বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ১১:২৩
Home / অনুসন্ধান / আমেরিকা: যেখানে মুসলিমদের কাছে চিরঋণী

আমেরিকা: যেখানে মুসলিমদের কাছে চিরঋণী

মুসা আল হাফিজ :

আমেরিকান মুসলমানদের উচিত ইতিহাসের দিকে গভীরভাবে নজর দেয়া। সেখান থেকে খুঁজে আনতে হবে আমেরিকার সাথে নিজেদের শেকড়ের যুগসূত্র।ট্রাম্পগণ যাকে স্বীকারই করতে চাইবে না।কিন্তু অব্যাহতভাবে অনুসন্ধান করতে থাকা মুসলিমদের দায়িত্ব।
অনুসন্ধানী মুসলিম দেখবেন, আমেরিকা ও কানাডার টেক্সট বইয়ে কলম্বাসপূূর্ব যুগ সম্পর্কে কিছুই পড়ানো হয় না।যেন এর আগে আমেরিকার কোনো ইতিহাস নেই।এ সময়ের নাম দেয়া হয়েছে প্রি কলম্বিয়ান যুগ। এ নিয়ে না আছে তেমন কোনো চর্চা,না আছে বিশেষ কোনো গবেষণা।বরং এ সময়টাকে কবরের তলে চাপা দিতে পারলেই যেন আমেরিকান ঐতিহাসিকদের আরাম।১৪৯২ সালে কলম্বাসের আবিস্কারের আগে আমেরিকার কোনো ইতিহাস আসলেই কি নেই? দেশপ্রেমিক মুসলিম সে অনুসন্ধানে এগিয়ে আসুন।
জাতির ইতিহাস তার আত্মপরিচয় নিশ্চিত করে।নিজেদের আবিষ্কারের জন্য একটি জাতি শত শত বছর আগের ইতিহাস খনন করে।সভ্যবিশ্বে এ প্রবণতা খুবই নমস্য।শিক্ষা, সংস্কৃতি ও প্রত্নতত্ত বিভাগ এ খাতে অর্থ ঢালে।প্রণোদনা যোগায়, পৃষ্ঠপোষকতা করে।দরিদ্র দেশেও এমনটি হয়।কিন্তু আমেরিকার মতো একটি দেশে ১৪৯২ সালের পূর্ববর্তি ইতিহাস নিয়ে চর্চা ও অনুসন্ধান হয় না বললেই চলে। রহস্য! এর আগে মনুষ্য পদস্পর্শ লাভ করেনি আমেরিকা? এর আগে কী সেখানে সভ্যতার কোনো সাড়া ছিলো না?
সে সম্পর্কে নেই কোনো প্রাচীন তথ্যসূত্র?

যারা গবেষণায় এগিয়ে আসবেন,তাদের জন্য চমকপ্রদ তথ্য হলো ৯৫৭ সালে মৃত্যুবরণকারী ঐতিহাসিক আল মাসুদীর রচনায় আমরা আমেরিকা সম্পর্কে তথ্য পাচ্ছি।আমরা জানতে পারছি,কলম্বাসের ৫০০ বছর আগে নবম শতাব্দীতে আজকে যে দেশ আমেরিকা,সে অন্চলে অবতরণ করেন একদল ভ্রমণবিলাসী মুসলিম।তারা যাত্রা করেন স্পেন থেকে।খলীফা আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদের (৮৭১-৯৫৭) আমলে। প্রমাণ কী? প্রমাণ হচ্ছে, বিশ্বইতিহাসের অন্যতম আকরগ্রন্থ “দি মেডোজ অব গোল্ড এন্ড কোয়ারিস অব জুয়েলস।”
বইটির লেখক আল মাসুদি।
তিনি জানান ‘কর্ডোভার মুসলিম নাবিক খাসসাস ইবনে সাইদ ইবনে আসওয়াদ ৮৮৯ সালে স্পেনের ডেলভা বা বর্তমান প্যালস থেকে জাহাজে পাল তুলে আটলান্টিক পার হয়ে ‘আরদ্বে মজহুল’ অজানা জগত বা আজকের আমেরিকায় গিয়ে পৌছেন আর ফিরে যান চমকপ্রদ ধনরত্ন নিয়ে।দশম শতকে আবদুর রহমান দ্বিতীয় এর আমলে আরেকদল অাফ্রিকান মুসলিম কুয়াশাভরা অন্ধকার মহাসাগরে পাল তুলে,ডেলভা বন্দর থেকেই।তারা ফিরে আসে অদ্ভুদ ও রহস্যময় দুনিয়া আবিষ্কারের অজানা কাহিনী নিয়ে।
এর কয়েক শ’ বছর পরে মুসলিম উৎখাত পর্ব সম্পন্ন হয় স্পেনে। মুসলিমদের সমুদ্রযাত্রার প্রতিটি অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে থাকে খ্রিষ্ট্রিয় শক্তি। স্পেনের সেই ডেলভা থেকেই ফার্ডিনান্ড ও ইসাবেলার সহযোগিতায় ১৪৮২ সালের ৩ আগস্ট সমুদ্রযাত্রা করেন কলম্বাস। তার অবলম্বন ছিলো মুসলিমদের অঙ্কিত মানচিত্র ও আলহামরা থেকে প্রকাশিত সমুদ্রবৃত্তান্ত। ইতোপূর্বে যে জগতের সাথে পরিচিত হয়েছে মুসলিম স্পেন, সেই জগতের নক্সা তাকে পথ দেখাতে থাকলে। নতুন জগতের দিকে এগুতে লাগলো কলম্বাসের জাহাজ। তিনি পাল উড়ান ক্যানারি আইল্যান্ড ও গোমেরা অভিমুখে। ১৪৯২ সালের ১২ অক্টোবর তিনি নামেন বাহামার গোয়েনাদদহানি এলাকায়। হানি হলো এক আরবী নাম।গোয়েনা হলো আরবী শব্দ ইখওয়ানা এর অপভ্রংশ। ইখওয়ান মানে ভাইগণ। হানিভাতৃবৃন্দ এলাকাটি আবাদ করেছিলেন বলেই ইখওয়ান হানি থেকে বিবর্তিত হয়ে এলাকাটি হয়ে উঠে গোয়েনহানি। কলম্বাস এ নাম বদলিয়ে এলাকাটিকে অভিহিত করেন ‘সানসালভাদর’ বলে। সেখানকার অধিবাসীদের তিনি জাত-ধর্মহীন বলে অভিহিত করেন। লেখেন ‘তাদেরকে খ্রিষ্টান বানাতে হবে ভালোবাসা দিয়ে। ‘কিন্তু সেখানে যারা বসবাস করতো,তাদের প্রধান গোত্র ছিলো আলিমামি। শব্দটি আরবী আল ইমামু এর অপভ্রংশ।এরা ছিলো সে দ্বীপের ইমাম সম্প্রদায়। নামাজ পরিচালনাকারি কিংবা গোত্রীয় প্রধানকে বলা হয় ইমাম।এটা একান্ত মুসলিম পরিভাষা। কলম্বাস তাদেরকে ধর্মহীন বললেন, মুসলিমদের প্রতি ক্ষোভ ও আক্রোশের প্রকাশ ঘটাতে ধর্মহীন শব্দের ব্যবহার তৎকালীন ইউরোপে ছিলো খুবই জনপ্রিয়।

