মাওলানা মামুনুল হক ::
আল্লাহর অশেষ মেহেরবাণীতে বাস্তবায়িত হল কওমী সনদের সরকারী স্বীকৃতি ও চলমান ইস্যুতে তরুণ প্রজন্মের আলেমদের মতবিনিময় সভা ৷ কওমী অঙ্গণে বৃহত্তর ঐক্যের স্বপ্নপুরণে একটি পদক্ষেপ এটি ৷ দীর্ঘ প্রায় মাস খানেকের মেহনত আর সকলের অংশগ্রহণে একটি সুন্দর উদ্যোগ বাস্তবায়িত হল ৷ চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা, দক্ষিণবঙ্গ ও ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন অঞ্চলের তরুণ আলেমগণ এতে শরীক হন ৷ মতপার্থক্য নিয়েও সৌহার্দের বন্ধন অটুট রাখা যায়, আজকের “চেতনায় কওমী মাদরাসার এ বৈঠক সে কথা আরেকবার প্রমাণ করল ৷
প্রাণ খুলে আমরা কথা বললাম ৷ মতপার্থক্যের কথা বললাম ৷ মনের অাকুতির কথা বললাম ৷ স্বপ্নের কথা বললাম ৷
আরো যাদেরকে আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম, তাদেরকে খুব মিস করেছি ৷ তারা থাকলে বা তাদেরকে রাখতে পারলে ভালোলাগার মাত্রাটা নিশ্চয় আরো উচ্চতায় উঠত ৷ এ একটা আক্ষেপ তো থাকল ৷ তবে আমাদের এ প্রয়াস অব্যাহত থাকবে ইনশাআল্লাহ ৷ আজ যা অপূর্ণ থেকেছে, কাল আল্লাহ চাইলে তা পূরণ হতেই পারে ৷
মতবিনিময় সভায় মনখোলা অনেক কথার মধ্য দিয়ে যে বিষয়গুলোতে সকলে একমত হয়েছেন, সিদ্ধান্ত ও প্রস্তাবনার আকারে তা উল্লিখিত হল –
সিদ্ধান্তাবলী:
এক. চেতনায় কওমী মাদরাসা ফেইসবুক পেইজ থেকে একটি আহ্বানমূলক বক্তব্য প্রচার করা হবে যার মূল কথা হবে-
আমাদের মুরব্বী ওলামায়ে কেরামের বিরুদ্ধে বিষোদগার ও বেয়াদবীমূলক, অশোভন উক্তি ও মন্তব্য করা থেকে সকলকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো ৷কওমী মাদরাসা শিক্ষা সনদের স্বীকৃতি ইস্যুতে যেই মুরব্বীর অবস্থান যেদিকেই থাকুক না কেন, সকলের প্রতি আমরা সন্মানপ্রদর্শন করব ৷
দুই. উপস্থিত তরুণ ওলামায়ে কেরাম নিজেরাও বড়দের ব্যাপারে কটু কথা না বলা এবং পরস্পরও ব্যক্তি আক্রমণ না করার ব্যপারে অঙ্গীকারাবদ্ধ হন এবং নিজ নিজ ফেসবুক আই.ডি থেকে ও অন্যান্য উপায়ে ব্যক্তিগতভাবে তরুণ প্রজন্মের প্রতি বিতর্ক ও পর্যালোচনার ক্ষেত্রে সৌজন্যতা ও শালীনতা রক্ষার প্রতি বিশেষভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন ৷ সীমালঙ্ঘন থেকে বিরত থাকার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানাবেন ৷
তিন. যে সকল ব্যক্তি ফেইসবুক কিংবা অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অশালীন, আপত্তকর বা ব্যক্তিআক্রমণাত্মক পোস্ট, কমেন্ট ইত্যাদি করবে, তাদেরকে সংশোধনের ও এ থেকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করা হবে ৷ এক্ষেত্রে যার সাথে যার যোগাযোগ বা সু-সম্পর্ক রয়েছে তিনি বিশেষ ভূমিকা রাখবেন ৷ অন্যরাও প্রয়োজনে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করবে ৷
