রবিবার, ১০ই নভেম্বর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ৪:২৩
Home / খিলাফাহ / খেলাফতব্যবস্থা : পরিচিতি ও প্রয়োজনীয় কথা

খেলাফতব্যবস্থা : পরিচিতি ও প্রয়োজনীয় কথা

মাওলানা আতিকুল্লাহ :

মুসলিম উম্মাহর সেরা সময় কোনটা? নিঃসন্দেহে নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সময়। তারপর খেলাফতে রাশেদার যুগ। পেয়ারা নবীজির শাসনকালের সাথে অন্য কোনও শাসনকালের তুলনা চলতেই পারে না। কারন সেটা ছিল সরাসরি আল্লাহর দিক-নির্দেশনায় পরিচালিত। খেলাফতে রাশেদার কিছু অনন্য বৈশিষ্ট্য আছে। বর্তমানেও যদি খেলাফতে রাশেদা প্রতিষ্ঠিত হয়, বৈশিষ্ট্যগুলো কার্যকর হবে। খেলাফতে রাশেদার কাকে বলে?
= যে খেলাফত পুরোপুরি কুরআন কারীম ও সুন্নাহর আইনে চলে। মানবরচিত কোনও আইন সেখানে বিন্দুমাত্র প্রশ্রয় পাবে না।

খিলাফাহ কাকে বলে, খিলাফাহ কী ও কেন, খিলাফাহ প্রতিষ্ঠা করা ফরয ওয়াজিব না সুন্নাত, এ-বিষয়ে কয়জনের জানাশোনা আছে? ধর্মীয় জ্ঞানসাধনার সাথে যুক্ত মানুষের কাছেই প্রশ্নটা! সাধারণ মানুষ তো নামায রোজার মাসালাও ঠিক মতো জানে না! তাদের কাছে এই প্রশ্ন করা অবান্তর! মনে হয় না, উত্তরটা পরিষ্কার আছে, এমন মানুষ খুব একটা পাওয়া যাবে! বেশির ভাগই বলবেন:
-হুম! বিষয়টা নিয়ে পড়াশোনা করতে হবে! তারপর জানাতে পারবো!
অথচ এদের প্রায় সবাই, উসমানি খিলাফাহ নিয়ে আহা উঁহু করেন! খিলাফত বিলুপ্তি নিয়ে চোখের পানি ফেলেন!

যে কোনও খিলাফতই ‘রাশেদা’ মানে সুপথপ্রাপ্ত হওয়ার জন্যে, খলীফাকে ‘রাশেদ’ মানে সুপথপ্রাপ্ত হতে হয়। খলীফাকে হতে হবে, পুরোপুরি ভালো মানুষ। এই মানদন্ডে তিনটা বিখ্যাত খিলাফাহ: উমাইয়া-আব্বাসী-উসমানী-এর কোনটাই শতভাগ ইসলামী ও কুরআনী খিলাফাহ ছিলো না।
উমাইয়া খিলাফাহ একজন সাহাবীকর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হলেও, এটা ছিল একটা রাজতান্ত্রিক খিলাফাহ। প্রকৃত খিলাফাহ হলে, উমাইয়া বংশের অনেক খলীফা সেনাপতি হওয়ার যোগ্যতাও লাভ করতেন না।

আব্বাসী খিলাফাহর অবস্থা তো আরো শোচনীয়। উমাইয়াদের মতোই। বেশির ভাগ খলীফাই ছিলেন ‘অযোগ্য’। আর উসমানীরা? তাদের সেরা দু’জন খলীফা ‘মুহাম্মাদ ফাতিহ’ ও সুলাইমান কানূনীর বিরুদ্ধে ভ্রাতৃহত্যা ও পুত্রহত্যার জঘন্য অভিযোগ আছে। আর তিন খিলাফার কোনওটাতেই শতভাগ ‘হুদুদ-কিসাস’ কায়েম ছিল না। উসমানি সালতানাত তো পাশ্চাত্য আইনকেই শেষের দিকে গ্রহণ করতে শুরু করেছিল। সুলাইমান কানুনী থেকেই এর সুচনা হয়েছিল।