কলম্বাস অবতরণ করেন গোমেরায়ও।গোমেরা মানে জ্বলন্ত ছোট কাঠের টুকরো।শব্দটি আরবী থেকে উদ্ভত। কলম্বাস সেই আইল্যান্ডে উপনীত হয়ে ক্যাপ্টেন জেনারেল বোবাদিল্লার কন্যার প্রেমে পড়েন। কে এই বোবাদিল্লা? তিনি ছিলেন মুসলিম, তার মূল নাম আবু আব্দিল্লাহ। (পশ্চিমারা বহু আবু আব্দিল্লাহকে বুবাদিল্লা বলে অভিহিত করেছে,এর প্রমাণ আছে)
বোবাদিল্লা বিশেষ কারণে কলম্বাসকে ধরে শিকল দিয়ে বেঁধে ফেললেন। ১৫০১ সালের নভেম্বর মাসে তাকে ফেরত পাঠান স্পেনের দিকে।

এর মানে পরিষ্কার।কলম্বাস নতুন দুনিয়া (আজকের আমেরিকায়) মুসলিমদের বসবাস পেয়েছিলেন। এ সত্যের স্বীকৃতি পাই বিখ্যাত ঐতিহাসিক লিউ উয়েনার এর স্বাক্ষ্যে। ১৯২০ সালে প্রকাশিত বিখ্যাত আফ্রিকান এন্ড দি ডিসকভারি অব আমেরিকা গ্রন্থে তিনি লিখেন – কলম্বাস ভালো করেই জানতেন,নতুন দুনিয়ায় (আমেরিকায়) রয়েছে মানডিনকানদের (ওরা ছিলো মুসলিম) বসবাসের কথা। তিনি জানতেন, এ ভূখণ্ডে বহু আগ থেকেই পশ্চিম অাফ্রিকান মুসলিমরা ব্যবসা বাণিজ্য করে আসছিলেন। ইরোকয়, আলগোনকয়েন ইত্যাদি গোত্রের সাথে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে আসছিলেন। ক্যারিবিয়, উত্তর আমেরিকা, কানাডাসহ বিস্তৃত এলাকায় ছড়িয়ে ছিলেন। ক্যালিফোর্নিয়ায় আজও রয়েছে সেকালের শিলালিপি, যাতে লেখা আছে ইয়াসুস ইবনে মারিয়া। কুরআনে বর্ণিত ঈসা ইবনে মারইয়ামের অপভ্রংশ।
এ হচ্ছে কতিপয় কথাসূত্র। আমরা এখান থেকে শুরু করতে পারি। দেখাতে হবে, আমেরিকা আপন অস্তিত্বের জন্য মুসলমানদের কাছে ঋণী। কারণ এখন সেই সময়,যখন মুসলমানদের অভিহিত করা হচ্ছে আমেরিকার মর্যাদা ও শান্তির প্রতিপক্ষ হিসেবে।বলা হচ্ছে মুসলিমরা বহিরাগত শত্রু। তাদেরকে খেদাবার তোড়জোড় চলছে রাষ্ট্রিয়ভাবে। ভাবছি, বিষয়টি নিয়ে গবেষণায় নামবো। আমেরিকার মুসলমানদের স্বার্থে কাজটি করা জরুরী মনে করছি।

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

আল্লামা আহমদ শফীকে কি আসলেই তিলে তিলে হত্যা করা হয়ছে?

আল্লামা শফী সাহেবের মৃত্যু নিয়ে ওনার খাদেম  শফীর সাক্ষাৎকার। সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০। ...