আসছে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ
এক টেবিলে বসছেন আল্লামা আহমদ শফি ও আল্লামা ফরিদ উদ্দীন মাসউদ সহ দেশের শীর্ষ আলেমগণ
সৈয়দ আনোয়ার আব্দুল্লাহ : অনেক জল্পনা কল্পনা আর লক্ষপ্রাণের আকুতি আর চোখের পানির ফরিয়াদের পর কওমি কর্ণধারগন এবার এক টেবিলে বসছেন। বিশেষ করে দেশের শীর্ষ দুই আলেম সবাইকে সাথে নিয়ে কওমি মাদরাসার বৃহত্তর ঐক্যের লক্ষ্যে একত্রে বসছেন আগামি ১০ডিসেম্বর চট্টগ্রামের হাটহাজারি মাদরাসায়।
ইতোমধ্যে কওমি মাদরাসা শিক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান বেফাকের সভাপতি আল্লামা শাহ আহমদ শফি দা.বা. এর পক্ষ থেকে কওমি মাদরাসা শিক্ষা কমিশনের কো-চেয়ারম্যান শায়খুল হাদীস আল্লামা ফরিদ উদ্দীন মাসউদ দা.বা. কে আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানিয়েছেন হাটহাজারিতে যাবার জন্য।
আমন্ত্রণের জবাবে আল্লামা মাসউদও শুকরিয়া প্রকাশ করে উপস্থিত থাকবেন বলে সম্মতি জ্ঞাপন করে বলেছেন, “স্বীকৃতি আল্লামা আহমদ শফির নেতৃত্বেই হবে, তা আমি শুরু থেকেই বলে আসছি। আমাদের নেতা একজনই। তিনি আমাকে যখন ডাকবেন, যেখানে ডাকবেন আমি তার ডাকে লাব্বায়েক বলে হাজির হব। আমি বরাবরই বলে আসছি খলিফায়ে মাদানী আহমদ শফি হাফিঃ পায়ের সমানও আমি অধমের মাথা নয়। আমি আগেও বলেছি, হুজুর ডাক দিলে এক সেকেন্ডও দেরি করবো না । আশা করি হুজুর সবাইকে নিয়ে বসার পর স্বীকৃতির ব্যাপারে যে সিদ্ধান্ত দিবেন নিসংকোচে সবাই মেনে নিবেন।”
সম্প্রতি বেফাকের মাধ্যমে কওমি সনদের এমএ মান প্রদানের দাবী নিয়ে আল্লামা আহমদ শফির চিঠি প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী কাছে। তখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিনিনিধিদলকে বলেন, “আমরা বিচ্ছিন্ন কাউকে স্বীকৃতি দিব না, আপনারা সবাইকে নিয়ে আল্লামা আহমদ শফির নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আসুন”। প্রধানমন্ত্রীর এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে আল্লামা আহমদ শফি সকল বোর্ড ও শীর্ষ আলেমদের নিয়ে একটেবিলে আগামি ১০ডিসেম্বর বসার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এই উদ্যোগে “কওমি মাদরাসা সরকারি স্বীকৃতি” ও কওমি অঙ্গনের বিভাজন এবার ঐক্যবদ্ধ হবার পথ সুগম হচ্ছে। কওমি অঙ্গনে প্রাণের সাড়া পড়েছে এই খবরে। সবাই মহান আল্লাহ তায়ালার শাহী দরবারে এই ঐক্যের জন্য দোয়া করছেন হৃদয় খুলে। হতাশার মাঝে কওমি ছাত্র-তরুণরা একঝলক আশা বুকে ধারণ করেছেন। হতাশার কালো মেঘ তাদের হৃদয় আকাশ থেকে এখন ক্রমশ সরতে শুরু করেছে। এবার হয়তো অগ্রজরা রাজনৈতিক ভেদাভেদ ভুলে কওমির ভাগ্য উন্নয়নে এক হয়ে কাজ করবেন। এই বৈঠকের মাধ্যমে সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী উস্তাদে মুহতারাম আল্লামা আহমদ শফি দা.বা. এর মাধ্যমেই ২০১৭ সালে দাওরায়ে হাদীসের পরীক্ষা সরকারি কারিকুলাম অনুযায়ী হবার প্রক্রিয়া তরান্বিত হবে বলে আশা করছেন অনেকেই।
বৈঠকে বাংলাদেশের কওমি মাদরাসাসমূহের সকল আঞ্চলিক বোর্ডগুলোও উপস্থিত হবে বলে নিশ্চিত করেছেন কওমি মাদরাসা শিক্ষা কমিশনের সদস্যসচিব ও সম্মিলিত কওমি মাদরাসা বোর্ডের সেক্রেটারি মুফতি রুহুল আমিন দা.বা.। তিনি বলেছেন আমরা সকল বোর্ড ও শীর্ষ আলেমদের নিয়েই একটি ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত নেয়ার লক্ষে হাটহাজারিতে ১০ ডিসেম্বর রবিবারে বসছি।
উল্লেখ্য কওমি কর্ণধারদের ঐক্যবদ্ধভাবে স্বকীয়তা বজায় রেখে কওমি সনদের সরকারি স্বীকৃতি প্রদানের লক্ষে তরুণ আলেমদের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল। কওমিবন্ধনের পক্ষ থেকে রাজপথে মানববন্ধন, বড়দের সাথে সাক্ষাৎসহ নানা কার্যক্রম হাতে নিয়ে কওমি কর্ণধারদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছিল। এবার আল্লামা আহমদ শফি হাফিঃ এর নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ স্বীকৃতির এই আযোজনকে স্বাগত জানিয়েছেন বড়দের পাশাপাশি তরুণ আলেমরা। এবার বড়দের একটেবিলে বসা ও ঐক্যবদ্ধ থাকার প্রাণের দাবীটি আসার আলোতে পরিণত হয়েছে। তরুণ আলেমরা সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন, যেন আল্লাহ এদেশের আলেমদের ঐক্যবদ্ধ থাকার তাওফিক দান করেন। এবং আগামি ১০ ডিসেম্বর হাটহাজারিতে কওমি কর্ণধারদের ঐক্যবদ্ধ পরামর্শকে আল্লাহ কবুল করেন। বাতিল ফেরকার সকল প্রকার বদ নজর থেকে যেন হেফাজ করেন।
লেখক : তরুণ গবেষক, বহু গ্রন্থপ্রণেতা