তবে তিন খিলাফতের অনেক খলীফাই ছিলেন ইসলামপ্রেমী। রাজ্যজয়ে ব্রতী। কিন্তু সেটা তো হাজ্জাজ বিন ইউসুফও ছিলেন। আমাদের আলোচ্য বিষয় হচ্ছে, ‘রাশেদ’ হওয়া নিয়ে। যেমনটা ছিলেন উমার বিন আবদুল আযীয রহ.। যেমন ছিলেন: নুরুদ্দীন যিনকী রহ.। যিনকী রহ. অবশ্য খলীফা ছিলেন না। অসম্পূর্ণতা সত্বেও জমহুর ওলামায়ে কেরাম, উমাইয়া-আব্বাসী-উসমানীদের খিলাফাহকে স্বীকৃতি দিয়েছেন। তবে যখনই অভিজ্ঞ কাউকে প্রশ্ন করেছি:
-যেনতেন করে খিলাফাহ ঘোষণা দিলেই কি, খিলাফাহ হয়ে যাবে? খলীফার তাকওয়া-পরহেযগারী ও যোগ্যতাটা বিবেচনায় আসবে না? আর কুরাইশ হওয়ার বিষয়টা? তাহলে উসমানীরা খলীফা হয় কী করে? খলীফা কুরাইশ থেকে হবে, এটা যেমন সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত, তদ্রূপ জমহুর সাহাবী দ্বারা ইজমা হওয়া একটা বিষয়।
= এই প্রশ্নের সন্তোষজনক কোনও উত্তর পাইনি। তবে একদম পাইনি, সেটাও ঠিক নয়। যেমন:
১: খলীফা কুরাইশ থেকে হবে, এটা খলীফা নির্বাচন করার ক্ষেত্রে। নিজের বাছাই করার সময় কুরাইশ বাছাই করতে হবে। তবে কুরাইশি না হয়ে কেউ যদি জোর করে নিজেকে খলীফা ঘোষণা করে, আর তার মধ্যে যোগ্যতাও থাকে, তাকে খলীফা বলে মেনে নেয়া যাবে।
২: কেউ কেউ বলেন: খলীফা কুরাইশদের থেকেই হবে, বক্তব্যটা আদেশসূচক নয়। ঐচ্ছিক। কারন উমার রা. বলেছিলেন: যদি সালেম মাওলা আবি হুযাইফা বেঁচে থাকতো, আমি তাকেই খলীফা বানাতাম। সালেম রা. কুরাইশ ছিলেন না। আরেক হাদীসে আছে, হাবশী গোলাম হলেও মানতে হবে। এই হাদীসকেও এই দল দলীল হিশেবে নিয়ে আসেন।

এসব তাাত্ত্বিক আলোচনা থাক। শুধু একটা বিষয় খতিয়ে দেখা যাক:
= খিলাফাহ বা খিলাফতব্যবস্থার চাহিদাগুলো কী কী? মানে খিলাফতব্যবস্থার দাবী কী? প্রতিটি ধাপ পড়ার সময় কল্পনা করতে হবে: মদীনায় খেলাফতে রাশেদা এখনো প্রতিষ্ঠিত আছে। আবু বকর রা. খলীফা হিশেবে দোর্দন্ডপ্রতাপে শাসন করছেন। তাহলে ধারাগুলো হজম করাটা সহজ হবে!
(এক) সমস্ত মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর সার্বভৌমত্ব রহিত হয়ে যাবে। আঞ্চলিক রাষ্ট্র, জাতিরাষ্ট্র বলে কিছুরই বৈধতা থাকবে না। পুরো মুসলিম উম্মাহ খলীফার অধীন হয়ে যাবে। যে খলীফাকে মানবে না, সে শাসন করার শরয়ী অধিকার হারাবে। খলীফার অনুমোদিত শাসক বা গভর্নরই শুধু শাসনক্ষমতায় থাকতে পারবে। জানা কথা, আবু বকর বা উমার রা. মদীনায় থাকলে, বর্তমানের কোনও শাসককেই মসনদে থাকতে দিতেন না। তাদের অযোগ্যতার কারনে।

