বৃহস্পতিবার, ১৮ই এপ্রিল, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ সন্ধ্যা ৬:৩১
Home / ইতিহাস ঐতিহ্য / অজানা দেওবন্দ-১৪ : স্রেফ আগ দেনা হি মেরে কাম হে!

অজানা দেওবন্দ-১৪ : স্রেফ আগ দেনা হি মেরে কাম হে!

মুহাম্মাদ নাজমুল ইসলাম :

আজ দারুল উলুম আসার প্রায় ৬মাস। কিন্তু এতো দিন পার হয়েছে বলে মনেই হচ্ছে না। আসলে এরকম না হবারই কথা। কারণ দারুল উলূম আমায়/আমাদের কতো যে সুখ-সমৃদ্ধে  রাখছে তা বলারই অপেক্ষা রাখে না। দারুল উলূমের প্রতিটি ভাবনা ঘিরেই শুধু ছাত্রদের সুবিধা, উন্নতি আর কল্যাণ। মনে পড়ছে সেদিনের কথা, যখন দারুল উলূম এসে পৌছি। সেদিন ছিলো ২৯ রমজান। একদম শেষ রমজানের রোজাটা রাখার ভাগ্য জুটেছিলো দারুল উলূমেই।

যাইহোক, প্রথম ইফতারের টাইম হলো। দেশের অনেক পুরাতন সাথী ভাই-ই ইফতারের দাওয়াত করলেন। বেশ জোর করায় নাছোড়বান্দা দেলাওয়ার ভাইকেই প্রাধান্য দিয়ে তার সাথে ইফতার করার দাওয়াত কবুল করি।

ইফতারের জন্য তিনি আমাকে সাথে নিয়েই যান মুণ্ডিতে। সেখানে গিয়ে বললেন, তুমি যা খাবে এবং যেটাই পছন্দ করবে সেটাই ইফতারের জন্য কিনবো। মাশাআল্লাহ! ইফতারের জন্য অনেক কিছুই কিনলেন। কিন্তু কেন জানি আমার কাছে একটা জিনিস’র কমতি মনে হলো। সহ্য না করে বলেই ফেললাম ভাই! ঠাণ্ডা পানি কিনলেন না যে?
তিনি একরকম হেসে হেসেই বললেন, আরে না! ওটা আর কিনে কী লাভ!

মনটা কিছুটা খারাপ হয়ে গেলো। ভাবলাম বিচারা অনেক কিছুই তো কিনলো কিন্তু ১০রুপির একটা সামান্য ফ্রিজের পানি কিনতে এতো কৃপনতা?

কিছুটা মেজাজ নিয়ে কামরায় চলে আসলাম। এবার দেখি উনি একটা বোতল ধরিয়ে দিয়ে বললেন, এই যে দেখছেন না সিঙ্গেল পানির টেব আছে একটু কষ্ট করে সেখান থেকে ওটা ভরে নিয়ে আসুন।

মেজাজ তো আরো খারাপ হলো। ভদ্রতা রাখতে চলেই গেলাম। বোতলের মুখটা খুলে টেবের মুখটা ঘুরান দিতেই তো আমি পুরাই আবাক! ফ্রিজ সিস্টেম পানি? প্রচুর ঠাণ্ডা। সুস্বাদু কেমন তা তো বলারই অপেক্ষা রাখে না।
এবার তার ম্যাজিকওয়ালা কথাগুলো বুঝতে আর দেরী হলো না। দারুল উলূমের কি সুন্দর সেবা? যা আজ অনেক জায়গায় বিরল!

ঠিক তেমনিভাবে মাসখানেক হয়েছে হিন্দে ঠাণ্ডার আগমনের। শুধু বাড়তেই আছে। এতো ঠাণ্ডার মুখোমুখি আগে কখনোও হইনি বলে মনে হচ্ছে। কুয়াশার তিব্রতা দিনরাত তফাৎ করা কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজীব হালত! কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ! দারল উলূমের ঠাণ্ডা উপলক্ষে ছাত্রদের জন্য ব্যবস্থাপনা চমৎকার! ঠাণ্ডা বুঝাই যাচ্ছে না।

ঠাণ্ডা শুরু হতে না হতেই প্রতি ছাত্রকে অনেক দামী কম্বল প্রদান। গরম পানির ব্যবস্থাপনা আপনাকে তাক লাগিয়ে দেবে। এতো ছাত্রের জন্য অজু গোসলের গরম পানি! কল্পনা করতে পারেন! তাও আবার বৈদ্যুতিক কোন ব্যবস্থাপনায় নয়! না হিটার! কেমন করে তা শুনবেন? তাহলে শুনুন!

গরম পানি করার জন্য দারুল উলূমে রয়েছে পৃথক চারটে ট্যাঙ্কি। প্রতিটা ট্যাঙ্কিতে রয়েছে পানি সংযোগ। নিচে রয়েছে চুলা করা। নিযুক্ত আছেন নির্দিষ্ট মুলাজিম। যার কাজই হলো শুকনো লাকড়ি দিয়ে টাংকির পানি গরম করা।
কী মনে হয়?
কাজটা এতোই সহজ?
জি না! অনেক কষ্টের। আর যেটা দারুল উলূম ছাত্রদের সেবাপ্রদানে করেই যাচ্ছে।

এ কাজে নিযুক্ত এক মুলাজিম ভাইয়ের সাথে কথা হলো। জানতে চাইলাম অনেক কিছু। কেমনে এতো পানি গরম করা সম্ভব। আবার সামান্য গরমও না! এতোই গরম যা নিজেই তো বুঝতে পারছি।
তো তিনি বললেন: মাওলানা ছাহেব! ‘ইস টাংকি মে আগ দেনা হি মেরে কাম হে’ আর দ্বিতীয় কোন কাজ নেই। আলহামদুলিল্লাহ! এরকম একটা কাজ পেয়ে আমি ধন্য।শুকরিয়া দারুল উলূমের খেদমত করতে পারছি। দোয়া করবেন যাতে আমৃত্যু এ খেদমতে থাকতে পারি।

লেখক : শিক্ষার্থী, দারুল উলুম দেওবন্দ

আরও পড়ুন : অজানা দেওবন্দ ১৩; জানেন কি দেওবন্দের নাম কেন দেওবন্দ?

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...