ফাহিম বদরুল হাসান :
জীবনের প্রথম প্রহরে ছিলেন পপ-সিঙ্গার। নাম, যশ খ্যাতি- সব কিছুতে জীবন ভরপুর ছিল। কিন্তু আল্লাহ তাঁকে হিদায়াত দেবেন বলে, একসময় অনুভব করতে পারেন সব থাকার পরও মনটা শূণ্যতায় ভরপুর। (তাঁর ভাষায়) শোবিজের মানুষেরা হাজার হাজার মানুষের ভিড়ে খুবই একাকী এবং শূণ্য থাকে।
বাল্যবন্ধু জুনায়েদ গণির হাত ধরে জগদ্বিখ্যাত দাঈ তারিক জামিলের সংস্পর্শে এসে আল্লাহর হুকুমে বদলে নেন রাস্তা। বদলে যান নিজেও। আল্লাহর দেয়া কণ্ঠকে এবার দিলেন সঠিক আহার। মধুর কণ্ঠে তুলে নিলেন, হামদ-নাত আর ইসলামি নাশিদ। হয়ে উঠলেন তাবলিগের এক দাঈ। বদলে যেতে থাকলো, জীবনের মানে। বদলালো শুভানুধ্যায়ী, হিতাকাঙ্খী, ভালবাসার মানুষ। পেতে থাকলেন মনের মধ্যে সেই প্রশান্তি, যার খুঁজে বছরের পর বছর গিটার হাতে স্টেজ থেকে স্টেডিয়ামে, হল-রোম থেকে অডিটোরিয়ামে পাগলের মতো ছুটেছিলেন।
তাবলিগি এক সফরে ৭ ডিসেম্বর আকস্মিক প্ল্যান দুর্ঘটনায় বায়ান্ন বছর বয়সে স্বপরিবারে নিহত হন তিনি। তাঁর পরকাল কেমন হবে সেটা আল্লাহই ভাল জানেন। কিন্তু তাঁর এই আকস্মিক মৃত্যু কোটি কোটি মানুষকে বাকরুদ্ধ করে দিয়েছে। শত শত বিশ্ববিখ্যাত উলামা-এ-কিরাম, লাখ লাখ হাফেয, আলেম জুনায়েদ জমশেদ ও তাঁর পরিবারের সকলের জন্য দোয়া করছেন। তাঁর কথা বলতেই বলছেন ‘আল্লাহ তাঁকে জান্নাত নসিব করুন’। তাঁর হৃদয়ছোঁয়া নাশিদগুলো শুনছেন, শোনাচ্ছেন। বিশ্ববিখ্যাত মিডিয়াগুলোও তার নামের সাথে ‘ইসলাম প্রচারক’ লাগিয়ে প্রচার করছে- এ থেকে আশা করা যায় আল্লাহ তাঁকে ক্ষমা করে দেবেন।
কিন্তু তিনি যদি সেই পপ-সিঙ্গার হিসেবেই বিগত বিশ বছর জীবিত থেকে ইন্তিকাল করতেন- তাহলে তার গমণের পর তাকে যারা ভালবাসতো তারা কী হতো?
হয়তো পাকিস্তানের জাতীয় শিল্পী হিসেবে শোক দিবস পালন করা হতো। টিভি চ্যানেলগুলো তার গানগুলো বাজিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠান করে ‘জাতির অপূরণীয় ক্ষতি’ হয়েছে বলে কিছু সংস্কৃতিমনা চোখের মিথ্যা আঁসু বইয়ে দিত। পাশাপাশি ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ সহ কিছু দেশের চলচ্চিত্র এবং মিডিয়া জগতের অনেকে বেচারার মরার পর ‘RIP RIP’ করতো- যা একজনের মুসলমানের কবর থেকে হাশর পর্যন্ত কোনো কাজে লাগবে না।
সুতরাং তার এমন পরিবর্তন পরবর্তী ইন্তিকালে বলাই বাহুল্য- ‘সব ভাল তার; শেষ ভাল যার’। তাঁর সৌভাগ্য। আল্লাহ দিকে চুড়ান্ত ফেরার পূর্বে ইসলামের দিকে ফিরে এসেছিলেন।
লেখক : ফ্র্যান্স প্রবাসী গবেষক