(দুই) পুরো মুসলিম বিশ্ব মিলে একটা রাষ্ট্রে পরিণত হতো। কোনও সীমানা থাকতো না। মৌরিতানিয়া থেকে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত যে যেখানে ইচ্ছা যেতে পারতো। যেখানে ইচ্ছা, বসবাস করতে পারতো! প্রতিটি মুসলিমের উপর শরয়ী বিধান কার্যকর হতো।

(তিন) প্রতিটি মুসলিম সমান অধিকার প্রাপ্ত হতো। কোনও ধরনের জাতীয়তা থাকতো না। শাদা-কালোর পার্থক্য থাকতো না। প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের তফাত থাকতো না।

(চার) কাফের রাষ্ট্রে বসবাসরত মুসলিমদের উপর হিজরত করে খিলাফাহর ভূমিতে চলে আসা ওয়াজিব হয়ে যেতো। ইসলামি খিলাফাহ থাকতে, কোনও মুসলমানের জন্যে, কাফের রাষ্ট্রে বাস করা জায়েজ নয়।

(পাঁচ) দুই মুসলিম নেতা বা প্রশাসকের মাঝে বিরোধ দেখা দিলে, নিষ্পত্তি হবে শরয়ী আইনের মাধ্যমে। খলীফাই ফয়সালা করে দিবেন। কোনও কাফের রাষ্ট্র বা সংগঠনকে সালিশ মানা বৈধ হবে না। যারা শরয়ী শাসন বাদ দিয়ে, জেনেবুঝে মানবরচিত আইনকে শ্রেষ্ঠ মনে করবে, এবং এ-আইনের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনা করবে, সে নিঃসন্দেহে কাফের। মুরতাদ। খলীফাই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন। খলীফা প্রথমে তাকে তাওয়া করার আহ্বান জানাবেন। মানলে ভাল, নইলে সে শাসককে পাকড়াও করে, মুরতাদ হিশেবে হত্যা করা হবে। শরীয়তবিরোধী আইনে পরিচালিত সমস্ত মুসলিম ভূখন্ডই তার স্বকীয়তা হারিয়ে, খিলাফাহতে অঙ্গীভূ হবে।

(ছয়) ইসলামি রাষ্ট্রের প্রতিটি ইঞ্চিতে শরয়ী বিধান বাস্তবায়িত হবে। এখানে মানবীয় কোনও আইন বা মতবাদ স্বীকৃত থাকবে না।

(সাত) থেমে পড়া ইসলামী বিজয়াভিযান আবার নতুন করে চালু হবে। ইসলামি বাহিনী কুফরভূমিতে অভিযান পরিচালনা করবে। সেগুলো খিলাফাহর অধীনে নিয়ে আসবে। এই তালিকায় প্রথমেই থাকবে ‘কুদস’। হারানো মুসলিম ভূখন্ডকে ফিরিয়ে আনার যুদ্ধকে ‘জিহাদু-দ্দাফই’ বলে। এটা ফরযে আইন। আর ইসলামের পতাকা বুলন্দ করার জন্যে অভিযান পরিচালনা করাকে জিহাদে তলব বলে। এটা ফরযে কেফায়া।

(আট) খিলাফাহভূমিতে মুসলিমরা হবে প্রথম শ্রেনীর নাগরিক। আহলে যিম্মাহ বা কাফিররা হবে দ্বিতীয় শ্রেনীর নাগরিক। কাফিরও সামাজিক সুবিচার পাওয়ার যোগ্যতা রাখবে। সব ধরনের বিদাত ও নিফাক মূলোৎপাটিত হবে। আহলে যিম্মাহরা জিযিয়া কর দিতে বাধ্য থাকবে। জাযীরাতুল আরব বা আরব উপদ্বীপে কোনও কাফের থাকতে পারবে না। এখানে শুধু মুসলিম থাকবে। কাফেররা জাযীরাতুল আরবে আসলেও, শরয়ী অনুমোদন নিয়ে আসবে। স্বল্পমেয়াদী ছাড়পত্র নিয়ে।

