বৃহস্পতিবার, ২৮শে মার্চ, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ১১:০৩
Home / আন্তর্জাতিক / যেভাবে বদলে যেতে পারে সবকিছু
ইউএস ক্যাপিটলে গতকাল প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর ভাষণ দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প l ছবি: এএফপি

যেভাবে বদলে যেতে পারে সবকিছু

বিবিসি : এবারের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের চমকে দেওয়া বিজয়ের পরই আলোচনায় এসেছিল বিশ্বে কী ধরনের বদল আনতে পারে রিপাবলিকান প্রার্থীর এ জয়। মনে করা হচ্ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের প্রতিষ্ঠিত অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতি যেমন, অবাধ বাণিজ্যব্যবস্থা ও ন্যাটোর সদস্যপদের প্রতি প্রতিশ্রুতির মতো বিষয়ে পরিবর্তন আসবে। তবে নির্বাচনের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্ব—উভয়‌ ক্ষেত্রেই ঘটনাপ্রবাহের গতি ছিল বেশ দ্রুত। এতটাই যে ট্রাম্প প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিয়ে হোয়াইট হাউসে ঢোকার আগেই পরিবর্তনের ধাক্কা টের পাওয়া যাচ্ছে। ট্রাম্পের ক্ষমতায় আসার বিষয়টি যেভাবে ইতিমধ্যে বিশ্বকে বদলে দেওয়ার সূচনা করেছে, তা সংক্ষেপে এ রকম:

বিদায়ী প্রেসিডেন্টের ‘মরিয়া তৎপরতা’

ওবামা প্রশাসনের শেষ দিনগুলো ছিল একদমই আলাদা। ওবামার নেওয়া নীতি ও পদক্ষেপগুলো টিকিয়ে রাখতে তাঁর প্রশাসন মরিয়া হয়ে উঠেছিল। ট্রাম্প একে আখ্যায়িত করেছেন ‘প্রতিবন্ধক’ বলে।

শেষ দিনগুলোয় ওবামা প্রশাসন রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, দৃশ্যত জলবায়ু পরিবর্তনের বিবেচনা থেকে সাগরে তেল ও গ্যাস উত্তোলন দীর্ঘ মেয়াদের জন্য নিষিদ্ধ করেছে, ইসরায়েলকে বসতি নির্মাণ বন্ধের আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘে উত্থাপিত প্রস্তাবে ভেটো দেওয়া থেকে বিরত থেকেছে এবং শেষ মুহূর্তে কিউবার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় দ্রুত একের পর এক চুক্তি সম্পাদনের চেষ্টা করেছে।

ওবামা প্রশাসনের এই পদক্ষেপগুলো নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত নীতির বিপরীত। এগুলো আর কিছু না হোক, অন্তত ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য কাজ করা কঠিন করে তুলতে পারে।

ট্রাম্পের জয় ঢেউ তুলেছে বিশ্ববাণিজ্য জগতেও।­ তাঁর জয়ী হওয়ার পর থেকে বিশ্ব পুঁজিবাজারে চাঙা ভাব দেখা গেছে। বিশ্লে­ষকেরা বলছেন, এর পেছনে রয়েছে বিনিয়োগকারীদের এমন ধারণা যে ট্রাম্প অবকাঠামো খাতকে শক্তিশালী করবেন এবং দায়িত্ব নেওয়ার পর কর হ্রাস করবেন। কিন্তু ট্রাম্প দেবেন যেমন, তেমনি ‘বেয়াড়া’ প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে কেড়েও নিতে পারেন। ওষুধশিল্পকে ভয় দেখিয়েছেন। বিদেশে উৎপাদনকারী মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোকে দিয়েছেন চড়া শুল্কের হুমকি।

চীনের ব্যাপারে ক্ষুব্ধ ও বাগাড়ম্বরপূর্ণ বক্তব্য ঝেড়েছেন ট্রাম্প। তাইওয়ানের নেতার সঙ্গে কথা বলে ‘এক চীন নীতির’ প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের অঙ্গীকারকে ‘প্রশ্নের মুখে’ ফেলেছেন। অন্যদিকে, বিশ্ববাণিজ্যে চীনের নেতৃত্বের আভাস দেখা যাচ্ছে। এবারই প্রথম কোনো চীনা প্রেসিডেন্ট দাভোসে অনুষ্ঠিত বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বৈঠকে যোগ দিলেন। সি চিন পিং খোলাখুলিভাবে কথা বলেছেন বিশ্বায়ন ও মুক্তবাণিজ্যের পক্ষে, যা ট্রাম্পের অপছন্দ।

এদিকে এরই মধ্যে ট্রাম্প সম্পর্কে মনোভাবও বদলে যেতে শুরু করেছে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগমুহূর্ত পর্যন্ত দেশ-বিদেশে ট্রাম্পের সমালোচকের অভাব ছিল না। কিন্তু নির্বাচনের পর তাঁদের সুর নরম হতে বেশি সময় লাগেনি।

