রেজাউল কারীম আবরার :
জামিয়া ইকরায় তখন মিশকাত পড়ি। জোহরের পর উসতাদে মুহতারাম আল্লামা আরীফ উদ্দীন মারুফ দা.বা. মাঝে মাঝে পড়াতেন। শীতের এক অলস বিকালে হুজুর এসে সংবাদ দিলেন যে আগামীকাল জামেয়া ইকরায় আসছেন বিশ্বখ্যাত ইসলামী সংগীত শিল্পী জুনায়েদ জামশেদ। আমরা প্রহর গুনা শুরু করলাম। পরের দিন সকাল থেকেই জামেয়া ইকরায় সাজসাজ রবরব। জোহরের আগেই আসলেন জুনায়েদ জামশেদ। ইকরার মসজিদে গাইলেন ‘মুহাম্মাদ কা রওযা কারীব আ রাহা হায়” জামেশেদ গাইতেছেন আর তন্ময় হয়ে শুনছেন শায়খুল হাদীস আল্লামা কাজী মু’তাসিম বিল্লাহ রহ. এবং শায়খুল হাদীস আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ দা্.বা.। পরিবেশনার শেষে কাজী সাহেবের অনুরোধে জামশেদ গেয়েছিলেন বিখ্যাত নাত ‘মিঠা মিঠা পেয়ারা পেয়ারা মেরে মুহাম্মাদ কা নাম”। জামেয়া ইকরার সকল ছাত্ররা তাঁর সাথে গেয়ে উঠলো! পুরো মসজিদ প্রকম্পিত হল রাসূল প্রেমের বন্দনায়। প্রিয় উস্তাদ আল্লামা আরীফ উদ্দীন মারুফ সাহেব এর কল্যাণে সে দিন খুব কাছ থেকে দেখেছিলাম প্রিয় জুনায়েদ জামশেদকে। বিদায় বেলায় তার কোমল হাতের স্পর্শও পেয়েছিলাম। শায়খুল হাদীস আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ দা.বা. এর গাড়ীতে চড়ে তিনি যখন টঙ্গী অভিমুখি হয়েছিলেন, আমরা সারিবদ্ধভাবে তাকে বিদায় জানিয়েছিলাম! সেদিনের তাঁর হাত নাড়ানো এবং মুচকি হাসি এখন স্পষ্ট চোখের সামনে ভাসছে!
জামেয়া ইকরা থেকে দাওরা হাদীস শেষ করে যখন মারকাযুদ দাওয়ায় উলূমুল হাদীস প্রথম বর্ষে পড়ি, তখন ‘ইকরা মাল্টিমিডিয়া’র উদ্দোগে ‘বসুন্ধরা কনভেনশন’ হলে অনুষ্টিত হয়েছিল আন্তর্জাতিক হামদ নাত মাহফিল। সে মাহফিলের প্রধান আকর্ষণ ছিলেন জুনায়েদ জামশেদ। প্রথমেই পরিবেশন করেছিলেন ‘আয় নবীজী হো করম তো এক নজর হাম পর’ । বেশ কয়েকটি পরিবেশনার পর আম মারুফ সাহেব এর কাছে গিয়ে অনুরোধ জানাই আমাদের কিছ পছন্দের নাত রয়েছে। আপনি জামশেদকে বলে দিন সেগুলো পরিবেশনের জন্য। হুজুর আমাকে বললেন: মঞ্চে গিয়ে মাকনুনকে বলে আস। মাকনুন ভাই হলেন শায়খুল হাদীস আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ দা.বা. এর বড় ছেলে এবং আমাদের উস্তাদতূল্য বড় ভাই। তিনি জামশেদের পাশে ছিলেন। আমি তাঁর কাছে যাওয়ার পর তিনি ইশারা করে বললেন: সরাসরি জামশেদকে বলে দিন। আমি তার কাছে গেলাম। তিনি হাত এগিয়ে দিলেন। মুসাফাহা করলাম। এক শ্বাসে অনেকগুলো নাত শুনার আবদার করলাম। তিনি হাসলেন। কিছুক্ষণ হাত ধরে রাখলেন। তারপর ছেড়ে দিলেন। সে সম্মেলনে আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ দা.বা. তার কপালে চুমো খেয়ে তাকে ‘কিংস অব নাত’ ঘোষণা দিয়েছিলেন।
জুনায়েদ জামশেদ! আমাদের প্রিয় শিল্পী। রাহিমাহুল্লাহ লিখতে হাত কাঁপছে। তারপরও মেনে নিতে হচ্ছে তিনি আমাদের মাঝে নেই। আল্লাহ, রাসূলের শানে গেয়ে পুরো পৃথিবীতে ঝড় তুলবেননা। আল্লাহ তাকে জান্নাতের উচ্চ মাকাম দান করুন। সেদিনের হাসি এবং ফিসফিস কথা বড্ড মনে পড়ছে।
লেখক : সিনিয়র মুহাদ্দিস ও মুফতি, জামিয়া আবু বকর রা., ঢাকা