(নয়) ইসলামকে কটাক্ষ করা হলে, আল্লাহ তা‘আলা বা আল্লাহর রাসূলকে অবমাননা করা হলে, কুরআন কারীমকে উপহাস করা হলে, উম্মুল মুমিনীনকে অশ্লীল গালি দেয়া হলে, হত্যা করা হবে। সাহাবায়ে কেরামকে কাফের বলা হলে, বাহ্যিকভাবে কুফুরি কালাম উচ্চারণ করা হলে, তাকে তাওবা করতে বলা হবে। না করলে তাকে হত্যা করা হবে।

(দশ) খলীফাও বেতনভুক্ত কর্মী হবেন। পরিবার-পরিজন নিয়ে চলার মতো মাসোহারা তার জন্যে বায়তুল মাল থেকে বরাদ্দ করা হবে। যাতে তিনি আর্থিক চিন্তামুক্ত হয়ে দায়িত্ব পালন করতে পারেন। খলীফার মাসিক বেতন ঠিক করবে ‘আহলুল হল্লি ওয়াল আকদ’। উপদেষ্টা পরিষদ। নির্ধারিত বেতনের বাইরে এক পয়সা গ্রহণ করাও খলীফার জন্যে বৈধ হবে না। অতিরিক্ত কিছু গ্রহণ করলে, সেটা ছিনিয়ে নেয়া হবে।

(এগার) খলীফা সব সময় তার অধীনস্থ গভর্নরদের প্রতি তীক্ষ্ণ নযর রাখবেন। সাধারন নাগরিকদের প্রতিও চুরি ধরা পড়লে হাত কেটে দিবেন। সমুদয় চোরাই মাল বাজেয়াপ্ত করবেন। অবিবাহিত কেউ ব্যভিচার করলে দোররা মারার ব্যবস্থা করবেন। বিবাহিত করলে, রজম করবেন। খিলাফাহ ব্যবস্থায় আমীর-ফকীরের মাঝে কোনও পার্থক্য থাকবে না। শরীয়তের বিচারের সামনে সবাই সমান।

(বারো) উপদেষ্টা পরিষদকে খলীফাই বাছাই করবেন। খলীফা হক থেকে বিচ্যুত হলে, যুলুম করলে, পরিষদ খলীফাকে নসীহত করবে। মানলে ভালো, নইলে খলীফাকে অপসারণ করবে। খলীফা ইসলামবিরোধী কিছু করলে, তার বিরুদ্ধে বের হওয়া দেশের লোকদের উপর ওয়াজিব হয়ে পড়বে। কারন কাফের কিছুতেই মুসলমানদের শাসক হতে পারে না।

(তেরো) খিলাফাহরাষ্ট্র মুসলমানদের কাছ থেকে কোনও ধরনের ট্যক্স-কর নেয়া হবে না। তবে বছরান্তে যাকাত আদায় করা হবে। কাফেরদের কাছ থেকে জিযিয়া নেয়া হবে। ফসলের উশর নেয়া হবে। কাফের ব্যবসায়ীদের নির্ধারিত কর আদায় করা হবে। মুসলিম ব্যবসায়ীদের থেকে তা নেয়া হবে না। ইসলামী রাষ্ট্রে আয়ের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম হলো: গনীমত। যুদ্ধলব্ধ সম্পদ একজন মুসলিম পুরুষের শ্রেষ্ঠ উপার্জন।