যে সাতভাবে বদলে যেতে পারে বিশ্ব

ন্যাটোতে অস্বস্তি

মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর বড় সমালোচক ট্রাম্প। এই জোটকে সেকেলে বলে আক্রমণ করেছেন তিনি। জোটের সদস্যদের তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বদান্যতার সুবিধাভোগী অকৃতজ্ঞ মিত্র আখ্যা দিয়েছেন। অভিষেকের কয়েক দিন আগেও তিনি এ অভিযোগের পুনরাবৃত্তি করেন যে ন্যাটোর ২৮ সদস্যের বেশির ভাগই যথাযথভাবে চাঁদার পাওনা পরিশোধ করছে না। যুক্তরাষ্ট্র আর নিজের পয়সায় অন্যের নিরাপত্তা দিয়ে যাবে না। এসব মন্তব্যে ইউরোপীয় মিত্রদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে উদ্বেগ।

রুশ-মার্কিন সম্পর্কে টানাপোড়েন

নির্বাচনী প্রচারণায় ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের চিরকালের প্রতিদ্বন্দ্বী রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। বলেন, তাঁর সঙ্গে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় তিনি খুবই আগ্রহী। নির্বাচনের পর মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতাদের বিরুদ্ধে হ্যাকিংয়ের জন্য রাশিয়াকে দায়ী করলে দুই দেশের সম্পর্কে অস্বস্তির সৃষ্টি হয়েছে। ফাঁস হওয়া কিছু গোয়েন্দা নথিপত্রে এমন অভিযোগও উঠেছে যে রাশিয়ার কাছে ট্রাম্পের ব্যাপারে অতি স্পর্শকাতর তথ্য ও ভিডিও রয়েছে। এ অবস্থায় রাশিয়া বিষয়ে ট্রাম্পের অবস্থান নিয়ে জন্ম হয়েছে নানা প্রশ্নের।

মুক্ত বাণিজ্যের কি অবসান হবে?

দশকের পর দশক ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে বাণিজ্য করে আসছে, তার ওপর ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতি একটি বড় প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি আগেই হুমকি দিয়েছেন, মুক্ত বাণিজ্য নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের করা বিভিন্ন চুক্তি বাতিল করবেন। এর অন্যতম কারণ হিসেবে মার্কিন নাগরিকদের চাকরি খোয়ানোকে উল্লে­­খ করেন তিনি।

চীনের সঙ্গে সম্পর্ক

ট্রাম্পের আমলে যুক্তরাষ্ট্র ‘এক চীন নীতি’ সমর্থন করা অব্যাহত রাখবে কি না, তা নিয়ে কেউ কেউ সংশয় প্রকাশ করেছেন। গত ডিসেম্বরের শুরুতে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন ট্রাম্প। মনে করা হচ্ছে এটি চীন নিয়ে গত চার দশকের মার্কিন নীতির বিপরীত। তাইওয়ানকে নিজের ‘বিদ্রোহী দ্বীপ’ বিবেচনা করে চীন। এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি ট্রাম্প বলেছেন, ‘সবকিছু নিয়েই সমঝোতা সম্ভব, এক চীন নীতি নিয়েও।’ তবে চীন বলে আসছে, এ ব্যাপারে কোনো সমঝোতা হবে না।

ইরানের পরমাণু অস্ত্র

বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে ইরানের সঙ্গে করা বিশ্বশক্তিগুলোর ঐতিহাসিক চুক্তির ভবিষ্যও পড়েছে শঙ্কায়। এ চুক্তির মাধ্যমে পরমাণু অস্ত্রের দিকে ইরানের পা না বাড়ানোর নিশ্চয়তার বিনিময়ে দেশটির ওপর থেকে দীর্ঘদিনের কঠিন অবরোধ প্রত্যাহার শুরু হয়েছে। কিন্তু ট্রাম্পের ভাষায়, এটা তাঁর দেখা নিকৃষ্টতম চুক্তি।

শুরু হবে পরমাণু অস্ত্র প্রতিযোগিতা?

ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ায় এশিয়ার নিরাপত্তা নিয়েও বড় প্রশ্ন উঠেছে। তাঁর হবু পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন দক্ষিণ চীন সাগরের বিরোধপূর্ণ জলসীমায় অবস্থিত দ্বীপপুঞ্জে চীনের প্রবেশাধিকার বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন। ফলে চীন এবং ওই জলসীমার মালিকানার দাবিদার এ অঞ্চলের অন্য দেশগুলোর মধ্যে সামরিক সংঘাত বাধার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। মিত্র জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াকে সবুজ সংকেত দিয়ে ট্রাম্প বলেছেন, নিজস্ব পরমাণু অস্ত্র থাকলে দেশ দুটি সুবিধা পাবে। এ অঞ্চলের আরেক দেশ মার্কিনবিরোধী উত্তর কোরিয়া বতর্মানে নিজস্ব পরমাণু অস্ত্রের উন্নয়নকাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে এশিয়ায় পরমাণু অস্ত্র নিয়ে প্রতিযোগিতা শুরু হতে পারে।

বাতিল হবে জলবায়ু চুক্তি

ট্রাম্প বলেছেন, প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণের ১০০ দিনের মধ্যেই তিনি ঐতিহাসিক প্যারিস জলবায়ু চুক্তি বাতিল করবেন। বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার নেওয়া জলবায়ু-সংক্রান্ত বিধিমালাও পাল্টাতে ক্ষমতায় থাকাকালে সবকিছু করবেন তিনি। জলবায়ু পরিবর্তন যে মূলত মানবসৃষ্ট কারণে হচ্ছে, বিজ্ঞানসম্মত এ ধারণা বারবার নাকচ করে আসছেন ট্রাম্প।

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...