রশীদ জামীল :
কেউ যখন আমাকে জিজ্ঞেস করে, ‘বাংলাদেশে ইসলামী রাজনীতির ভবিষ্যৎ কেমন’ আর আমি যখন প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাবার পথ পাই না তখন বলি, ভবিষ্যৎ কেমন বলবার জন্য আগে তো বর্তমানটা দেখা দরকার। এক কাজ করেন, একটি বাতি জ্বালিয়ে আনেন, আগে বর্তমানটা দেখি …
শুরু করা দরকার একটু পেছন থেকে। তা না হলে গলতিগুলো বুঝতে পারা যাবে না। প্রথম কথা হল, নেতৃত্ব দেবার জন্য খুব বড় আলেম হতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। আলেম সমাজের তিন দিকপাল রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী, আশরাফ আলী থানবি এবং কাসিম নানুতবির নেতার নাম ছিল হাজি ইমদাদ উল্লাহ মুজাহিরে মক্কী। জাদরেল এই তিন আলেমসহ অসংখ্য উলামায়ে কেরামের নেতা হাজি ইমদাদ উল্লাহ বড় আলেম ছিলেন না। পড়ালেখা ছিলো দশম শ্রেণি পর্যন্ত। আজকের দিনে ইসলামী দলগুলোর নেতৃত্বে যে সব উলামায়ে কেরাম আছেন, তাঁদের একাডেমিক ইলিম হাজি ইমদাদ উল্লাহ থেকে অনেক বেশি। কিন্তু সেই জিনিষটি নেই, হাজি সাহেব, গাঙ্গুহ্ থানবিদের যা ছিল। এর পরের সিঁড়িতে মাওলানা মাহমুদ হাসান বা হোসাইন আহমদ মাদানিদের সময়েও ইসলামী রাজনীতির সেই পহেলা নাম্বার সবকটি নিয়মিতই পাঠ করা হত। আজকের দিনে যেটি আর চর্চিত হচ্ছে না!
আজকের যুগে আল্লামার মূল্যহ্রাস শুরু হয়েছে! হযরতুল আল্লামের কোনো অভাব নেই। জানার আগ্রহটি খুবই সিম্পল। আল্লামা কাহাকে বলে? উহা কত প্রকার ও কী কী?
আল্লামার বাংলা কি মহাজ্ঞানী। তাহলে এ দাবি নিশ্চই করা হবে না যে, এ যুগের আল্লামাগণ শাহ ওয়ালী উল্লাহ, শাহ আব্দুল আজিজ, গাঙ্গুহী, থানবি, মাদানিদেরচে’ বড় আলেম! ঘটনা যদি এমন হয়, তাহলে জানতে ইচ্ছে করতেই পারে আল্লামার জন্মদিনটা করে?
আমি আমাদের যে সকল মুরব্বীদের নাম নিলাম, তাদের বা তাদের যুগের আলেমদের নামের সাথে তো কখনো আল্লামা ব্যবহৃত হয় নি। তাঁরা তো মাওলানাতেই সন্তুষ্ট ছিলেন। অবশ্য একজনের কথা আমরা শুনেছি। বেচারা আল্লামা ছিলেন তবে আলেম ছিলেন না। তিনি আল্লামা ইকবাল। বাকিদের সৌভাগ্য যে, তাঁরা আল্লামা হতে পারেননি!
দুই.
-ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের রূপকার কোনো আল্লামা ছিলেন না, ছিলেন মাওলানা শাহ ওয়ালী উল্লাহ।
-ইংরেজদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামের ফতোয়া দেয়া শাহ আব্দুল আজিজও ছিলেন মাওলানা, আল্লামা নন।
-যে প্রতিষ্ঠান নিয়ে চিৎকার করে করে আমরা আমাদের গলার রগ ছিড়ে ফেলবার পর্যায়ে নিয়ে যাই, সেই দারুল উলুম দেওবন্দের প্রতিষ্ঠাতা কাসিম নানুতবিও আল্লামা হতে পারেন নি, মাওলানা ছিলেন।
-যে ফ্যাক্টরি থেকে শত শত কিতাব উৎপাদিত হয়েছে, সেই আশরাফ আলী থানবিও আল্লামা ছিলেন না, মাওলানাতেই ছিলেন সীমাবদ্ধ।
-মাল্টা বিজয়ী মাদানি আল্লামা হতে চান নি। অত খাহেশ তাদের ছিলো না। ______________এখন আমি যদি তাদেরচে’ বড় কিছু হয়ে যাই, তাহলে আমি আল্লামা, ঠিক আছি। আর যদি না হতে পারি, তো …
আজকাল তো আমরা আল্লামার দোকান খুলে বসেছি। ‘আগে আসলে আগে পাবেন’ ভিত্তিতে আল্লামার সাপ্লাই হচ্ছে। ভাই যখন হেকায়াতে সাহাবা আর তাজকিরাতুল আউলিয়া (বাংলা) মুখস্ত করে ওয়াজের মাইক্রোফোনে সাড়ে দুই আলিফ লম্বা টান দেন, আমাদের অতি আবেগে গদ গদ প্রজাতি তখন স্লোগান ধরে,
আল্লামা অমুকপুরী———- জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ!!