(চৌদ্দ) ইসলামী রাষ্ট্রে প্রতিটি নাগরিকের জন্যে বায়তুল মাল থেকে ভাতার ব্যবস্থা থাকবে। এই টাকাই আজকাল শাসক ও নেতারা ভোগ করে। যেটা আদতে ছিল জনগনের টাকা। খিলাফত ব্যবস্থায় সম্পদের সুষমবন্টন হবে।

(পনের) খিলাফতব্যবস্থায় ‘রাষ্ট্রীয় সম্পদ’ রাষ্ট্রায়ত্ত সম্পত্তি, কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলে কিছু থাকবে না। এখানে থাকবে ‘মুসলমানদের সম্পদ’। মুসলমানদের সম্পত্তি। প্রতিটি মুসলিমই এর মালিক থাকবে। এসজ্যন সাহাবায়ে কেরাম এর নাম রেখেছেন: বায়তু মালিল মুসলিমীন’। যেটাকে আজ আমরা রাষ্ট্রীয় কোষাগার বলি। সেন্ট্রাল ব্যাংক বলি। খিলাফতে কোনও সম্পদ জমা থাকবে না। নতুন চালান আসার সাথে সাথেই খলীফা সেটা বিলিবন্টন করে দিবেন। উমার রা. তাই করতেন। সম্পদ যত বেশিই হোক, তিনি বিলম্ব করতেন না।

(ষোল) খিলাফতের অধীনে থাকা, প্রতিটি সম্পদশালীই উপযুক্ত হকদারকে যাকাত দিবে। যাকাত না দিলে, খলীফা বা তার নায়েব তাকে যাকাতদানে বাধ্য করবে। কোনও ব্যক্তি বা দল যাকাত দানে অস্বীকৃত হলে, খলীফা তাদেরকে মুরতাদ হিশেবে হত্যা করবেন। তদ্রূপ যে বা যারাই কাফেরদের বিরুদ্ধে জিহাদ করতে অস্বীকার করবে, আহলে যিম্মার উপর জিযিয়া ধার্য করতে অস্বীকার করবে, আল্লাহর আইনের শাসনকে অস্বীকার করবে, খলীফা তাদেরকে হত্যা করবে। মুরতাদ হিশেবে।

(সতের) মুসলিম ভূখন্ডের যে বা যারাই অমুসলিমদের সাথে বন্ধুত্ব পাতাবে, মুসলমানদের বিরুদ্ধে কাফিরদেরকে সাহায্য করবে, খলীফার উপর ওয়াজিব, তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করা। তাদেরকে মুরতাদ হিশেবে হত্যা করা।

(আঠার) আল্লাহর আইন পরিপূর্ণ আদল। নিখাদ ইনসাফ। আদলই হবে খিলাফাহর ভিত। চোরের হাত কাটা, যেনাকারীকে রজম করা, মুরতাদ হত্যা করা, হত্যাকারীকে হত্যা করা, আহলে যিম্মার উপর জিযিয়া ধার্য করা, শিরকমুক্ত করার লক্ষ্যে কাফেরদের ভূমি জয় করার জন্যে জিহাদ শুরু করা, কাফেরদেরকে বন্দী করা, তাদের সম্পদ ছিনিয়ে নয়া এসবই ‘আদল’। এর বিপরীতটাই জুলুম। যে কেউ এসবের মাঝে সামান্যতমও জুলুম খুঁজে পাবে, সে পরিষ্কার মুরতাদ। তাকে তাওবা করতে বলা হবে। নইলে মুরতাদের শাস্তি কতল।

(উনিশ) খিলাফতে কোনও রাজনৈতিক দল বা সংগঠনের অস্তিত্ব থাকবে না। সবকিছু খিলাফাহতে বিলীন হয়ে যাবে।

(বিশ) খলীফার পদে কুরাইশ ছাড়া অন্য কাউকে নির্বাচিত করা জায়েজ নেই। তবে শুধু কুরাইশি হলেই হবে না, তার খলীফা হওয়ার মতো যোগ্যতা থাকতে হবে।

