কমাশিসা : আরবি ও ফারসি ভাষায় পাণ্ডিত্য অর্জনকারী গাইবান্ধার সদর উপজেলার বিষ্ণপুর গ্রামের মরহুম ফাইম উদ্দিন আখওয়ান্দের হাতে লেখা প্রাচীন পবিত্র কোরআন শরিফটি জাতীয় পর্যায়ে সংরক্ষণের দাবি উঠেছে। আরবি ও ফারসি ভাষায় সংস্করণকৃত এ কোরআন শরিফটি প্রায় ২০০ বছরের পুরনো। এটি দ্রুত সংরক্ষণ না করলে বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
মরহুম ফাইম উদ্দিন আখওয়ান্দ জীবদ্দশায় খড় দিয়ে তৈরি কাগজ ও শিমের বীজ আগুনে পুড়িয়ে কালি বানিয়ে বাঁশের কলমে নিজ হাতে কুরআন শরিফের প্রতিটি হরফ লিপিবদ্ধ করেন। হাতে লেখা এ কুরআন শরিফটি অনান্য কোরআন শরিফের মতো স্বাভাবিক মাপের।
পিতৃপুরুষের হাতে লেখা প্রাচীন কুরআন শরিফটি ‘আখওয়ান্দ’ পরিবারের বংশধর গাইবান্ধা জেলা বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি জেলা শহরের সুখনগর এলাকার বাসিন্দা অ্যাড. সেকেন্দার আযম আনাম আখওয়ান্দের কাছে স্বযত্নে সংরক্ষিত আছে।
তিনি গাইবান্ধা শিক্ষাঙ্গণে আলোচিত সাবেক জেলা শিক্ষা অফিসার সদর উপজেলার বিষ্ণপুর গ্রামের মরহুম আব্দুল মান্নান আখওয়ান্দের ছেলে।
এর আগে কুরআন শরিফের লেখক মরহুম ফাইম উদ্দিন আখওয়ান্দের ছেলে মরহুম মাগন আখাওয়ান্দ ও তার ছেলে ‘আখওয়ান্দ’ পরিবারের জৈষ্ঠ্য সদস্য মরহুম আব্দুল মান্নান আখওয়ান্দ কুরআন শরিফটি সংরক্ষণ করেন।
অ্যাড. সেকেন্দার আযম আনামের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, ২০০ বছরের পুরনো কুরআন শরিফটি স্বযত্নে সংরক্ষণ করায় অক্ষত আছে। এছাড়া কুরআন শরিফের প্রতিটি পাতার লেখা স্পষ্ট রয়েছে। কুরআন শরিফটির প্রথম পাতা থেকে শেষ পর্যন্ত লেখা দেখে মনে হয়, কোনো টাইপ মেশিন বা কোনো ছাপাখানায় মুদ্রিত হয়েছে। তবে কুরআন শরিফটির কিছু পাতা ও চারপাশের সামান্য অংশ নষ্ট হতে ধরেছে।
কুরআন শরিফ সংরক্ষণে ধারাবাহিকতা সম্পর্কে অ্যাড. সেকেন্দার আযম আনাম বলেন, তার বাবার দাদা ফাইম উদ্দিন আখওয়ান্দ নিজ হাতে কুরআন শরিফের প্রতিটি হরফ লিপিবদ্ধ করেন। কুরআনটি ‘আখওয়ান্দ’ পরিবারের অনেকে নিয়মিত পাঠ করতেন। ফাইম উদ্দিন মৃত্যুর পর তার ছেলে মরহুম মাগন আখাওয়ান্দ কুরআন শরিফ সংরক্ষণ করেন।
পরবর্তীতে মাগন আখওয়ান্দ কুরআন শরিফ তার ছেলে আব্দুল মান্নান আখাওয়ান্দের তত্ত্বাবধানে দেন। কিন্তু আব্দুল মান্নান আখাওয়ান্দ ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর মারা যান। এরপর থেকে কুরআন শরিফটি সংরক্ষণের ভার তার উপর পড়ে। বর্তমানে কুরআন শরিফটি তিনি তার নিজ বাসায় সংরক্ষণ করছেন।
কুরআন শরিফের লেখক ফাইম উদ্দিন আখওয়ান্দ সম্পর্কে তিনি জানান, জোরদারী পরিবারের সন্তান ছিলেন ফাইম উদ্দিন আখওয়ান্দ। তার বাবা ছিলেন একজন জোরদার ও সম্পদশালী ব্যক্তি। ছোট থেকে বিলাসবহুল জীবন-যাপন পছন্দ করতেন না ফাইম উদ্দিন আখওয়ান্দ।
এ কারণে তিনি কিশোর বয়সে বাবার জোরদারী সংসারের সুখ-শান্তি ও সম্পদ রেখে বাড়ি ছেড়ে অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান। কিছুদিন পর বাড়ি ফিরে পড়ালেখা জন্য ভারতে যান তিনি। দীর্ঘদিন তিনি ভারত উপমহাদেশে বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করে আরবি ও ফারসি ভাষায় পাণ্ডিত্য লাভ করেন। একই সঙ্গে বিশেষ পাণ্ডিত্যের জন্য তিনি ভারতে ‘আখওয়ান্দ’ (জ্ঞানী) উপাধী লাভ করেন।
হাতে লেখা প্রাচীন কুরআন শরিফটি ১৯৬০ সালে রংপুরে অনুষ্ঠিত শিক্ষা সংস্কৃতি মেলায় প্রদর্শিত হয়। সেসময় কুরআন শরিফটি এক নজর দেখার জন্য দূর-দূরান্তের হাজারো মানুষ মেলায় আসেন। এছাড়া হাতে লেখা কুরআন শরিফের বিষয়টি জেলার অনেকে অবগত আছেন। কুরআন শরিফটি দেখতে প্রায়ই জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে নারী-পুরুষ তার বাসায় আসেন বলেও জানান তিনি।
মুসলমানদের ধর্মীয়গ্রন্থ প্রাচীন পবিত্র কুরআন শরিফটি জাতীয় পর্যায়ে দ্রুত সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন অ্যাড. সেকেন্দার আযম আনাম। সূত্র : জাগো নউজ ২৪ . কম