নবী সা. সাহাবীদের সুন্দর করে কুরআন পড়তে বলতেন। কারো পড়া সুন্দর হলে খুব খুশি হতেন, প্রশংসা করতেন। নবী যুগেও সাহাবীদের মধ্যে অনেক ক্বারী ছিলেন। কুরআন কারিমে সুরা মুয্যাম্মিলের ৪ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘হে নবী! আপনি কুরআন তেলাওয়াত করুন স্পষ্ট উচ্চারণে, ধীরে ধীরে।’ [সুরা মুয্যাম্মিল : ৪] হাদিসে কোরআন তারতীলের সাথে তেলাওয়াতের বিশেষ ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। ক্বারী সাহাবীরা অন্য সাহাবীদের মধ্যে বিশেষ মর্যাদা পেতেন। হজরত আলকামা রা. একবার এক ব্যক্তিকে কুরআন তেলাওয়াত করতে শুনে বলেন, ‘লাকাদ রাত্তালাল কুরআনা, ফিদাহু আবি ও উম্মি’ অর্থাৎ ‘লোকটি তারতীলের সাথে কুরআন তেলাওয়াত করেছে। তার প্রতি আমার বাবা-মা উৎসর্গ হোক’।
বর্তমান পৃথিবীর সেরা পাঁচ ক্বারীকে নিয়ে লিখেছেন মাওলানা আবু হানিফা।
১. মাশারী রাশীদ আল আফাসী
বর্তমান বিশ্বে ক্বরীদের নাম নিয়ে আলোচনা হলে যার নামটি প্রথমেই নিতে হয় তিনি হলেন, ক্বারী মাশারী। ৫ই মে ১৯৭৬ সালে কুয়েতে তিনি জন্ম গ্রহণ করেন। তার বাবা রাশীদ ও দাদা মুহাম্মদ দরিদ্র ও কুরআনের প্রতি খুবই দুর্বল ছিলেন। তার পর দাদা মুহাম্মদও একজন কারী ছিলেন। বংশগত এই আন্তর্জাতিক ক্বারী শায়েখ মাশারী একজন ইমাম, কুরআন গবেষক, সঙ্গীতশিল্পী ও আর্টিস্টও। ছোটকাল থেকেই শায়খ মাশারী কেরাতের প্রতি খুব আগ্রহী ছিলেন।বর্তমানে আমরা চলার পথে যানবাহনে সবচে বেশি শুনতে পাই শায়খ মাশারীর ওয়াজ। সুললিত কণ্ঠ ও তেলাওয়াতে তারতীলের কারণে কারীদের মধ্যে বিশ্বের প্রথম স্থানটি ধরে রেখেছেন তিনি।
২. আবদুর রহমান আস সুদায়সি
শায়খ আবদুর রহমান আস সুদায়সি এমন এক নাম যার নাম শোনার পর পরিচয় দানের আর প্রয়োজন পড়ে না।১৯৬০ সালে সৌদি আরবের রিয়াদে তিনি জন্ম গ্রহণ করেন। আন্তর্জাতিক এই ক্বারী মসজিদুল হারাম তথা মক্কা শরীফের ইমাম। কুরআনের উপর অসামান্য অবদান তার। দুবাই ইন্টারন্যাশনাল হলি কুরআন সম্মাননাসহ ২০০৫ সালে ইসলামিক পারসোনালিটি অফ দা ইয়ার নির্বাচিত হন। বিশ্বের বরেণ্য একজন কারী হওয়ার পাশাপাশি তিনি একজন সুবক্তা ও সুলেখকও। মাসজিদুল হারামের ইমাম শায়খ সুদায়সি ক্বারীদের মধ্যে বিশ্বের দ্বিতীয় স্থানে আছেন।
৩. সাউদ আশ শুরাইম
শায়খ আশ শুরাইম ইবনে ইবরাহীম ইবনে মুহাম্মাদ বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কারীদের মধ্যে একজন। তিনি ১৯ জানুয়ারি ১৯৬৪ সালে জন্ম গ্রহণ করেন। শায়খ শুরাইম মক্কার ইমামদের একজন। তুখোড় মেধাবী সাউদ আশ শুরাইম উম্মুল কুরার শারীআহ এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রসেসর। ড. শুরাইম কিছুদিন আগে উম্মুল কুরার ফিকহ বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব প্রাপ্ত হন। এত দায়িত্ব ও ব্যস্ততার মাঝেও কুরআন তেলাওয়াত তার অবিরাম গতিতে চলে। কিভাবে এত বড় ক্বারী হলেন, জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, শত ব্যস্ততার মাঝে সবার আগে কুরআনকে স্থান দিই তথা সবার আগে কুরআন।
সুমিষ্ট কণ্ঠের অধিকারী আন্তর্জাতিক মানের এই ক্বারী একজন বড় মানের লেখকও। আকিদা, ফিকহ ও আরবি সাহিত্যের উপর তার অসংখ্য বই রয়েছে।
৪. সাদ আল গামিদি
শায়খ সাদ আল গামিদি ১৯৬৭ সালে সৌদি আরবের দাম্মাম শহরে জন্ম গ্রহণ করেন। আন্তর্জাতিক ক্বারী হওয়ার সাথে সাথে তিনি বিশ্বের প্রথম সারির একজন তাজবীদ বিশারদও। কেরাত ও তাজবীদে তার অবদান অতুলনীয়। তিনি একজন প্রসিদ্ধ ইমাম এবং ইসলামিক স্কলার। তিনি ল, এর উপর ডক্টরেট করেছেন দাম্মাদ ইউনিভার্সিটি থেকে। স্কুল অফ শরীয়ার পরিচালকের দায়িত্বেও আছেন আন্তর্জাতিক এই ক্বারী। তিনি বিশ্বের মাঝে কারীদের মধ্যে চতুর্থ স্থানটিতে অধিষ্ঠিত আছেন।
৫. শায়খ আবু বকর সাতরী
শায়খ আবু বকর সাতরী আন্তর্জাতিক মানের একজন ক্বারী হওয়ার পাশাপাশি বিশ্বের ৫০ জনের একজন কুরআন গবেষকও। শিক্ষাবিদ এই ক্বারী ১৯৭০ সালে সৌদিআরবের প্রসিদ্ধ শহর জিদ্দায় জন্ম গ্রহণ করেন তিনি সৌদি আরবের সেরাদের তালিকার একজন ইমাম ও কুরআন গবেষক । তিনি সুমধুর স্বরের জন্য বিখ্যাত। তিনি এডুকেশন অব জিদ্দা থেকে কুরআন গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন শায়খ আয়মানি ইউনিভার্সিটি থেকে চার বছর আগে ডক্টরেট শেষ করেন। শায়খ আবু বকর শাতরী ক্বারীদের মধ্যে আছেন পঞ্চম স্থানে। -আওয়ার ইসলাম