ইহুদি-নাসারারা খেলাফতের গুরুত্ব বোঝে, কিন্তু মুসলমানরা আজো বেখবর। কাফেররা ভাল করেই বোঝে, খিলাফাহ মানে:
১: সমগ্র বিশ্বের মুসলমানদের এক হয়ে যাওয়া।
২: নতুন এক পরাশক্তির অভ্যুদয় ঘটা, অস্ত্রে ও মনোবলে। যার মোকাবেলা করার ক্ষমতা কাফেরদের নেই। সাময়িক দমিয়ে বা ব্যতিব্যস্ত রাখতে পারবে বড়জোর।
৩: আবার নতুন করে কাফেরদের দেশ জয় করা শুরু হওয়া। বায়তুল মুকাদ্দাস তাদের হাতছাড়া হয়ে যাওয়া। সারাক্ষণ মুসলমানদের ভয়ে থরথর করে কাঁপতে থাকা।
৪: কাফেরদের রচিত বিধানগুলো মুখ থুবড়ে পড়া। তাদের সাম্রাজ্য ধ্বসে পড়া।
৫: আল্লাহর যমীনে আল্লাহর আইন বাস্তবায়িত হয়ে যাওয়া। কাফেরদের জারিজুরি ফাঁস হয়ে যাওয়া।

কাফেররা সব সময়ই খিলাফার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এসেছে। এখনো করে যাচ্ছে। কেন?
১: খেলাফত থাকা মানে, তাদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়া।
২: তারা যে ধন-সম্পদ মুসলিম ভূখন্ড থেকে লুণ্ঠন করে নিয়ে গেছে, তা ফেরত দিতে বাধ্য হওয়া। তাদের কুফরির হিশেব দিতে বাধ্য হওয়া। দীর্ঘ কয়েক শতাব্দী ধরে চালিয়ে আসা জুযুল-সেতমের হিশেব কড়ায়-গন্ডায় দিতে বাধ্য হওয়া। মুসলমানদের সাথে করা বিশ্বাসঘাতকতা ও গাদ্দারীর কুফল ভোগ করতে বাধ্য হওয়া।
৩: খেলাফত শাসক ও শাসিতের পার্থক্য ঘুচিয়ে দিবে, শাসক পরিবার ও সাধারন মানুষের দূরত্ব ঘুচিয়ে দেবে। এটা তাদের কাছে ভয়ংকর ভীতিপ্রদ বিষয়।

মুসলিম নামধারী বিভিন্ন দল কেন খিলাফার বিরুদ্ধে লড়াই করে?
১: একজন খলীফার উপস্থিতিতে অন্য কোনও দল বা জামাতের বৈধতা থাকবে না।
২: খলীফার উপস্থিতিতে অন্য কোনও নেতার নেতাগিরি চলবে না।
৩: কোনও কোনও দল, দুনিয়াবি লাভের জন্যে কাফেরদের সাথে চুক্তিবদ্ধ। চুক্তি শর্তই হলো, খিলাফাহর বিরোধিতা করতে হবে।

খিলাফাহ থাকলে, সাধারণ মুসলমানদের কী লাভ?
১: মুসলিম উম্মাহর নেতৃত্ব ও গৌরব ফিরে আসবে। শক্তি ফিরে আসবে। ঐক্য ফিরে আসবে।
২: আল্লাহর বিধান জারী হবে। সবাই এর সুফল ভোগ করবে।
৩: মুসলমানদের অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক অধিকার ফিরে আসবে।
৪: সব মুসলনামের সমানাধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে।
৫: সমাজ থেকে যাবতীয় বিদাত-কুফর-নিফাক দূর হবে।
৬: আল্লাহর রাস্তায় মেহনতের সুযোগ ও সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।

খিলাফাহ প্রতিষ্ঠা করা মুসলমানদের অতি আবশ্যকীয় কর্তব্য। নবীজি সা.-কে দাফন করার আগে সাহাবায়ে কেরাম খলীফা নির্ধারণ করে নিয়েছিলেন।

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...