এভাবে যদি আল্লামার সাপ্লাই বাড়তে থাকে, কয়েক বছর পরে আর কোনো মাওলানা খুঁজে পাওয়া যাবে না। সবাই আল্লামা বনে বসে থাকবেন। তখন এত এত আল্লামার ভার আমরা কীভাবে সহিব?
আগাম ক্ষমা চেয়ে নিয়েই বলি। আমার জানামতে এ যুগের বড় বড় উলামায়ে কেরামের কেউ-ই কিন্তু বলে দেননি তাদের নামের সাথে আল্লামা জুড়ে দিতে। তাহলে অনুসারীরা এত আশিকে বে-ফানা কে্নো? যাদের জন্য আমরা আল্লামা বলি, আমরা কি জানি তাঁরা এতে খুশি হন না মোটেও। আর যদি এক-আধপিচ এমন হন, যিনি তাকে আল্লামা বলতে শুনলে খুশি হন, তাহলে আমাকে অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাতে হচ্ছে, আল্লামা তো কি, সাধারণ একজন আলেম হবার কোনো যোগ্যতাই তার নেই। এমন বস্তুদের থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা উচিত।
তিন.
দেশে আলেম সমাজ এবং ইসলামী দলগুলো কোণঠাসা! অথচ সম্পূর্ণ বৈরী পরিবেশে ১৮ শতকের শেষ এবং উনিশ শতকের প্রথম ভাগে আমাদের মুরব্বী আলেম-উলামা কীভাবে ইসলাম ও মাত্ভৃমির জন্য রাজনীতি করে গেলেন? কীভাবে জয়ী হলেন তাঁরা? কী ছিল তাদের কাছে যা আজকের আলেমদের কাছে নেই? মাওলানারা পারলে আল্লামাদের তো আরো বেশি পারার কথা। পারছেন না কেন?
প্রশ্নটি অনেক ছিল ধরেই মাথায় নিয়ে ঘুরছিলাম। জবাব পাচ্ছিলাম না। সেটা পেলাম ১৫ এপ্রিল ২০১০ সালে। ইউরোপ জমিয়তের ৯ বছরের সভাপতি, ইসলামী রাজনীতির নূরানি চেহারা দেখে রাজনীতি থেকে স্বেচ্ছা নির্বাসনে চলে যাওয়া প্রবীণ আলেম মাওলানা আসগর হুসাইন সাহেব’র কাছ থেকে। আমার আব্বার বন্ধু ছিলেন বলে আমি তাঁকে চাচা ডাকি। বিশ্বখ্যাত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বসবাসরত মাওলানা আসগর সাহেব সোজা-সাপটা কথাবার্তা বলে অভ্যস্ত। ১৫ এপ্রিল ২০১০ সন্ধ্যা সাড়ে ৯টা থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত অক্সফোর্ডে উনার সাথে বসার সুযোগ হল আমার। মওকা পেয়ে ঝেঁকে ধরলাম তাঁকে। কথা বললেন খোলামেলা ভাষায়।
আমি তাঁকে প্রশ্ন করলাম, চাচা, রাজনীতি থেকে দূরে চলে গেলেন কেন?
তিনি বললেন, আমাদের আকাবিরীন যে মকসুদে রাজনীতি করতেন, সেটা এখন অনুপস্থিত।
-কী ছিল সেটা?
-একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি, আর কিছু না।
-আচ্ছা চাচা, বাংলাদেশে ইসলামী রাজনীতির করুণ হালত তো জানেনই। এই দুরবস্থার জন্য মূলত কোন্ কারণটিকে চিহ্নিত করবেন আপনি? অর্থাৎ আমি আসলে জানতে চাচ্ছি, অভাবটা কিসের?
তিনি বললেন, সহবত বা সান্নিধ্যের। ইসলামী রাজনীতির জন্য আল্লাহওয়ালার সান্নিধ্যে যাওয়া, নিজে আল্লাহওয়ালা হওয়া অত:পর নেতাকর্মী ও দেশবাসীকে নিজের সান্নিধ্যে নিয়ে এসে আল্লাহ-ওয়ালা বানানো, এটা ছিল সবচে জরুরি। আজ কেউ কারো সহবতে নেই। সবাই যার যার হাতে সাড়ে তিন হাত।
আমি বললাম, কুরআন-হাদিস সামনে থাকলে এবং বোঝার যোগ্যতা থাকলে সহবত বা সান্নিধ্যের দরকারই-বা হবে কেন? তিনি আমার দিকে ভুরু কুঁচকে তাকালেন। উদ্দেশ্য আন্দাজ করা, প্রশ্নটি আমি জানার জন্য করছি, নাকি …। অশ্বস্থ হলেন তিনি। বললেন, ওলি-আউলিয়াদের সংস্পর্শ ও সান্নিধ্য ছাড়া কখনোই সফলতা আসে না। তুমি নিশ্চই ঐ কবিতাটি শুনে থাকবে
এক জামানা সহবতে বা আউলিয়া
বেহতর আজ সদ সালা ত্বা-য়াত্ব বে-রিয়া।
(ওলিআল্লাহদের সংস্পর্শে কিছু মুহূর্ত কাটানো শত বছর নির্ভেজাল ইবাদত থেকেও উত্তম। )
মুফতী মুহাম্মদ শফি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি হাকিমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানবিকে প্রশ্ন করলেন, “হযরত, কবি যে দাবিটি করলেন, এটা কি ঠিক? থানবি জবাব দিয়েছিলেন, “পুরা ঠিক নেহি। দর আসল শায়েরনে সহবতে আউলিয়াকো কুচ কম কর দিয়া। আসলমে সদ সাল নেহি, লাকো সাল বুলনা চাহিয়ে থা। কিঁউকে ইবাদত সে জান্নাত মিলতি হে আর সহবতে আউলিয়াসে মালিকে জান্নাত।”
সুতরাং বুঝতেই পারছো আল্লাহ-ওয়ালাদের সান্নিধ্য কতবেশি জরুরি? বর্তমানে আল্লাহ-ওয়ালাদের সান্নিধ্যের প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারটিই ইসলামী রাজনীতি থেকে উঠে গেছে!
আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহ-ওয়ালাদের খুঁজে পাবো কোথায়? চিনবোই বা কেমন করে? তিনি আমাকে বললেন, তোমার এই প্রশ্নের জবাব মুফতী শফি সাহেব অনেক আগেই দিয়ে গেছেন। উনার এক ছেলের নাম ছিল যকি কায়ফী। থাকতেন লাহোরে। মুফতী সাহেব ছেলেকে চিঠি লিখে উপদেশ দিলেন, বাবা, সবসময় আল্লাহ-ওয়ালাদের সহবতে থেকো। ছেলে বললেন, বাবা, এখানে তো বড় কোনো আলেমই নেই। আমি আল্লাহ-ওয়ালা কোথায় পাবো? মুফতী শফি ছেলেকে লিখলেন,
“বেটা যকি! ইঁহা কয়ী মসজিদ নেহি হায় কিয়া? আগর হায়, তো মসজিদ কা তো কয়ি মওজ্জিনভি হোগা। ওহি তো আল্লাহ ওয়ালা হে।”
এর মানে আল্লাহ-ওয়ালা হওয়ার জন্য বড় আলেম হতে হবে, এখন কোনো কথা নেই।
উপরের অগোছালো কথাগুলো থেকে খুব সহজে যে কথাটি বোঝে নেয়া উচিত তা হল, ইসলামী রাজনীতির সফলতার জন্য আল্লামা নয়, আল্লাহওয়ালাদের সান্নিধ্যই প্রথম শর্ত। এটা গ্রহণ করে নিতে পারলে তবেই ইসলামী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের মধ্যে খুলুসিয়্যতের চর্চাটা শুরু হত। সেই খুলুসিয়্যত, যা ছাড়া ইসলামী রাজনীতি করার একমাত্র ফায়দাই হল সময় নষ্ট করা।
চার.
