ফাহিম বদরুল হাসান:
গল্প হয়ে ওঠেনি যা
মনিবের মাত্র ক’দিনের প্রশিক্ষণে বানর এমন পারদর্শী হয়ে উঠেছিল যে, সার্কাসে বানরের পারফরমেন্সে খোদ মালিকই অভিভূত। মনিব তো খুশিতে আটখানা। এমন একটি বানর পেয়ে। যখন তখন চিত্তের বিনোদনে বানরকে তুলে দিত সার্কাসের স্টেজে। অবশ্য যেমন খাটুনি খাটাতো, বানরটিকে ঠিক তেমনি আদর-যত্ন করতো। নিজস্বার্থে। বানর ভাল থাকলে খেলবেও ভাল।
বানরও খুশিতে সময় অসময়ে নেচে উঠতো, মনিবকে খুশি করতে খেলায় জান ধরে দিত। কারণ, জঙ্গলে যা স্বপ্নেও দেখেনি এমন খাবার, আহ্লাদ বানরকে মাতোয়ারা করে তুললো। তার এবং সাথের অন্যসব বানরের জংলী জীবনের কষ্টের কথা ভেবে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করতো।
সবমিলিয়ে মনিব এবং বানর উভয়ের আনন্দের অন্ত নেই। সার্কাসের স্টেজ প্রাণবন্ত ছিল বেশ কিছুদিন।
জঙ্গলের বেপরোয়া, অশৃঙ্খল এবং অনিশ্চিত জীবনের বদলে পেয়েছিল থাকা-খাওয়ায় এক বিরাট নিশ্চয়তা এবং নিরাপত্তা।
কিন্তু ক’দিন যেতেই বানরের আনন্দ ম্লান হতে থাকে। বানরটি ব্যথায় কুঁকড়ে যায়। ব্যথাটি দাসত্ব পাওয়ার,স্বাধীনতা খোয়ার। মনিবের যখন খেলতে ইচ্ছা হয়, খাঁচা থেকে বের করে আনে, আবার যখন আর ভাল্লাগেনা ভেতরে ঢুকিয়ে ব্লক দেয়।
স্বাধীনচেতা বানরের এমন জীবনকে একসময় দুর্বিষহ মনে হল। এমন সুশৃংখল জীবনটাকে তার কাছে অসহ্য লাগলো। সুযোগ বুঝে খাঁচা ছেড়ে পালালো।
চাওয়া-পাওয়ার মহা-মিলনের জীবন ছেড়ে আবার পাওয়া-না পাওয়ায় দোদুল্যমান জংলী জীবনের পথে ছুটলো। কিন্তু পৃথিবীটা বড়ই রিয়েলিস্টিক। ফিরে এসে আর খুঁজে পেলো না রেখে যাওয়া তার সমগোত্র। সবাই জীবনের তাগিদে চলে গেছে দূর থেকে সুদূর।
অবশেষে একাকী ফলহীন একটি গাছের পাতাহীন ডালে বসে ভাবলো, ভুলটা আসলে কখন হয়েছিল। খুঁজে পেল, সামান্য খাবারের লোভই তার এই অবস্থার জন্য দায়ী। একটি মানুষের হাতে বাদাম দেখে পিছু পিছু গিয়েছিল। এই বাদামের দাম দিতে হল তার সারাটা জীবন। নাম গেল, চাম গেল।
(বিঃ দ্রঃ রাজনীতি মিশালে আপন দ্বায়িত্বে)