বাঙ্গালী সমৃদ্ধির তীর্থস্থান, সেই ঋণ আজ শোধ করা চাই…
সৈয়দ আনোয়ার আবদুল্লাহ
ম্রোহং রাজ দরাবার থেকে…
লেমা নদীর তীরে ম্রোহং নামক স্থানে ১৪৩৩-১৭৮৫ সাল পর্যন্ত ছিল আরকানের রাজধানী। তৎকালীন আরকানের রাজধানী ম্রোহং চট্টগ্রাম ও আরকানীদের নিকট বিকৃত হতে হতে হয়ে গেছে রোহিঙ্গা। সেই রোহিঙ্গা আজ পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্ভাগা জাতি। এরা বার্মা তথা মায়ানমার রাষ্ট্রে অবস্থিত আরাকান রাজ্যের নিগৃহীত মুসলমান। আরাকান হচ্ছে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তি মায়ানমারের একটা রাজ্য। এক সময় ছিল ভারত উপমহাদেশের স্বাধীন এক ভুখণ্ড । চট্টগ্রাম, নোয়াখালী পর্যন্ত এককালে আরকানের সীমান্ত বিস্তৃত ছিল।
আমাদের উৎকর্ষতার তীর্থস্থান
শিল্প, সাহিত্য সংস্কৃতি, শিক্ষা-দীক্ষা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানে আরকান এশিয়ার ছিল সমৃদ্ধ এক জনপদ। সেই ররাজকীয় সমৃদ্ধিতে পালিত বাঙ্গালীরা কখনো অকৃতজ্ঞ হতে পারে না। বাঙ্গালী জাতি সত্তার লালন বিকাশে আরকান রাজ সভার অবদানকে কে অস্বীকার করতে পারেন? আমাদের গর্বের ধন ও অহংকারের প্রতীক বাংলা ভাষা সাহিত্যের লালন-বিকাশ ঘটেছিল এই আরকানেই। আরকান রাজসভাকে ঘিরে। সিলেটের তরফের কবি সৈয়দ মুসা ১৬৮০ সাল পর্যন্ত দীর্ঘদিন আরকানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তাকে ঘিরে সেখানে বাংলা সাহিত্যের এক তীর্থস্থান ঘরে উঠে।
ইতিহাস যা বলে…
১৪৩৩ সাল থেকে ১৬৯০ সাল পর্যন্ত দুশ বছরে আরকান রাজদরবারে বা সালতানাতে ১৭জন রাজা অধিষ্ঠিত হন। সেই আরকানের সোনালি যুগে প্রত্যেক রাজা বাংলা সাহিত্য সাংস্কৃতির সমৃদ্ধি ঘটিয়েছেন। ১৭৮৫ সালে বামির্সরা চীনাদের সহযোগিতায় আরকানে প্রথম বর্বর হামলা চালায়। তখন দলে দলে লাখ লাখ আরকানী কোন প্রতিরোধ গ্রহণ না করে নাফ নদী পাড়ি দিয়ে প্রাবর্ত্য চট্টগ্রাম সহ এই অঞ্চলে আশ্রয় নেয়। ১৮০২ সালে আবার তারা স্বাধীন আরকানের উপর হামলা চালায়। তখনো তারা নদী পাড়ি দিয়ে চট্টগ্রামে আশ্রয় নেয়। আরকানীরা মুসলিম হলেও মাত্রারিক্ত সাহিত্য সাংস্কৃতিক চর্চার ফলে তারা কোনকালেই সাহসী হয়ে উঠতে পারে নি। যুদ্ধ আর জিহাদ আর ঈমানী মেহনত ভুলে যাওয়া একটি মুসলিম জাতি।
আরকান রাজসভার অবদান
তবে বাঙ্গালী জাতি সত্তার উৎকর্ষ সাধনে আরকানে অবদান ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষে দেদীপ্যমান। বাংলা ভাষার পৃষ্ঠপোষকতা, লালন ও বিকাশে সবচেয়ে বেশি ঐতিহাসিক অবদান আরকান রাজসভার। মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের স্থপতি যারা সেই বাঙালী মহাকবি আলাওয়াল, মহাকবি সগির. মহাকবি সৈয়দ সুলতান, শেখ চান্দ, কোরেশমাগন ঠাকুরের মতো বাংলা কবিতার মহাকবি, মমজলিস খান, আর রতি-মহারতিরা মহাসম্মানে পালিত হয়েছিলেন আরকানের রাজসভাতে। আরকানের আলো-বাতাসে তারা বাংলা ও বাঙালী জাতি সত্তাকে সমৃদ্ধি করেছেন। আরকানী বা রোহিঙ্গাদের সেই দান-অবদানকে কীভাবে আজ স্বাধীন বাঙলীরা অস্বীকার করতে পারে। আমরা তাদের শান্তির জন্য স্থায়ী কোন সমাধানের পথ বের করে কি আমাদে উপর যে দায়বদ্ধতা তা কি কিছুটা হালকা করতে পারি না?
