শুক্রবার, ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ১২:৫৪
Home / কওমি অঙ্গন / অজানা দেওবন্দ ১৩ : জানেন কি দেওবন্দের নাম কেন দেওবন্দ?

অজানা দেওবন্দ ১৩ : জানেন কি দেওবন্দের নাম কেন দেওবন্দ?

মুহাম্মাদ নাজমুল ইসলাম :

দেওবন্দ সমগ্র পৃথীবিতে একটি সু-প্রসিদ্ধ নাম। এ নামের সঙ্গে মিশে আছে ইসলাম ও মুসলমানের হাজারো স্মৃতি। তাই আজ আপনাদেরকে শুনাবো দেওবন্দকে কেন দেওবন্দ বলা হয়!

গত ২৭ নভেম্বর ২০১৬ বাদ এশা আমাদের উস্তাদে মুহতারাম হযরত মাওলানা মুফতি আমিন পালনপুরী দা. বা. এর নিকট  নাসাঈ শরিফের দরসে দেওবন্দে’র নামে নামকরণের কারন জানতে পারলাম। তিনি খতিবুল ইসলাম ক্বারী তায়্যিব সাহেব রাহ.; যিনি দারুল উলূম দেওবন্দের ৫২ বছর মুহতামিম ছিলেন তার  নিকটে অনেকবার শুনেছেন এর নামকরণের কারন।
আর তা এভাবে যে, দেও শব্দের অর্থ হলো জিন, (দেবী)। আর বন্দ অর্থ বন্ধ করা, আটক করা। আগের যুগে হিন্দুদের একটি প্রথা ছিল যে, তারা তাদের কোন এক পুজা বা মেলায় একজন করে কুমারি মেয়েকে সুন্দর করে সাজিয়ে সন্ধ্যাবেলা মন্দিরের ভেতরে রেখে আসতো; কিন্তু সকালে গিয়ে আর সেই মেয়েকে পাওয়া যেতো না। এভাবে তাদের এ প্রথা দীর্ঘ যুগের পর যুগ চলছিল।

একবছর একটি ঘটনা ঘটলো, এক মন্দিরে কুমারি মেয়েকে দেওয়ার জন্য এলাকার সকল কুমারি মেয়েদের নাম সংগ্রহ করলো। আর এ সিদ্ধান্ত হলো যে, লটারিতে যার নাম আসবে তাকেই দেওয়া হবে মন্দিরে। আর সে সময়ে এই এলাকায় দু’একজন ছাড়া তেমন কোনো মুসলমান ছিল না। কিন্তু অনেক দূরের কোথাও থেকে এক মুসলমান মুসাফির এই এলাকায় আগমন করে এক হিন্দু বাড়িতে মেহমান হলো। ঘটনাক্রমে সেই হিন্দু বাড়ির পাশের ঘরের কুমারি মেয়ের নাম-ই লটারিতে উঠেছিল মন্দিরে দেওয়ার জন্য। তখন মুসলমান মুসাফির ব্যক্তি পাশের ঘরে কান্নার আওয়াজ শুনতে পেয়ে কারন জানতে চাইলো। তখন হিন্দু ব্যক্তি বললো যে, আমার একটিমাত্র মেয়ে অন্য কোন সন্তান নেই। কিন্তু মন্দিরে দেওয়ার জন্য আমার মেয়ের নামই উঠেছে। তাই কান্না করছে সবাই।

তখন মুসলমান মুসাফির ব্যক্তিটি বললো, একটি কাজ করুন, সেটা হলো আপনার মেয়ের পরিবর্তে আমাকে সাজিয়ে মন্দিরের ভিতরে রেখে আসুন। তখন হিন্দু ব্যক্তি বললো আপনি আমার মেহমান এটা করে  আপনাকে অসম্মান করতে পারবো না। আর সে ভয়ও পাচ্ছিল যে মেয়ের পরিবর্তে একজন পুুরুষ কিভাবে পাঠাবে। কিন্তু অনেকবার বলার পর হিন্দু ব্যক্তি রাজি হলো। অতপর তাকে মেয়ের মত সুন্দর করে সাজালো যাতে কেউ বুঝতে না পারে। যখন সন্ধ্যা হলো, তাকে পালকিতে উঠিয়ে মন্দিরের ভেতরে রেখে এসে বাহির দিয়ে দরওয়াজা বন্ধ করে দিলো। অতপর মুসলিম মুসাফির ব্যক্তিটি কাপড় পরিবর্তন করে মন্দিরের ভিতরের দিকে একটি খাল/পুকুরে অজু করে বিভিন্ন অজিফা দু’আ পাঠ করছিল। একটু পর সে দেখলো ঐ খাল দিয়ে বিভিন্ন রকমের লাইট দ্বারা সজ্জিত একটি জাহাজ মন্দিরের দিকে এগিয়ে আসছে। তখন সে খুব বেশি বেশি আয়াতুল কুরসী পাঠ করছিল। জাহাজ যত কাছে আসছিল সে তত জোরে জোরে আয়াতুল কুরসী পাঠ করতে লাগলো। যখন জাহাজটি মন্দিরের ঘাটে এসে ধাক্কা লাগলো সাথে সাথে অনেক দুরে চলে গেলো।আবার কাছে আসতে চাইলে সে বারে বারে আয়াতুল কুরসী পড়তে লাগলো।ফলে তা আর তার কাছে আসতে পারলো না। অতপর সেই জাহাজটি ঘাটের সাথে ধাক্কা লেগে অনেক মাঝে গিয়ে দুটুকরো হয়ে ডুবে গেলো। আর তাতে ছিল সেই দেও (জিন) যে কুমারি মেয়েকে গায়েব করে দিতো। অতপর সে আর আসতেই পারলো না।

এদিকে সকাল বেলা লোকেরা দেখলো যে মন্দিরের ভিতরে কে যেন কি পড়ছে। ভেতরে ঢোকে দেখলো একজন পুুরুষ লোক ভেতরে বসে আছে। লোকেরা কারন জানতে চাইলে সে সব খুলে বললো। ওই যে বন্ধ হলো দেও আসা তারপর আর কখনো আসে নি। আর তখন থেকে হিন্দুরা কুমারি মেয়েকে মন্দিরে দেওয়াও বন্ধ করে দিলো। আর যেহেতু ঐ মুসলিম মুসাফির ব্যক্তির মাধ্যমে দেও আসা বন্ধ হলো তাই এ এলাকা কে দেওবন্দ নামে নামকরণ করা  হয়।

লেখক : শিক্ষার্থী, দারুল উলুম দেওবন্দ

আরও পড়ুন : অজানা দেওবন্দ ১২ : রাসূলের দেয়া পাচরুপি এবং মাসলাকে দেওবন্দ!

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...