শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ সন্ধ্যা ৭:১০
Home / কবিতা-গল্প / একটি রহস্যময় রাত

একটি রহস্যময় রাত

মুহাম্মদ নাজমুল ইসলাম :

এক :
রিফাত। খুব দুষ্টু ছেলে। দিনের বেলা খেলাধুলা করে আর রাত্র এলে বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা। এ যেনো তার নিয়মিত রুটিন। আম্মু-আব্বুর কত্ত যে বকুনি। কিন্তু কিচ্ছুই সে পরওয়া করে না। যেসময় যা মন চায় যাচ্ছেতাই করে যায়। আজ সোমবার। রিফাত বন্ধুদের কাছ থেকে জানতো পারলো পাশের গ্রামে যাত্রাগানের আসর বসবে। শুনার পর থেকেই দিনের শুরু থেকেই রিফাতের প্রস্তুতি চলছে নেহায়েত। রিফাতের হাবভাব দেখে রিফাতের আম্মু যাত্রাগানের বিষয়টা কিছুটা আঁচ করতে পারলেন। বললেন, বাবা রিফাত! দেখো তোমার আগামী মাসে HSC পরিক্ষা। তাই খামাখামা ঘুরাঘুরি না করে পড়তে বসো। তোমাকে  পরিক্ষায় ভাভালো রিজাল্ট করতে হবে। কিন্তু নিত্যদিন’র মতো রিফাত কি আর এসব কথা পাত্তা দেয়? ররিফাত আম্মুর আলআলমারি থেকে কিছু টাকা বের করে হাটে গেলো। রাত যযখন আট বাজে তখন বন্ধুদের নিয়ে রিফাত যাত্রাগান শুনতে গেলো। রাত্রটা অনেক মস্তিতে কাটালো। শুধু গান শুনার মধ্যেই কান্ত থাকলো তা না। সাথে নিয়ে যাওয়া টাকা গুলো দিয়ে জুয়া খেললো। এবার গান শুনাও শেষ পকেটের টাকাও শেষ। এবার আসার পালা। কিন্তু রিফাত’র বাড়ি আর বন্ধুদের বাড়ির বিশাল দূরত্বতা।ওরা যেতে হবে এক মেটোপথ ধরে আর রিফাত আসতে হবে অন্য পথে। তাই রিফাত একাই ছুটলো বাড়ির পথে। রিফাত হাটছে আর কিছুটা ভয়’ও পাচ্ছে। মনের ভেতর আনাগোনা করছে হরেকরকম কাহিনী। সময় যতো ঘনাচ্ছে রিফাতের বুকের ধড়ক ধড়ক যেনো বেড়েই চলছে। চলতে পথে পা যেনো আর এক ইঞ্চি’ও আগাচ্ছে না।
দুই :
রাত তখন ২.৩০ এর মত হবে। রিফাত আসতে আসতে তাদের বাড়ি থেকে একটু পশ্চিম দিকে একটা সামাজিক কবরস্থান’র কাছেই চলে এলো।সেখানে গ্রামের অনেকেরই কবর আছে। সে যখন কবরস্থান’র একদম নিকটে চলে এলো। তখন হঠাৎ কেনও যেন তার খুব ভয় লাগলো।সে একটা কবরের কাছে ভয়ে দাড়িয়ে গেললো। এমন সময় সে কোরআন পড়ার আওয়াজ শুনতে পেলো। সে খেয়াল করলো মসজিদের হূজুরের গলা। সে সাহস করে উকি মেরে হুজুরকে দেখে কবরস্থানে উঠলো। গিয়ে হুজুরের পাশে দিয়ে বসলো।
-হুজুর তাকে বললেন, ‘এতো রাতে এখানে কেনো আসছো আর কোত্থেকেই বা আসছো?’
-সে বলল ,’আমি খেলা দেখে আসতেছি। কিন্তু কবরস্থানের পর্যন্ত আসার পর আমার ভয় করতেছে। আপনাকে দেখে উঠে এলাম’
-হুজুর বললেন, ‘যাও তুমি বাড়ি চলে যাও’ -সে বলল ‘আমার ভয় করে! আপনি যদি একটু দিয়ে আসেন খুশি হতাম? হুজুর রাজি হলেন এগিয়ে দিতে। দুজন মিলে রাতের অন্ধকারে চলতে লাগলেন।
-একটু আসার পরে হুজুর বললেন, ‘যাও এবার চলে যাও’
-সে বললো, ‘আর একটু যদি আসতেন’ এই ভাবে হুজুর তাকে বাড়ি পর্যন্ত নিয়ে গেলেন। সে তার মাকে ডেকে বলল, ‘তাড়াতারি দরজা খুলেন। হুজুর আসছে!’ তার মা হুজুরকে নিয়ে ঘরে আসতে বললো। সে পিছন ফিরে দেখে হুজুর নেই। পরদিন সে হুজুরকে গিয়ে বলে,
-হুজুর! কাল রাতে আমাকে দিয়ে আসার জন্য আপনি আমাদের বাড়িতে গেছেন। কিন্তু ঘরে যাননি কেন?আম্মা খুব রাগ করেছে?’  শুনে হুজুর যেন আকাশ থেকে পড়লেন।
-বললেন, ‘কই আমিতো কাল আমার বাড়িতে ছিলাম’। বাড়ি থেকে রাতের বেলা বেরই হইনি। তখন সে হুজুরকে বিস্তারিত সব কাহিনী খুলে বললো। হুজুর ঘটনা শুনার পর রিফাতকে খুব শাসালেন। রিফাত এবার নিজের দোষ কিছুটা বোঝতে পারলো। রিফাত এবার হুজুরের কাছে শপথ করলো। সে আর কখনো রাত্রে কোনো অশ্লীল কাজে যাবে না। এবং আব্বু-আম্মুর কথা ঠিকঠাক শুনবে। আজ থেকে পড়ায় মনযোগী হবে।আব্বু -আম্মুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিজেকে মনোনিবেশ করবো। আর কখনো অবাধ্যতা করবো না।
ঘটনাটি যখন পুরো এলাকায় জানাজানি হলো। এলাকার লোকজন এরপর কবরস্থানটির চারদিকে দেয়াল করে ঘিরে দিলো যাতে কেউ অযূ ছাড়া উঠতে না পারে।।

লেখক : দেওবন্দ, ভারত।

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

ইসলামের পাঁচটি ভিত্তি

মুয়াজ বিন এনাম কালেমা না জানলে কেহ মুমিন হতে পারবেনা মানলে তবে কূ-মন্ত্রনার সমনে কভূ ...