বাংলাদেশের ইসলামী রাজনীতির পশ্চাদগামিতা নিয়ে বর্ষীয়ান একজন আলেম ও অবসর প্রাপ্ত রাজনীতিকের মন্তব্য আলোচিত হল। এবারে আমি নিজের ভাষায় বলি। আমার কাছে তীব্রভাবে যে দু’টি জিনিসের অভাব অনুভূত হয় তা হল, ভিশন ও লিডারশীপ কোয়ালিটি। ভিশন ছাড়া পরিকল্পনাকে সঠিক পথে এগিয়ে নেয়া যায় না। আবার যোগ্যতা সম্পন্ন নেতৃত্বেরও বিকল্প নেই।
আরেকটু সহজ ভাষায় বললে, ইসলামী রাজনীতি করবার জন্য প্রধানতম অপরিহার্য দু’টি বিষয় হচ্ছে দু’টি, সততা এবং যোগ্যতা। সততা হলে নিয়ত সহিহ থাকে। যোগ্যতার প্রথম ধাপ হয় বিনয়, বিনয় থেকে নম্রতা, সেখান থেকে তৈরিহয় পরমত-সহিষ্ণুতা।
পাঁচ.
বললে মোটেও অত্যোক্তি হবে না, বাংলাদেশের ইসলামী রাজনীতি এবং কওমি মাদরাসা একটি অপরটির অবিচ্ছেদ্য অংশ, অভিন্ন সাবজেক্ট। একটির গায়ে আঁচড় লাগলে ব্যথা অনুভূত হয় অন্যটির শরীরে। হবারই কথা। এদেশে ইসলামী রাজনীতির মূল উপকরণ তো কওমি ছাত্রদেরই ধরা হয়। ইসলামী সংগঠনের আলেম নেতারা সভা ডাকলে পোস্টারিং-মাইকিং এর কাজগুলো তো এদেরই করতে হয়। আন্দোলনের ডাক দিলে রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজ, পুলিশের কাঁদানো গ্যাস ও লাঠিপেটা খেয়ে আন্দোলন সফল করবার জন্য মাঠে তো নামতে হয় এই ছাত্রগুলোকেই। এরা হল ইসলামী রাজনীতির রিজার্ভ ফোর্স।
এত ব্যবহার করি আমরা ছেলেগুলোকে অথচ তাদের জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো ভিশন সেট করতে চাই না। কখনো ভেবে দেখেছি এই ছাত্রগুলোর মেধা এবং প্রতিভার প্রতি আমরা সুবিচার করতে পারছি কিনা? তাদের আজকের চাওয়া, আগামীকালের প্রত্যাশা পূরণে কোনো ভাবনা আমাদের আছে কিনা! খোলা আকাশের নিচে বসে তাওয়াক্কুলের তসবিহ জপার ফর্মুলা কোথা থেকে আনা হল? ‘ফা-তাওয়াক্কাল আলাল্লাহ’র আগে কি ‘শা-উইরহুম ফিল আমর’ বলা হয়নি? রাব্বানা আতিনার পরে এবং ‘ওয়াফিল আখিরাতি হাসানা’র আগে কি দুনিয়ার কল্যাণ কামনা করার শিক্ষা দেয়া হয়নি?
আমরা যদি আমাদের ছাত্রদের সামনে তাদের পছন্দের টপিকটি রাখতে না পারি, শিক্ষা সিলেবাসে তাকে যদি সেই জিনিষটি না দিই, যা সে চায় এবং খুব করেই চায় এবং সেটা যদি শরীয়াত বহির্ভূত চাওয়া না হয়ে থাকে, আর ভাবি দিন দিন তরক্কী করবো, যদি ভাবি ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল, ইসলামী দলগুলোর নেতৃবৃন্দ যদি ভাবেন তারপরেও এই ছেলেরা আজীবন তাদের হয়ে মাঠে থাকবে, তাহলে এই ধারণা ব্যুমেরাং হতে খুব বেশি দিন লাগবে বলে তো মনে হয় না। অতি স্বাভাবিক কারণেই ইতোমধ্যে সেটার আলামতও স্পষ্ট হতে আরম্ভ করেছে।
ছয়.
