রুত হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু ঘটে।
তবে ঐতিহাসিক হত্যাকাণ্ডগুলোর ঘটনা বাস্তব বা কল্পনাপ্রসূত হোক না কেন, আর যে বিষ প্রয়োগেই তা ঘটে থাকুক না কেন, এগুলো আপনা-আপনি লোককাহিনির জন্ম দিয়েছে। মানুষের মুখে মুখে ফিরেছে তা। যেমন মহাবীর আলেক্সান্ডারের মৃত্যুর ঘটনা। ওয়াইনের সঙ্গে কোন বিষ দেওয়া হয়েছিল তাঁকে, তা নিয়ে আজও তর্ক করেন ইতিহাসবিদেরা। ক্লিওপেট্রার মৃত্যুর কারণ সাপের বিষ, না আর্সেনিক; নেপোলিয়নের শরীরে কীভাবে বিষ ঢুকল, তা নিয়েও কম আলোচনা হয় না।
তবে রাশিয়ার সাবেক গুপ্তচর আলেক্সান্ডার লিটভিনেঙ্কোকে ২০০৬ সালে যুক্তরাজ্যের মাটিতে হত্যার ঘটনাটি বর্তমান যুগে বিষ প্রয়োগে সবচেয়ে আলোচিত হত্যাকাণ্ডগুলোর একটি। তাঁকে চায়ের সঙ্গে পোলোনিয়াম-২১০ মিশিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
এশিয়ায় বিষ প্রয়োগে সবচেয়ে বড় হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটে ১৯৯৫ সালে। ওই বছর জাপানের ধর্মীয় গুপ্তগোষ্ঠীর এক সদস্য টোকিওর এক সাবওয়ে ট্রেনে প্লাস্টিক ব্যাগভর্তি তরল সারিন ছেড়ে দেয়। ওই বিষে ১৩ জনের মৃত্যু হয়, কয়েক হাজার আক্রান্ত হন। ঘটনার ২০ বছর পরও বেঁচে যাওয়া অনেকেরই দৃষ্টি ত্রুটিসহ শারীরিক নানা সমস্যা নিয়ে দিনযাপন করতে হচ্ছে। এর নয় বছর পর ২০০৪ সালে ইন্দোনেশিয়ার মানবাধিকারকর্মী মুনির সাজিদ থালিবকে রাজধানী জাকার্তা থেকে নেদারল্যান্ডসের রাজধানী আমস্টারডামে উড়ে যাওয়ার সময় বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয়।
কিম জং-নামকেও যদি বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয়ে থাকে, তাহলে এ ঘটনা হবে দেশে দেশে যুগ যুগ ধরে চলে আসা বিষ প্রয়োগে হত্যার ইতিহাসের নতুন অধ্যায়।
Komashisha