কমাশিসা :: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে কাবাঘরকে অবমাননা করে ফেসবুকে পোস্ট দেয়ার অভিযোগে হিন্দু যুবক রসুরাজ দাসের এলাকা উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের হরিনবেড় গ্রামের কৈবর্তপাড়ায় এখন সুনসান নীরবতা। প্রায় ঘর-বাড়িতেই তালা ঝুলছে। পাড়ার এক মোড়ে থানা পুলিশের একটি দল বসে-বসে ঝিমুচ্ছে। শনিবার রাত থেকেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
এদিন দুপুরে রসুরাজ দাসকে এলাকাবাসী আটক করে পুলিশে দেয়ার পর থেকে পাড়াজুড়ে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। এদিন রাতেই হামলা-নির্যাতনের ভয়ে কৈবর্তপাড়ার লোকজন প্রাণের ভয়ে এলাকা ছেড়ে পালান।
হরিপুর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বিজয় দাসও ভয়ে এলাকা ছেড়ে আছেন। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ভাইরে এখনও বাড়ি ফিরতে পারছি না। শনিবার থেকেই আমরা ঘর ছাড়া।
উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান সরকার বলেন, কৈবর্তপাড়ার লোকদের বাড়িতে ফেরানোর জন্য আমরা চেষ্টা করছি। আমি বিজয় দাসসহ কয়েকজনকে ফোন করে বাড়ি আসতে বলেছি। প্রয়োজনে আমি সঙ্গে গিয়ে তাদের বাড়ি দিয়ে আসব বলেছি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর সদরের বিভিন্ন পাড়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির, বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তাণ্ডব চালানোর ঘটনায় তিনটি মামলা হয়েছে। রোববার রাতে দুটি ও সোমবার বিকালে একটি মামলা নাসিরনগর থানায় করা হয়।
এর মধ্যে ঐতিহ্যবাহী দত্তবাড়িতে কালীমূর্তিসহ ব্যাপক ভাংচুরের অভিযোগে উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি কাজল দত্ত বাদী হয়ে একটি, গৌর মন্দিরের পক্ষে নির্মল চৌধুরী একটি ও গাংকুল পাড়ার দুর্গা মন্দিরের পক্ষে নির্মল দাস বাদী হয়ে আরেকটি মামলা করেন।
প্রত্যেকটি মামলায় ১০০০/১২০০ অজ্ঞাত লোককে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে রোববার ঘটনাস্থল থেকে আটক ৬ জনের মধ্যে একজন বয়সে বেশি ছোট এবং সম্পৃক্ততা প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে বাদ দিয়ে ৫ জনকে আসামি দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তাদের রিমান্ডে নিয়ে প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটনের জন্য ৪ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে।
সোমবার এ মামলায় আরও ৩ জনকে আটক করে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। নাসিরনগর থানার ওসি আবদুল কাদের জানান, তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করেও দেখছি।
ঘটনার দু’দিনেও এলাকায় আসেননি স্থানীয় সংসদ সদস্য মৎস্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সায়েদুল হক। ক্ষোভ প্রকাশ করেন হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ বলেন, তিনি বারবার হিন্দু সম্প্রদায়ের ভোটেই এমপি হন। অথচ তিনি আমাদের এখনও দেখতে আসেননি।
উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান সরকার বলেন, ‘আমার সঙ্গে মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়ের কোনো কথা হয়নি।’
যুগান্তর থেকে সংগৃহীত