বাংলাদেশ ছিল ইসলামী রাজনীতির জন্য চমৎকার একটি উর্বর ভূমি। নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। যে ব্যাখ্যাই দেয়া হোক আর যেভাবেই দেয়া হোক, এদেশের আমজনতার সাথে ইসলামী দলগুলো সম্পর্ক তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে। এরচেও’ বড় ব্যর্থতা হল এই ব্যর্থতা নিয়ে অনুশোচনা পর্যন্ত নেই! এ জন্যই আমরা দেখতে পাই পেট ব্যথা করলে পানিপড়া নিতে আসে, ঘাড় ব্যথার জন্য তেলপড়া, বিপদে পড়লে দোয়া চাইতে আসে; এমন বুযুর্গরাও ইলেকশনে দাঁড়ালে মানুষ আর ভোট দেয় না। কারণ, মানুষ জানে পিয়াজের মূল্যবৃধির কারণে হুজুররা কখনো মিছিল বের করবেন না। তাদের জাগতিক সমস্যার সমাধানে উলামায়ে কেরামকে প্রকৃত অর্থে ভূমিকা রাখতে দেখা যাবে না।
কেউ যেনো আমাকে মনে করিয়ে দেবার চেষ্টা না করেন, উলামায়ে কেরামের মধ্যে নিকট অতীতে বা অতি সাম্প্রতিককালে দু’পাঁচজন কারা কারা ইলেকশন করে এমপি হয়ে গিয়েছিলেন! সেটা মার্কার ফজিলত ছিল, উনাদের নয়।
সাত.
এদেশের ইসলামী রাজনীতির পুরোধা যাঁরা, তাদেরকে পরামর্শ দেবার স্পর্ধা/ ইচ্ছা কোনোটাই আমার নেই। তবে আমি যখন আমার মতো কারো সঙ্গে বিষয়টি শেয়ার করি তখন বলি, ইতিহাস ও ঐতিহ্য মানুষকে প্রেরণা যোগায়। তারমানে এই নয় যে, ঐতিহ্যের দিকে ছুটে চলতে হবে। ঐতিহ্যের দিকে ছোটা মানে পেছনের দিকে যাত্রা। ইতিহাস-ঐতিহ্যকে স্মরণ করতে স্মৃতিতে, লালন করতে হয় হৃদয়ে, কিন্তু যাত্রা করতে হয় সামনের দিকে। একশ বছর পেছনে নয়, তাকাতে হয় একশ বছর পরের দিকে। তা নাহলে কীভাবে হবে?
চল্লিশ-পঞ্চাশ বছর আগের উলামায়ে কেরামের উদাহরণ দেখিয়ে লাভ নেই। প্রথম কারণ, তাদের তরিকায় আমল করা হচ্ছে না। দ্বিতীয়তঃ তাঁরা তাদের সময়ে হানড্রেড পারসেন্ট পারফেক্ট ছিলেন, কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু এখন তাঁরাও থাকলে আর বাংলাদেশে বাড়ি বানিয়ে বাংলায় কথা বললে তাদের নযরিয়া হত বর্তমানমুখি। এর প্রমাণ হচ্ছে, তাঁরা যখন ছিলেন, বর্তমানমুখিই ছিলেন। সময়ের ভাষা তাঁরা বুঝতে পারতেন। আর পারতেন বলেই এখনো তাঁরা অনন্য।
আট.
রাজনীতি করতে না জানলেও ইসলামী রাজনীতি নিয়ে আমাদের কথা বলতে হয় কারণ, বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত উলামায়ে কেরাম ও খণ্ড-বিখণ্ড ইসলামী দলগুলোর জন্য মাঠ পর্যায়ে জবাবদিহি করতে হয় আমাদেরও। আমরা রাজনীতি করি না, তবুও। আমরা নেতা-ফেতা হইনি, হতে চাইনি, তবুও। একটি কমন প্রশ্নের জবাব বারবারই এড়িয়ে দেতে হয় আমাদের। প্রশ্নটি হচ্ছে, ‘একই দেওবন্দের আকীদা ও বিশ্বাসের অনুসারীদের মধ্যে এতগুলো ইসলামী দল কেনো’?
আমরা জবাব দিতে পারি না। জবাব আমাদের জানা নেই। কেউ কি আছেন, জবাবটি যার জানা আছে?