বিপর্যয়ের সূচনা
১৭৫৭ সালের ২৩শে জুন পলাশির বিপর্যয়ের পর ইংরেজরা উপমহাদেশের ক্ষমতা দখলে নিতে থাকে। ১৮২৪ সালে তারা বার্মা ও আরকানে আক্রমন করে দুটি রাজ্য তাদের দখল নেয়। ১২২ বছর বৃটিশদের অধিনে আরকান, বার্মা, বাংলা, পাক, ভারত, ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা লাভ করে। মুসলমানদের উপর বৃটিশ নির্যাতনে আস্তে আস্তে আরকান শিক্ষা সংস্কৃতির আগ্রাসনে শিকার হয়ে এসব থেকে পিছিয়ে পড়ে। জঘন্য ঔপনিবেশিক ও সমাজতন্ত্রিক দুঃশাসনের নাভিশ্বাস ওঠা পরাধীন আরকান রক্ত, ইতিহাস ও সংস্কৃতি বন্ধনে আমাদের সঙ্গে সঙ্গে সুপ্রাচীনকাল হতে সম্পর্কিত। ভাষা, বর্ণ, ধর্ম, আশা, আকাঙ্খা, চাহিদা ও চেষ্টা এই সকল প্রকার প্রকাশ ভঙ্গিতে আরকানী ও বাংলাদেশীদের মাঝে নেই কোন মৌলিক ব্যবধান। দুর্ভাগ্যক্রমে সাম্রাজ্যবাদী বৃটিশের চক্রান্তে আরকানবাসীরা আজ সারা মায়ানমারের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ে পরিণত। পর্যবসিত এবং নৃতাত্বিক জনগোষ্ঠী হয়েও তারা আমাদের থেকে আজ বিচ্ছিন্ন।
রাজনীতির বলী যেভাবে
ইংরেজ আমলের শেষ ভারত পাকিস্তান ভাগ হওয়ার সময় এরা পাকিস্তানের সাথে অন্তভূক্ত হতে চেয়েছিল। অর্থ্যাৎ যদি তাই হত তাহলে তারা সেই সময়ের পূর্ব পাকিস্তান তথা আজকের বাংলাদেশের নাগরিক হত। আর বাংলাদেশ পেত আরাকান নামক সমৃদ্ধশালী বিশাল ভূখণ্ড। কিন্তু বৃটিশদের খামখেয়ালি কিংবা কূট রাজনৈতিক চালে পরে আর সেই সময়ের মুসলিম রাজনৈতিক নেতাদের অদূরদর্শিতা ও ভুলের কারণে তারা পাকিস্তান তথা বাংলাদেশের সাথে অন্তর্ভুক্ত না হয়ে বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ট বার্মার নাগরিক হয়ে এক রাজনৈতিক বলিতে স্বীকার হয়েছে।
নিজ দেশে পরাধীন
প্রথম প্রথম এরা বার্মাতে ভালই ছিল। আরাকান থেকে অনেক মুসলিম নেতা বার্মার সংসদ সদস্যও নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু পরে সামরিক সরকার এসে সব হিসাব পালটে গেল। ভাষা, ধর্ম,গায়ের রঙ, চেহারা অমিল থাকার কারণে বিশ্ব বিবেককে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে মায়ানমার তাদেরকে নাগরিক হিসেবে মেনে নিতে অস্বীকার করে বসলো। অথচ তারা হাজার বছর ধরে এই ভূখণ্ডে বসবাস করছে। কেড়ে নেওয়া হল তাদের সকল প্রকার নাগরিক অধিকার। তারা ভোট দিতে পারে না, সরকারি চাকরি করতে পারে না, সরকারি সুযোগ সুবিধা পায় না, ব্যাবসা করতে পারে না, বিনা অনুমতিতে বিয়ে করতে পারে না, এমনকি বাচ্চা নিতেও তাদের অনুমতি লাগে, শিক্ষা চিকিৎসা সেবা তো নেই-ই। বন্দিও এক দাসত্বের জীবন যাপন করা শুরু হয় রোহিঙ্গাদের।
বৌদ্ধদের পাশবিকতা