চার. ফেইক বা ছদ্ম পরিচয়ের ফেসবুক আইডি থেকে কারো বক্তব্যে আপত্তিকর কমেন্ট ইত্যাদি করলে তা তিনি ডিলিট করবেন এবং প্রয়োজনে ছদ্ম পরিচয়ধারীকে ব্লক করে এহেন কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করবেন ৷
পাঁচ. কওমী মাদরাসা ও বোর্ডসমূহের মুরব্বিয়ানে কেরামের সাথে যোগাযোগ করে তাদের সামনে নিম্নোক্ত বিষয়সমূহ তুলে ধরা হবে-
ক) ওলামায়ে কেরাম যেন যে কোনো সিদ্ধান্ত ঐক্যবদ্ধভাবে গ্রহণ করেন ৷ স্বীকৃতি নিলেও যেন ঐক্যবদ্ধভাবে নেন, না নিলেও যেন ঐক্যবদ্ধভাবে প্রত্যাখ্যান করেন ৷
খ) বেফাকুল মাদারিসের সাথে অপরাপর চার বোর্ডের প্রস্তাবিত বৈঠকটি যেন যে কোনো মূল্যে বাস্তবায়ন করা হয় ৷
গ) কওমী কর্তৃপক্ষ আইনের খসড়ায় সরকারের হাতে কর্তৃপক্ষ গঠনের ক্ষমতা ন্যস্ত থাকা ও পরবর্তিতে কওমী বিশ্ববিদ্যালয় গঠন ও তাতে ভিসি নিয়োগসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সরকারী হস্তক্ষেপের সুযোগ সৃষ্টির আশংকার কথা জানানো ৷
এসকল লক্ষ্য বাস্তবায়নে ছয় সদস্যের নিম্নোক্ত প্রতিনিধিদল সাব্যস্থ হয়েছে ৷
১. মাওলানা মুহাম্মাদ মামুনুল হক
২. মাওলানা হাসান জামিল
৩. মুফতী সাখাওয়াত হোসাইন
৪. মাওলানা মুফতী এনায়েতুল্লাহ
৫. মাওলানা এহতেশামুল হক কাসেমী
ও
৬. মাওলানা ওয়ালিউল্লাহ আরমান।
বৈঠকে উপস্থিতি ছিলেন- মাওলনা লাবীব আবদুল্লাহ, মুফতী শাখাওয়াত হুসাইন, মাওলানা হাসান জামীল, মাওলানা মামুনুল হক, মুফতী এহতেশামুল হক কাসেমী, মাওলনা ওয়ালী উল্লাহ আরমান, মাওলানা জাকারিয়া নোমান ফয়জী, মাওলানা লিসানুল হক, মাওলানা হুমায়ুন আইয়ুব, মুফতী এনায়েত উল্লাহ, মুফতী আমজাদ হোসাইন (কুমিল্লা), মুফতী আতিক উল্লাহ আতিক, মুফতী আব্দুল্লাহ আল ফারুক, মাওলানা গাজী সানাউল্লাহ, মাওলানা সৈয়দ শামসুল হুদা, মুফতী লুৎফুর রহমান ফরাজী, মাওলানা আলী হাসান তৈয়ব, মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন, মুফতী শোয়াইব ইবরাহীম, মুফতী সাঈদ আহমদ, মুফতী মাসুম আহমদ, মাওলানা ওয়াজেদ আলী, মুফতী শামসুদ্দোহা আশরাফী, মুফতী মুহাম্মদ তাসনীম, মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক খান, মুফতী সাঈদ কাদির, মুফতী শফিক রহমান, মুফতী রেজাউল করীম আবরার, মুফতী ফাহিম মুহাম্মদ আতাউল্লাহ, মুফতী এনামুল হক মাসুদ, মুফতী শামসুল আলম, মাওলানা জহিরুল ইসলাম, মুফতী শফিকুল ইসলাম, মুফতী শামসুল ইসলাম জিলানী, মুফতী মাহমুদ হাসান সিরাজী, মাওলানা অাব্দুল হাফিজ মারুফ প্রমূখ ৷