কমাশিসা অনুসন্ধান ডেস্ক: বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সম্মানিত আমীর, জামেয়া মাদানিয়া ইসলামিয়া কাজির বাজার এর প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপ্যাল হযরত মাওলানা হাবীবুর রাহমান সাহেবের সাথে কমাশিসার পক্ষ থেকে নেয়া সংক্ষিপ্ত এক আলাপচারিতা। এই আলাপচারিতার প্রথম পর্ব ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। আজকে প্রকাশিত হলো ২য় পর্ব।
২য় পর্বের মূল বিষয় হলো জামেয়া মাদানিয়া ইসলামিয়ার পথ চলার ইতিহাস। এই ঐতিহাসিক প্রতিষ্ঠানের প্রথম জামানায় প্রিন্সিপ্যাল হাবীবুর রাহমান সাহেব নতুন ক্যাম্পাস বিনির্মাণের জন্য ছিলেন পাগলপারা। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত চষে বেড়িয়েছেন। জাগায় জাগায় ধর্ণা দিয়েছেন। দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন নব প্রস্ফুটিত এই বাগানের বিস্তীর্ণ ভুমিতে কিভাবে ভবন খাড়া করা যায় সেই ভাবনা নিয়ে। কোথাও সফল কোথাও বিফল। কিন্তু কোন একটি জায়গা থেকে তিনি বারবার প্রত্যাখ্যাত হওয়ার একটি করুণ কাহিনী শোনে আমরা যেমন অবাক হয়েছি, তেমনি হয়েছি মর্মাহত। বর্তমান প্রজন্মদের এই ইতিহাস জানা খুবই প্রয়োজন।
১৯৭৪-এ ভিত্তি। কিছুদিন পর বাদশাহ খালেদ আসেন সৌদি রাজ সিংহাসনে। প্রিন্সিপ্যাল হাবীবুর রাহমান সাহেব নিজে পত্র লিখেন বাদশাহর কাছে। একবার দু’বার নয়, কয়েকবার পত্র লেখার পর অবশেষে সুসংবাদ আসে। তৎকালীন সৌদি রাষ্ট্রদুত আসলেন সিলেটে। সিলেটের গন্যমান্য অনেক উলামাদের সাথে তিনি সৌজন্য সাক্ষাৎ করলেন। পরে জিজ্ঞেস করলেন যে, এখানে কি প্রিন্সিপ্যাল হাবীবুর রহমান আছেন? রাষ্ট্রদুত তাকে কাছে ডেকে নিয়ে বললনে -আপনি কি বাদশাহ খালেদের কাছে পত্র লিখেছিলেন? বললেন হ্যাঁ। রাষ্ট্রদুত জানালেন এই তোমার তিন কোটি টাকার চেক যা আমি সাথে নিয়ে এসেছি। তবে একটি শর্ত, আর তা হলো- এই ফরমটি তোমাকে পূরণ করে দিতে হবে। তিনি হাতে নিয়ে দেখলেন জামাতে ইসলামে যোগদানের ফরম। তিনি এই ফরম দেখে বললেন যে, জাহাপনা! আপনি কি সৌদির রাষ্ট্রদুত নাকি জামায়াতে ইসলামের দুত? তখন রাষ্ট্রদুত আরো আগ বাড়িয়ে বললেন যে, ভেবে দেখো শুধু তা-না তোমাকে ঢাকায় বাড়ি-গাড়ি সবকিছু করে দেয়া হবে কেবল এই কাজটা করো। তিনি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করলেন। একপ্রকার রাগ করে ফরমের উপর থুথু দিয়ে তিনি চলে আসেন। এই হলো নাটকের প্রথম পর্ব।
২য় পর্যায়ে বলা যায় প্রিন্সিপ্যাল হাবীব হাল ছাড়েন নি। তিনি আবার সৌদী কর্তৃপক্ষ বরাবরে লিখতে লাগলেন। অবশেষে দীর্ঘ দশবছর প্রচেষ্টার ফলাফল স্বরূপ আবার একটি পত্র পেলেন। সন ছিলো ১৯৮৭। জামাতের মীর কাশেম আলীর কাছে পত্র আসলো হাইয়াতুল এগাসাতুল ইসলামিয়া আল-আলমিয়া’র পক্ষ থেকে ডক্টর ফরীদ আল-কুরাইশির স্বাক্ষরিত চিঠি। যেন তিনি কাজির বাজার জামেয়া মাদানিয়া ইসলামিয়া ভিজিট করে তার সারা বিবরণ এবং এস্টেমেইট কস্ট লিখে পাঠান। মীর কাশেম আলী ঠিকই পত্রের উত্তর দিয়েছেন প্রিন্সিপ্যাল হাবীবুর রামানের কাছে। পত্রের ভিতর সাঈদি সাহেবের আপত্তিকর কোন্ কটুক্তির বিরুদ্ধে সিলেটে যে মাহফিল হয়েছিলো তার একটি নিউজ কাটিং।