সুবে বাংলার শাসনকর্তা শাহ সুজা ১৬৫৯ সালে মোঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের কাছে এক যুদ্ধে পরাজিত হয়ে পরিবার পরিজন সহ আরকানে আশ্রয় নেন। শাহ সুযার এক অনিন্দ্য সুন্দরী বিদুষী কন্যা ছিলেন। সে একবার শীতকালীন ভ্রমনে গেলে বার্মা রাজা চন্দ্র সুধর্মা থাকে কিডন্যাপ করে নিয়ে যায়। এতে করে বাঙ্গালী বীর আরকান রাজা সৈয়দ মুসা চন্দ্র সুধর্মার উপর আক্রমন করেন। তখন শাহ সুজা সহ তারপরিবারকে বোদ্ধরা গোপনে নির্মমভাবে হত্যা করে। সেই থেকে শতাব্দি ধরে যুগ যুগে বার্মা বোদ্ধ ও আরকানীদের মাঝে যুদ্ধ চলে আসছে। সর্বশেষ ১৯৪৮ সালে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হবার পর থেকে সেখানে সংখ্যালঘু হয়ে তারা পাশবিকতায় শিকার হতে থাকে। বর্তমানে প্রতিনিয়ত তাদের উপর নির্যাতন থেমে নেই, পরমত সহিষ্ণুর দাবীদার বৌদ্ধভিক্ষু মৌলবাদী জঙ্গিরা তাদের উপর কিছুদিন পরপরই র্নিমম নিষ্টুর নির্যাতন চালায়। তাদেরকে শুধু একঘরে করে রাখে ক্ষ্যন্ত হয়নি, এরপর শুরু হল আরেক ভয়ঙ্কর খেলা। ভূখণ্ড থেকে উচ্ছেদের খেলা। এই উদ্দেশ্যে তাদের উপর চালানো হয় বার বার নির্যাতন, খুন, বাড়ি ঘরে অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ, পাশবিকতার ভয়ংকর সব কার্যক্রম।
সীমান্তের যাত্রাকল
এই যখন অবস্থা তখন বাকিদের জীবন বাঁচাতে রোহিঙ্গারা দলে দলে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে মুসলিম দেশ বাংলাদেশের প্রবেশের চেষ্টা করে নানান সময়ে ৮৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত তিশ লাখ আরকানী বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। তাদের পার্সপোট না থাকায় বাংলাদেশের পার্সপোট ব্যাবহার করে অন্তত ৫লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম আরব বিশ্ব ও ইউরোপ আমেরিকাতে রয়েছে। ফলে বাংলাদেশের সরকারের বড় একটি সমস্যা রোহিঙ্গা। তাদের তাড়িয়ে দেয়া যেমন কঠিন তেমনি গ্রহণ করাও কঠিন। শরণার্থী হিসাবে একবার এরা বার্মা থেকে বের হলে আর প্রবেশ করতে দেয়া হয় না, আর তারাও যেতে চায় না। বার্মিয় বুদ্ধরাও সেটাই চাচ্ছে তাদের বিতাড়িত করে তাদের বাড়িঘর ধন সম্পদ লুটপাট ও দখল করা। যে কারনে সংকটের সময় বাংলাদেশ সরকার তাদেরকে বাংলাদেশে ঢুকতে বাধা দেয়। বাঁধা হয়ে দাঁড়াল সীমান্ত আর জাতীয়তাবাদ।
প্রযোজন প্রতিবেশির সহযোগিতা
সীমান্ত খুলে দেয়া যেমন স্থায়ী কোন সমাধান নয় তেমনি তাদের সাহায্য না করা, সাগরে ভাসতে ভাসতে মরা মুসলিম হিসাবে সহ্য করার মতো নয়। সাময়িকভাবে তাদের আশ্রয় ও স্থায়ীভাবে সমস্যা থেকে উত্তরনের জন্য জাতিগতভাবে ও প্রতাবেশি হিসাবে আমরা তাদের জন্য কুটনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক সহযোগিতা করতে পারি রাষ্ট্রীয়ভাবে। যদিও বর্তমান দুনিয়ায় সীমান্ত নামক উম্মাহর বিছিন্নতার দেয়াল টপকাতে পারা কঠিন বিষয়। তবে রাষ্টিয় উদ্যোগ হলে জনগণ সরকারের পাশে দাঁড়িয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।