প্রিন্সিপ্যাল হাবীব তারপরও আশা ছাড়েননি। সৌদীতে গিয়ে মালিক আব্দুল হাফিজ সাহেবের সাথে যোগাযোগ করে সেই এদারার কেন্দ্রীয় অফিসে রিকুয়েস্ট পাঠান যে তার আবেদনের কি হলো তা জানার জন্য। অবশেষে হাইয়াতুল এগাছার একজন মূল কর্ণধার তাকে কাছে নিয়ে ডেকে কিছু ফাইল ধরিয়ে বললেন যে, শাইখ হাবীবুর রাহমান! কোন ফায়দা হবে না। আপনার বিরুদ্ধে অধ্যাপক গোলাম আজম, দেলোওয়ার হোসাইন সাঈদী এবং মীর কাশেম আলীগণ অভিযোগ করে রেখেছেন। তাই ফাইল বাতিল বা অভিযুক্ত হিসেবে এখন পরিত্যাক্ত। এই হলো সৌদীর দান-খয়রাতের ইতিহাস।
আমাদের কওমির আলেম উলামারা ঘুমে। সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যের কোটি কোটি ডলারের সাদকা, দান-খয়রাত জামায়াতে ইসলাম দুনু হাত দিয়ে গ্রহণ করেছে। একাধিপত্য শুধু করেনি; বরং যাতে কওমি মাদ্রাসাগুলো কোন প্রকার সাহায্য না পায় সেই বন্দোবস্তও তারা করে রেখেছে। জামায়াতে ইসলাম তারা ছাড়া বাকি তামাম দ্বীনী তাবাকাকে অমুসলমি মুশরিক হিসেবে আরব বিশ্বে বদনাম করে রেখেছে। যারাই টুকটাক সহায়তা পান তা কেবল ব্যক্তিগতভাবে। সমস্ত রাষ্ট্রীয় খয়রাত জামায়াতে ইসলামের দখলে। পুরো বাংলাদেশব্যাপী তারা যে সম্পদের পাহাড় গড়েছে তা হলো গরীবের হক্ব মেরে মেরে। মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম শাসকদের দান-খয়রাতের সামান্যতম ছিটেফুটো যদি কওমি অঙ্গন পেতো তাহলে আজ এতো দুরাবস্থায় নিপতিত হতোনা।
১৯৭১ সনে পাকিস্তানি সেনারা যেভাবে হিন্দু মনে করে মুক্তিবাহিনীকে হত্যা করতো ঠিক তেমনিভাবে জামায়াতে ইসলাম আরব বিশ্বে দ্বীনী মাদারিস ও উলামায়ে কেরামের প্রতি শিরক এবং কুফরের ধারণা দিয়ে রেখেছে। দ্বীনী প্রতিষ্ঠানের মূলে তারা কুঠারাঘাত হানতে একটুও কসুর করেনি। আলী আহসান মুজাহিদ যখন সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী ছিলেন তখন সমস্ত কওমি মাদরাসার জন্য সমাজ কল্যাণ বিভাগের যে অনুদান দেয়া হতো তা তিনি বন্ধ করে দেন। এই হলো তাদের ইসলামের খেদমত?
কিন্তু প্রশ্ন হলো ওরা আমাদের আর কত ধোকা দিবে? আর কত পিছেন ঠেলে রাখবে? প্রয়োজন ঘুরে দাঁড়াবার। যোগ্য, মেধাবী, বিচক্ষণ প্রজন্ম তৈরি করে মুসলিম বিশ্বের সাথে আমাদের সম্পর্ক তৈরি করতে হবে। আমাদের অধিকার আমাদেরই আদায় করে নিতে হবে। প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে কাংখিত জায়গায় আমাদের পৌঁছা এখন সময়ের দাবি। দুশমনতো ধোকা দিবেই। অতএব তাদের ধোকা অতিক্রম করে মন্জিলে মকসুদে পৌঁছতে যা যা দরকার তা আমাদের করা একান্ত প্রয়োজন।
ভিডিও……….