১৯৭৮ সালে কয়েক লক্ষ আরকানের মুসলমানকে বাংলাদেশ সরকার আশ্রয় দেয়। তখন বার্মার সমস্যাটি আন্তর্জাতিক বিশ্বে ব্যাপকভাবে সাড়া ফেলে। কিন্তু এ বিষয়ে বাংলাদেশ যতোটা কুটনৈতিক তৎপরতা দেখিয়ে মুসলিম বিশ্বকে সাথে নিয়ে সমস্যা সমাধানে কাজ করার কথা ছিল তা করতে পারে নি। ফলে বার্মা শরণার্থী নিয়ে সরকার বেশ বড়ধরনের বেকায়দায় পরে। আর তারাও আরকানে ফিরে না যাওয়াতে সে দেশের সরকার ও বৌদ্ধরা তাদের সম্পত্তি দখল করে সেখানে আরো শক্তিশালী হয়ে ওঠে। নব্বইর দশকের শুরুতে বাংলাদেশ একই সমস্যাতে পরে। আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহনের পর তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মরহুম আব্দুস সামাদ আজাদ এ নিয়ে বার্মা ও আরকান একাধিকবার সফর করেন। নানা দেশের মুসলিম শাসকদের সাথে এনিয়ে কুটনৈতিক তৎপরতা শুরু করেন। তার মৃত্যুর পর তা আর আলোর মুখ দেখেনি। বাংলাদেশ তার প্রতিবেশি নির্যাতিত মুসলিম ভাইদের সমস্যা সমাধানে স্থায়ী কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারে নি। আমরা চাই যে কোন মূল্যে তাদের শান্তি ফিরিয়ে আনতে স্থায়ী সমাধানের ব্যাবস্থা।
ঠাই নেই কোথাও…
কিন্তু বাস্তবতা হলো তাদের আর্তনাদ কানে আসলেও আমরা দাড়াঁতে পারি না তাদের পাশে। কারণ তারা বাংলাদেশী নয়। রোহিঙ্গারা বাংলাভাষী, মুসলিম আমাদের মত শ্যামবর্ণের হওয়ার পরও বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় পেলনা শুধুমাত্র বাংলাদেশের নাাগরিক ও বাংলাদেশী জাাতিয়তাবাদ না হওয়ার কারণে। মজার কথা হচ্ছে ঠিক একই অজুহাতে মানায়মার সরকারও তাাদেরকে তাদের দেশে নাগরিক হিসেবে স্থান দিতে নারাজ, কারণ তারা বাংলাভাষী, মুসলিম ও তাদের মতো সাদা চামড়ার নয়। এখন রোহিঙ্গাদের সামনে দুইটা পথ- হয় নিজ ভূখণ্ডে থেকে লড়াই করে মগ তথা বার্মিজদের হাতে মরা কিংবা বিজয় অর্জন করা। এজন্য বাংলাদেশ সহ মুসলিম বিশ্বের সহযোগিতা কাম্য।
সাগরে ভাসছে মুসলমান
নতুন কোন দেশে প্রবেশের আশা সাগরে পাড়ি দেয় ওরা। যাপ দেয় চোঁখ বুঝে নীল সমুদ্রে। বুকে এক চিলত আশা ওপারে আমাদের জাতীর আবাসভুমি।
হয়তো …
তারা যেহেতু বাঁধার কারণে মুসলিম দেশ বাংলাদেশ থেকে সবসময় সরাসরি কোন রূপ সাহায্য বা আশ্রয় পাচ্ছে না, তাই তারা আর দুই ধনী মুসলিম দেশ মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় আশ্রয়ের আশায় নৌকায় চড়ে দলে দলে সাগর পাড়ি দিচ্ছে। তারা মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করে থাইল্যান্ড-মালশিয়ার সীমান্ত হয়ে। সম্প্রতি থাইল্যান্ডের জঙ্গলে তাদের উপর চালানো গণহত্যার প্রমাণ পেয়ে আন্তর্জাতিক চাপে থাই সরকার তাদেরকে আর প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। তাই তারা সরাসরি পাড়ি জমাল মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার দিকে।
নব্য জাতিয়তাবাদের দেয়াল
কিন্তু হায় এই অসহায় মুসলিম রোহিঙ্গাদেরকে তারাও গ্রহণ করতে নারাজ। কারণ এখানেও বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় দেশিয় ‘জাতীয়তাবাদ’। এরা মালয়েশিয়ান বা ইন্দোনেশিয়ান নন। ওরা একটু আশ্রয়ের আশায় মাতাম করছে। ক্ষুধার জ্বালায় পুড়ে যাওয়া শরীর নিয়ে মুসলিম শিশুদের কান্নায় কাপছে আরশে আজিম থেকে তাহতাশ সারা (জমিনের তলদেশ। অন্যদিকে বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়ার মুসলিমরা দামি দামি রেস্টুরেন্টে বসে চিকেনফ্রাই চিবাচ্ছে। কারোর কোন মাথা ব্যাথা নেই রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে। কারণ তারা মুসলিম হওয়ার সত্ত্বেও একমাত্র দেশিয় ‘জাতীয়তাবাদের’ কারণ বিভক্তির এক কঠিন দেয়াল তৈরি করে রেখেছে।
ঋন শোধ করতে চাই… স্থায়ী সমাধান
কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী এরা ১৯৭১ সালে আমাদের মমুক্তিযুদ্ধকালে তারা সকল ভেদাভেদ ভুলে ভাই হিসাবে বাংলাদেশিদের আরকানে আশ্রয় দিয়েছিল। তেমনিভাবে প্রতিবেশি দেশ ভারত সৈন্য দিয়ে, অস্ত্র দিয়ে, খাবার দিয়ে, শরণার্থী ক্যাম্প করে, ট্রেনিং শিখিয়ে বিজয় এনে দিয়েছিল। আমরা কি বাংলাদেশ সরকারের মাধ্যমে আরকানীদেরর পাশাপাশি সেভাবে কি দাঁড়াতে পারি না? এজন্য সরকারে কাছে জনগণের পক্ষ থেকে দাবী তোলা যেতে পারে। মুসলিমবিশ্বকে সাথে নিয়ে কূটনৈতিক তৎপরতার মাধম্যে বা সামরিক পর্যায়ে যেভাবে সমাধান আসে সেভাবে সরকার উদ্দ্যোগী হতে পারে তাদের জন্য মানবিকভাবে। সরকারি পদক্ষেপ ছাড়া তো আমরা চাইলেও ‘ভিন্ন’ এক প্রতিবেশি রাষ্ট্রের নির্যাতিত মুসলিম ভাইকে মনের মতো করে সাহায্য করতে পারছি না বা করার সুযোগও আমাদের নেই।
হায় গণতন্ত্র
আবার ভিন্ন দেশের কোন নাগরিকের জন্য জাতীয়তাবাদীদের গণতন্ত্রের তথাকথিত মানবতাও কাজ করে না। বর্তমানে মায়ানমার একটি গণতান্ত্রিক দেশ, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক দেশ, মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়াও গণতান্ত্রিক দেশ। কিন্তু গণতন্ত্র রোহিঙ্গাদের মুক্তি দিতে পারছে না। মায়ানমারের নেতা সুচি রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিরুদ্ধে মুখ খুলল না, কারণ তার ভয় হচ্ছে এর ফলে বার্মিজ বৌদ্ধদের ‘ভোট’ তার দিক থেকে সরে যাবে। তিনিও কথিত শান্তিবাদি। নোভেল শান্তিজয়ী বিশ্ববেহায়া ছলনাময়ি মুখোশধারী এক গণতন্ত্রী নেত্রী। অন্যদিকে এই মুসলিম দেশগুলোর বর্তমান গণতন্ত্রও নিজ দেশের নাগরিকদের জন্য। অন্যদেশের নাগরিকদের জন্য নয়।
অন্য দেশের কোন মুসলিম অনাহারে মরল, নাকি নির্যাতনে মরল তা তাদের ভাবনার বিষয় নয়। হায়রে গণতন্ত্র! হায়রে জাতিয়তাবাদ! কেবলি আজ আমাদের বন্দি বিবেকে আর্তনাদ।
প্রিয় স্বদেশ, প্লীজ অন্তত কিছু সময়ের জন্য সীমান্ত খুলে দাও। দোহাই মানবতার। সাময়িক শরণার্থী করে হলেও একটু আশ্রয় দাও। আমাদের খাবার তুলে দিব ওদের পাতে।
আরকানের মুসলমানদের পাশে দাড়িয়ে আমরা আমাদের আদি সমৃদ্ধির ঋন শোধ করতে চাই।
একমত হলে আওয়াজ তুলুন।
দ্বায়বদ্ধতার ইতিহাসটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন…
লেখক : তরুণ কবি ও ইতিহাস গবেষক